ঢাকা ০৪:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংখ্যালঘু পরিবার নিখোঁজ রহস্য, সুকুমারের বাড়ীতে সরকারদলীয়নেতারা

Reporter Name

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ঃ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের পল্লীতে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ৪ সদ্যসের একটি পরিবার নিখোঁজ নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে ।

গত ৪ মে শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে তাদের আর পাওয়া যাচ্ছে না। নিখোঁজ হওয়া এই পরিবার প্রধানের নাম সুকুমার বিশ্বাস। যিনি রাজবংশী সম্প্রদায়ের সদস্য।

তবে তাদের পরিকল্পিতভাবে তুলে নিয়ে গেছে, না নিজে থেকে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে তা কেউ বলতে পারছে না। ঘটনাটি জেলার কালীগঞ্জ উপজেলাধীন ২নং জামাল ইউনিয়নের পার-খালকূলা গ্রামের।

নিখোঁজ হওয়া অন্য সদস্যরা হলেন সুকুমার বিশ্বাসের স্ত্রী রেনু রানী, পত্রবধু রিপা রানী ও পোতা ছেলে (দৌহিত্র) সনদ বিশ্বাস। গত ৩ মাস আগে নিখোঁজ সুকুমারের একমাত্র ছেলে স্বপন কুমার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

এ ঘটনার পর হিন্দুদের কয়েকটি সংগঠন নিখোঁজ পরিবারকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বা হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে দাবি করলেও প্রতিবেশীদের দাবি তারা নিজ থেকে বাড়ি ছেড়েছে চলে গেছে।

নিখোঁজের একদিন পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোদাচ্ছের হোসেন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও বাংলাদেশ ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

ঘটনার ৫ দিন পর ৯ মে বুধবার বিকালে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি এই নিখোঁজের সংবাদটি জানানো হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নেতৃবৃন্দ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, সুকুমার বিশ্বাসের পানের বরজসহ ৮ বিঘা সম্পত্তি এলাকার কতিপয় ভূমিদস্য নামে মাত্র মূল্যে ক্রয় দেখিয়ে আত্নসাৎ করার জন্য বিভিন্ন সময় তার উপর মানসিক নির্যাতন চালিয়েছে।

ফলে তাদের এই নিখোঁজের পিছনে স্থানীয় এসব ভূমিদস্যুদের যোগসূত্র থাকতে পারে। তারা নিখোঁজ পরিবারকে উদ্ধার করে নিরাপদে নিজ বাড়িতে শান্তিতে বসবাসের ব্যবস্থা করার দাবি করেন। অন্যথায় সুকুমার বিশ্বাস ও তার পরিবারের সদস্যদের উদ্ধারে গনআন্দোলন গড়ে তোলারও হুমকি দেওয়া হয় প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে।

গত বুধবার বিকেলে সুকুমারের বাড়িতে যেয়ে দেখা যায়, বাড়ি-ঘর তালা বদ্ধ। গোয়ালে একটি গাভী অনাহারে দাঁড়িয়ে আছে। আমিরুল জোয়ার্দার নামে এক প্রতিবেশী বাড়ির উঠানে গরুর ঘাস কাটছেন।

প্রতিবেশী আমিরুল জোয়ার্দার জানান, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ এসেছিলেন, তারা আমাকে বাড়ি ও সুকুমারের রেখে যাওয়া গরু এবং হাঁস মুরগী দেখে রাখার দ্বায়িত্ব দিয়েছেন।

প্রতিবেশী আমিরুল আরো জানান, কয়েকদিন আগে শুকুমার শশুবাড়ি যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে চলে যায়। এর কয়েকদিন পর সন্ধ্যায় সুকুমারের স্ত্রী, পুত্রবধু ও পোতা ছেলে প্রতিবেশীর বাড়িতে দাওয়াত খেতে গিয়েছিল। এরপর থেকে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

নিখোঁজ সুকুমারের জামাই অলোক কুমার জানান, আমি যতটুকু জানি আমার শশুর সুকুমার যশোর এক বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। এরপর থেকে আর বাড়িতে ফিরে যায়নি। এরপর বাড়ির অন্য সদস্যরা চলে যায়। তবে বাড়ির থেকে চলে যাওয়ার দু’দিন পর আমার সাথে একবার মোবাইলে যোগাযোগ হয়েছিল। তখন আমাকে জানিয়েছিল আমরা দেশে আছি। তবে নিরাপত্তার জন্য বাড়ির বাইরে আছি।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুনিল ঘোষ জানান, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে জানতে পেরেছি স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের ভয়ে তিনি বাড়ি ছেড়েছেন। বৃহঃবার বিকালে কালীগঞ্জ উপজেলা আঃলীগ সভাপতি ও সাবেক এমপি আব্দুল মান্নান , সাবেক সাধারন সম্পাদক ইসরাইল হোসেন , সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল খা সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ পরিদর্শন করেছেন।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, আমি ঘটনা জানার পর বিষয়টি গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছি। পুলিশের বিশেষ একটি টিম সেখানে কাজ করছে। তাদের স্থানীয় কোনো ব্যক্তি বা গ্রুপ যদি নির্যাতন করে তাহলে পুলিশকে অবহিত করতে পারতো কিন্তু তা না করেনি। তবে কেউ যদি নিশ্চিত করে অভিযোগ জানায় তাহলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবো বললেন এই পুলিশ কর্মকতা।

About Author Information
আপডেট সময় : ১২:২৩:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ মে ২০১৮
১১২২ Time View

সংখ্যালঘু পরিবার নিখোঁজ রহস্য, সুকুমারের বাড়ীতে সরকারদলীয়নেতারা

আপডেট সময় : ১২:২৩:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ মে ২০১৮

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ঃ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের পল্লীতে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ৪ সদ্যসের একটি পরিবার নিখোঁজ নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে ।

গত ৪ মে শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে তাদের আর পাওয়া যাচ্ছে না। নিখোঁজ হওয়া এই পরিবার প্রধানের নাম সুকুমার বিশ্বাস। যিনি রাজবংশী সম্প্রদায়ের সদস্য।

তবে তাদের পরিকল্পিতভাবে তুলে নিয়ে গেছে, না নিজে থেকে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে তা কেউ বলতে পারছে না। ঘটনাটি জেলার কালীগঞ্জ উপজেলাধীন ২নং জামাল ইউনিয়নের পার-খালকূলা গ্রামের।

নিখোঁজ হওয়া অন্য সদস্যরা হলেন সুকুমার বিশ্বাসের স্ত্রী রেনু রানী, পত্রবধু রিপা রানী ও পোতা ছেলে (দৌহিত্র) সনদ বিশ্বাস। গত ৩ মাস আগে নিখোঁজ সুকুমারের একমাত্র ছেলে স্বপন কুমার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

এ ঘটনার পর হিন্দুদের কয়েকটি সংগঠন নিখোঁজ পরিবারকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বা হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে দাবি করলেও প্রতিবেশীদের দাবি তারা নিজ থেকে বাড়ি ছেড়েছে চলে গেছে।

নিখোঁজের একদিন পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোদাচ্ছের হোসেন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও বাংলাদেশ ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

ঘটনার ৫ দিন পর ৯ মে বুধবার বিকালে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি এই নিখোঁজের সংবাদটি জানানো হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নেতৃবৃন্দ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, সুকুমার বিশ্বাসের পানের বরজসহ ৮ বিঘা সম্পত্তি এলাকার কতিপয় ভূমিদস্য নামে মাত্র মূল্যে ক্রয় দেখিয়ে আত্নসাৎ করার জন্য বিভিন্ন সময় তার উপর মানসিক নির্যাতন চালিয়েছে।

ফলে তাদের এই নিখোঁজের পিছনে স্থানীয় এসব ভূমিদস্যুদের যোগসূত্র থাকতে পারে। তারা নিখোঁজ পরিবারকে উদ্ধার করে নিরাপদে নিজ বাড়িতে শান্তিতে বসবাসের ব্যবস্থা করার দাবি করেন। অন্যথায় সুকুমার বিশ্বাস ও তার পরিবারের সদস্যদের উদ্ধারে গনআন্দোলন গড়ে তোলারও হুমকি দেওয়া হয় প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে।

গত বুধবার বিকেলে সুকুমারের বাড়িতে যেয়ে দেখা যায়, বাড়ি-ঘর তালা বদ্ধ। গোয়ালে একটি গাভী অনাহারে দাঁড়িয়ে আছে। আমিরুল জোয়ার্দার নামে এক প্রতিবেশী বাড়ির উঠানে গরুর ঘাস কাটছেন।

প্রতিবেশী আমিরুল জোয়ার্দার জানান, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ এসেছিলেন, তারা আমাকে বাড়ি ও সুকুমারের রেখে যাওয়া গরু এবং হাঁস মুরগী দেখে রাখার দ্বায়িত্ব দিয়েছেন।

প্রতিবেশী আমিরুল আরো জানান, কয়েকদিন আগে শুকুমার শশুবাড়ি যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে চলে যায়। এর কয়েকদিন পর সন্ধ্যায় সুকুমারের স্ত্রী, পুত্রবধু ও পোতা ছেলে প্রতিবেশীর বাড়িতে দাওয়াত খেতে গিয়েছিল। এরপর থেকে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

নিখোঁজ সুকুমারের জামাই অলোক কুমার জানান, আমি যতটুকু জানি আমার শশুর সুকুমার যশোর এক বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। এরপর থেকে আর বাড়িতে ফিরে যায়নি। এরপর বাড়ির অন্য সদস্যরা চলে যায়। তবে বাড়ির থেকে চলে যাওয়ার দু’দিন পর আমার সাথে একবার মোবাইলে যোগাযোগ হয়েছিল। তখন আমাকে জানিয়েছিল আমরা দেশে আছি। তবে নিরাপত্তার জন্য বাড়ির বাইরে আছি।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুনিল ঘোষ জানান, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে জানতে পেরেছি স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের ভয়ে তিনি বাড়ি ছেড়েছেন। বৃহঃবার বিকালে কালীগঞ্জ উপজেলা আঃলীগ সভাপতি ও সাবেক এমপি আব্দুল মান্নান , সাবেক সাধারন সম্পাদক ইসরাইল হোসেন , সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল খা সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ পরিদর্শন করেছেন।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, আমি ঘটনা জানার পর বিষয়টি গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছি। পুলিশের বিশেষ একটি টিম সেখানে কাজ করছে। তাদের স্থানীয় কোনো ব্যক্তি বা গ্রুপ যদি নির্যাতন করে তাহলে পুলিশকে অবহিত করতে পারতো কিন্তু তা না করেনি। তবে কেউ যদি নিশ্চিত করে অভিযোগ জানায় তাহলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবো বললেন এই পুলিশ কর্মকতা।