আওয়ামী লীগের সব সহযোগী সংগঠনই অগোছালো
ঢাকা:
আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর প্রায় সবগুলোই অগোছালো। এর মধ্যে অন্তত চার সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ। গত বছরের মার্চে মেয়াদ শেষ হয়েছে যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও তাঁতী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির।
এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলছে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। আর কমিটি ঘোষণার দিন ধরে হিসাব করলে ২০২০ সালের জুলাইয়ে মেয়াদ শেষ হয়েছে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের।
এই সংগঠনগুলোর বেশির ভাগের জেলা-উপজেলা কমিটিরও মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। যাদের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ আছে, সেই সংগঠনগুলোর তৃণমূলেও বেহাল। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমানে মূল দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সহযোগীরাও ফের শুরু করেছে দল গোছানোর কার্যক্রম।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, সংগঠনকে দীর্ঘ সময় মেয়াদোত্তীর্ণ রাখার সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে সবাইকে মেয়াদোত্তীর্ণ শাখাগুলোর সম্মেলনের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, আওয়ামী লীগসহ আমাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর বেশ কিছু জায়গায় মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এটার মূল কারণ কোভিড-১৯।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন করার জন্য। কয়েকটি সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এগুলোও সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন করে কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, আওয়ামী মহিলা লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, তাঁতী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও মৎস্যজীবী লীগ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন। এছাড়া জাতীয় শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগ দলটির ভাতৃপ্রতিম সংগঠন। আওয়ামী লীগের বিগত জাতীয় সম্মেলনের আগে মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের নভেম্বরে কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও মৎস্যজীবী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই চার সহযোগী ও এক ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সবগুলোতেই শীর্ষ পদে এসেছে নতুন নেতৃত্ব।
কৃষক লীগ : ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত কৃষক লীগের সম্মেলনে সভাপতি পদে সমীর চন্দ্র ও সাধারণ সম্পাদক পদে উম্মে কুলসুম স্মৃতি নির্বাচিত হন। এর প্রায় এক বছর পর ২০২০ সালের অক্টোবরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি পায় সংগঠনটি। এরপর থেকে দল গোছানোর কাজ শুরু করে তারা। তবে করোনার কারণে মাঝে কিছুটা ভাটা পড়লেও আবার নতুন করে গতি আনার চেষ্টায় মাঠে রয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। জানা গেছে, কৃষক লীগ মূলত ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন সম্মেলনে বেশি নজর দিচ্ছে।
জানতে চাইলে কৃষিবিদ সমীর চন্দ্র বলেন, কৃষক লীগ একটি ব্যতিক্রম সংগঠন। কৃষকদের অভয়ারণ্য ইউনিয়ন, ওয়ার্ড বা গ্রাম। আমরা সেই জায়গাতেই বেশি মনোযোগ দিয়েছি। প্রতিটি ইউনিয়নে ৯টা করে ওয়ার্ড। সবগুলো ওয়ার্ড সম্মেলনের পরই আমরা ইউনিয়ন সম্মেলন করছি। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায় ১২৮৫ ইউনিয়ন সম্মেলন করেছি। অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ১১ হাজার ওয়ার্ড সম্মেলন করেছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল- ডিসেম্বরের মধ্যে দুই হাজার ইউনিয়নের সম্মেলন করব। তবে সেটা সম্ভব না হলেও কমপক্ষে ১৬০০ ইউনিয়নের সম্মেলন শেষ করতে পারব। তিনি আরও বলেন, সম্মেলন ছাড়া আমরা কোনো কমিটি করছি না। এভাবেই ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও থানা সম্মেলন শেষ করে তবেই আমরা জেলা সম্মেলন করব।
যুবলীগ : ক্যাসিনোকাণ্ডে সংগঠনের গায়ে দাগ লাগার পর ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। সংগঠনটির সপ্তম কংগ্রেসে চেয়ারম্যান পদে আসেন শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসেন মাইনুল হোসেন খান নিখিল। তারপর প্রায় বছরখানেক পর গত বছরের ১৪ নভেম্বর ২০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। তিন বছর মেয়াদি বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সময় প্রায় শেষ হয়ে এলেও তৃণমূল পর্যায়ের সব ইউনিটের সম্মেলন এখনো হয়নি।
জেলা, মহানগর, উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলনও হয়নি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ। এরই মধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে নেতাদের মধ্যে ৯টি সাংগঠনিক বিভাগের দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়। করোনার প্রভাব হ্রাস পেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সংগঠনকে গুছিয়ে আনার কাজ শুরু করেছেন। দেশব্যাপী সম্মেলন কিংবা বর্ধিত সভার কাজ জোরেশোরেই শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে ৩০টি জেলা কমিটির বর্ধিত সভা হয়েছে। বেশ কয়েকটি জেলা-উপজেলার সম্মেলনের তারিখও ঠিক করা হয়েছে।
জানতে চাইলে মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, করোনা সংক্রমণ করার পর থেকেই আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেছি। আমাদের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌর, উপজেলা ও জেলার খোঁজখবর নিচ্ছি। কোথায় কী অবস্থায় আছে। সেই অনুযায়ী সম্মেলনসহ অন্যান্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটার সম্মেলনের তারিখও ঠিক হয়েছে। নির্বাচনের আগে সংগঠনকে তৃণমূল পর্যন্ত ঢেলে সাজাতে।
ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নেত্রীর (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সঙ্গে আলাপ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ : ২০১৯ সালের নভেম্বরে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আনা হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগে। সম্মেলনে নির্মল রঞ্জন গুহকে সভাপতি এবং আফজালুর রহমান বাবুকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার দায়িত্ব তাদের দেওয়া হয়েছিল। সম্মেলনের ১১ মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি পায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ।
এরপর তৃণমূল গোছানোর কাজ শুরু করলেও করোনার কারণে তাতে গতি আনতে পারেনি সংগঠনটি। ফলে সারা দেশের বেশির ভাগ জেলা-উপজেলা বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ। এদিকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ-উত্তর শাখার সম্মেলন ২০১৯ সালের ১১ ও ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়।
১৬ নভেম্বর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচনের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখায়ও নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। প্রায় দুই বছর শেষ হলেও এখনো ‘পূর্ণাঙ্গ’ কমিটি হয়নি। দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছেন, কমিটি গঠনের কাজ প্রায় শেষের দিকে।
জানতে চাইলে আফজালুর রহমান বাবু বলেন, আমরা আমাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছি। ইতোমধ্যে আমরা ভার্চুয়ালি দুটি জেলা-চট্টগ্রাম ও হবিগঞ্জের সম্মেলন করেছি। আগামী মাসে সরাসরি দুটি জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। পরের মাসে আরও দুটি জেলার সম্মেলন করব। তিনি বলেন, আমরা সংগঠনকে তৃণমূল পর্যন্ত শক্তিশালী করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
শ্রমিক লীগ : আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলনে ফজলুল হক মন্টুকে সভাপতি, আ জ ম খসরুকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছরের জন্য সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। প্রায় ১১ মাস পর ২০২০ সালের অক্টোবরে ঘোষণা করা হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি। ওই বছরের ২০ নভেম্বর সভাপতি মন্টু মারা যান। পরে সহসভাপতি নুর কুতুব আলম মান্নানকে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শীর্ষ দুই নেতার অভ্যন্তরীণ বিরোধে বিপর্যস্ত জাতীয় শ্রমিক লীগ। সংগঠনের সভাপতি নুর কুতুব আলম মান্নান এবং সাধারণ সম্পাদক আ জ ম খসরু বসেন না একমঞ্চে। একসঙ্গে কোনো অনুষ্ঠানও করেন না তারা। এতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে সংগঠনের সাংগঠনিক কার্যক্রম। গুরুত্বপূর্ণ এই ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের এমন বেহালে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে ইতোমধ্যে একাধিকবার সতর্কও করা হয়েছে। তবুও কমেনি দূরত্ব। দুই নেতার বিরোধের কারণে তৃণমূল গোছানোর কাজও শুরু করতে পারেনি সংগঠনটি।
ছাত্রলীগ : ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর দুই মাস পর ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ গঠিত হয়েছিল। সে হিসাবে দুই বছর মেয়াদি কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের ৩১ জুলাই। এর আগে ২৯তম সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক হন গোলাম রাব্বানী। এক বছর গড়াতেই অনিয়ম ও চাঁদাবাজির অভিযোগে শোভন-রাব্বানীকে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর অপসারণ করা হয়।
শোভন-রাব্বানীকে অপসারণের পর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এক নম্বর সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে সভাপতি ও এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত হিসাবে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কয়েক মাস ভারপ্রাপ্ত হিসাবে দায়িত্ব পালন করলেও পরে ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি তাদের ভারমুক্ত করে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এদিকে করোনাভাইরাস, বন্যাসহ বিভিন্ন সংকটে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ালেও সাংগঠনিক কার্যক্রম গোছাতে পারেনি নতুন নেতারা। বর্তমানে ছাত্রলীগের সারা দেশের সাংগঠনিক ইউনিটগুলোর বেশির ভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ। এছাড়া নতুন নেতারা দায়িত্ব পাওয়ার পর বেশকিছু জেলা, উপজেলার কমিটি দিলেও তাদের বিরুদ্ধে সম্মেলন না করে ঢাকায় বসে ‘প্রেস রিলিজ’ কমিটি করার অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতাকে এ নিয়ে খেদ প্রকাশ করতেও দেখা গেছে।
জানতে জাইলে লেখক ভট্টাচার্য বলেন, অক্টোরব মাসেই আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন করে দেব। এরপর সাংগঠনিক সফর শুরু করব। সম্মেলন ও সংগঠন গোছানো নিয়মানুযায়ী শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা দায়িত্ব পাওয়ার সময় প্রায় সব ইউনিট মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। আমরা ৩১টি ইউনিটের কমিটি দিয়েছি। এর মধ্যে জেলা রয়েছে ১৯টির মতো।
মহিলা আওয়ামী লীগ : প্রায় ১৪ বছর পর ২০১৭ সালের ৪ মার্চ মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছিল। এতে সাফিয়া খাতুন সভাপতি এবং মাহমুদা বেগম সাধারণ সম্পাদক হন। তিন বছর মেয়াদি এই সংগঠনের মেয়াদ শেষ হয় গত বছরের ৪ মার্চ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহিলা আওয়ামী লীগেরও জেলা-উপজেলায় বেশির ভাগ কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। ওয়ার্ড ইউনিয়ন পর্যায়ে অনেক জায়গায় সংগঠনিক গতি নেই। কেন্দ্রীয়ভাবেও দিবসভিত্তিক কর্মসূচির বাইরে খুব বেশি সরব দেখা যায় না সংগঠনটিকে।
জানতে চাইলে মাহমুদা বেগম বলেন, ইতোমধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। আগামী অক্টোবর মাসেই আমরা ৭টি জেলার সম্মেলন করব। এর মধ্যে আগামী ২ ও ৪ তারিখ আমাদের বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলার সম্মেলন হবে। এছাড়া ২৩, ২৫, ২৬, ২৭, ৩০ তারিখ ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও খুলনা জেলার সম্মেলন হবে।
কেন্দ্রীয় সম্মেলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনো এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাইনি। আমরা আমাদের কাজ করছি। আমাদের যে নির্দেশনা দেবে সেভাবেই কাজ করব।
যুব মহিলা লীগ : ২০১৭ সালের ১১ মার্চ যুব মহিলা লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে নাজমা আক্তার সভাপতি ও অপু উকিল সাধারণ সম্পাদক হিসাবে পুনর্নির্বাচিত হন। তাদের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের ১১ মার্চ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারা দেশে সংগঠনের জেলা-উপজেলার অনেক কমিটিরই মেয়াদ নেই। ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়ের এখনো কিছু কিছু জায়গায় কমিটিই করতে পারেনি সংগঠনটি। প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটি দিয়েও চলছে কোথাও কোথাও।
এদিকে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুব মহিলা লীগের নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার ‘অপকর্ম’ নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়েছিল। ওই ২৪ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছিল। সভায় যুব মহিলা লীগের কমিটি ভেঙে দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব নতুন কমিটি গঠন করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছিলেন দলের সিনিয়র নেতারা।
এরপর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বলেছিলেন, মেয়াদ শেষ হলেও যুব মহিলা লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে তখন আর সম্মেলন আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা অপু উকিল বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা সারা দেশে সংগঠনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করছি। যেখানে যেখানে সংগঠন কম শক্তিশালী বা মেয়াদোত্তীর্ণ সেগুলোর সম্মেলন করছি।
তাঁতী লীগ : ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ সম্মেলনে ইঞ্জিনিয়ার শওকত আলীকে সভাপতি এবং খগেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ২০২০ সালের ১৯ মার্চ আওয়ামী লীগের এই সহযোগী সংগঠনের মেয়াদও শেষ হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার ৬-৭ ছাড়া বাকিগুলোর সম্মেলন হলেও মেয়াদ নেই ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণেও। উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের অনেক কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ।
এছাড়া তাঁতী লীগ দিবসভিত্তিক কর্মসূচির বাইরে মাঠের কর্মসূচিতে খুব একটা সক্রিয় নয়। সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আসা হবে।
জানতে চাইলে ইঞ্জিনিয়ার শওকত আলী বলেন, আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রম অব্যাহত আছে। করোনা মধ্যে কিছুটা ব্যাহত হলেও আমরা আমাদের ৭৮ সাংগঠনিক ইউনিটের ৬-৭টা ছাড়া প্রায় সবগুলোর কমিটি করে ফেলেছি। ২ তারিখে মিটিং ডাকা হয়েছে, সেখান থেকে সাংগঠনিক সফরের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হবে বলেও জানান তিনি। জাতীয় সম্মেলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত। যখন (মূল দল আওয়ামী লীগ) বলবে তখনই সম্মেলনের আয়োজন করা হবে।
মৎস্যজীবী লীগ : ২০০৪ সালের ২২ মে আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৯ সালের ২৯ নভেম্বর প্রথম জাতীয় সম্মেলন হয়। পরে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে মৎস্যজীবী লীগকে সহযোগী সংগঠনের মর্যাদা দেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। সভাপতি মোহাম্মদ সাইদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদ আজগর নস্কর এবং কার্যকরী সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সাইফুল আলম মানিক।
জানা গেছে, সম্মেলনের পর থেকে জেলা কমিটি পুনর্গঠন, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ও সম্মেলনসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে সংগঠনটি। সম্প্রতি আব্দুস সোবহানকে ফরিদপুর জেলায় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঢাকায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জেলা নেতাদের ডেকে নিয়মিত সভাও করছেন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।