ঢাকা ১২:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খুবির হলে ‘মাদকাসক্ত’ হয়ে রাতভর ৫ শিক্ষার্থী নির্যাতন: তদন্ত কমিটি গঠন

Reporter Name

খুলনা প্রতিনিধিঃ

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের একটি কক্ষে মাদকাসক্ত হয়ে পাঁচ শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী ওই পাচঁজন ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। নির্যাতনকারীরা একই বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের ছাত্র।

এ বিষয়ে গত ২৮ জানুয়ারি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বিভাগের প্রধান বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন যায়গায় তথাকথিত মিটিংয়ের নামে ভুক্তভুগিদের মানষিক নির্যাতন করা হচ্ছিল। যার ক্ষোভ থেকে তারা চতুর্থ বর্ষের মশিউর রাজাকে আপত্তিকর দুইটি খুদে বার্তা পাঠায়। ক্ষুদে বার্তার পাঠানোর কারণ জানতে মঙ্গলবার রাত ১২ টার দিকে রাজা দ্বিতীয় বর্ষের আখতারুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে বঙ্গবন্ধু হলের ২০৭ নম্বর কক্ষে ডেকে নেয়। এসময় রাজার সাথে ছিলেন, একই ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাজ বর্মন (বিধান), মিনহাজুর রহমান, ফাহাদ রহমান ( অঝোর) এবং মার্স্টাসের শিক্ষার্থী সাবেরুল বাশার (নিরব)।

লিখিত অভিযোগে আরো বলা হয়, ওই কক্ষে উপস্থিত অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা মাদক সেবনরত অবস্থায় তাশ খেলছিলেন। তাশ খেলা শেষে তারা আখতারুল ইসলামের কাছে ক্ষুদে বার্তা পাঠানোর কারণ জানতে চায়। এক পর্যায়ে আখতার ভীত হয়ে বলতে না চাইলে তার উপরে শারীরিক নির্যাতন শুরু হয়। প্রথমে চুল ধরে তার গালে কয়েকটি চড় মারা হয়। তখন আখতার ভুল স্বীকার করে কাঁদতে কাঁদতে রাজার পা ধরে ক্ষমা চায়। কিন্তু এরপরও তারা অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে যায়।

নির্যাতনের এক পর্যায়ে আখতারের মাধ্যমে ফোনে তার সহপাঠি মো. আশিকুর রহমানকে ওই রুমে ডেকে আনা হয়। আশিক রুমে আসলে তার উপরও শুরু হয় নির্যাতন। এক পর্যায়ে তাকে লাঠি দিয়ে হাতে পেটানো হয়। এরপর ভোর চারটার দিকে দ্বিতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী মো. মহিদুজ্জামানকে রুমে আনা হয়। সেসময় তার সামনেই আশিক ও আখতারকে ফের শারীরিক নির্যাতন করা হয়।

এরপর ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানকে একই কক্ষে ডেকে একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে তার অভিভাবকের ফোন নাম্বার নেওয়া হয়। ফোন নাম্বার দেওয়ার পরও রাজা তাকে থাপ্পড় মারেন এবং বিধান তাকে কানে আঘাত করে এবং চুল ও সোয়েটারের কলার ধরে টানা হেচড়া করে।পরবর্তীতে ভোর ৬ টায় মহিদুজ্জামান ও আশিকের মাধ্যমে ২য় বর্ষের তানজিম হাসান অপু, হাবিবুর রহমান এবং রাকিব হাসানকে তাদের মেসের রুম থেকে বঙ্গবন্ধু হলের একই কক্ষে ডেকে নেয়। সবাই উপস্থিত হলে মেহেদি হাসানকে বিধান তার বাবা মা তুলে গালিগালাজ করে।এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে থেকে ৫ জনের জোর পূর্বক লিখিত বিবৃতি ও সাক্ষর নিয়ে তা ভিডিও ধারণ করে রাখে।

মারধরের কারণ জানতে মশিউর রহমান রাজার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান।

লিখিত অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইংরেজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এ আর এম মুস্তাফিজার রহমান। তিনি বলেন ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে প্রফেসর মো. ইমদাদুল হককে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির মিটিংয়ে অভিযুক্তদের নামে এর আগেও এ ধরনের অভিযোগ আছে বলে উল্লেখ করেছেন কয়েকজন শিক্ষক। তিনি বলেন, আগামী রোববার থেকে তদন্ত শুরু হবে। যত দ্রুত সম্ভব তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন। এছাড়াও বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক এবং ভিসিকে জানানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর মো. শরিফ হাসান লিমন সাংবাদিকদের বলেন, ওই শিক্ষার্থীরা এর আগে মাদক সেবনের দায়ে দুইবার অভিযুক্ত ও একবার মুচলেকা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইংরেজি ডিসিপ্লিনে যে অভিযোগ উঠেছে সেটা এক প্রকার সন্ত্রাসী কার্যক্রম। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে দোষীদের কাউকেই বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৯:৩৪:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২০
৪২৯ Time View

খুবির হলে ‘মাদকাসক্ত’ হয়ে রাতভর ৫ শিক্ষার্থী নির্যাতন: তদন্ত কমিটি গঠন

আপডেট সময় : ০৯:৩৪:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২০

খুলনা প্রতিনিধিঃ

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের একটি কক্ষে মাদকাসক্ত হয়ে পাঁচ শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী ওই পাচঁজন ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। নির্যাতনকারীরা একই বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের ছাত্র।

এ বিষয়ে গত ২৮ জানুয়ারি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বিভাগের প্রধান বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন যায়গায় তথাকথিত মিটিংয়ের নামে ভুক্তভুগিদের মানষিক নির্যাতন করা হচ্ছিল। যার ক্ষোভ থেকে তারা চতুর্থ বর্ষের মশিউর রাজাকে আপত্তিকর দুইটি খুদে বার্তা পাঠায়। ক্ষুদে বার্তার পাঠানোর কারণ জানতে মঙ্গলবার রাত ১২ টার দিকে রাজা দ্বিতীয় বর্ষের আখতারুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে বঙ্গবন্ধু হলের ২০৭ নম্বর কক্ষে ডেকে নেয়। এসময় রাজার সাথে ছিলেন, একই ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাজ বর্মন (বিধান), মিনহাজুর রহমান, ফাহাদ রহমান ( অঝোর) এবং মার্স্টাসের শিক্ষার্থী সাবেরুল বাশার (নিরব)।

লিখিত অভিযোগে আরো বলা হয়, ওই কক্ষে উপস্থিত অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা মাদক সেবনরত অবস্থায় তাশ খেলছিলেন। তাশ খেলা শেষে তারা আখতারুল ইসলামের কাছে ক্ষুদে বার্তা পাঠানোর কারণ জানতে চায়। এক পর্যায়ে আখতার ভীত হয়ে বলতে না চাইলে তার উপরে শারীরিক নির্যাতন শুরু হয়। প্রথমে চুল ধরে তার গালে কয়েকটি চড় মারা হয়। তখন আখতার ভুল স্বীকার করে কাঁদতে কাঁদতে রাজার পা ধরে ক্ষমা চায়। কিন্তু এরপরও তারা অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে যায়।

নির্যাতনের এক পর্যায়ে আখতারের মাধ্যমে ফোনে তার সহপাঠি মো. আশিকুর রহমানকে ওই রুমে ডেকে আনা হয়। আশিক রুমে আসলে তার উপরও শুরু হয় নির্যাতন। এক পর্যায়ে তাকে লাঠি দিয়ে হাতে পেটানো হয়। এরপর ভোর চারটার দিকে দ্বিতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী মো. মহিদুজ্জামানকে রুমে আনা হয়। সেসময় তার সামনেই আশিক ও আখতারকে ফের শারীরিক নির্যাতন করা হয়।

এরপর ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানকে একই কক্ষে ডেকে একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে তার অভিভাবকের ফোন নাম্বার নেওয়া হয়। ফোন নাম্বার দেওয়ার পরও রাজা তাকে থাপ্পড় মারেন এবং বিধান তাকে কানে আঘাত করে এবং চুল ও সোয়েটারের কলার ধরে টানা হেচড়া করে।পরবর্তীতে ভোর ৬ টায় মহিদুজ্জামান ও আশিকের মাধ্যমে ২য় বর্ষের তানজিম হাসান অপু, হাবিবুর রহমান এবং রাকিব হাসানকে তাদের মেসের রুম থেকে বঙ্গবন্ধু হলের একই কক্ষে ডেকে নেয়। সবাই উপস্থিত হলে মেহেদি হাসানকে বিধান তার বাবা মা তুলে গালিগালাজ করে।এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে থেকে ৫ জনের জোর পূর্বক লিখিত বিবৃতি ও সাক্ষর নিয়ে তা ভিডিও ধারণ করে রাখে।

মারধরের কারণ জানতে মশিউর রহমান রাজার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান।

লিখিত অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইংরেজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এ আর এম মুস্তাফিজার রহমান। তিনি বলেন ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে প্রফেসর মো. ইমদাদুল হককে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির মিটিংয়ে অভিযুক্তদের নামে এর আগেও এ ধরনের অভিযোগ আছে বলে উল্লেখ করেছেন কয়েকজন শিক্ষক। তিনি বলেন, আগামী রোববার থেকে তদন্ত শুরু হবে। যত দ্রুত সম্ভব তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন। এছাড়াও বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক এবং ভিসিকে জানানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর মো. শরিফ হাসান লিমন সাংবাদিকদের বলেন, ওই শিক্ষার্থীরা এর আগে মাদক সেবনের দায়ে দুইবার অভিযুক্ত ও একবার মুচলেকা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইংরেজি ডিসিপ্লিনে যে অভিযোগ উঠেছে সেটা এক প্রকার সন্ত্রাসী কার্যক্রম। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে দোষীদের কাউকেই বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।