সাংবাদিককে মাদক মামলায় ফাঁসানোয় ২ পরিদর্শকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ
খুলনা প্রতিনিধিঃ
খুলনার স্থানীয় দৈনিক খুলনাঞ্চল পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার এম এ জলিলকে মিথ্যা মাদক মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল। আদালত ওই মামলা থেকে তাঁকে অব্যাহতি দিয়েছেন। একই সঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ বুধবার দুপুরে খুলনা জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইবুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মো. সাইফুজ্জামান হিরো ওই আদেশ দেন।
যাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তাঁরা হলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর খুলনার গোয়েন্দা পরিদর্শক পারভীন আক্তার ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা একই অধিদপ্তরের ক-সার্কেলের পরিদর্শক হাওলাদার মো. সিরাজুল ইসলাম। এদের বিরুদ্ধে মানহানী ও ক্ষতিপূরণের মামলারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদালতের উচ্চমান বেঞ্চ সহকারী মো. ছায়েদুল হক শাহিন জানান, বুধবার ছিল ওই মামলার চার্জ গঠনের জন্য নির্ধারিত দিন। মামলার আসামিপক্ষ ফৌজদারি কাযবিধির ২৬৫-সি ধারা মতে মামলা থেকে অব্যহতি পেতে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের চার্জ গঠন বিষয়ে শুনানী শেষে বিচারক ওই আদেশ দেন।
আদেশে বিচারক উল্লেখ করেন, এম এ জলিলের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ সালের ৩৬ (১) সারণীর ১৪ (খ) ধারার চার্জ গঠনের মূল উপাদান প্লেস অব অকারেন্স (অপরাধ সংগঠনের স্থান) নেই। এ কারণে ফৌজদারি কাযবিধির ২২১ ধারার বিধান অনুযায়ী আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের আইনগত কোনো সুযোগ নেই। তদন্ত কর্মকর্তা তাঁর রিপোর্টে আসামির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করছেন। কিন্তু আসামির দখল ও হেফাজত থেকে কথিত মাদক উদ্ধার ও জব্দ করার বিষয় প্রমাণিত হয়েছে এ ধরণের কোনো কিছু উল্লেখ করেননি।
এ ছাড়া বাদি তাঁর এজাহারে উল্লেখ করেছেন সাংবাদিকতার আড়ালে আসামি এমএ জলিল দীর্ঘদিন ধরে ফেনসিডিল ক্রয়-বিক্রয় করে আসছেন। তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে আসামি এম এ জলিল একজন কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা কী কী দালিলিক এবং মৌখিক স্বাক্ষের ভিত্তিতে আসামিকে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করেছেন তা রিপোর্টে উল্লেখ বা ব্যাখ্যা করেননি। কাজেই সুস্পষ্টভাবে আদালতে প্রতীয়মান হয় এজাহারকারী ও তদন্ত কর্মকর্তা পরিকল্পিতভাবে অসৎ উদ্দেশ্যে এমএ জলিলকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর জন্যই মিথ্যা মামলা ও তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেছেন।
মামলার এজাহারকারী পারভীন আক্তার ও তদন্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে আসামি এমএ জলিলকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের জন্য দেওয়ানি আদালতে এবং মানহানীজনিত কারণে ফৌজদারি আদালতে মামলা দায়ের করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আদালতের আদেশের অনুলিপি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও খুলনার অতিরিক্ত পরিচালক বরাবর প্রেরণের আদেশ দেন।
গত বছরের ৭ জুলাই সকালে খুলনা নগরের সদর থানার মুসলমান পাড়া এলাকার সাংবাদিক এমএ জলিলের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এসময় তাঁর বাড়ির পাশের একটি নালা থেকে ১০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখিয়ে তাঁকে আটক করে নিয়ে যায়। ওই ঘটনায় একই দিন খুলনা সদর থানায় মামলা করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা পরিদর্শক পারভীন আক্তার। এরপর তদন্তকারী কর্মকর্তা একই অধিদপ্তরের ক-সার্কেলের পরিদর্শক হাওলাদার মো. সিরাজুল ইসলাম ২৮ আগস্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
সাংবাদিক জলিল ওই সময় খুলনা প্রেসক্লাবের সহকারী সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া তিনি খুলনা ক্রাইম রিপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ। তাঁকে গ্রেপ্তার করার পর খুলনায় কর্মরত সাংবাদিকরা মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধনসহ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছিলেন।