ঢাকা ০৯:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এবার অস্থির ভোজ্যতেলের বাজার

Reporter Name

ঢাকাঃ

বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম। গত বছরের শেষদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে ব্যবসায়ীরা প্রথম দফা দাম বাড়ান। এরপর শীতের অজুহাত দিয়ে আরেক দফা দাম বাড়িয়েছেন তারা।

দেড় মাসে পণ্যটির মূল্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতি লিটার পাম অয়েলে দাম বেড়েছে ৩০ টাকা। আর বোতলজাত (৫ লিটার) সয়াবিন তেলে দাম বেড়েছে ৩৫ টাকা। বছরের শুরুতে ভরা মৌসুমেও পেঁয়াজ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এখনও পণ্যটি ১২০-১৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

যদিও গত বছরের শেষের দিকে এবং চলতি জানুয়ারির প্রথমদিকে ভোক্তাকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২০০-২৫০ টাকার মাধ্য কিনে খেতে হয়েছে। দাম একটু কমে ১২০-১৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এই দামও ক্রেতাদের নাগালের বাইরে।

ভোক্তাদের অভিযোগ, সরকারে সুপরিকল্পনার অভাব ও বাজার তদারকি দুর্বলতার কারণে পেঁয়াজ-ভোজ্যতেলসহ একাধিক পণ্যের দাম ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর খুচরা বাজারের বেশ কয়েকজন মুদি ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ডিসেম্বরের শুরুতে প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েলের মূল্য ছিল ৬০ টাকা। ১৩ ডিসেম্বর ৫ টাকা বেড়ে ৬৫ টাকা হয়। ২০ ডিসেম্বর আরও ৫ টাকা বেড়ে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। আর ২৭ ডিসেম্বর লিটারে ৪ টাকা বেড়ে খোলা পাম অয়েল বিক্রি হয় ৭৪ টাকা।

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) পণ্যটির দাম আরও এক দফা বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীর। এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকা। অর্থাৎ গত দেড় মাসে লিটারে পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ৩০ টাকা।

এছাড়া দেড় মাসে খোলা ও বোতলজাত সয়াবিনের দামও বেড়েছে। ডিসেম্বরের শুরুতে ৫ লিটার ওজনের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ৪৩০ টাকা। ১৩ ডিসেম্বর মূল্য বেড়ে ৪৪৫ টাকায় বিক্রি হয়। ২৭ ডিসেম্বর আরেক দফা দাম বেড়ে বিক্রি হয় ৪৫৫ টাকা।

এছাড়া বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিক্রি হয়েছে ৪৬৫ টাকা। সেক্ষেত্রে দেড় মাসে ৫ লিটার ওজনের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৩৫ টাকা।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বৃহস্পতিবার জানায়, গত এক মাসে খোলা পাম অয়েলের মূল্য বেড়েছে ১৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের দাম বেড়েছে ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আর বোতলজাত সয়াবিনে দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ।

নয়াবাজারের মুদি বিক্রেতা মো. তুহিন বলেন, পাইকারিতে সব ধরনের তেলের দাম বেড়েছে। যে কারণে বেশি দাম দিয়ে এনে বেশি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। পাইকাররা দফায় দফায় দাম বাড়াচ্ছে। তখনও আমদানি মূল্য বাড়ার অজুহাত। আবার শীতে পাম অয়েল জমে যাওয়ার অজুহাত দাঁড় করিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা বলেন, আমদানি খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোজ্যতেলের দাম একবার বেড়েছে। শীতের কারণেও দাম কিছুটা বেড়েছে। কারণ শীত বেড়ে যাওয়ায় পাম অয়েল জমাট বেঁধে গেছে। ফলে সয়াবিনের ওপর চাপ বেড়েছে। এতে পাইকারি বা খুচরা পর্যায়ে সয়াবিন ও পাম অয়েলের মূল্য বেড়েছে। সব মিলে তেলের দাম এখন একটু বেশি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর রোজা শুরুর ঠিক তিন থেকে চার মাস আগেই ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ট্যারিফ কমিশনে দাম বাড়ানোর একটি প্রস্তাব দেয়া হয়। তবে ওই প্রস্তাবে সরকারের অনুমতির তোয়াক্কা করেন না ব্যবসায়ীরা। তারা আগেই ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দেন।

এবারও সরকারের অনুমতি ছাড়াই ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এভাবে মূল্যবৃদ্ধির ঘটনাকে ব্যবসায়ীদের অনৈতিক বলছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এদিকে ভড়া মৌসুমেও পেঁয়াজের ঝাঁজ কমছে না। বৃহস্পতিবার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা। নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. সারোয়ার বলেন, এখনও পেঁয়াজের দাম কমছে না। গত বছর থেকে পণ্যটির দাম বাড়ার কারণে খাওয়া কমিয়ে দিয়েও লাভ হয়নি। বিক্রেতারা এখনও বেশি দরেই বিক্রি করছে।

শ্যামবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সংকর চন্দ্র ঘোষ বলেন, কৃষক পর্যায় থেকে বাড়তি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। এছাড়া আমদানিও কম হচ্ছে। সব মিলে এখনও পেঁয়াজের দর বাড়তি। তবে সামনে কমতে থাকবে।

About Author Information
আপডেট সময় : ১২:০৬:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২০
৪৯০ Time View

এবার অস্থির ভোজ্যতেলের বাজার

আপডেট সময় : ১২:০৬:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২০

ঢাকাঃ

বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম। গত বছরের শেষদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে ব্যবসায়ীরা প্রথম দফা দাম বাড়ান। এরপর শীতের অজুহাত দিয়ে আরেক দফা দাম বাড়িয়েছেন তারা।

দেড় মাসে পণ্যটির মূল্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতি লিটার পাম অয়েলে দাম বেড়েছে ৩০ টাকা। আর বোতলজাত (৫ লিটার) সয়াবিন তেলে দাম বেড়েছে ৩৫ টাকা। বছরের শুরুতে ভরা মৌসুমেও পেঁয়াজ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এখনও পণ্যটি ১২০-১৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

যদিও গত বছরের শেষের দিকে এবং চলতি জানুয়ারির প্রথমদিকে ভোক্তাকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২০০-২৫০ টাকার মাধ্য কিনে খেতে হয়েছে। দাম একটু কমে ১২০-১৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এই দামও ক্রেতাদের নাগালের বাইরে।

ভোক্তাদের অভিযোগ, সরকারে সুপরিকল্পনার অভাব ও বাজার তদারকি দুর্বলতার কারণে পেঁয়াজ-ভোজ্যতেলসহ একাধিক পণ্যের দাম ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর খুচরা বাজারের বেশ কয়েকজন মুদি ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ডিসেম্বরের শুরুতে প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েলের মূল্য ছিল ৬০ টাকা। ১৩ ডিসেম্বর ৫ টাকা বেড়ে ৬৫ টাকা হয়। ২০ ডিসেম্বর আরও ৫ টাকা বেড়ে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। আর ২৭ ডিসেম্বর লিটারে ৪ টাকা বেড়ে খোলা পাম অয়েল বিক্রি হয় ৭৪ টাকা।

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) পণ্যটির দাম আরও এক দফা বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীর। এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকা। অর্থাৎ গত দেড় মাসে লিটারে পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ৩০ টাকা।

এছাড়া দেড় মাসে খোলা ও বোতলজাত সয়াবিনের দামও বেড়েছে। ডিসেম্বরের শুরুতে ৫ লিটার ওজনের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ৪৩০ টাকা। ১৩ ডিসেম্বর মূল্য বেড়ে ৪৪৫ টাকায় বিক্রি হয়। ২৭ ডিসেম্বর আরেক দফা দাম বেড়ে বিক্রি হয় ৪৫৫ টাকা।

এছাড়া বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিক্রি হয়েছে ৪৬৫ টাকা। সেক্ষেত্রে দেড় মাসে ৫ লিটার ওজনের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৩৫ টাকা।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বৃহস্পতিবার জানায়, গত এক মাসে খোলা পাম অয়েলের মূল্য বেড়েছে ১৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের দাম বেড়েছে ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আর বোতলজাত সয়াবিনে দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ।

নয়াবাজারের মুদি বিক্রেতা মো. তুহিন বলেন, পাইকারিতে সব ধরনের তেলের দাম বেড়েছে। যে কারণে বেশি দাম দিয়ে এনে বেশি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। পাইকাররা দফায় দফায় দাম বাড়াচ্ছে। তখনও আমদানি মূল্য বাড়ার অজুহাত। আবার শীতে পাম অয়েল জমে যাওয়ার অজুহাত দাঁড় করিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা বলেন, আমদানি খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোজ্যতেলের দাম একবার বেড়েছে। শীতের কারণেও দাম কিছুটা বেড়েছে। কারণ শীত বেড়ে যাওয়ায় পাম অয়েল জমাট বেঁধে গেছে। ফলে সয়াবিনের ওপর চাপ বেড়েছে। এতে পাইকারি বা খুচরা পর্যায়ে সয়াবিন ও পাম অয়েলের মূল্য বেড়েছে। সব মিলে তেলের দাম এখন একটু বেশি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর রোজা শুরুর ঠিক তিন থেকে চার মাস আগেই ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ট্যারিফ কমিশনে দাম বাড়ানোর একটি প্রস্তাব দেয়া হয়। তবে ওই প্রস্তাবে সরকারের অনুমতির তোয়াক্কা করেন না ব্যবসায়ীরা। তারা আগেই ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দেন।

এবারও সরকারের অনুমতি ছাড়াই ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এভাবে মূল্যবৃদ্ধির ঘটনাকে ব্যবসায়ীদের অনৈতিক বলছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এদিকে ভড়া মৌসুমেও পেঁয়াজের ঝাঁজ কমছে না। বৃহস্পতিবার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা। নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. সারোয়ার বলেন, এখনও পেঁয়াজের দাম কমছে না। গত বছর থেকে পণ্যটির দাম বাড়ার কারণে খাওয়া কমিয়ে দিয়েও লাভ হয়নি। বিক্রেতারা এখনও বেশি দরেই বিক্রি করছে।

শ্যামবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সংকর চন্দ্র ঘোষ বলেন, কৃষক পর্যায় থেকে বাড়তি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। এছাড়া আমদানিও কম হচ্ছে। সব মিলে এখনও পেঁয়াজের দর বাড়তি। তবে সামনে কমতে থাকবে।