ঢাকা ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৫ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাবার জন্য অক্সিজেন আনার পথে ছেলেকে আটকানো এএসআই প্রত্যাহার

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:৫৩:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুলাই ২০২১
  • ৬১৪ বার পড়া হয়েছে।

সাতক্ষীরা:

সাতক্ষীরায় অসুস্থ বাবার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ছেলেকে আটকানোর ঘটনায় ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সুভাষ চন্দ্র সেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) রাতে তাকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। শুক্রবার (৯ জুলাই) সাতক্ষীরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) সজিব খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

করোনার উপসর্গ নিয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈচনা গ্রামের বাসিন্দা মো. রজব আলী মোড়ল (৬৫) বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় সিলিন্ডারের সাহয্যে তাকে বাড়িতেই অক্সিজেন দেয়া হচ্ছিল। শহরের পলাশপোল এলাকার ব্যবসায়ী ও জেলা পরিষদ সদস্য আল ফেরদৌস আলফা তার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার দেন। 

বৃদ্ধের ছেলে ওলিউল ইসলাম জানান, করোনা উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা অসুস্থ। বৃহস্পতিবার জরুরি অক্সিজেন প্রয়োজন হওয়ায় ফেরদৌস আলফার বাড়ি থেকে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। বেলা ১০টার দিকে ইটাগাছা হাটের মোড়ে পৌঁছালে তাকে আটক করেন এএসআই সুভাষ চন্দ্র। লকডাউনে বাইরে বেরিয়েছে বলে তার কাছে এক হাজার টাকা জরিমানা দাবি করেন। টাকা দিতে না পারায় তাকে দুই ঘণ্টা সেখানে আটকে রাখা হয়। পরে ইটাগাছা এলাকার জনৈক জিয়াউল ইসলামের মধ্যস্থতায় ২০০ টাকা নিয়ে এএসআই সুভাষ তাকে ছেড়ে দেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। বাড়িতে গিয়ে দেখেন তার বাবা মারা গেছেন।

তিনি বলেন, ‘যদি সময় মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়িতে যেতে পারতাম, তাহলে হয়তো বাবাকে বাঁচাতে পারতাম।’ তিনি এই ঘটনার বিচার দাবি করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির একাধিক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘লকডাউনে আমরা জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছি। এই সুভাষের কারণে পুলিশের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’

এ বিষয়ে ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সুভাষ চন্দ্র বলেন, ‘একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে দ্রুতগতিতে ওই ব্যক্তি মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। আমি তাকে থামিয়ে কাগজপত্র দেখতে চেয়েছিলাম। কাগজ দেখাতে না পারায় তার গাড়িটি আটক করে রেখে তাকে অন্য একটি ইজিবাইকে সিলিন্ডার নিয়ে চলে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু সে মোটরসাইকেল না নিয়ে যেতে রাজি হয়নি। বিষয়টি ট্রাফিক পরিদর্শককে জানালে তিনি মোটরসাইকেলটি ছেড়ে দিতে বলেন। এর মধ্যে সামান্য সময় দেরি হয়েছে। পরে শুনলাম তার বাবা মারা গেছেন। এটি দুর্ঘটনাবশত হয়ে গেছে।’

সাতক্ষীরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) সজিব খান বলেন, কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সুভাষ সেনকে বৃহস্পতিবার রাতেই ক্লোজড করা হয়েছে।

Tag :

বাবার জন্য অক্সিজেন আনার পথে ছেলেকে আটকানো এএসআই প্রত্যাহার

Update Time : ০৩:৫৩:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুলাই ২০২১

সাতক্ষীরা:

সাতক্ষীরায় অসুস্থ বাবার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ছেলেকে আটকানোর ঘটনায় ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সুভাষ চন্দ্র সেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) রাতে তাকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। শুক্রবার (৯ জুলাই) সাতক্ষীরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) সজিব খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

করোনার উপসর্গ নিয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈচনা গ্রামের বাসিন্দা মো. রজব আলী মোড়ল (৬৫) বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় সিলিন্ডারের সাহয্যে তাকে বাড়িতেই অক্সিজেন দেয়া হচ্ছিল। শহরের পলাশপোল এলাকার ব্যবসায়ী ও জেলা পরিষদ সদস্য আল ফেরদৌস আলফা তার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার দেন। 

বৃদ্ধের ছেলে ওলিউল ইসলাম জানান, করোনা উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা অসুস্থ। বৃহস্পতিবার জরুরি অক্সিজেন প্রয়োজন হওয়ায় ফেরদৌস আলফার বাড়ি থেকে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। বেলা ১০টার দিকে ইটাগাছা হাটের মোড়ে পৌঁছালে তাকে আটক করেন এএসআই সুভাষ চন্দ্র। লকডাউনে বাইরে বেরিয়েছে বলে তার কাছে এক হাজার টাকা জরিমানা দাবি করেন। টাকা দিতে না পারায় তাকে দুই ঘণ্টা সেখানে আটকে রাখা হয়। পরে ইটাগাছা এলাকার জনৈক জিয়াউল ইসলামের মধ্যস্থতায় ২০০ টাকা নিয়ে এএসআই সুভাষ তাকে ছেড়ে দেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। বাড়িতে গিয়ে দেখেন তার বাবা মারা গেছেন।

তিনি বলেন, ‘যদি সময় মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়িতে যেতে পারতাম, তাহলে হয়তো বাবাকে বাঁচাতে পারতাম।’ তিনি এই ঘটনার বিচার দাবি করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির একাধিক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘লকডাউনে আমরা জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছি। এই সুভাষের কারণে পুলিশের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’

এ বিষয়ে ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সুভাষ চন্দ্র বলেন, ‘একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে দ্রুতগতিতে ওই ব্যক্তি মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। আমি তাকে থামিয়ে কাগজপত্র দেখতে চেয়েছিলাম। কাগজ দেখাতে না পারায় তার গাড়িটি আটক করে রেখে তাকে অন্য একটি ইজিবাইকে সিলিন্ডার নিয়ে চলে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু সে মোটরসাইকেল না নিয়ে যেতে রাজি হয়নি। বিষয়টি ট্রাফিক পরিদর্শককে জানালে তিনি মোটরসাইকেলটি ছেড়ে দিতে বলেন। এর মধ্যে সামান্য সময় দেরি হয়েছে। পরে শুনলাম তার বাবা মারা গেছেন। এটি দুর্ঘটনাবশত হয়ে গেছে।’

সাতক্ষীরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) সজিব খান বলেন, কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সুভাষ সেনকে বৃহস্পতিবার রাতেই ক্লোজড করা হয়েছে।