অন্ধকার কক্ষে যুবককে ডেকে নেন তরুণী, অতঃপর..
সবুজদেশ রিপোর্টঃ
আবছা আলো-অন্ধকার। রুমের ভেতরে কয়েকটি বিছানা। প্রতি বিছানা ঘেরা কালো পর্দা দিয়ে। মিষ্টি হাসির আভা ছড়িয়ে মেয়েটি সেখানেই ডেকে নেয় হাসানকে। মাহমুদ হাসান। পয়ত্রিশ বছর বয়সী যুবক। ব্যবসা করেন। প্রথমবার এখানে এসেছেন।ফর্সা, লম্বা, স্লীম মেয়েটি কোনো কথা বলেনি। কিন্তু তার চোখ, মুখ যেনো অনেক কথাই বলছিলো। ওয়েস্টার্ন পোশাকে চরম আবেদনময়ী লাগছিলো তাকে। হাসান এগিয়ে যান।
এবার তরুণী কথা বলেন। মিষ্টি হাসির আভা ছড়িয়ে বলেন, প্যান্ট-শার্ট খুলেন। একটু জড়তা কাজ করে হাসানের মধ্যে। মুহূর্তের মধ্যেই যেই কথা সেই কাজ। ততক্ষণে একটি বাটি হাতে দাঁড়িয়ে তরুণী। শরীরের উপরে ও নিচে গোলাপী রঙের দুটি অর্ন্তবাস ছাড়া তরুণীর পড়নে আর কিছু নেই। হাসানের শরীরে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। তরুণী একটি তোয়ালে এগিয়ে দেন। ইশারা দেন, বাকি বস্ত্র থেকেও শরীরকে মুক্ত করতে হবে। হাসান তাই করেন। তারপর শুরু হয় ম্যাসেজ। হাসানকে নিয়ে শুইয়ে তার উন্মুক্ত পিঠে উঠে বসেন তরুণী। বাটি থেকে বিভিন্ন উপকরণ মিশ্রিত জলপাই তেল নিয়ে হাত বুলাতে থাকেন পুরো শরীরে। এবার হাসানের পিঠের ওপরে শুয়ে বডি টু বডি ম্যাসেজ করে দিচ্ছেন তরুণী। এভাবে এক ঘন্টা ২০ মিনিট।
পুরো প্রক্রিয়াটা যারা ম্যাসেজ সম্পর্কে জানেন তাদের কাছে স্বাভাবিক। আছে বিজ্ঞানসম্মত এই ম্যাসেজের উপকারিতাও। কিন্তু ঢাকার গুলশান, বনানী, উত্তরায় গড়ে উঠা বেশিরভাগ ম্যাসেজ বা স্পা সেন্টারের সেবা শুধু ম্যাসেজেই সীমাবদ্ধ না। আরও একটু বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে এসব সেন্টারের তরুণীরা। সেখানে কর্মরত তরুণীদের অনেকে যেমন দেশের বিভিন্ন কলেজ ভার্সিটির ছাত্রী। তেমনি রয়েছে থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইন থেকে আগত তরুণীরা।
এসব সেন্টারের বিজ্ঞাপনেই উল্লেখ করা হচ্ছে, বাড়তি সেবার বিষয়টি। বলা হচ্ছে, ‘ আমাদের স্পেশাল প্যাক এক ঘন্টার জন্য নয় হাজার টাকা। ৯০ মিনিটের জন্য ১২ হাজার টাকা। তবে ম্যাসেজ থাই গার্ল দিয়ে ম্যাসেজ সেবা নিতে হলে দিতে হবে ১৭ হাজার টাকা। এই প্যাকেজে আছে অল ইন অল। বডি টু বডি ম্যাসেজসহ থাকবে হ্যাপি এন্ডিং। আপনি যা চাচ্ছেন তার থেকেও বেশি।’ গুলশান-২ এর ৪৪ নম্বর সড়কে রয়েছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান।
গুলশান-১ এর সিটি করপোরেশন মার্কেটের বিপরীতে একটি ভবনে রয়েছে এরকম আরও একটি প্রতিষ্ঠান। বয়সভিত্তিক বিভিন্ন ক্যাটাগরির ১০-১২ জন মেয়ে দিয়ে ম্যাসেজ করানো হয় সেখানে। বয়স ছাড়াও ম্যাসেজে পারদর্শী ও অপারদর্শীদের আলাদা ক্যাটাগরি রয়েছে।
গত বছরের ২৩শে সেপ্টেম্বর গুলশানে তিনটি স্পা সেন্টারে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে ১৯ জনকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে ১৬ জন নারী। আটক তিন পুরুষ স্পা ও বডি ম্যাসাজ সেবা নিতে গিয়েছিলেন। আটক নারীরা সবাই ওই তিন স্পা সেন্টারের কর্মী। গুলশান-১ এর নাভানা টাওয়ারে ওই তিনটি স্পা সেন্টারেরই অবস্থান। টাওয়ারের ১৯ তলায় অবস্থিত ‘লাইফ স্টাইল’, ২০ তলায় ‘রেসিডেন্স সেলুন অ্যান্ড স্পা’ ও ২১ তলায় অবস্থিত ‘ম্যানগো স্পা’। অভিযানের পর তিনটি সেন্টারই সিলগালা করে দেয় পুলিশ।
পুলিশের দাবি, সেবা দেওয়ার নামে স্পা ও বডি ম্যাসাজ সেন্টারগুলোতে অসামাজিক কার্যকলাপ হচ্ছিল এমন অভিযোগ ওঠে। পুলিশের গুলশান জোনের উপকমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী তখন বলেন, কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে স্পা ও ম্যাসাজের অসামাজিক কার্যকলাপ চলছিল, যা আইনত অবৈধ। তবে ম্যাসাজ পার্লার সংশ্লিষ্টরা জানান, সব প্রতিষ্ঠানের ম্যাসেজের বাইরে বাড়তি কিছুই হয় না। তবুও প্রভাবশালীদের ফ্রি সেবা এবং কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের উৎকোচ না দিলেই অভিযান চালানো হয়। যারা এসব সুবিধা দিচ্ছে তারা বহাল তবিয়তে ব্যবসা করে যাচ্ছে।