ঢাকা ০৮:২৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আম্পানে লন্ডভন্ড এলাকায় ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব

Reporter Name

খুলনা প্রতিনিধিঃ

অতীতের সকল প্রাকৃতিক দূর্যোগকে হার মানিয়ে উপকূল বাসীকে সর্বহারা করে দিলো আম্পান। ২০ মে বুধবার দিবাগত রাতে দক্ষিণ উপকূল জুড়ে আঘাত হানে আম্পান। এর প্রভাবে কপোতক ও শাকবাড়িয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে, ভাসিয়ে দেয় খুলনার কয়রা উপজেলার ৪টা ইউনিয়ন। উপজেলার উত্তর বেদকাশী, দক্ষিণ বেদকাশী, কয়রা সদর ও মহারাজপুর ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মারাত্মকভাবে। লন্ডভন্ড হয়েছে জনপদ। বিধ্বস্ত হয়েছে ৪০ হাজারের বেশী ঘরবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজার হাজার গাছ-পালা, গৃহপালিত প্রাণী, জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ, ভেসে গেছে মানুষের কাথা-বালিশ, থালা-বাসনসহ নিত্য ব্যবহার্য্য জিনিসপত্র, খাবার পানি ও পানির তিব্র সংকটে ডায়রিয়া সহ পানি বাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।

কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া, নদীর ১২ টি স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। চার দিন যাবৎ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা জুড়ে। দুর্গত মানুষের সংখ্যা লক্ষাধিক। রান্নার ব্যবস্থা না থাকায় অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে বহু মানুষ। সেনিটেশন ব্যাবস্থা না থাকায় যেখানে সেখানে মলমুত্র ত্যাগ, অন্য দিকে মৃত গৃহ পালিত পশু, পাখি ও মিঠা পানির বিপুল পরিমান পচা মাছের দুর্গন্ধে স্বাভাবিক জীবন জাপন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।

বেদকাশী এলাকার রুহুল আমিন সানা, জাহাঙ্গীর কবীর, কুদরত সানা, উত্তর বেদশকাশী এলাকার আতাহার সানা, আইয়ুব আলী সানা বলেন, ত্রান সামগ্রী বলতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যগে সদর ইউনিয়ের ৩৬ পরিবারের মাঝে ২বান্ড ঢেউ টিন, ৬ হাজার টাকা ও হাইজিং কিডস বিতরন করা হয়েছে। যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে থাকা মানুষ গুলো খাদ্যাভাবে আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে দিয়ে উচু রাস্তা বা ঢিবির উপর ঝুপড়ী বেধে মানবতার জীবন জাপন করছে, সেখানেও পানি উঠে গেছে। লবন পানির প্রভাবে এলাকায় ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। আম্পানের ৩দিনে গ্রাম-বাসির সেচ্ছা-শ্রমের ভিত্তিতে শুধু মাত্র লবন পানির ছোবল থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন।

সব চেয়ে বেশি ক্ষতি গ্রস্থ্য কয়রা সদর ইউনিয়নের ২নং কয়রা, হরিণখোলা, ঘাটাখালি বাঁধে সেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে হাজার হাজার মানুষ বাধ বাধার মরন-পণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।লবন পানির হাত থেকে উদ্ধার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষতি গ্রস্থ্য উত্তর বেদকাশী ইউপির গাজিপাড়া, কাশিরহাটখোলা, গাববুনিয়া ও পাথরখালি ও মহারাজপুর ইউনিয়ের দশালিয়া, লোকা হামকুড়ুর গোড়া এলাকার বেড়িবাঁধ। আম্পানের তিনদিন অতিবাহিত হলেও পাউবোর কোনো কর্মকর্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধে আসতে দেখা যায়নি, আজ ২৩ মে পানি সম্পদ সচিব সহ পাউবোর উদ্বোধন ও কর্মকর্তারা এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

উপজেলা ত্রাণ কর্মকর্তা জাফর রানা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ৫০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৭৫ হাজার টাকা সহ ৫০০ প্যাকেট ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দ পাওয়া গেছে, আশ্রয় কেন্দ্র গুলিতে অবস্থানরত মানুষের খাদ্য সামগ্রী দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। তিনি আরো বলেন, বাঁধের কাজে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তিনশতাধীকের একটি টিম কয়রাতে অবস্থান করছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত হরিণখোলা গ্রামের কেরামত আলী (৭৫) বলেন আইলা, সিডর, সহ অনেক বড় বড় ঝড়ের সাথে দেখা হয়েছে কিন্তু এই ঝড় পানির কাছে হেরে গেছি। জোয়ারের তোড়ে ঘর ছেড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে নৌকায় জীবন জাপন করছি। একই কথা বললেন ক্ষতি গ্রস্ত্য এলাকার আর কয়েক জন বৃদ্ধ মানুষ। তাদের একটাই দাবি আমরা ত্রাণ চাই না, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৯:১০:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ মে ২০২০
৩১৫ Time View

আম্পানে লন্ডভন্ড এলাকায় ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব

আপডেট সময় : ০৯:১০:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ মে ২০২০

খুলনা প্রতিনিধিঃ

অতীতের সকল প্রাকৃতিক দূর্যোগকে হার মানিয়ে উপকূল বাসীকে সর্বহারা করে দিলো আম্পান। ২০ মে বুধবার দিবাগত রাতে দক্ষিণ উপকূল জুড়ে আঘাত হানে আম্পান। এর প্রভাবে কপোতক ও শাকবাড়িয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে, ভাসিয়ে দেয় খুলনার কয়রা উপজেলার ৪টা ইউনিয়ন। উপজেলার উত্তর বেদকাশী, দক্ষিণ বেদকাশী, কয়রা সদর ও মহারাজপুর ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মারাত্মকভাবে। লন্ডভন্ড হয়েছে জনপদ। বিধ্বস্ত হয়েছে ৪০ হাজারের বেশী ঘরবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজার হাজার গাছ-পালা, গৃহপালিত প্রাণী, জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ, ভেসে গেছে মানুষের কাথা-বালিশ, থালা-বাসনসহ নিত্য ব্যবহার্য্য জিনিসপত্র, খাবার পানি ও পানির তিব্র সংকটে ডায়রিয়া সহ পানি বাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।

কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া, নদীর ১২ টি স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। চার দিন যাবৎ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা জুড়ে। দুর্গত মানুষের সংখ্যা লক্ষাধিক। রান্নার ব্যবস্থা না থাকায় অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে বহু মানুষ। সেনিটেশন ব্যাবস্থা না থাকায় যেখানে সেখানে মলমুত্র ত্যাগ, অন্য দিকে মৃত গৃহ পালিত পশু, পাখি ও মিঠা পানির বিপুল পরিমান পচা মাছের দুর্গন্ধে স্বাভাবিক জীবন জাপন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।

বেদকাশী এলাকার রুহুল আমিন সানা, জাহাঙ্গীর কবীর, কুদরত সানা, উত্তর বেদশকাশী এলাকার আতাহার সানা, আইয়ুব আলী সানা বলেন, ত্রান সামগ্রী বলতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যগে সদর ইউনিয়ের ৩৬ পরিবারের মাঝে ২বান্ড ঢেউ টিন, ৬ হাজার টাকা ও হাইজিং কিডস বিতরন করা হয়েছে। যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে থাকা মানুষ গুলো খাদ্যাভাবে আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে দিয়ে উচু রাস্তা বা ঢিবির উপর ঝুপড়ী বেধে মানবতার জীবন জাপন করছে, সেখানেও পানি উঠে গেছে। লবন পানির প্রভাবে এলাকায় ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। আম্পানের ৩দিনে গ্রাম-বাসির সেচ্ছা-শ্রমের ভিত্তিতে শুধু মাত্র লবন পানির ছোবল থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন।

সব চেয়ে বেশি ক্ষতি গ্রস্থ্য কয়রা সদর ইউনিয়নের ২নং কয়রা, হরিণখোলা, ঘাটাখালি বাঁধে সেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে হাজার হাজার মানুষ বাধ বাধার মরন-পণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।লবন পানির হাত থেকে উদ্ধার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষতি গ্রস্থ্য উত্তর বেদকাশী ইউপির গাজিপাড়া, কাশিরহাটখোলা, গাববুনিয়া ও পাথরখালি ও মহারাজপুর ইউনিয়ের দশালিয়া, লোকা হামকুড়ুর গোড়া এলাকার বেড়িবাঁধ। আম্পানের তিনদিন অতিবাহিত হলেও পাউবোর কোনো কর্মকর্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধে আসতে দেখা যায়নি, আজ ২৩ মে পানি সম্পদ সচিব সহ পাউবোর উদ্বোধন ও কর্মকর্তারা এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

উপজেলা ত্রাণ কর্মকর্তা জাফর রানা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ৫০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৭৫ হাজার টাকা সহ ৫০০ প্যাকেট ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দ পাওয়া গেছে, আশ্রয় কেন্দ্র গুলিতে অবস্থানরত মানুষের খাদ্য সামগ্রী দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। তিনি আরো বলেন, বাঁধের কাজে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তিনশতাধীকের একটি টিম কয়রাতে অবস্থান করছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত হরিণখোলা গ্রামের কেরামত আলী (৭৫) বলেন আইলা, সিডর, সহ অনেক বড় বড় ঝড়ের সাথে দেখা হয়েছে কিন্তু এই ঝড় পানির কাছে হেরে গেছি। জোয়ারের তোড়ে ঘর ছেড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে নৌকায় জীবন জাপন করছি। একই কথা বললেন ক্ষতি গ্রস্ত্য এলাকার আর কয়েক জন বৃদ্ধ মানুষ। তাদের একটাই দাবি আমরা ত্রাণ চাই না, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই।