ঢাকা ০১:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফসলের শত্রু ইঁদুর নিধন করছে আবুলের বাঁশকল

Reporter Name

বিশেষ প্রতিনিধিঃ

সাদাসিধে মানুষ কৃষকবান্ধব আবুল হোসেন জোয়ার্দার। বয়স ৮২। পেশায় পল্লী পশু চিকিৎসক। সাথে সাথে বিগত প্রায় ৫০ বছর ধরে মানুষের ফসলের শত্রু ইঁদুর নিধন করে এ পর্যন্ত প্রায় ২ লক্ষাধিক ইঁদুর নিধন করেছেন। এ কাজে ব্যবহার করেন নিজের তৈরী বাঁশকল বা (ফাঁদ) মৃত ইঁদুরের লেজ জমা দিয়ে সরকারী ইদুর নিধন দিবসে উপজেলা থেকে কয়েকবার সন্মাননাও পেয়েছেন। বয়োবৃদ্ধ আবুল হোসেন ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের জামাল ইউনিয়নের উল্ল্যা গ্রামের বাসিন্দা।

গত শনিবার সরেজমিনে আবুল হোসেনের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, তার বাড়িতে বাঁশ দিয়ে তৈরী করা রয়েছে প্রায় শতাধিক বাঁশকল বা ফাঁদ। বাড়ির অন্যপাশে তৈরী করা হচ্ছে আরও অনেকগুলো। বসতবাড়ি ও ফসলী ক্ষেতে ইদুরের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে এলাকার কৃষকেরা তার বাড়িতে এসে বিনামূল্যে বাঁশকল নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। টিনের তৈরী একটি চালা ঘরে বেশ কিছু টিনের কৌটার মধ্যে সংরক্ষণ করা হচ্ছে মরা ইদুরের অসংখ্য শুকনো লেজ। যা তিনি উপজেলাতে জমা দেয়ার অপেক্ষায় আছেন।

আবুল হোসেন জোয়ার্দার জানান, ১৯৬৯ সালে চট্রগ্রামের বাবুনগর মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাশ করে তিনি পল্লী পশু চিকিৎসক হিসেবে বিশেষ কোর্স শেষ করেন। এরপর বিস্তর এলাকায় শুরু করেন পশু চিকিৎসেবা। এ কাজের পাশাপাশি অবসর সময়ে শুরু করেন কৃষকের কষ্টার্জিত ফসল নিধনের শত্রু ইদুর নিধন। তিনি বলেন, কৃষকেরা অনেক কষ্ট করে পয়সা ব্যয় করে ্ফসল উৎপাদন করেন। সেই ফসল ইদুরে বিনষ্ট করে। এটা তাদের জন্য বড় ধরনের এক ক্ষতি। তাই কৃষকদের উপকারে তিনি শুরু করেন ইঁদুর নিধন। যা এখন নেশায় পরিণত হয়েছে। প্রথমে বাজারের কেনা কল বা ফাঁদ ব্যবহার করতেন। এ ফাঁদে তেমন একটা কাজ করে না। তাছাড়াও ব্যয়বহুল হওয়ায় পরে মাথা খাটিয়ে বাড়িতে বাঁশ দিয়ে তৈরী করেন বিশেষ ফাঁদ বাঁশকল। তার এ চেষ্টা আজ সফল হয়েছে। এলাকায় এটা আবুলের বাঁশকল হিসেবে ব্যপক পরিচিত। ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষের সময় এ ফাঁদগুলো নিজের উদ্যোগে মাঠের বিভিন্ন ক্ষেতে নিজ উদ্যোগে পেতে রাখেন। কয়েক দিন পরে দেখেন অনেক ইদুর ফাঁদে আটকা পড়েছে। অনেকগুলো মারাও গেছে। আবার অনেকে তার বাড়িতে এসে বলে যান ক্ষেতে বেশি ইঁদুর বাসা করলে। সময় বুঝে অনেকগুলো কল নিয়ে বসে থেকে তিনি চালান বিশেষ অভিযান।

আবুল হোসেন আরও জানান, এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রামের মাঠে তার কয়েক হাজার বাঁশকল পাতা আছে। এখন আমন ধানের মৌসুম চলছে। মৌসুম শেষ হচ্ছে প্রত্যেক মাঠ থেকে বাঁশকলগুলো বাড়িতে আনা শুরু করেছেন। আবার রবি শস্য পাকলে দেয়া হবে। এ মৌসুম শেষ হতে না হতেই আবার বোরো মৌসুমের ধান পাকা শুরু হবে। তখন আবার সেখানে ফাঁদগুলো পাতা হবে। তিনি আরও বলেন, শুধু পেতে আসলেই হয় না। মাঝে মধ্যে আবার মাঠের ফাঁদগুলো দেখে আসতে হয়। বাঁশকলের মধ্যে খাবার ফুরিয়ে গেলে আবার খাবার দেয়া লাগে। আর আটকা পড়া ইঁদুরগুলো বের করে নিয়ে লেজ কেটে নিয়ে দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা ও পরিবেশ সুরক্ষায় মাটি খানিকটা গর্ত করে মরা ইঁদুরের দেহাবশেষ পুতে রাখেন। লেজগুলো বাড়িতে এনে প্রথমে রোদে শুকান। পরে এগুলোকে জ্বলন্ত আগুনে বিশেষ প্রক্রিয়্য়া ছেকে জীবানুমুক্ত করে শুকিয়ে বিশেষ কৌটায় ভরে রাখেন। বছরের ইঁদুর নিধন সপ্তাহে ইউ এনও অফিসের মাধ্যমে কৃষি অফিসে জমা দেন। লেজ জমা দিয়ে এ পর্যন্ত তিনিই প্রতিবছর সেরা হন। দুর-দুরান্ত থেকে অনেকে এসে ফাঁদ নিয়ে যায়। এটা তিনি কৃষকসেবা হিসেবে মনে করেন। ইঁদুর একটি ইতর প্রাণী। এর শরীরে রোগ জীবানু থাকতে পারে। আর মুলদেহ মাটিতে গর্ত করে পুতে রাখেন। লেজগুলো প্রথমে ভালো করে রোদে শুকান। পরে আগুনে সেক দিয়ে শুকনা করে কৌটায় ভরে রাখেন। ইঁদুরের শরীরে নানা রোগ জীবানু রয়েছে। কামড়ও দিয়েছে অনেকবার কিন্ত নিজে সরে আসেননি। প্রথম দিকে পরিবারের সকলে বাধা দিতেন। কিন্ত এখন কৃষকের সেবার কথা ভেবে আর কেউ কিছু বলেন না।

তিনি বলেন, প্রায় ৫০ বছর ধরে তিনি এ কাজ করছেন। তার দাবি- এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২ লক্ষাধিক ইঁদুর নিধন করেছেন। আগে লেজসহ মরা ইঁদুর মাটিতে পুতে রাখতেন। কিন্ত সরকারীভাবে যেদিন থেকে ইঁদুর নিধনের গুরুত দেয়া হয়েছে সেদিন থেকেই আরও বেশি উৎসাহিত হয়েছেন।

উল্ল্যা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মোমিন জানান, আমি ছোটবেলা থেকে গ্রামের আবুল হোসেনকে দেখছি পশু পাখি চিকিৎসাসহ কৃষকের ফসলীক্ষেত, বসতবাড়ির ইঁদুর মেরে সেবা দিচ্ছেন। তার তৈরী ইঁদুর মারার বাঁশকল বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ বিনামূল্যে নিয়ে যান। কোন কোন সময়ে তিনি বিভিন্ন গ্রামের মাঠে গিয়ে নিজের বাঁশকল পেতে একটু দুরে বসে থাকেন। তার এ সেবাটা সকলের জন্য উপকারে আসে।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা হুমায়ন কবির জানান, কৃষকদের ফসলী ক্ষেতের জন্য ইঁদুর অত্যন্ত ক্ষতিকর।তাছাড়া কমপক্ষে ৬০ রোগের জীবাণু বহন করে। এই ইঁদুর নিধনে আবুল হোসেন নিজের তৈরী বাঁশকল দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকা রাখছে। প্রতিবছর তিনি প্রচুর পরিমানে ইদুরের লেজ জমা দেন। তিনি কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের এক তথ্যে জেনেছেন ইঁদুর খুব দ্রুত বংশ বিস্তার ঘটায়। ইঁদুরের গর্ভধারনকাল ১৮- থেকে ২২ দিন পর্যন্ত হয়। বাচ্চা প্রসবের পরে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আবার গর্ভধারন করতে পারে। ফলে বোঝায় যাচ্ছে নিধন করা কতটা জরুরী। যে কাজটি আবুল হোসেন বিনা পারিশ্রমিকে করে থাকেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিকদার মুহাম্মদ মোহায়মেন আক্তার জানান, ইঁদুর পাকা ধান,গম, রবিশস্য, সবজি, বাসা বাড়ির কাগজপত্র,কাপড় চোপড়সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নষ্ট করে। কৃষি জরিপে দেখা গেছে, ইঁদুর বেশিরভাগ সেচনালা গর্ত করে পানির অপচয় ঘটায়। ফসল কাটার পূর্বে ধান ক্ষেত ৫ থেকে ১৭ ভাগ পর্যন্ত নষ্ট করে। অবাক তথ্য দিয়ে বলেন, ১০০ টি ইদুর বছরে ১ টন খাদ্য খেয়ে ফেলতে পারে। এ ইদুর নিধনের জন্য উপকারী প্রাণী পেচা, শিয়াল, বেজি, বন বিড়াল, সাপ, গুই সাপ, বিড়াল জাতীয় প্রাণী কমে যাওয়ায় মাঠে ও বাসা বাড়িতে ইঁদুর বেড়ে যাচ্ছে জ্যামিতিক হারে। কিন্ত স্বেচ্চায় আবুল হোসেন তার উদ্ভাবিত বাঁশকল কৃষকদের সেবা প্রদান করছেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সূবর্ণা রানী সাহা জানান, ফসলী ক্ষেতের জন্য ইঁদুর একটি ভয়ানক শত্রু । প্রতিবছর সরকারীভাবে ইঁদুর নিধন সপ্তাহ দিয়ে ঈঁদুর নিধনে কাজ করা হয়। কৃষকদেরকে ইঁদুর নিধনে উৎসাহিত করতে মরা ইঁদুরের লেজ জমা নিয়ে জমাদানকারীকে সন্মাননা প্রদান করা হয়। এ উপজেলায় আবুল হোসেন জোয়ার্দার প্রতিবছরই সকলের চেয়ে বেশি জমা দিয়ে আসছেন। তার নিজের প্রযুক্তিতে তৈরী বাঁশকল এলাকার সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য। বিনা পারিশ্রমিকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত যে সেবাটা দিচ্ছেন বলা যায় আবুল হোসেনই কৃষকদের প্রকৃত বন্ধু। তিনি অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ারযোগ্য।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৬:৪৪:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২০
৬৮২ Time View

ফসলের শত্রু ইঁদুর নিধন করছে আবুলের বাঁশকল

আপডেট সময় : ০৬:৪৪:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২০

বিশেষ প্রতিনিধিঃ

সাদাসিধে মানুষ কৃষকবান্ধব আবুল হোসেন জোয়ার্দার। বয়স ৮২। পেশায় পল্লী পশু চিকিৎসক। সাথে সাথে বিগত প্রায় ৫০ বছর ধরে মানুষের ফসলের শত্রু ইঁদুর নিধন করে এ পর্যন্ত প্রায় ২ লক্ষাধিক ইঁদুর নিধন করেছেন। এ কাজে ব্যবহার করেন নিজের তৈরী বাঁশকল বা (ফাঁদ) মৃত ইঁদুরের লেজ জমা দিয়ে সরকারী ইদুর নিধন দিবসে উপজেলা থেকে কয়েকবার সন্মাননাও পেয়েছেন। বয়োবৃদ্ধ আবুল হোসেন ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের জামাল ইউনিয়নের উল্ল্যা গ্রামের বাসিন্দা।

গত শনিবার সরেজমিনে আবুল হোসেনের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, তার বাড়িতে বাঁশ দিয়ে তৈরী করা রয়েছে প্রায় শতাধিক বাঁশকল বা ফাঁদ। বাড়ির অন্যপাশে তৈরী করা হচ্ছে আরও অনেকগুলো। বসতবাড়ি ও ফসলী ক্ষেতে ইদুরের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে এলাকার কৃষকেরা তার বাড়িতে এসে বিনামূল্যে বাঁশকল নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। টিনের তৈরী একটি চালা ঘরে বেশ কিছু টিনের কৌটার মধ্যে সংরক্ষণ করা হচ্ছে মরা ইদুরের অসংখ্য শুকনো লেজ। যা তিনি উপজেলাতে জমা দেয়ার অপেক্ষায় আছেন।

আবুল হোসেন জোয়ার্দার জানান, ১৯৬৯ সালে চট্রগ্রামের বাবুনগর মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাশ করে তিনি পল্লী পশু চিকিৎসক হিসেবে বিশেষ কোর্স শেষ করেন। এরপর বিস্তর এলাকায় শুরু করেন পশু চিকিৎসেবা। এ কাজের পাশাপাশি অবসর সময়ে শুরু করেন কৃষকের কষ্টার্জিত ফসল নিধনের শত্রু ইদুর নিধন। তিনি বলেন, কৃষকেরা অনেক কষ্ট করে পয়সা ব্যয় করে ্ফসল উৎপাদন করেন। সেই ফসল ইদুরে বিনষ্ট করে। এটা তাদের জন্য বড় ধরনের এক ক্ষতি। তাই কৃষকদের উপকারে তিনি শুরু করেন ইঁদুর নিধন। যা এখন নেশায় পরিণত হয়েছে। প্রথমে বাজারের কেনা কল বা ফাঁদ ব্যবহার করতেন। এ ফাঁদে তেমন একটা কাজ করে না। তাছাড়াও ব্যয়বহুল হওয়ায় পরে মাথা খাটিয়ে বাড়িতে বাঁশ দিয়ে তৈরী করেন বিশেষ ফাঁদ বাঁশকল। তার এ চেষ্টা আজ সফল হয়েছে। এলাকায় এটা আবুলের বাঁশকল হিসেবে ব্যপক পরিচিত। ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষের সময় এ ফাঁদগুলো নিজের উদ্যোগে মাঠের বিভিন্ন ক্ষেতে নিজ উদ্যোগে পেতে রাখেন। কয়েক দিন পরে দেখেন অনেক ইদুর ফাঁদে আটকা পড়েছে। অনেকগুলো মারাও গেছে। আবার অনেকে তার বাড়িতে এসে বলে যান ক্ষেতে বেশি ইঁদুর বাসা করলে। সময় বুঝে অনেকগুলো কল নিয়ে বসে থেকে তিনি চালান বিশেষ অভিযান।

আবুল হোসেন আরও জানান, এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রামের মাঠে তার কয়েক হাজার বাঁশকল পাতা আছে। এখন আমন ধানের মৌসুম চলছে। মৌসুম শেষ হচ্ছে প্রত্যেক মাঠ থেকে বাঁশকলগুলো বাড়িতে আনা শুরু করেছেন। আবার রবি শস্য পাকলে দেয়া হবে। এ মৌসুম শেষ হতে না হতেই আবার বোরো মৌসুমের ধান পাকা শুরু হবে। তখন আবার সেখানে ফাঁদগুলো পাতা হবে। তিনি আরও বলেন, শুধু পেতে আসলেই হয় না। মাঝে মধ্যে আবার মাঠের ফাঁদগুলো দেখে আসতে হয়। বাঁশকলের মধ্যে খাবার ফুরিয়ে গেলে আবার খাবার দেয়া লাগে। আর আটকা পড়া ইঁদুরগুলো বের করে নিয়ে লেজ কেটে নিয়ে দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা ও পরিবেশ সুরক্ষায় মাটি খানিকটা গর্ত করে মরা ইঁদুরের দেহাবশেষ পুতে রাখেন। লেজগুলো বাড়িতে এনে প্রথমে রোদে শুকান। পরে এগুলোকে জ্বলন্ত আগুনে বিশেষ প্রক্রিয়্য়া ছেকে জীবানুমুক্ত করে শুকিয়ে বিশেষ কৌটায় ভরে রাখেন। বছরের ইঁদুর নিধন সপ্তাহে ইউ এনও অফিসের মাধ্যমে কৃষি অফিসে জমা দেন। লেজ জমা দিয়ে এ পর্যন্ত তিনিই প্রতিবছর সেরা হন। দুর-দুরান্ত থেকে অনেকে এসে ফাঁদ নিয়ে যায়। এটা তিনি কৃষকসেবা হিসেবে মনে করেন। ইঁদুর একটি ইতর প্রাণী। এর শরীরে রোগ জীবানু থাকতে পারে। আর মুলদেহ মাটিতে গর্ত করে পুতে রাখেন। লেজগুলো প্রথমে ভালো করে রোদে শুকান। পরে আগুনে সেক দিয়ে শুকনা করে কৌটায় ভরে রাখেন। ইঁদুরের শরীরে নানা রোগ জীবানু রয়েছে। কামড়ও দিয়েছে অনেকবার কিন্ত নিজে সরে আসেননি। প্রথম দিকে পরিবারের সকলে বাধা দিতেন। কিন্ত এখন কৃষকের সেবার কথা ভেবে আর কেউ কিছু বলেন না।

তিনি বলেন, প্রায় ৫০ বছর ধরে তিনি এ কাজ করছেন। তার দাবি- এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২ লক্ষাধিক ইঁদুর নিধন করেছেন। আগে লেজসহ মরা ইঁদুর মাটিতে পুতে রাখতেন। কিন্ত সরকারীভাবে যেদিন থেকে ইঁদুর নিধনের গুরুত দেয়া হয়েছে সেদিন থেকেই আরও বেশি উৎসাহিত হয়েছেন।

উল্ল্যা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মোমিন জানান, আমি ছোটবেলা থেকে গ্রামের আবুল হোসেনকে দেখছি পশু পাখি চিকিৎসাসহ কৃষকের ফসলীক্ষেত, বসতবাড়ির ইঁদুর মেরে সেবা দিচ্ছেন। তার তৈরী ইঁদুর মারার বাঁশকল বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ বিনামূল্যে নিয়ে যান। কোন কোন সময়ে তিনি বিভিন্ন গ্রামের মাঠে গিয়ে নিজের বাঁশকল পেতে একটু দুরে বসে থাকেন। তার এ সেবাটা সকলের জন্য উপকারে আসে।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা হুমায়ন কবির জানান, কৃষকদের ফসলী ক্ষেতের জন্য ইঁদুর অত্যন্ত ক্ষতিকর।তাছাড়া কমপক্ষে ৬০ রোগের জীবাণু বহন করে। এই ইঁদুর নিধনে আবুল হোসেন নিজের তৈরী বাঁশকল দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকা রাখছে। প্রতিবছর তিনি প্রচুর পরিমানে ইদুরের লেজ জমা দেন। তিনি কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের এক তথ্যে জেনেছেন ইঁদুর খুব দ্রুত বংশ বিস্তার ঘটায়। ইঁদুরের গর্ভধারনকাল ১৮- থেকে ২২ দিন পর্যন্ত হয়। বাচ্চা প্রসবের পরে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আবার গর্ভধারন করতে পারে। ফলে বোঝায় যাচ্ছে নিধন করা কতটা জরুরী। যে কাজটি আবুল হোসেন বিনা পারিশ্রমিকে করে থাকেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিকদার মুহাম্মদ মোহায়মেন আক্তার জানান, ইঁদুর পাকা ধান,গম, রবিশস্য, সবজি, বাসা বাড়ির কাগজপত্র,কাপড় চোপড়সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নষ্ট করে। কৃষি জরিপে দেখা গেছে, ইঁদুর বেশিরভাগ সেচনালা গর্ত করে পানির অপচয় ঘটায়। ফসল কাটার পূর্বে ধান ক্ষেত ৫ থেকে ১৭ ভাগ পর্যন্ত নষ্ট করে। অবাক তথ্য দিয়ে বলেন, ১০০ টি ইদুর বছরে ১ টন খাদ্য খেয়ে ফেলতে পারে। এ ইদুর নিধনের জন্য উপকারী প্রাণী পেচা, শিয়াল, বেজি, বন বিড়াল, সাপ, গুই সাপ, বিড়াল জাতীয় প্রাণী কমে যাওয়ায় মাঠে ও বাসা বাড়িতে ইঁদুর বেড়ে যাচ্ছে জ্যামিতিক হারে। কিন্ত স্বেচ্চায় আবুল হোসেন তার উদ্ভাবিত বাঁশকল কৃষকদের সেবা প্রদান করছেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সূবর্ণা রানী সাহা জানান, ফসলী ক্ষেতের জন্য ইঁদুর একটি ভয়ানক শত্রু । প্রতিবছর সরকারীভাবে ইঁদুর নিধন সপ্তাহ দিয়ে ঈঁদুর নিধনে কাজ করা হয়। কৃষকদেরকে ইঁদুর নিধনে উৎসাহিত করতে মরা ইঁদুরের লেজ জমা নিয়ে জমাদানকারীকে সন্মাননা প্রদান করা হয়। এ উপজেলায় আবুল হোসেন জোয়ার্দার প্রতিবছরই সকলের চেয়ে বেশি জমা দিয়ে আসছেন। তার নিজের প্রযুক্তিতে তৈরী বাঁশকল এলাকার সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য। বিনা পারিশ্রমিকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত যে সেবাটা দিচ্ছেন বলা যায় আবুল হোসেনই কৃষকদের প্রকৃত বন্ধু। তিনি অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ারযোগ্য।