ঢাকা ০৬:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আন্তর্জাতিক হওয়ার চেষ্টায় জেএমবির তৎপরতা

Reporter Name

আজ ১৭ আগস্ট। ১৩ বছর আগে, ২০০৫ সালের এই দিনে দেশের ৬৩ জেলায় ৫০০ বোমা ফাটিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছিল জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। নিষিদ্ধঘোষিত সেই পুরোনো জেএমবি এখন নতুন করে আত্মপ্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। একই সঙ্গে দেশীয় এই জঙ্গি সংগঠন এখন আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনে পরিণত হওয়ার চেষ্টা করছে।

এ ছাড়া ভারতে সক্রিয় জেএমবির নেতাদের সঙ্গে আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার (একিউআইএস) যোগাযোগ গড়ে উঠেছে বলেও ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে।

জঙ্গি দমনে যুক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র বলছে, দেশের আরেক জঙ্গি সংগঠন এবং আল-কায়েদার মতাদর্শ অনুসরণকারী আনসার আল ইসলামের সঙ্গেও জেএমবির একটা বোঝাপড়া হয়েছে।

‘সাহম আল-হিন্দ’ নামের জেএমবির নিজস্ব একটি পোর্টালে প্রচারিত সংগঠনের বর্তমান আমির সালাহউদ্দিনের এক সাক্ষাৎকারে সংগঠনের নাম থেকে বাংলাদেশ শব্দ বাদ দিয়ে ‘জামাআতুল মুজাহিদীন’ নাম ধারণ এবং বিভিন্ন দেশে শাখা গঠন করার কথা বলা হয়েছে। তাতে অন্য জঙ্গিগোষ্ঠীকে এক ছাতার নিচে আনার চেষ্টার ইঙ্গিতও আছে।

দেশে পুলিশ ও র‍্যাবের তৎপরতার মুখে বেশ কয়েক বছর আগেই পুরোনো জেএমবির অনেকে ভারতে আশ্রয় নেয় এবং সেখানে সংগঠিত হতে থাকে। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড়ে একটি জঙ্গি আস্তানায় বোমা বিস্ফোরণের পর ভারতে জেএমবির বিস্তারের বিষয়টি ব্যাপকভাবে ওই দেশে আলোচনায় আসে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আবার ভারতে জেএমবি আলোচনায় আসে। কলকাতা পুলিশের বিশেষ টাস্কফোর্স ভারতের গণমাধ্যমকে বলেছে, বুদ্ধগয়ায় তিব্বতের ধর্মীয় নেতা দালাই লামাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল জেএমবি। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে জেএমবির পাঁচ সদস্য গ্রেপ্তার হয়।

ভারতের গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি কলকাতার বাংলা দৈনিক এই সময়-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জেএমবি ভারতে জামাআতুল মুজাহিদীন ইন্ডিয়া বা জেএমআই নামে তৎপরতা শুরু করেছে। জেএমআইয়ের প্রধান হয়েছেন কাওসার ওরফে বোমা মিজান। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, জেএমবির শীর্ষ নেতা সালাউদ্দিনের সংগঠনের সঙ্গে আল-কায়েদা এশিয়া শাখার যোগাযোগ রয়েছে। সর্বশেষ ৬ আগস্ট জেএমআইয়ের প্রধান জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান ভারতের বেঙ্গালুরুতে গ্রেপ্তার হন।

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরাও ভারতে জেএমবির সঙ্গে আল-কায়েদার যোগাযোগের বিষয়ে কিছু আভাস পাচ্ছেন। তবে পুলিশের অ্যান্টি-টেররিজম ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শুরু থেকেই জেএমবির সঙ্গে আল-কায়েদার মতাদর্শিক বা নীতিগত মিল ছিল। তবে জেএমবির সঙ্গে আল-কায়েদার সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হয়েছে, এমন নিশ্চিত তথ্য তিনি পাননি।

অ্যান্টি-টেররিজম ইউনিটের প্রধান জানান, জেএমবি এখন আর্থিক সংকটে আছে, নেতৃত্বেও শায়খ আবদুর রহমান বা বাংলা ভাইয়ের মতো নেতা নেই। তারপরও তারা ভেতরে ভেতরে বেশ সক্রিয়। সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি তারা ভারত থেকে অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টাও করছে। এর মধ্যে অস্ত্রসহ দুজন গ্রেপ্তারও হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, জেএমবি এখন জেএম (জামাআতুল মুজাহিদীন) হয়েছে। তাঁরা সংগঠনের দুটি শাখা করেছে। একটি জেএমআই নামে ভারতের ভেতরে তৎপরতা চালাচ্ছে, যার নেতৃত্বে ছিলেন বোমা মিজান। অপর শাখাটি বাংলাদেশে তৎপর। তারা দেশে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এর নেতৃত্বে রয়েছে আধুনিক শিক্ষিত নতুন এক ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে চার-পাঁচজন যুক্ত হয়েছেন। আর মূল সংগঠন জেএমের আমিরের দায়িত্বে আছেন সালাহউদ্দিন।

সালাহউদ্দিন ১৯৯৮ সালে জন্ম নেওয়া জেএমবির শুরুর দিকের শুরা সদস্য। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী বোমা হামলা এবং তারপর কয়েকটি আত্মঘাতী হামলার পর কয়েক মাসের মধ্যে জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আবদুর রহমানসহ সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব নেতা গ্রেপ্তার হন। এরপর ২০০৭ সালে শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইসহ শীর্ষ পাঁচ নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়। তারপর জেএমবির আমির হন হবিগঞ্জের মাওলানা সাইদুর রহমান। তাঁর নেতৃত্বে জেএমবি পুনরায় সংগঠিত হলে ২০১০ সালে তিনিসহ জেএমবির গুরুত্বপূর্ণ বেশ কজন সদস্য গ্রেপ্তার হন। এরপর ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জঙ্গিরা ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে এবং পুলিশ হত্যা করে সালাহউদ্দিনসহ জেএমবির গুরুত্বপূর্ণ তিন নেতাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। বাকি দুজনের মধ্যে হাফেজ মাহমুদ ওই দিনই টাঙ্গাইলে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এবং বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। সালাহউদ্দিন ও বোমা মিজান ভারতে পালিয়ে যান। বোমা মিজান সম্প্রতি ভারতে গ্রেপ্তার হন। সালাহউদ্দিনও ভারতে আছে বলে মনে করেন বাংলাদেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

জেএমবির শুরু থেকেই সদস্যদের বড় অংশ আসে দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে। এখন পর্যন্ত সেই ধারা অব্যাহত আছে। এই বিষয়ে গত মাসে উত্তরাঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যে জেএমবি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাঁরা ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করছে। চলতি বছর এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক জেএমবি সদস্য গ্রেপ্তারও হয়েছে। এ ছাড়া জেএমবি সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি তহবিল গঠনের দিকেও মনোযোগ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে তারা ডাকাতিকে অন্যতম উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছে।

এদিকে নব্য জেএমবি ও আনসার আল ইসলামের মতো পুরোনো জেএমবিও এখন তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করছে, যা আগে দেখা যায়নি। এমনকি হামলার দায় স্বীকারের প্রবণতা আগে ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি শাহজাহান বাচ্চু হত্যার দায় স্বীকার করেছে অনলাইনে নিজস্ব ফোরামে। বিভিন্ন নামে ওয়েব পেজ খুলে সংগঠনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রচারণাও চালাচ্ছে। ভিডিও আপলোড করছে।

এই বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের রিসার্চ ফেলো সাফকাত মুনির প্রথম আলোকে বলেন, গত ১৩ বছরে জেএমবির মধ্যেও একধরনের বিবর্তন এসেছে। একটা সময় জেএমবি কেবল প্রথাগত পন্থা অবলম্বন করে তাদের মতাদর্শ প্রচার করত। এখন ইন্টারনেটের ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের প্রচারণায় নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। তবে তাদের মতাদর্শগত অবস্থানে যে খুব একটা পরিবর্তন এসেছে, এটা বলা যাবে না। তিনি বলেন, দেশে অনেকগুলো জঙ্গি সংগঠন সক্রিয় থাকলেও জেএমবি যেহেতু অনেক পুরোনো একটি সংগঠন, তাই এদের ব্যাপারে সব সময় বিশেষভাবে সতর্ক থাকা দরকার।

মামলা ও বিচার
১৭ আগস্ট দেশব্যাপী বোমা হামলার ঘটনায় সারা দেশে ১৫৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। বাকি ১৪৯টি মামলায় ১ হাজার ১০৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এসব মামলার মধ্যে ৯৮টির নিষ্পত্তি হয়েছে। ৫১টি মামলা এখনো বিচারাধীন রয়েছে।

About Author Information
আপডেট সময় : ১২:৫০:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অগাস্ট ২০১৮
৭৫৮ Time View

আন্তর্জাতিক হওয়ার চেষ্টায় জেএমবির তৎপরতা

আপডেট সময় : ১২:৫০:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অগাস্ট ২০১৮

আজ ১৭ আগস্ট। ১৩ বছর আগে, ২০০৫ সালের এই দিনে দেশের ৬৩ জেলায় ৫০০ বোমা ফাটিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছিল জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। নিষিদ্ধঘোষিত সেই পুরোনো জেএমবি এখন নতুন করে আত্মপ্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। একই সঙ্গে দেশীয় এই জঙ্গি সংগঠন এখন আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনে পরিণত হওয়ার চেষ্টা করছে।

এ ছাড়া ভারতে সক্রিয় জেএমবির নেতাদের সঙ্গে আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার (একিউআইএস) যোগাযোগ গড়ে উঠেছে বলেও ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে।

জঙ্গি দমনে যুক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র বলছে, দেশের আরেক জঙ্গি সংগঠন এবং আল-কায়েদার মতাদর্শ অনুসরণকারী আনসার আল ইসলামের সঙ্গেও জেএমবির একটা বোঝাপড়া হয়েছে।

‘সাহম আল-হিন্দ’ নামের জেএমবির নিজস্ব একটি পোর্টালে প্রচারিত সংগঠনের বর্তমান আমির সালাহউদ্দিনের এক সাক্ষাৎকারে সংগঠনের নাম থেকে বাংলাদেশ শব্দ বাদ দিয়ে ‘জামাআতুল মুজাহিদীন’ নাম ধারণ এবং বিভিন্ন দেশে শাখা গঠন করার কথা বলা হয়েছে। তাতে অন্য জঙ্গিগোষ্ঠীকে এক ছাতার নিচে আনার চেষ্টার ইঙ্গিতও আছে।

দেশে পুলিশ ও র‍্যাবের তৎপরতার মুখে বেশ কয়েক বছর আগেই পুরোনো জেএমবির অনেকে ভারতে আশ্রয় নেয় এবং সেখানে সংগঠিত হতে থাকে। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড়ে একটি জঙ্গি আস্তানায় বোমা বিস্ফোরণের পর ভারতে জেএমবির বিস্তারের বিষয়টি ব্যাপকভাবে ওই দেশে আলোচনায় আসে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আবার ভারতে জেএমবি আলোচনায় আসে। কলকাতা পুলিশের বিশেষ টাস্কফোর্স ভারতের গণমাধ্যমকে বলেছে, বুদ্ধগয়ায় তিব্বতের ধর্মীয় নেতা দালাই লামাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল জেএমবি। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে জেএমবির পাঁচ সদস্য গ্রেপ্তার হয়।

ভারতের গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি কলকাতার বাংলা দৈনিক এই সময়-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জেএমবি ভারতে জামাআতুল মুজাহিদীন ইন্ডিয়া বা জেএমআই নামে তৎপরতা শুরু করেছে। জেএমআইয়ের প্রধান হয়েছেন কাওসার ওরফে বোমা মিজান। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, জেএমবির শীর্ষ নেতা সালাউদ্দিনের সংগঠনের সঙ্গে আল-কায়েদা এশিয়া শাখার যোগাযোগ রয়েছে। সর্বশেষ ৬ আগস্ট জেএমআইয়ের প্রধান জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান ভারতের বেঙ্গালুরুতে গ্রেপ্তার হন।

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরাও ভারতে জেএমবির সঙ্গে আল-কায়েদার যোগাযোগের বিষয়ে কিছু আভাস পাচ্ছেন। তবে পুলিশের অ্যান্টি-টেররিজম ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শুরু থেকেই জেএমবির সঙ্গে আল-কায়েদার মতাদর্শিক বা নীতিগত মিল ছিল। তবে জেএমবির সঙ্গে আল-কায়েদার সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হয়েছে, এমন নিশ্চিত তথ্য তিনি পাননি।

অ্যান্টি-টেররিজম ইউনিটের প্রধান জানান, জেএমবি এখন আর্থিক সংকটে আছে, নেতৃত্বেও শায়খ আবদুর রহমান বা বাংলা ভাইয়ের মতো নেতা নেই। তারপরও তারা ভেতরে ভেতরে বেশ সক্রিয়। সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি তারা ভারত থেকে অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টাও করছে। এর মধ্যে অস্ত্রসহ দুজন গ্রেপ্তারও হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, জেএমবি এখন জেএম (জামাআতুল মুজাহিদীন) হয়েছে। তাঁরা সংগঠনের দুটি শাখা করেছে। একটি জেএমআই নামে ভারতের ভেতরে তৎপরতা চালাচ্ছে, যার নেতৃত্বে ছিলেন বোমা মিজান। অপর শাখাটি বাংলাদেশে তৎপর। তারা দেশে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এর নেতৃত্বে রয়েছে আধুনিক শিক্ষিত নতুন এক ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে চার-পাঁচজন যুক্ত হয়েছেন। আর মূল সংগঠন জেএমের আমিরের দায়িত্বে আছেন সালাহউদ্দিন।

সালাহউদ্দিন ১৯৯৮ সালে জন্ম নেওয়া জেএমবির শুরুর দিকের শুরা সদস্য। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী বোমা হামলা এবং তারপর কয়েকটি আত্মঘাতী হামলার পর কয়েক মাসের মধ্যে জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আবদুর রহমানসহ সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব নেতা গ্রেপ্তার হন। এরপর ২০০৭ সালে শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইসহ শীর্ষ পাঁচ নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়। তারপর জেএমবির আমির হন হবিগঞ্জের মাওলানা সাইদুর রহমান। তাঁর নেতৃত্বে জেএমবি পুনরায় সংগঠিত হলে ২০১০ সালে তিনিসহ জেএমবির গুরুত্বপূর্ণ বেশ কজন সদস্য গ্রেপ্তার হন। এরপর ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জঙ্গিরা ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে এবং পুলিশ হত্যা করে সালাহউদ্দিনসহ জেএমবির গুরুত্বপূর্ণ তিন নেতাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। বাকি দুজনের মধ্যে হাফেজ মাহমুদ ওই দিনই টাঙ্গাইলে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এবং বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। সালাহউদ্দিন ও বোমা মিজান ভারতে পালিয়ে যান। বোমা মিজান সম্প্রতি ভারতে গ্রেপ্তার হন। সালাহউদ্দিনও ভারতে আছে বলে মনে করেন বাংলাদেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

জেএমবির শুরু থেকেই সদস্যদের বড় অংশ আসে দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে। এখন পর্যন্ত সেই ধারা অব্যাহত আছে। এই বিষয়ে গত মাসে উত্তরাঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যে জেএমবি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাঁরা ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করছে। চলতি বছর এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক জেএমবি সদস্য গ্রেপ্তারও হয়েছে। এ ছাড়া জেএমবি সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি তহবিল গঠনের দিকেও মনোযোগ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে তারা ডাকাতিকে অন্যতম উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছে।

এদিকে নব্য জেএমবি ও আনসার আল ইসলামের মতো পুরোনো জেএমবিও এখন তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করছে, যা আগে দেখা যায়নি। এমনকি হামলার দায় স্বীকারের প্রবণতা আগে ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি শাহজাহান বাচ্চু হত্যার দায় স্বীকার করেছে অনলাইনে নিজস্ব ফোরামে। বিভিন্ন নামে ওয়েব পেজ খুলে সংগঠনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রচারণাও চালাচ্ছে। ভিডিও আপলোড করছে।

এই বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের রিসার্চ ফেলো সাফকাত মুনির প্রথম আলোকে বলেন, গত ১৩ বছরে জেএমবির মধ্যেও একধরনের বিবর্তন এসেছে। একটা সময় জেএমবি কেবল প্রথাগত পন্থা অবলম্বন করে তাদের মতাদর্শ প্রচার করত। এখন ইন্টারনেটের ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের প্রচারণায় নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। তবে তাদের মতাদর্শগত অবস্থানে যে খুব একটা পরিবর্তন এসেছে, এটা বলা যাবে না। তিনি বলেন, দেশে অনেকগুলো জঙ্গি সংগঠন সক্রিয় থাকলেও জেএমবি যেহেতু অনেক পুরোনো একটি সংগঠন, তাই এদের ব্যাপারে সব সময় বিশেষভাবে সতর্ক থাকা দরকার।

মামলা ও বিচার
১৭ আগস্ট দেশব্যাপী বোমা হামলার ঘটনায় সারা দেশে ১৫৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। বাকি ১৪৯টি মামলায় ১ হাজার ১০৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এসব মামলার মধ্যে ৯৮টির নিষ্পত্তি হয়েছে। ৫১টি মামলা এখনো বিচারাধীন রয়েছে।