নিজস্ব প্রতিবেদক:
ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুমের হার্ট অ্যাটাকের পর সেদিন বিমানের ককপিটের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন ঝিনাইদহের কৃতি সন্তান ফার্স্ট অফিসার মোস্তাকিম পিয়াস। তার উপস্থিত বুদ্ধিতেই নিরাপদে অবতরণ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭-৮০০। বেঁচে যায় ১২৪ যাত্রীর প্রাণ।
বাংলাদেশ বিমানের ফার্স্ট অফিসার পাইলট মোস্তাকিম পিয়াসের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কাঁচেরকোল ইউনিয়নের সাদেকপুরে। তিনি শতবর্ষী শৈলকুপা পাইলট হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক শেষ করে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ভর্তি হন। পড়ালেখা শেষে ৪ বছর আগে যোগ দেন বাংলাদেশ বিমানে।
সেদিনের চাঞ্চল্যকর ঘটনা আর ফার্স্ট অফিসার মোস্তাকিম পিয়াসের কীর্তি জানাজানি হলে সাদেকপুরে সৃষ্টি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। গ্রামের মানুষের মুখে শুধুই পিয়াসের সাহসী ভূমিকার প্রশংসা।
কাঁচেরকোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মামুন জোয়াদ্দার বলেন, সঙ্কটময় মুহূর্তে অসীম সাহসের পরিচয় দিয়েছে আমাদের পিয়াস। এমন কৃতি সন্তান পেয়ে আমরা গর্বিত। তার সুস্বাস্থ্য ও সাফল্য কামনা করি।
যা ঘটেছিল ২৭ আগস্ট-
বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজে ১২৪ জন যাত্রী নিয়ে মাস্কাট-ঢাকা পথে আসছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট। ভারতের রায়পুরের আকাশে থাকাকালীন হঠাৎ নিথর হয়ে পড়েন ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুম। বিপাকে পড়েন ফার্স্ট অফিসার মোস্তাকিম পিয়াস। একদিকে ক্যাপ্টেনের অচেতন দেহ, অন্যদিকে ১২৪ জন যাত্রী। ঘাবড়ে না গিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় তাৎক্ষণিক ককপিটের কন্ট্রোল নেন তিনি, ঘোষণা করেন মেডিকেল ইমার্জেন্সি। ক্যাপ্টেন নওশাদ অসুস্থ হওয়ার ২৫ মিনিটের মধ্যে নাগপুরের ড. বাবা সাহেব আম্বেদকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে বোয়িং ৭৩৭-৮০০। প্রাণে বেঁচে যান ১২৪ যাত্রী।
ওই ফ্লাইটে থাকা ক্রুরা জানান, সেদিন হঠাৎ করেই ককপিট থেকে ফার্স্ট অফিসার পিয়াস ঘোষণা দেন যে- ক্যাপ্টেন নওশাদের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। নিজের খারাপ লাগার কথা বলারও সুযোগ পাননি ক্যাপ্টেন, অচেতন হয়ে সিটে ঢলে পড়েন। ওই অবস্থায় ফার্স্ট অফিসার মোস্তাকিম পিয়াস মেডিকেল ইমার্জেন্সি ঘোষণা করেন। ক্যাপ্টেন নওশাদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য ১২৪ জন যাত্রী নিয়ে নিরাপদে জরুরি অবতরণ করতে সক্ষম হন এ তরুণ ফার্স্ট অফিসার।
জানা গেছে, বিমানটি জরুরি অবতরণের জন্য মোস্তাকিম পিয়াস পেশাগত দক্ষতা দেখিয়ে কন্ট্রোল টাওয়ারে যোগাযোগ শুরু করেছিলেন। নওশাদ অসুস্থ হওয়ার ২৫ মিনিটের মধ্যে নাগপুর এয়ারপোর্টে নিরাপদে অবতরণ করে উড়োজাহাজ। আগে থেকেই বিমানবন্দরে অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত ছিল। রানওয়েতে নামামাত্র দ্রুত ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুমকে উড়োজাহাজ থেকে নামিয়ে হাসপাতলে পাঠানো হয়। কিন্তু চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ক্যাপ্টেন নওশাদ।
ফার্স্ট অফিসার মোস্তাকিম পিয়াসের বাবা আব্দুর রব মালয়েশিয়া প্রবাসী। অনেক বছর মালয়েশিয়ায় থাকার পর সম্প্রতি দেশে এসেছেন। শৈলকুপার কাঁচেরকোল ইউনিয়নের সাদেকপুরে পৈতৃক ভিটা থাকলেও শৈলকুপা শহরের কবিরপুরে নতুন বাড়ি করেছেন। বর্তমানে সপরিবারে সেখানেই বসবাস করছেন।