গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে সাইবার সিকিউরিটি আইন: জিএম কাদের
সবুজদেশ ডেস্কঃ
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি বলেছেন, সাইবার সিকিউরিটি আইন করা হয়েছে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে। নিউজের পরিবর্তে টেলিভিশনে গান-বাজনা ও নাটক চলবে, কেউই আর সংবাদ পরিবেশন করতে পারবে না। বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্রের অভাব।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় পেশাজীবী সমাজের এক সভায় বক্তৃতাকালে এ কথা বলেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, বাকস্বাধীনতাকে বাধা দেওয়া হলে গণতন্ত্র থাকতে পারে না। সাইবার সিকিউরিটি আইনে যে কোন সংবাদকেই সরকার রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে গণ্য করতে পারবে। এ আইনে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে মামলা করতে পারবে।
বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, এখন গণমাধ্যমে সেলফ সেন্সরশিপ চলছে, আগামী কোন সেন্সর দরকার হবে না। কারণ গণমাধ্যম কোনো সংবাদই করতে পারবে না। এতে সব নিউজ চ্যানেল বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
জিএম কাদের বলেন, দেশে এখন গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্র চর্চা করার পরিবেশ নেই। দেশ এখন একদলীয় শাসন ব্যবস্থার দিকে চলে যাচ্ছে। সাইবার সিকিউরিটি আইনের মাধ্যমে মানুষের বাকস্বাধীনতা, ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। সাইবার সিকিউরিটি আইনের মাধ্যমে সরকার যেকোনো কাজকেই রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে পারবে।
জিএম কাদের বলেন, জনগণ যদি সরকারের সমালোচনা করতে না পারেন, তাহলে সরকার রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজ করলে তা ঠেকানোর উপায় কী? সরকারের সামালোচনাকে এখন রাষ্ট্রবিরোধী হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। আইন করে যদি কথা বলার অধিকার বন্ধ করে দেওয়া হয়, সরকারবিরোধী আন্দোলনে বাধা দেওয়া হয়, তখন আর গণতন্ত্র থাকে না।
আসন্ন নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমরাও শঙ্কিত। দুটি পক্ষ যেভাবে শক্ত অবস্থান নিয়ে দাঁড়িয়েছে তাতে সাধারণ মানুষের মাঝে সহিংসতার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। একটি দলের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, তারা জিততে না পারলে যেন তাদের মৃত্যু হবে। তাই তারা মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে। আবার ক্ষমতায় না থাকতে পারলে ভবিষ্যতে বর্তমান সরকারের দুর্গতি হবে, এই ভেবে সরকারি দল ক্ষমতায় থাকতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, দুটি দল মুখোমুখি হলেই বড় ধরনের সহিংসতা হতে পারে। দেশ ও জাতি ধংসের পথে চলে যেতে পারে। দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদদের এগিয়ে আসতে হবে। জেদ ও স্বার্থ হাসিলের জন্য দেশকে ধ্বংস করার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি।
জিএম কাদের আরও বলেন, বর্তমান সরকার রাষ্ট্রকে নিজস্ব ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করছে। রাষ্ট্র, সরকার এবং দল যখন এক হয়ে যায় তখনই একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু হয়ে যায়। সরকারি কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সরকারি দলের পক্ষে কথা বলছে। তারা সরকারি দলের সভা-সমাবেশে যোগ দিচ্ছে। সরকারকে ভোটের ব্যাপারে সাহায্য করছে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। তাই সরকারি কর্মকর্তা, সরকারি দলের নেতা-কর্মী এবং মন্ত্রীদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সরকার ও সরকারি দল এক হয়ে রাষ্ট্রকে দখল করার মাধ্যমে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে। তাই সামনের দিকে কঠিন সংগ্রাম অপেক্ষা করছে, আমাদের সেই সংগ্রামে জিততে হবে। আমরা কারো পক্ষ বা বিপক্ষ নয়, আমরা জনগণের পক্ষের শক্তি।
পেশাজীবীদের উদ্দেশে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয়করণের মাধ্যমে পেশাজীবীদের রাজনীতিতে এনে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা পেশার দিকে খেয়াল না করে দলীয় কাজ-কর্মে বেশি মনোনিবেশ করছে। ফলে সাধারণ মানুষ পেশাজীবীদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, পদ নেই তারপরও সরকার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঢালাওভাবে পদোন্নতি দেওয়া মানে দেশকে ধংসের দিকে নিয়ে যাওয়া। গাইডলাইনের বাইরে পদোন্নতি দেওয়া হলে শৃঙ্খলার অভাব দেখা দেবে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির টানাটানিতেই প্রমাণ হচ্ছে জাতীয় পার্টি ক্ষমতার নিয়ামক শক্তি। জাতীয় পার্টিকে পাশে পেতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দল দুটি ক্ষমতার জন্য অন্ধ হয়ে গেছে। একটি দল ক্ষমতায় যেতে চায় আর অপরটি ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। তাদের চিন্তা শুধু ক্ষমতা নিয়েই। দেশের জনগণের কথা তারা ভাবে না। জাতীয় পার্টিই জনগণের জন্য রাজনীতি করছে।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেছেন, দেশের মানুষ ভালো নেই। দেশের মানুষের পেটে খাবার নেই, তারা উন্নয়ন দেখে ক্ষুধা নিবারণ করতে পারে না। দ্রব্যমূল্য উর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের মাঝে হাহাকার উঠেবে। সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্য নাগালের মধ্যে দেখতে চায়। অসাধু ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর আইন করতেও সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তিনি।
জাতীয় পেশাজীবী সমাজের সভাপতি ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ডা. মোস্তাফিকুর রহমান আকাশ সভায় সভাপতিত্ব করেন।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা আল মাহমুদ, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরীফা কাদের এমপি এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
এতে উপস্থিত ছিলেন- চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা খলিলুর রহমান খলিল, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন খান, দফতর সম্পাদক এমএ রাজ্জাক খান, যুগ্ম দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল মানিক, সদস্য জাহিদ হাসান, মাহমুদুল হক মনি। জাতীয় পেশাজীবী পরিষদের নেতাদের মধ্যে ডা. আরাফাত চৌধুরী, ডা. শাখাওয়াত হোসেন, ডা. আহাসিনা লুপা, মাহবুব আলম, প্রিয়াংকা সুকুল, ডা. রকিবুল হাসান সাগর, ইয়ামিন হাসান ইমন, মেহেদী হাসান, রাসেল শেখ, ড. শুক্কুর আলী, অধ্যক্ষ নাজমুল হক, নুরুজ্জামান খান, জাহাঙ্গীর আলম, রিপন গাজী, অধ্যক্ষ ইমদাদুল হক খান, সানজিদা আক্তার, অ্যাডভোকেট রোজিনা খাতুন প্রমুখ।