ঢাকা ০১:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘তুই ফিরে আয় বাজান’

Reporter Name

জাহিদ হাসান, যশোরঃ

ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে বারবার মোর্ছা যাচ্ছিল লিবিয়ায় খুন হওয়া রাকিবুল ইসলামের মাতা মাহিরুন নেছা। বাবা-মা, ভাই-বোন ও এলাকার মানুষের আহাজারীতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। কেউ কোনভাবেই সাত্বনা দিতে পারছে না তাদের।

জ্ঞান ফিরে এলেই মায়ের আকুতি-আমাগের আর ছাঁদের বাড়ি করা লাগবে না, সংসারে আর স্বচ্ছলতা ফিরানো লাগবে না। তুই ফিরে আয় বাজান; ফিরে আয়! আমার সোনারে আমার কাছে আনি দেন’- রাকিবুলের অভাগী মা, মাহিরুন নেছার এমন আর্তনাদে চোখের পানি সংবারণ করতে পারেনি তাদের বাড়িতে আসা শত শত মানুষ। আদরের ছোট ছেলেকে হারিয়ে অবিরাম কেঁদে চলেছেন তিনি।

একটু স্বচ্ছল জীবনযাপনের জন্যে উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে চার মাস আগে বাড়ি ছেড়েছিলেন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার খাটবাড়িয়া গ্রামের তরুণ রাকিবুল ইসলাম রকি (২০)। জমি বিক্রি আর এনজিও থেকে নেয়র ঋণের টাকা খরচ করে মাত্র সাড়ে চারমাস আগে ছেলেকে পাঠিয়েছিলেন বিদেশে। ছেলের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পাশাপাশি পরিবারের স্বচ্ছ¡লতার কথা ভেবেই লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে তাকে বিদেশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু স্বপ্ন পূরণতো দূরের কথা; সন্তান আর সম্পত্তি হারিয়ে বাকরুদ্ধ ইসরাফিল হোসেন ও তার স্ত্রী মাহিরুন নেছা। দিশেহারা হয়ে পড়েছে পুরো পরিবার।

১৫ ফ্রেব্রুয়ারি লিবিয়ার ত্রিপোলির উদ্দেশ্যে বাড়ি ছাড়ে রাকিবুল। লিবিয়া প্রবাসী চাচাতো ভাই ফিরোজের মাধ্যমে যোগাযোগ হওয়া দালালের সাথে তাদের চুক্তি হয় সাড়ে চার লাখ টাকায়। বাংলাদেশ থেকে বাসে ভারতের কলকাতা, সেখান থেকে প্লেনে মুম্বাই, দুবাই, মিশর হয়ে লিবিয়ার বেনগাজীতে পৌঁছায় রাকিবুল। সেখানে সে দালালের ক্যাম্পে থাকতো। ১৭/১৮ দিন সেখানে অবস্থান করলেও দালাল তাকে ত্রিপোলি পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হয়। তখন রাকিবুল নিজে বেনগাজীতে কাজ খুঁজে নেয়। এ অবস্থায় মে মাসে আব্দুল্লাহ নামে অপর এক দালালের সাথে পরিচিতি হয় রাকিবুলের। এ দালাল তাকে ৭০ হাজার টাকা দিলে ত্রিপোলিতে পৌঁছে দেবে বলে জানিয়েছিল। তার সাথে আরও কয়েক জনসহ ত্রিপোলির উদ্দেশে রওনা হয় রাকিবুল।

গত ১৭ মে তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় বলে জানান তার বড় ভাই সোহেল রানা। তিনি আরও জানান, ১৮ মে তার মোবাইল ফোনে ইমো অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ করে বলা হয়, তার ভাইকে পেতে হলে ১২ হাজার ডলার পৌঁছে দিতে হবে দুবাইতে। না হলে তাকে মেরে ফেলা হবে। তারা লিবিয়া অবস্থানরত তাদের চাচাতো ভাই ফিরোজের সাথে যোগাযোগ করে টাকা দুবাইতে পৌঁছে দিতে চাইলে রাজি হয়নি অপহরণকারীরা।
‘প্রতিদিন সকাল ও বিকালে সোহেল রানাকে ফোন দেয়া হতো এবং নির্যাতনের জখম রাকিবুলের সাথে কথা বলিয়ে দেয়া হতো। রাকিবুল তাদের বলতো,‘আমার জীবন ভিক্ষা দে,তোরা টাকা ম্যানেজ করে দে’। আমি বাড়ি এসে সারা জীবন তোদের গোলামী করে টাকা পরিশোধ করে দেব।

বৃহষ্পতিবার গৃহযুদ্ধকবলিত দেশ লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় মিজদা শহরে ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ অভিবাসীকে খুন করা হয়। তাদেরই একজন এই রাকিবুল ইসলাম রকি।

(৩০মে) শনিবার দুপুরে রাকিবুলের নিজ বাড়ি ঝিকরগাছার শংকরপুর ইউনিয়নের খাটবাড়িয়া গ্রামে যেয়ে দেখা যায়, আদরের ছোট ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবা ইসরাইল হোসেন ও মা মাহেনুর নেছা। ছেলেকে দেখার আকাঙ্খায় তাদের আহাজারি যেন কিছুতেই থামছে না। এলাকার শত শত নারী পুরুষ ছুটে এসেছেন তাদের সান্তনা দেয়ার জন্য। চার ভাইবোনের মধ্যে রাকিবুল সবার ছোট। যে কারণে তাঁর মৃত্যুর খবরে মা-বাবা, ভাই-বোন মুচড়ে পড়েছেন। তাঁদের বাড়িতে এখন শোকের মাতম চলছে।

রাকিবুলের বড় ভাই সোহেল রানা বলেন, উন্নত জীবনের আশায় দেশ ছেড়েছিলেন রাকিবুল। ভালো কাজের জন্য দালালের মাধ্যমে তাকে লিবিয়ায় পাঠানো হয়। কিন্তু শুরু থেকেই দালালেরা তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে থাকে। পরে তাকে আটকে রেখে ১৭ মে মুঠোফোনে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ওই টাকা দুবাই থেকে তারা নিতে চায়। ভাইয়ের মুক্তির জন্য ওই টাকা দিতে রাজিও হয়েছিলেন তারা। আগামী ১ জুন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে সময় নিয়েছিলেন।

কিন্তু এর মধ্যে কী হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারলেন না। তার চাচাতো ভাই সকালে লিবিয়া থেকে ফোন করে জানিয়েছেন, যে ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তার মধ্যে রাকিবুলও রয়েছেন। সোহেল রানা বলেন, ‘আমরা এখন কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না। লাশ কবে দেশে আসবে, তা–ও জানি না।

রাকিবুলের বাবা ইসরাইল হোসেন জানান, রাকিবুল যশোর সরকারি সিটি কলেজে অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। রাকিবুলের চাচাতো ভাই লিবিয়া প্রবাসী। ওই ভাই লিবিয়ায় থাকা এক বাংলাদেশি দালাল আব্দুল্লাহ’র সঙ্গে যোগাযোগ করে রাকিবুলকে লিবিয়ায় নিয়ে যান। চার মাস আগে সাড়ে চার লাখ টাকা খরচ করে রাকিবুলকে লিবিয়ায় পাঠানো হয়েছিলো। পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরানোর ইচ্ছা নিয়ে রাকিবুল বিদেশে পাড়ি জমান। তার চাচাতো ভাই ফিরোজ হোসেনের মাধ্যমে লিবিয়ার দালাল আব্দুল্লাহ’র মাধ্যমে প্রথমে ভারত থেকে দুবাই তারপর মিশর হয়ে তিনি লিবিয়ার ত্রিপুরায় পৌচ্ছে যায়। সেখানে লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় মিজদা শহরে জিম্মি হওয়ার পরে মানব পাচারকারীদদের গুলিতে নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যেও রাকিব নিহত হয়।

তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন এনজিও ভিটেবাড়ি বিক্রি করেও রাকিবের মুক্তপণের টাকা জোগার করা হয়েছিলো। আগামী ১ জুন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে সময় নিয়েছিলেন। কিন্তু এর মধ্যে পাচারকারীরা তাকে গুলিতে হত্যা করে। সরকারের কাছে তাদের দাবী, দ্রæত আইনি প্রক্রিয়া শেষে সন্তানের মরাদেহ বাড়িতে আনতে চাই।

রাকিবুলের মা মাহিরুন নেছা জানান, মুক্তিপণের দাবিতে রাকিবুলকে প্রতিনিয়ত নির্যাতন করতো। মুক্তপণের টাকা জোগাড় করাও হয়েছিলো। আমার ছেলেকে হত্যা করেছে এর বিচার চাই। আমার ছেলেকে দ্রæত দেশে এনে গ্রামেই কবর দিবো। জীবিত ছেলেকে তো আর দেখতে পাবো না! ছেলের কবর দেখেই সান্তনা নিবো।

যশোর- ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনির বলেন, আমি মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহারিয়ার আলমের কাছে দ্রুত লাশ ফেরত চেয়ে ম্যাসেজ পাঠিয়েঠি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটির সদস্য যশোর-৩ আসনের এমপি কাজী নাবিল আহমেদকেও পাঠিয়েছি। তারা আমার কাছে মৃত ব্যক্তির পাসপোর্ট এর ঠিকানা চেয়ে এবং লাশ আনার ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৬:১১:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ মে ২০২০
৪৫১ Time View

‘তুই ফিরে আয় বাজান’

আপডেট সময় : ০৬:১১:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ মে ২০২০

জাহিদ হাসান, যশোরঃ

ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে বারবার মোর্ছা যাচ্ছিল লিবিয়ায় খুন হওয়া রাকিবুল ইসলামের মাতা মাহিরুন নেছা। বাবা-মা, ভাই-বোন ও এলাকার মানুষের আহাজারীতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। কেউ কোনভাবেই সাত্বনা দিতে পারছে না তাদের।

জ্ঞান ফিরে এলেই মায়ের আকুতি-আমাগের আর ছাঁদের বাড়ি করা লাগবে না, সংসারে আর স্বচ্ছলতা ফিরানো লাগবে না। তুই ফিরে আয় বাজান; ফিরে আয়! আমার সোনারে আমার কাছে আনি দেন’- রাকিবুলের অভাগী মা, মাহিরুন নেছার এমন আর্তনাদে চোখের পানি সংবারণ করতে পারেনি তাদের বাড়িতে আসা শত শত মানুষ। আদরের ছোট ছেলেকে হারিয়ে অবিরাম কেঁদে চলেছেন তিনি।

একটু স্বচ্ছল জীবনযাপনের জন্যে উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে চার মাস আগে বাড়ি ছেড়েছিলেন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার খাটবাড়িয়া গ্রামের তরুণ রাকিবুল ইসলাম রকি (২০)। জমি বিক্রি আর এনজিও থেকে নেয়র ঋণের টাকা খরচ করে মাত্র সাড়ে চারমাস আগে ছেলেকে পাঠিয়েছিলেন বিদেশে। ছেলের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পাশাপাশি পরিবারের স্বচ্ছ¡লতার কথা ভেবেই লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে তাকে বিদেশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু স্বপ্ন পূরণতো দূরের কথা; সন্তান আর সম্পত্তি হারিয়ে বাকরুদ্ধ ইসরাফিল হোসেন ও তার স্ত্রী মাহিরুন নেছা। দিশেহারা হয়ে পড়েছে পুরো পরিবার।

১৫ ফ্রেব্রুয়ারি লিবিয়ার ত্রিপোলির উদ্দেশ্যে বাড়ি ছাড়ে রাকিবুল। লিবিয়া প্রবাসী চাচাতো ভাই ফিরোজের মাধ্যমে যোগাযোগ হওয়া দালালের সাথে তাদের চুক্তি হয় সাড়ে চার লাখ টাকায়। বাংলাদেশ থেকে বাসে ভারতের কলকাতা, সেখান থেকে প্লেনে মুম্বাই, দুবাই, মিশর হয়ে লিবিয়ার বেনগাজীতে পৌঁছায় রাকিবুল। সেখানে সে দালালের ক্যাম্পে থাকতো। ১৭/১৮ দিন সেখানে অবস্থান করলেও দালাল তাকে ত্রিপোলি পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হয়। তখন রাকিবুল নিজে বেনগাজীতে কাজ খুঁজে নেয়। এ অবস্থায় মে মাসে আব্দুল্লাহ নামে অপর এক দালালের সাথে পরিচিতি হয় রাকিবুলের। এ দালাল তাকে ৭০ হাজার টাকা দিলে ত্রিপোলিতে পৌঁছে দেবে বলে জানিয়েছিল। তার সাথে আরও কয়েক জনসহ ত্রিপোলির উদ্দেশে রওনা হয় রাকিবুল।

গত ১৭ মে তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় বলে জানান তার বড় ভাই সোহেল রানা। তিনি আরও জানান, ১৮ মে তার মোবাইল ফোনে ইমো অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ করে বলা হয়, তার ভাইকে পেতে হলে ১২ হাজার ডলার পৌঁছে দিতে হবে দুবাইতে। না হলে তাকে মেরে ফেলা হবে। তারা লিবিয়া অবস্থানরত তাদের চাচাতো ভাই ফিরোজের সাথে যোগাযোগ করে টাকা দুবাইতে পৌঁছে দিতে চাইলে রাজি হয়নি অপহরণকারীরা।
‘প্রতিদিন সকাল ও বিকালে সোহেল রানাকে ফোন দেয়া হতো এবং নির্যাতনের জখম রাকিবুলের সাথে কথা বলিয়ে দেয়া হতো। রাকিবুল তাদের বলতো,‘আমার জীবন ভিক্ষা দে,তোরা টাকা ম্যানেজ করে দে’। আমি বাড়ি এসে সারা জীবন তোদের গোলামী করে টাকা পরিশোধ করে দেব।

বৃহষ্পতিবার গৃহযুদ্ধকবলিত দেশ লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় মিজদা শহরে ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ অভিবাসীকে খুন করা হয়। তাদেরই একজন এই রাকিবুল ইসলাম রকি।

(৩০মে) শনিবার দুপুরে রাকিবুলের নিজ বাড়ি ঝিকরগাছার শংকরপুর ইউনিয়নের খাটবাড়িয়া গ্রামে যেয়ে দেখা যায়, আদরের ছোট ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবা ইসরাইল হোসেন ও মা মাহেনুর নেছা। ছেলেকে দেখার আকাঙ্খায় তাদের আহাজারি যেন কিছুতেই থামছে না। এলাকার শত শত নারী পুরুষ ছুটে এসেছেন তাদের সান্তনা দেয়ার জন্য। চার ভাইবোনের মধ্যে রাকিবুল সবার ছোট। যে কারণে তাঁর মৃত্যুর খবরে মা-বাবা, ভাই-বোন মুচড়ে পড়েছেন। তাঁদের বাড়িতে এখন শোকের মাতম চলছে।

রাকিবুলের বড় ভাই সোহেল রানা বলেন, উন্নত জীবনের আশায় দেশ ছেড়েছিলেন রাকিবুল। ভালো কাজের জন্য দালালের মাধ্যমে তাকে লিবিয়ায় পাঠানো হয়। কিন্তু শুরু থেকেই দালালেরা তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে থাকে। পরে তাকে আটকে রেখে ১৭ মে মুঠোফোনে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ওই টাকা দুবাই থেকে তারা নিতে চায়। ভাইয়ের মুক্তির জন্য ওই টাকা দিতে রাজিও হয়েছিলেন তারা। আগামী ১ জুন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে সময় নিয়েছিলেন।

কিন্তু এর মধ্যে কী হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারলেন না। তার চাচাতো ভাই সকালে লিবিয়া থেকে ফোন করে জানিয়েছেন, যে ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তার মধ্যে রাকিবুলও রয়েছেন। সোহেল রানা বলেন, ‘আমরা এখন কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না। লাশ কবে দেশে আসবে, তা–ও জানি না।

রাকিবুলের বাবা ইসরাইল হোসেন জানান, রাকিবুল যশোর সরকারি সিটি কলেজে অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। রাকিবুলের চাচাতো ভাই লিবিয়া প্রবাসী। ওই ভাই লিবিয়ায় থাকা এক বাংলাদেশি দালাল আব্দুল্লাহ’র সঙ্গে যোগাযোগ করে রাকিবুলকে লিবিয়ায় নিয়ে যান। চার মাস আগে সাড়ে চার লাখ টাকা খরচ করে রাকিবুলকে লিবিয়ায় পাঠানো হয়েছিলো। পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরানোর ইচ্ছা নিয়ে রাকিবুল বিদেশে পাড়ি জমান। তার চাচাতো ভাই ফিরোজ হোসেনের মাধ্যমে লিবিয়ার দালাল আব্দুল্লাহ’র মাধ্যমে প্রথমে ভারত থেকে দুবাই তারপর মিশর হয়ে তিনি লিবিয়ার ত্রিপুরায় পৌচ্ছে যায়। সেখানে লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় মিজদা শহরে জিম্মি হওয়ার পরে মানব পাচারকারীদদের গুলিতে নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যেও রাকিব নিহত হয়।

তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন এনজিও ভিটেবাড়ি বিক্রি করেও রাকিবের মুক্তপণের টাকা জোগার করা হয়েছিলো। আগামী ১ জুন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে সময় নিয়েছিলেন। কিন্তু এর মধ্যে পাচারকারীরা তাকে গুলিতে হত্যা করে। সরকারের কাছে তাদের দাবী, দ্রæত আইনি প্রক্রিয়া শেষে সন্তানের মরাদেহ বাড়িতে আনতে চাই।

রাকিবুলের মা মাহিরুন নেছা জানান, মুক্তিপণের দাবিতে রাকিবুলকে প্রতিনিয়ত নির্যাতন করতো। মুক্তপণের টাকা জোগাড় করাও হয়েছিলো। আমার ছেলেকে হত্যা করেছে এর বিচার চাই। আমার ছেলেকে দ্রæত দেশে এনে গ্রামেই কবর দিবো। জীবিত ছেলেকে তো আর দেখতে পাবো না! ছেলের কবর দেখেই সান্তনা নিবো।

যশোর- ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনির বলেন, আমি মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহারিয়ার আলমের কাছে দ্রুত লাশ ফেরত চেয়ে ম্যাসেজ পাঠিয়েঠি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটির সদস্য যশোর-৩ আসনের এমপি কাজী নাবিল আহমেদকেও পাঠিয়েছি। তারা আমার কাছে মৃত ব্যক্তির পাসপোর্ট এর ঠিকানা চেয়ে এবং লাশ আনার ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করার আশ্বাস দিয়েছেন।