ঢাকা ০৭:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসলাম নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের পর ফ্রান্সের প্রতি ভারতের সমর্থন

Reporter Name

ইসলাম নিয়ে ম্যাক্রঁ’র বিতর্কিত মন্তব্যের পর ফ্রান্সের প্রতি ভারতের সমর্থন - ছবি : সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

ফ্রান্সে সম্প্রতি ক্লাসরুমে মহানবী (সাঃ)’র কার্টুন দেখানোর সূত্রে একজন স্কুল শিক্ষকের শিরচ্ছেদের ঘটনার পর ইসলাম ধর্ম নিয়ে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁর সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্যের বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বে যখন প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে ও ফরাসি পণ্য বয়কটের ডাক দেয়া হচ্ছে, তখন কিন্তু ভারতে তার সমর্থনে নানা হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করছে।

ফ্রান্সের প্রতি সংহতিসূচক #আইস্ট্যান্ডইউথফ্রান্স এবং #উইস্ট্যান্ডউইথফ্রান্স ভারতে গত বাহাত্তর ঘন্টা ধরেই ‘টপ ট্রেন্ড’গুলোর মধ্যে উঠে এসেছে।

সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের এই দেশে হাজার হাজার ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়াতে ফ্রান্সের ভূমিকাকে সমর্থন করছেন, প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁর ‘বীরোচিত’ নেতৃত্বকে তারিফ জানাচ্ছেন।

ক্ষমতাসীন দল বিজেপি-র নেতা ও পশ্চিম দিল্লির এমপি পরভেশ সাহিব সিং টুইট করেছেন : ‘সহিষ্ণুতাও ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া উচিত। #আইস্ট্যান্ডইউথফ্রান্স। ফরাসি প্রেসিডেন্ট, আপনি দারুণ কাজ করেছেন।’

প্রথম সারির জাতীয় নিউজ চ্যানেল টিভি-নাইনের সম্পাদক ও অ্যাঙ্কর প্রিয়াঙ্কা দেও জৈন টুইটারে লিখেছেন, ‘একজন খ্রিস্টান/হিন্দু/ইহুদী শিক্ষক যদি ক্লাসে মেরি/কৃষ্ণ/যীশুর কার্টুন দেখান ও তারপর একজন খ্রিস্টান/হিন্দু/ইহুদী তার শিরশ্ছেদ করে তাহলে অবশ্যই সেটা ওই ধর্মের উগ্র মৌলবাদ হিসেবে গণ্য হবে। ইসলাম কেন এর ব্যতিক্রম হবে?’

‘ভারত কা রক্ষক’-সহ বিভিন্ন দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠী, যারা নিজেদের কট্টর দেশপ্রেমী বলে পরিচয় দেয়, তারাও এই বিতর্কে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ-র সমর্থনে সোশ্যাল মিডিয়াতে নানা পোস্ট করেছে।

#ওয়েলডানম্যাক্রঁ কিংবা #ম্যাক্রঁদ্যহিরো-র মতো নতুন নতুন নানা হ্যাশট্যাগও ভারতে উঠে আসছে, অনেকে এখন আরো বেশি করে ফরাসি জিনিসপত্র কেনারও ডাক দিচ্ছেন।

আর এই সবই ঘটছে এমন একটা পটভূমিতে, যখন ভারতে গত বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বারে বারেই মুসলিম-বিরোধী নীতি অনুসরণ করার অভিযোগ উঠেছে।

ফ্রান্স ও ইসলামকে কেন্দ্র করে এই চলমান বিতর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত সরকার অবশ্য এখনো কোনো বিবৃতি দেয়নি। তবে শাসক দল বিজেপির নেতারা অনেকেই তাদের মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

গত ডিসেম্বরেই ভারত সরকার একটি বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন পাস করেছিল, যাতে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভারতের নাগরিকত্ব দেয়ার প্রস্তাব করা হলেও মুসলিমদের তা থেকে বঞ্চিত করা হয়।

সেই নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সূত্র ধরে গত ফেব্রুয়ারিতে রাজধানী দিল্লিতে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাও শুরু হয়, যাতে হতাহতদের বেশির ভাগই ছিলেন মুসলিম।

তার আগের কয়েক বছরেও ভারতের নানা প্রান্তে ‘বিফ’ বা গরুর মাংস বহন করার অভিযোগে বহু মুসলিমকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। সেই সব ঘটনায় অপরাধীদের কারো শাস্তি হয়নি বললেই চলে।

দেশের ভেতরে এভাবে যখন একটা মুসলিম-বিরোধী বাতাবরণ ক্রমশ প্রশ্রয় পেয়েছে, তখন দেশের বাইরেও কিন্তু ফ্রান্সের সাথে ভারতের কূটনৈতিক ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে।

২০১৬ সালে ভারত সরকার ৩৬টি অত্যাধুনিক রাফাল ফাইটার জেট কেনার জন্য ফ্রান্সের সাথে একটি বিতর্কিত প্রতিরক্ষা চুক্তিও করেছিল।

সেই যুদ্ধবিমানগুলোর প্রথম ব্যাচের পাঁচটি মাসকয়েক আগেই ভারতে এসে পৌঁছেছে, আর সেগুলো আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভারতকে বিরাট সুবিধা এনে দেবে বলেই সামরিক বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন।

এই পটভূমিতে ভারত যে এখন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁর সমালোচনা করে কোনো পদক্ষেপ নেবে না, পর্যবেক্ষকরাও সে বিষয়ে একমত। আর ভারতের সোশ্যাল মিডিয়াতেও দেখা যাচ্ছে তারই প্রতিফলন – যেখানে ফ্রান্সের সমর্থনে কার্যত ঝড় উঠেছে!

সূত্র: বিবিসি

About Author Information
আপডেট সময় : ০৯:১৫:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ অক্টোবর ২০২০
২৬৭ Time View

ইসলাম নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের পর ফ্রান্সের প্রতি ভারতের সমর্থন

আপডেট সময় : ০৯:১৫:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ অক্টোবর ২০২০

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

ফ্রান্সে সম্প্রতি ক্লাসরুমে মহানবী (সাঃ)’র কার্টুন দেখানোর সূত্রে একজন স্কুল শিক্ষকের শিরচ্ছেদের ঘটনার পর ইসলাম ধর্ম নিয়ে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁর সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্যের বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বে যখন প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে ও ফরাসি পণ্য বয়কটের ডাক দেয়া হচ্ছে, তখন কিন্তু ভারতে তার সমর্থনে নানা হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করছে।

ফ্রান্সের প্রতি সংহতিসূচক #আইস্ট্যান্ডইউথফ্রান্স এবং #উইস্ট্যান্ডউইথফ্রান্স ভারতে গত বাহাত্তর ঘন্টা ধরেই ‘টপ ট্রেন্ড’গুলোর মধ্যে উঠে এসেছে।

সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের এই দেশে হাজার হাজার ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়াতে ফ্রান্সের ভূমিকাকে সমর্থন করছেন, প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁর ‘বীরোচিত’ নেতৃত্বকে তারিফ জানাচ্ছেন।

ক্ষমতাসীন দল বিজেপি-র নেতা ও পশ্চিম দিল্লির এমপি পরভেশ সাহিব সিং টুইট করেছেন : ‘সহিষ্ণুতাও ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া উচিত। #আইস্ট্যান্ডইউথফ্রান্স। ফরাসি প্রেসিডেন্ট, আপনি দারুণ কাজ করেছেন।’

প্রথম সারির জাতীয় নিউজ চ্যানেল টিভি-নাইনের সম্পাদক ও অ্যাঙ্কর প্রিয়াঙ্কা দেও জৈন টুইটারে লিখেছেন, ‘একজন খ্রিস্টান/হিন্দু/ইহুদী শিক্ষক যদি ক্লাসে মেরি/কৃষ্ণ/যীশুর কার্টুন দেখান ও তারপর একজন খ্রিস্টান/হিন্দু/ইহুদী তার শিরশ্ছেদ করে তাহলে অবশ্যই সেটা ওই ধর্মের উগ্র মৌলবাদ হিসেবে গণ্য হবে। ইসলাম কেন এর ব্যতিক্রম হবে?’

‘ভারত কা রক্ষক’-সহ বিভিন্ন দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠী, যারা নিজেদের কট্টর দেশপ্রেমী বলে পরিচয় দেয়, তারাও এই বিতর্কে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ-র সমর্থনে সোশ্যাল মিডিয়াতে নানা পোস্ট করেছে।

#ওয়েলডানম্যাক্রঁ কিংবা #ম্যাক্রঁদ্যহিরো-র মতো নতুন নতুন নানা হ্যাশট্যাগও ভারতে উঠে আসছে, অনেকে এখন আরো বেশি করে ফরাসি জিনিসপত্র কেনারও ডাক দিচ্ছেন।

আর এই সবই ঘটছে এমন একটা পটভূমিতে, যখন ভারতে গত বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বারে বারেই মুসলিম-বিরোধী নীতি অনুসরণ করার অভিযোগ উঠেছে।

ফ্রান্স ও ইসলামকে কেন্দ্র করে এই চলমান বিতর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত সরকার অবশ্য এখনো কোনো বিবৃতি দেয়নি। তবে শাসক দল বিজেপির নেতারা অনেকেই তাদের মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

গত ডিসেম্বরেই ভারত সরকার একটি বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন পাস করেছিল, যাতে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভারতের নাগরিকত্ব দেয়ার প্রস্তাব করা হলেও মুসলিমদের তা থেকে বঞ্চিত করা হয়।

সেই নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সূত্র ধরে গত ফেব্রুয়ারিতে রাজধানী দিল্লিতে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাও শুরু হয়, যাতে হতাহতদের বেশির ভাগই ছিলেন মুসলিম।

তার আগের কয়েক বছরেও ভারতের নানা প্রান্তে ‘বিফ’ বা গরুর মাংস বহন করার অভিযোগে বহু মুসলিমকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। সেই সব ঘটনায় অপরাধীদের কারো শাস্তি হয়নি বললেই চলে।

দেশের ভেতরে এভাবে যখন একটা মুসলিম-বিরোধী বাতাবরণ ক্রমশ প্রশ্রয় পেয়েছে, তখন দেশের বাইরেও কিন্তু ফ্রান্সের সাথে ভারতের কূটনৈতিক ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে।

২০১৬ সালে ভারত সরকার ৩৬টি অত্যাধুনিক রাফাল ফাইটার জেট কেনার জন্য ফ্রান্সের সাথে একটি বিতর্কিত প্রতিরক্ষা চুক্তিও করেছিল।

সেই যুদ্ধবিমানগুলোর প্রথম ব্যাচের পাঁচটি মাসকয়েক আগেই ভারতে এসে পৌঁছেছে, আর সেগুলো আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভারতকে বিরাট সুবিধা এনে দেবে বলেই সামরিক বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন।

এই পটভূমিতে ভারত যে এখন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁর সমালোচনা করে কোনো পদক্ষেপ নেবে না, পর্যবেক্ষকরাও সে বিষয়ে একমত। আর ভারতের সোশ্যাল মিডিয়াতেও দেখা যাচ্ছে তারই প্রতিফলন – যেখানে ফ্রান্সের সমর্থনে কার্যত ঝড় উঠেছে!

সূত্র: বিবিসি