করোনা আতঙ্কে হাসপাতালে রোগীদের ভীড় নেই
যশোর প্রতিনিধিঃ
করোনা ভাইরাসের কারণে স্বাভাবিক জীবন ছন্দ পতন ঘটেছে। রাস্তাঘাটে কমেছে যানবাহন। লোকসমাগম কমে গেছে সর্বত্র। অনেক এলাকায় চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। করোনার প্রভাব পড়েছে চিকিৎসা খাতেও। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। বহির্বিভাগে নেই নিত্যদিনের ভিড়। আগে হাসপাতালে একটি সিট পেতে ধরনা দিতে হয়েছে দিনের পর দিন। কিন্তু এখন অধিকাংশ ওয়ার্ড প্রায় ফাঁকা। (২৬ মার্চ) বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
হাসপাতাল প্রশাসনিক সূত্রে জানাগেছে, ২৫০ শয্যা বেডের এ হাসপাতালে সবসময়ই রোগী ভর্তি থাকেন সাড়ে ৬শ’ মতো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর হাসপাতালে কমতে শুরু করেছে রোগীর সংখ্যা। হাসপাতালের দেয়া তথ্যমতে, ১ মার্চ এ হাসপাতালে ভর্তি রোগী ছিল ৬শ’ ১৫ জন, ২০ মার্চ তা কমে আসে সাড়ে ৩শ জনে। আর গতকাল ২৫ মার্চ ভর্তি রোগী আছে ১শ’৮ জন। বহির্বিভাগে ১ মার্চ সাড়ে ৭শ’ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে এলেও শনিবার আসেন মাত্র দেড় শ’ জন। বেশির ভাগ রোগী করোনাভাইরাস আতঙ্কে হাসপাতালে ছেড়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। এসব রোগীর স্বজনরা জানান, হাসপাতালে বিভিন্ন রকম রোগী আসছে। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েও কেউ কেউ হাসপাতালে আসতে পারেন। তাই বাড়িতেই নিরাপদ মনে করে চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে তারা হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
মণিরামপুর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সালমা আক্তার জানান, সন্তান প্রসবের জন্য গত ২২ মার্চ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। প্রথমে বেড পায়নি। মেঝেতে কাটাতে হয়েছে। কিন্তু করোনার আতঙ্কে হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে তেমন রোগী নাই। আমিও আজই রিলিজ নিয়ে চলে যাবো।
হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের সিনিয়র নার্স নাসরিন আক্তার জানান, এই হাসপাতালে ২৫০ শয্যার জায়গায় তিনগুণ রোগী ভর্তি থাকে। চিকিৎসা দিতে হিমশিম লেগে যেতো। কিন্তু বর্তমানে মনে হচ্ছে ‘মাছি মারতে হচ্ছে’। আমার চাকুরির জীবনে এই রকম দৃশ্য প্রথম।
তিনি আরো বলেন, রোগীদের সাথে আমরাও করোনা আতঙ্কে রয়েছি। কারণ সেবিকাও ঠিকমতো নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই।
এ বিষয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দীলিপ কুমার রায় বলেন, করোনা আতঙ্কে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমেছে। যা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠান ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে ভাইরাস জনিত জ্বর-সর্দিতে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য আলাদা ইউনিট খোলা হয়েছে। তাছাড়া আমরা রোগীদের করোনা বিষয়ে সচেতন করছি।
যশোর জেলা সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন বলেন, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালসহ সকল উপজেলা হাসপাতালে সাড়ে চারশ’ বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আলাদা আইসুলেশন ওয়ার্ড, সেবিকা, রোগী পরিবহনের জন্য আলাদা অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রয়েছে।