ঢাকা ০৮:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘তিন ঘোড়ার দৌড়’ শেষে কে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানা যাবে শুক্রবার

Reporter Name

দিনভর নাটকীয় ডামাঢোল শেষে আগামীকাল অস্ট্রেলিয়ার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হচ্ছেন—এমন আলোচনা নিয়ে ঘুমোতে গেছেন দেশটির মানুষ। অস্ট্রেলিয়ার সরকার প্রধান কে হবেন তার জানা যাবে আগামীকাল শুক্রবার। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ম্যালকম টার্নবুলের নাম হয়তো বা আর থাকছে না। শুক্রবার লিবারেল দলের প্রধাননেতা পরিবর্তনের দলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হতে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামবেন সদ্য অভিবাসন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদ থেকে সরে যাওয়া পিটার ডাটন, বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ এবং টার্নবুলের বিশ্বস্ত সহকর্মী কোষাধ্যক্ষ স্কট মরিসন। এ ছাড়া লিবারেল দলের অন্যতম নেতা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবটও প্রতিযোগিতায় নেমে যেতে পারেন বলে ধারণা করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। আর সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামীকাল শুক্রবার এ তিন বা চারজনের কেউ হবেন অস্ট্রেলিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী। আপাতত অ্যাবটকে বাদ দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যম নির্বাচনকে বলছে ‘তিন ঘোড়ার দৌড়’।

দলের প্রধাননেতা পরিবর্তনের দাবি নিয়ে গত মঙ্গলবার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলকে চ্যালেঞ্জ করেন পিটার ডাটন। স্বল্প সময়ের মধ্যেই দলের নির্দিষ্ট সদস্যের ভোট গ্রহণ করা হয়। ৪৮-৩৫ ভোটে জিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল রয়েছেন টার্নবুল। আর হেরে গিয়ে নিজের মন্ত্রিত্ব থেকে সরে যান ডাটন। আর অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন নাটকীয়তার শুরু সেখান থেকেই। এরপর একে একে ডাটনের পথ ধরে ১৩ জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী ইস্তফা দেন। এদিকে টার্নবুল তাঁর সরকারের কোষাধ্যক্ষ স্কট মরিসনকে অভিবাসন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর স্থলাভিষিক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। পরদিন বুধবার (২২ আগস্ট) সরকার কাঠামো অনেকটাই নড়বড়ে হয়ে যায়। টার্নবুল ও ডাটন পক্ষের অন্যান্য সভাসদরা নতুন নেতার প্রসঙ্গ নিয়ে দলীয় বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। নিজ সমর্থকদের জোরালো সমর্থনে ডাটন আবারও টার্নবুলকে চ্যালেঞ্জ করার সিদ্ধান্ত নেন। এ ছাড়া টার্নবুলের পক্ষে থাকা অর্থমন্ত্রী ম্যাথিয়াস কোরম্যান ও তার সমর্থকেরাও টার্নবুলের পাশ থেকে সরে দাঁড়ান। ম্যাথিয়াসের সমর্থন পেলে মঙ্গলবার নির্বাচনের দিনই অস্ট্রেলিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী হতেন পিটার ডাটন।

বৃহস্পতিবার লিবারেল পার্টির দলীয় কোন্দলের নাটকীয়তা চরম উত্তেজনাকর পর্যায়ে পৌঁছায়। আবার প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব নিয়ে চ্যালেঞ্জের সকল আয়োজন করেন ডাটন। কিন্তু ডাটনের সে যোগ্যতা আছে কি না সে প্রশ্ন তুলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী টার্নবুল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডাটন সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য কি না তাই আগে প্রমাণ করতে হবে। ডাটনের দুইটি দাতব্য সংস্থা বেআইনিভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না তা যাচাইয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। আর সে সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী টার্নবুল। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ডাটনের বিরুদ্ধে কোনো আইনি জটিলতা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয় প্রধানমন্ত্রী টার্নবুল। আর কোনো সত্যতা প্রমাণিত হলে সংসদ সদস্য পদ হারাবেন ডাটন। তখন এমনিতেই আর নেতৃত্ব নিয়ে চ্যালেঞ্জ করার যোগ্যতা থাকবে না ডাটনের।

ডাটনকে ভেজা সাঁকোতে উঠিয়ে নতুন ঘোষণা দেন টার্নবুল। প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকতে আর কোনো চ্যালেঞ্জে যাবেন না বলে জানান তিনি। আর দেশটির জাতীয় সংসদও আগামী অধিবেশন পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়। আর তখনই স্কট মরিসন ডাটনের বিপক্ষে প্রধান নেতার আসনের জন্য দলীয় নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। স্কট মরিসন দীর্ঘদিন টার্নবুলের প্রিয়ভাজন হিসেবে সরকার দলে কাজ করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, মরিসনের নেতৃত্বে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা পেছনে টার্নবুলের ইঙ্গিত থাকতে পারে। কেননা, ডাটন মন্ত্রী পদ ছেড়ে দেওয়ার পরপরই সে পদে টার্নবুল মরিসনের নামই সুপারিশ করেছিলেন।

আগামীকাল শুক্রবার ডাটন ও মরিসনের নেতৃত্বের লড়াইয়ের ফলাফল দেখারই প্রস্তুতি নিচ্ছিল অস্ট্রেলিয়াবাসী। আর তখনই পার্টি কক্ষে হাজির নাটকের আরেক রাণী জুলি বিশপ। বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশপ দীর্ঘ ১১ বছর ধরে লিবারেল পার্টির উপনেতা হিসেবে নিযুক্ত আছেন। তিনি ঘোষণা দিলেন ডাটন ও মরিসনের সঙ্গে তিনিও নেতৃত্বের নির্বাচনে লড়বেন। দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর পদের লড়াইয়ে যুক্ত হলেন বিশপ। আর সকলের শংকা তৈরি হলো সেখানটাতেই। জুলি বিশপের জনপ্রিয়তা ডাটন কিংবা মরিসনের চেয়ে অনেকাংশে বেশি বলে দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যমের জরিপে দেখা গিয়েছে। তবে সে যাই হোক, নানান সম্ভাবনার কথা থাকলেও এখন অস্ট্রেলিয়াবাসীর অপেক্ষা শুক্রবারের জন্য। সব কিছু এভাবে চললে শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকালে ও অস্ট্রেলিয়া সময় দুপুরে মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় নতুন প্রধানমন্ত্রীর মুখ দেখবে বিশ্ববাসী।

About Author Information
আপডেট সময় : ১২:১৪:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অগাস্ট ২০১৮
৯২৮ Time View

‘তিন ঘোড়ার দৌড়’ শেষে কে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানা যাবে শুক্রবার

আপডেট সময় : ১২:১৪:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অগাস্ট ২০১৮

দিনভর নাটকীয় ডামাঢোল শেষে আগামীকাল অস্ট্রেলিয়ার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হচ্ছেন—এমন আলোচনা নিয়ে ঘুমোতে গেছেন দেশটির মানুষ। অস্ট্রেলিয়ার সরকার প্রধান কে হবেন তার জানা যাবে আগামীকাল শুক্রবার। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ম্যালকম টার্নবুলের নাম হয়তো বা আর থাকছে না। শুক্রবার লিবারেল দলের প্রধাননেতা পরিবর্তনের দলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হতে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামবেন সদ্য অভিবাসন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদ থেকে সরে যাওয়া পিটার ডাটন, বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ এবং টার্নবুলের বিশ্বস্ত সহকর্মী কোষাধ্যক্ষ স্কট মরিসন। এ ছাড়া লিবারেল দলের অন্যতম নেতা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবটও প্রতিযোগিতায় নেমে যেতে পারেন বলে ধারণা করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। আর সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামীকাল শুক্রবার এ তিন বা চারজনের কেউ হবেন অস্ট্রেলিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী। আপাতত অ্যাবটকে বাদ দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যম নির্বাচনকে বলছে ‘তিন ঘোড়ার দৌড়’।

দলের প্রধাননেতা পরিবর্তনের দাবি নিয়ে গত মঙ্গলবার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলকে চ্যালেঞ্জ করেন পিটার ডাটন। স্বল্প সময়ের মধ্যেই দলের নির্দিষ্ট সদস্যের ভোট গ্রহণ করা হয়। ৪৮-৩৫ ভোটে জিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল রয়েছেন টার্নবুল। আর হেরে গিয়ে নিজের মন্ত্রিত্ব থেকে সরে যান ডাটন। আর অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন নাটকীয়তার শুরু সেখান থেকেই। এরপর একে একে ডাটনের পথ ধরে ১৩ জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী ইস্তফা দেন। এদিকে টার্নবুল তাঁর সরকারের কোষাধ্যক্ষ স্কট মরিসনকে অভিবাসন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর স্থলাভিষিক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। পরদিন বুধবার (২২ আগস্ট) সরকার কাঠামো অনেকটাই নড়বড়ে হয়ে যায়। টার্নবুল ও ডাটন পক্ষের অন্যান্য সভাসদরা নতুন নেতার প্রসঙ্গ নিয়ে দলীয় বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। নিজ সমর্থকদের জোরালো সমর্থনে ডাটন আবারও টার্নবুলকে চ্যালেঞ্জ করার সিদ্ধান্ত নেন। এ ছাড়া টার্নবুলের পক্ষে থাকা অর্থমন্ত্রী ম্যাথিয়াস কোরম্যান ও তার সমর্থকেরাও টার্নবুলের পাশ থেকে সরে দাঁড়ান। ম্যাথিয়াসের সমর্থন পেলে মঙ্গলবার নির্বাচনের দিনই অস্ট্রেলিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী হতেন পিটার ডাটন।

বৃহস্পতিবার লিবারেল পার্টির দলীয় কোন্দলের নাটকীয়তা চরম উত্তেজনাকর পর্যায়ে পৌঁছায়। আবার প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব নিয়ে চ্যালেঞ্জের সকল আয়োজন করেন ডাটন। কিন্তু ডাটনের সে যোগ্যতা আছে কি না সে প্রশ্ন তুলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী টার্নবুল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডাটন সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য কি না তাই আগে প্রমাণ করতে হবে। ডাটনের দুইটি দাতব্য সংস্থা বেআইনিভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না তা যাচাইয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। আর সে সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী টার্নবুল। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ডাটনের বিরুদ্ধে কোনো আইনি জটিলতা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয় প্রধানমন্ত্রী টার্নবুল। আর কোনো সত্যতা প্রমাণিত হলে সংসদ সদস্য পদ হারাবেন ডাটন। তখন এমনিতেই আর নেতৃত্ব নিয়ে চ্যালেঞ্জ করার যোগ্যতা থাকবে না ডাটনের।

ডাটনকে ভেজা সাঁকোতে উঠিয়ে নতুন ঘোষণা দেন টার্নবুল। প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকতে আর কোনো চ্যালেঞ্জে যাবেন না বলে জানান তিনি। আর দেশটির জাতীয় সংসদও আগামী অধিবেশন পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়। আর তখনই স্কট মরিসন ডাটনের বিপক্ষে প্রধান নেতার আসনের জন্য দলীয় নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। স্কট মরিসন দীর্ঘদিন টার্নবুলের প্রিয়ভাজন হিসেবে সরকার দলে কাজ করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, মরিসনের নেতৃত্বে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা পেছনে টার্নবুলের ইঙ্গিত থাকতে পারে। কেননা, ডাটন মন্ত্রী পদ ছেড়ে দেওয়ার পরপরই সে পদে টার্নবুল মরিসনের নামই সুপারিশ করেছিলেন।

আগামীকাল শুক্রবার ডাটন ও মরিসনের নেতৃত্বের লড়াইয়ের ফলাফল দেখারই প্রস্তুতি নিচ্ছিল অস্ট্রেলিয়াবাসী। আর তখনই পার্টি কক্ষে হাজির নাটকের আরেক রাণী জুলি বিশপ। বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশপ দীর্ঘ ১১ বছর ধরে লিবারেল পার্টির উপনেতা হিসেবে নিযুক্ত আছেন। তিনি ঘোষণা দিলেন ডাটন ও মরিসনের সঙ্গে তিনিও নেতৃত্বের নির্বাচনে লড়বেন। দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর পদের লড়াইয়ে যুক্ত হলেন বিশপ। আর সকলের শংকা তৈরি হলো সেখানটাতেই। জুলি বিশপের জনপ্রিয়তা ডাটন কিংবা মরিসনের চেয়ে অনেকাংশে বেশি বলে দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যমের জরিপে দেখা গিয়েছে। তবে সে যাই হোক, নানান সম্ভাবনার কথা থাকলেও এখন অস্ট্রেলিয়াবাসীর অপেক্ষা শুক্রবারের জন্য। সব কিছু এভাবে চললে শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকালে ও অস্ট্রেলিয়া সময় দুপুরে মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় নতুন প্রধানমন্ত্রীর মুখ দেখবে বিশ্ববাসী।