ঢাকা ১১:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চিত্রা নদীতে ধরা পড়ল বিরল প্রজাতির ঘড়িয়াল

Reporter Name

নড়াইল:

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পেড়লী ইউনিয়নে চিত্রা নদীতে ধরা পড়েছে বিরল প্রজাতির ঘড়িয়াল। এর আগে গত অক্টোবরে চিত্রা নদীতে এটি ভাসতে দেখেন এলাকাবাসী।

সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ইটভাটা সংলগ্ন চিত্রা নদীর চরে সেটিকে দেখতে পেয়ে গ্রামবাসী জাল দিয়ে আটক করেন বিশাল আকৃতির বিরল প্রজাতির মিঠাপানির ঘড়িয়াল।

ঘড়িয়ালকে জালে আটকে ডাঙায় তুলে স্থানীয় ইউপি চত্বরে রাখা হয়। এটি একনজর দেখতে সেখানে শত শত উৎসুক নারী-পুরুষ ও শিশু ভিড় করেন। সন্ধ্যায় প্রায় বিপন্ন প্রজাতির এই প্রাণীটি বন্যপ্রাণী সম্প্রসারণ এবং প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা অঞ্চলের কাছে হস্তান্তর করে স্থানীয় উপজেলা বন বিভাগ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার দুপুরে নদীপাড়ের চরে শ্রমিকরা দেখতে পেয়ে ডাক-চিৎকার দিলে গ্রামবাসী জাল দিয়ে ঘড়িয়ালটিকে আটক করেন। এ সময় ঘড়িয়াল কুমিরের কামড়ে খড়রিয়া গ্রামের সরোয়ার বিশ্বাস (৬০), আমিনুর রহমান (৪৫), টুলু শিকদারসহ (৩৫) সাতজন জখম হন। আহতদের তাদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

তারা আরও জানান, ঘড়িয়াল কুমিরটি প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা হবে। চিত্রা নদীতে গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন স্থানে ভাসতে দেখা যায় এটি। ইতোমধ্যে নদীতে পানি কমতে থাকায় এবং শীতকাল হওয়ায় রোদ পোহাতে সেটি ডাঙার দিকে চলে এসেছিল।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, প্রধান খাদ্য মাছ বলেই গোত্রভুক্ত ঘড়িয়াল শ্রেণির এই প্রাণীটি মেছো কুমির নামে পরিচিত। এই প্রাণীটি বিভিন্ন স্থানে ঘট কুমির নামেও পরিচিত। বাংলাদেশে পদ্মা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র এবং এগুলোর শাখা নদীতে এক সময় এ ধরনের কুমির প্রচুর মিলত।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে বাংলাদেশে প্রজননক্ষম কোনো ঘড়িয়াল কুমির নেই বললেই চলে। ঘড়িয়াল মহাবিপন্ন প্রাণী যা বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ দ্বারা সংরক্ষিত।

এ ব্যাপারে পেড়লী ইউপি চেয়ারম্যান মো. জারজিদ মোল্যা বলেন, সোমবার দুপুর ১টার দিকে স্থানীয়রা ঘড়িয়াল কুমিরটি দেখতে পেয়ে অন্যদের খবর দেয়। এরপর খড়রিয়া গ্রামের আজিমুল মোল্যাসহ ১০-১২ জন মিলে চারদিকে বড় জাল দিয়ে ঘেরাও করে ঘড়িয়াল কুমিরটিকে আটক করা হয়। সন্ধ্যার দিকে বন বিভাগের নিকট হস্তান্তর করা হয়। ঘড়িয়ালটি নিরাপদে আটক করতে পারায় গ্রামবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে কালিয়া উপজেলা বনবিভাগের কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বলেন, ঘড়িয়াল কুমিরটিকে আটক করতে পারার খবর পেয়ে বন্যপ্রাণী সম্প্রসারণ এবং প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা অঞ্চলের রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহিনুর রহমান এসে কুমিরটি নিয়ে গেছেন। এটি মিঠাপানির বিরল প্রজাতির ঘড়িয়াল কুমির বলে মনে করছেন তারা। ধারণা করা হচ্ছে সুন্দরবন এলাকা থেকে মিঠাপানির এই ঘড়িয়াল কুমিরটি পথ ভুল করে চিত্রা নদীতে চলে এসেছে।

কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ তাসমীম আলম বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে কুমিরটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। এরপর স্থানীয় বন বিভাগের সঙ্গে কথা বললে তারা বন্যপ্রাণী সম্প্রসারণ এবং প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা অঞ্চলের কর্মকর্তাদের কাছে সেটি হস্তান্তর করেন।

Tag :

About Author Information
Update Time : ০৭:৩০:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২২
৭৯ Time View

চিত্রা নদীতে ধরা পড়ল বিরল প্রজাতির ঘড়িয়াল

Update Time : ০৭:৩০:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২২

নড়াইল:

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পেড়লী ইউনিয়নে চিত্রা নদীতে ধরা পড়েছে বিরল প্রজাতির ঘড়িয়াল। এর আগে গত অক্টোবরে চিত্রা নদীতে এটি ভাসতে দেখেন এলাকাবাসী।

সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ইটভাটা সংলগ্ন চিত্রা নদীর চরে সেটিকে দেখতে পেয়ে গ্রামবাসী জাল দিয়ে আটক করেন বিশাল আকৃতির বিরল প্রজাতির মিঠাপানির ঘড়িয়াল।

ঘড়িয়ালকে জালে আটকে ডাঙায় তুলে স্থানীয় ইউপি চত্বরে রাখা হয়। এটি একনজর দেখতে সেখানে শত শত উৎসুক নারী-পুরুষ ও শিশু ভিড় করেন। সন্ধ্যায় প্রায় বিপন্ন প্রজাতির এই প্রাণীটি বন্যপ্রাণী সম্প্রসারণ এবং প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা অঞ্চলের কাছে হস্তান্তর করে স্থানীয় উপজেলা বন বিভাগ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার দুপুরে নদীপাড়ের চরে শ্রমিকরা দেখতে পেয়ে ডাক-চিৎকার দিলে গ্রামবাসী জাল দিয়ে ঘড়িয়ালটিকে আটক করেন। এ সময় ঘড়িয়াল কুমিরের কামড়ে খড়রিয়া গ্রামের সরোয়ার বিশ্বাস (৬০), আমিনুর রহমান (৪৫), টুলু শিকদারসহ (৩৫) সাতজন জখম হন। আহতদের তাদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

তারা আরও জানান, ঘড়িয়াল কুমিরটি প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা হবে। চিত্রা নদীতে গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন স্থানে ভাসতে দেখা যায় এটি। ইতোমধ্যে নদীতে পানি কমতে থাকায় এবং শীতকাল হওয়ায় রোদ পোহাতে সেটি ডাঙার দিকে চলে এসেছিল।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, প্রধান খাদ্য মাছ বলেই গোত্রভুক্ত ঘড়িয়াল শ্রেণির এই প্রাণীটি মেছো কুমির নামে পরিচিত। এই প্রাণীটি বিভিন্ন স্থানে ঘট কুমির নামেও পরিচিত। বাংলাদেশে পদ্মা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র এবং এগুলোর শাখা নদীতে এক সময় এ ধরনের কুমির প্রচুর মিলত।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে বাংলাদেশে প্রজননক্ষম কোনো ঘড়িয়াল কুমির নেই বললেই চলে। ঘড়িয়াল মহাবিপন্ন প্রাণী যা বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ দ্বারা সংরক্ষিত।

এ ব্যাপারে পেড়লী ইউপি চেয়ারম্যান মো. জারজিদ মোল্যা বলেন, সোমবার দুপুর ১টার দিকে স্থানীয়রা ঘড়িয়াল কুমিরটি দেখতে পেয়ে অন্যদের খবর দেয়। এরপর খড়রিয়া গ্রামের আজিমুল মোল্যাসহ ১০-১২ জন মিলে চারদিকে বড় জাল দিয়ে ঘেরাও করে ঘড়িয়াল কুমিরটিকে আটক করা হয়। সন্ধ্যার দিকে বন বিভাগের নিকট হস্তান্তর করা হয়। ঘড়িয়ালটি নিরাপদে আটক করতে পারায় গ্রামবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে কালিয়া উপজেলা বনবিভাগের কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বলেন, ঘড়িয়াল কুমিরটিকে আটক করতে পারার খবর পেয়ে বন্যপ্রাণী সম্প্রসারণ এবং প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা অঞ্চলের রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহিনুর রহমান এসে কুমিরটি নিয়ে গেছেন। এটি মিঠাপানির বিরল প্রজাতির ঘড়িয়াল কুমির বলে মনে করছেন তারা। ধারণা করা হচ্ছে সুন্দরবন এলাকা থেকে মিঠাপানির এই ঘড়িয়াল কুমিরটি পথ ভুল করে চিত্রা নদীতে চলে এসেছে।

কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ তাসমীম আলম বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে কুমিরটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। এরপর স্থানীয় বন বিভাগের সঙ্গে কথা বললে তারা বন্যপ্রাণী সম্প্রসারণ এবং প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা অঞ্চলের কর্মকর্তাদের কাছে সেটি হস্তান্তর করেন।