ঢাকা ০২:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৫ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সৎকারে আসেনি কেউ, স্বামীর লাশের পাশে স্ত্রীর রাতভর অপেক্ষা!

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:৩৭:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ জুলাই ২০২১
  • ৪৯৫ বার পড়া হয়েছে।

ছবি:প্রতীকী

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:

অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহ যখন শ্মশানে পৌঁছায় তখন মধ্যরাত। সে সময় শ্মশান প্রাঙ্গণে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা নিজ নিজ বাড়িতে। শ্মশান গেটে তালা দেওয়া। দায়িত্বপ্রাপ্তরা তালার চাবি দিলেও শ্মশানে আসেননি কেউ।

কারণ, মৃত ব্যক্তি ছিলেন করোনা আক্রান্ত। লোকজন না থাকায় শ্মশানে লাশটি নামানো সম্ভব হয়নি। এর কিছুক্ষণ পরে মরদেহ নামিয়ে ফেরত যায় অ্যাম্বুলেন্সটি। ফেরত যান সাথে থাকা অন্যান্যরাও।

গভীর রাতে সবাই ফেরত গেলেও ফেরত যাননি একজন। তিনি মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির স্ত্রী। শ্মশানের পাশে গোপালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় স্বামীর মরদেহ নিয়ে সৎকারের উদ্দেশ্যে একাই পার করেন পুরো রাত। মধ্যরাত থেকে সকাল অবধি অপেক্ষার পরও মরদেহ সৎকারে শ্মশান কমিটি বা নিজ আত্মীয়-স্বজনের সাহায্য না পেয়ে কয়েকজন মুসলিম ব্যক্তির সহায়তায় ওই মরদেহ মাটি চাপা দেন। এঘটনা ঘটেছে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পৌর শ্মশানে।

এলাকাবাসী জানায়,গতকাল শনিবার রাতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের হরিতলা এলাকার প্রফুল্ল কর্মকার (৭০)। রাতেই এ্যাম্বুলেন্সে করে মিরপুর পৌর শ্মশানে তার লাশ নিয়ে যায় স্ত্রী কল্পনা ও কয়েক স্বজন। সে সময় ওই শ্মশানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মরদেহ হওয়ার কারণেই শ্মশান প্রাঙ্গণে তারা আসেননি। মরদেহ সৎকারেও অনীহা প্রকাশ করেন তারা। এ অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্স চালক মরদেহ নামিয়ে রেখে ফেরত যান। স্বজনরাও চলে যান বাড়িতে। মরদেহ নিয়ে একাকী বিপদে পড়েন স্ত্রী কল্পনা। কোন উপায় না পেয়ে কল্পনা স্বামীর মরদেহ নিয়ে পাশের বিদ্যালয়ের বারান্দায় অবস্থান নেন। স্বামীর পাশে বসে পার করেন পুরো রাত। সকালে শ্মশান কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও মরদেহ সৎকারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি তারা। এক পর্যায়ে বিষয়টি অবহিত করেন স্থানীয় প্রশাসনকে। পরে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ ওই শ্মশানের পাশেই মাটিচাপা দেন প্রফুল্ল কর্মকারকে।

এ ব্যাপারে মৃত প্রফুল্ল কর্মকারের স্ত্রী কল্পনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অসুস্থ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

স্থানীয় কাউন্সিলর জাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রফুল্ল কর্মকারের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা করোনা আক্রান্ত। সে কারণে তার পরিবারের সদস্যরা মরদেহ সৎকার করতে পারেননি। তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউও মরদেহটির সৎকার করার জন্য এগিয়ে আসেননি। পরে সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি জানালে তিনি স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন এর সহায়তায় তাকে সমাহিত করার ব্যবস্থা করেন।

তিনি আরও জানান,প্রফুল্ল কর্মকার গত এক সপ্তাহ ধরে মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে রাতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী কল্পনা। মৃত্যুর পর মরদেহটি স্ত্রী কল্পনা বাড়ি নিতে চাইলেও বাড়িতে নেওয়ার অনুমতি মিলেনি।

মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিংকন বিশ্বাস জানান,বিষয়টি জানার পরপরই পৌর মেয়র ও স্থানীয় কাউন্সিলরকে অবহিত করেন। তারা স্থানীয় লোকজনকে দিয়ে সমাহিত করার কাজটি সম্পন্ন করেছেন।

Tag :

সৎকারে আসেনি কেউ, স্বামীর লাশের পাশে স্ত্রীর রাতভর অপেক্ষা!

Update Time : ০৬:৩৭:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ জুলাই ২০২১

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:

অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহ যখন শ্মশানে পৌঁছায় তখন মধ্যরাত। সে সময় শ্মশান প্রাঙ্গণে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা নিজ নিজ বাড়িতে। শ্মশান গেটে তালা দেওয়া। দায়িত্বপ্রাপ্তরা তালার চাবি দিলেও শ্মশানে আসেননি কেউ।

কারণ, মৃত ব্যক্তি ছিলেন করোনা আক্রান্ত। লোকজন না থাকায় শ্মশানে লাশটি নামানো সম্ভব হয়নি। এর কিছুক্ষণ পরে মরদেহ নামিয়ে ফেরত যায় অ্যাম্বুলেন্সটি। ফেরত যান সাথে থাকা অন্যান্যরাও।

গভীর রাতে সবাই ফেরত গেলেও ফেরত যাননি একজন। তিনি মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির স্ত্রী। শ্মশানের পাশে গোপালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় স্বামীর মরদেহ নিয়ে সৎকারের উদ্দেশ্যে একাই পার করেন পুরো রাত। মধ্যরাত থেকে সকাল অবধি অপেক্ষার পরও মরদেহ সৎকারে শ্মশান কমিটি বা নিজ আত্মীয়-স্বজনের সাহায্য না পেয়ে কয়েকজন মুসলিম ব্যক্তির সহায়তায় ওই মরদেহ মাটি চাপা দেন। এঘটনা ঘটেছে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পৌর শ্মশানে।

এলাকাবাসী জানায়,গতকাল শনিবার রাতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের হরিতলা এলাকার প্রফুল্ল কর্মকার (৭০)। রাতেই এ্যাম্বুলেন্সে করে মিরপুর পৌর শ্মশানে তার লাশ নিয়ে যায় স্ত্রী কল্পনা ও কয়েক স্বজন। সে সময় ওই শ্মশানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মরদেহ হওয়ার কারণেই শ্মশান প্রাঙ্গণে তারা আসেননি। মরদেহ সৎকারেও অনীহা প্রকাশ করেন তারা। এ অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্স চালক মরদেহ নামিয়ে রেখে ফেরত যান। স্বজনরাও চলে যান বাড়িতে। মরদেহ নিয়ে একাকী বিপদে পড়েন স্ত্রী কল্পনা। কোন উপায় না পেয়ে কল্পনা স্বামীর মরদেহ নিয়ে পাশের বিদ্যালয়ের বারান্দায় অবস্থান নেন। স্বামীর পাশে বসে পার করেন পুরো রাত। সকালে শ্মশান কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও মরদেহ সৎকারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি তারা। এক পর্যায়ে বিষয়টি অবহিত করেন স্থানীয় প্রশাসনকে। পরে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ ওই শ্মশানের পাশেই মাটিচাপা দেন প্রফুল্ল কর্মকারকে।

এ ব্যাপারে মৃত প্রফুল্ল কর্মকারের স্ত্রী কল্পনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অসুস্থ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

স্থানীয় কাউন্সিলর জাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রফুল্ল কর্মকারের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা করোনা আক্রান্ত। সে কারণে তার পরিবারের সদস্যরা মরদেহ সৎকার করতে পারেননি। তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউও মরদেহটির সৎকার করার জন্য এগিয়ে আসেননি। পরে সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি জানালে তিনি স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন এর সহায়তায় তাকে সমাহিত করার ব্যবস্থা করেন।

তিনি আরও জানান,প্রফুল্ল কর্মকার গত এক সপ্তাহ ধরে মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে রাতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী কল্পনা। মৃত্যুর পর মরদেহটি স্ত্রী কল্পনা বাড়ি নিতে চাইলেও বাড়িতে নেওয়ার অনুমতি মিলেনি।

মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিংকন বিশ্বাস জানান,বিষয়টি জানার পরপরই পৌর মেয়র ও স্থানীয় কাউন্সিলরকে অবহিত করেন। তারা স্থানীয় লোকজনকে দিয়ে সমাহিত করার কাজটি সম্পন্ন করেছেন।