নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাবার বাড়ি বোঝা হয়ে ছিল অসহায় বিধবা উন্নতি বিশ্বাস। স্বামীর ভিটা বাড়ি ও নিজের গহনা বিক্রি করে ৪ শতক জমিও ক্রয় করেন সে। বাঁশ ও ঘরের টিন কেনা টাকাও পরের কাছে চেয়ে জোগাড় করেন অসহায় উন্নতি বিশ্বাস। সোমবার নতুন ঘরে উঠার কথা ছিল। কিন্তু তার সে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেল দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে।
রোববার ভোররাত আনুমানিক ২টার দিকে কে বা কাহারা অসহায় উন্নতি বিশ্বাসের নতুন ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার ঘরে থাকা খাট ও দরজাসহ আসবার পত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এমনই ঘটনা ঘটেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ২নং জামাল ইউনিয়নের কাবিলপুর গ্রামে।
অসহায় উন্নতি বিশ্বাস জানান, এক ছেলে এক মেয়ে তার। মেয়ে মনিতা বিশ্বাসের বিয়ে হয়েছে ১২ বছর আগে। আর এক মাত্র ছেলে হোটেল শ্রমিকের কাজ করে কোন রকম চলে মা-ছেলের সংসার। ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আসাদ কেরানির কাছ থেকে জমি কেনার পর থেকে পাশের বাড়ির সুধান্ন বিশ্বাসের সাথে তার প্রায়ই ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকতো। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সে আমার নতুন ঘরে আগুন ধরিয়ে দিতে পারেন বলে মনে করেন।
তবে নতুন ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাহিলে সুধান্ন বিশ্বাস বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। রোববার রাত অনুমানিক ২টা-আড়াইটা দিকে গ্রামের উজ্জল মোল্ল্যা নামের একটি ছেলে প্রথমে আমাকে ডাকে। পরে ঘুম ভেঙ্গে দেখি পাশের বাড়িতে আগুন জ¦লছে।
ঐ ওয়ার্ডের মেম্বর আতাউর রহমান বলেন, অসহায় উন্নতি বিশ্বাস কাবিলপুর, খানজাপুর ও খালকুলা এই তিন গ্রামের মানুষের বাড়ি বাড়ি যেয়ে বাঁশ-খুটি ও টাকা চেয়ে খুব কষ্ট করে ঘরটি করেছেন। স্বামীর ভিটা বাড়ি ও গয়নাগাটি বিক্রয় করে খুব কষ্ট করে ৫ শতক জমি ক্রয় করে উন্নতি । এর মধ্যে পথের জন্য ১ শতক জমি পাশের বাড়ি সুধান্ন বিশ্বাসকে দিয়ে দেয়। তারপরেও গত কয়েক দিন ধরে দুই পরিবারের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই ছিল। একপর্যায়ে গত রোববার সুধান্ন বিশ্বাসের স্ত্রী উন্নতি বিশ্বাস মারধর করার উদ্যোশে চড়াও হন। এরপর ২টার দিকে দেখতে পান তার নতুন তৈরী করা ঘরটি দাও দাও করে জ¦লছে।
২নং জামাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের হোসেন জানান, আগুন লাগার ঘটনা সকালে শুনার পর আমি ও ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার ঘটনা স্থলে যায়। সে সময় স্থানীয় হিন্দু-মুসলিম অনেকেই ছিল। রাতের আঁধারে কে বা কাহারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে জানা যায়নি। তবে এমপি মহোদয় অসহায় গৃহবধুর নতুন ঘরটি পুড়িয়ে দেওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ক্ষতি পুরণের আশ্বাস দেন।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রহিম মোল্ল্যা জানান, ঘটনাস্থলে আমি নিজে গিয়েছিলাম। তবে এ বিষয়ে এখনো কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিব।