ঢাকা ০৯:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসরাইলের চূড়ান্ত পরাজয় হবে যেভাবে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ছবি সংগৃহীত-

 

ইসরাইলের অস্তিত্ব দীর্ঘদিন ধরে একটি সামরিক শক্তির ওপর নির্ভরশীল। যা সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমা শক্তিগুলো দ্বারা সমর্থিত, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা। তবে ইসরাইল যেহেতু সামরিক শক্তির অপ্রতিরোধ্যতায় বেড়ে উঠেছে, সেহেতু তার প্রকৃত দুর্বলতা হচ্ছে অর্থনৈতিক নির্ভরতায়।

ইসরাইলের ‘নিরাপত্তামূলক’ ব্যবস্থা মূলত সহিংসতার স্বাভাবিকীকরণ এবং স্বায়ত্তশাসনের দমন দ্বারা সমর্থিত। যা এখন নিজেদের ভেতর থেকেই চরম ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এই ক্ষয়ক্ষতি শুধু হিজবুল্লাহর রকেট হামলা বা হামাসের প্রতিরোধমূলক আক্রমণের মাধ্যমে নয়। বরং বৈশ্বিক বিভাজন, বয়কট এবং নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে হচ্ছে।

যা মূলত ইসরাইলের প্রতি একটি পদ্ধতিগত অস্বীকৃতি যে, অন্যদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো এই শাসনব্যবস্থাকে আর সহায়তা দেওয়া হবে না।

সাম্রাজ্যবাদী কাঠামো এবং সামরিক আধিপত্যের ভ্রান্তি

ইসরাইলের শাসন ব্যবস্থার ভিত্তি কেবল সামরিক শক্তিই নয়; এটি একটি সাম্রাজ্যবাদী প্রকল্পও বটে, যা বৈশ্বিক পুঁজি এবং পশ্চিমা শক্তির আধিপত্যের সঙ্গে জড়িত। ইসরাইলকে একটি ‘নিরাপত্তামূলক’ রাষ্ট্র হিসাবে চিত্রিত করা হলেও, এর অর্থনীতি বৈশ্বিক স্তরে কার্যকর, যা পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে প্রযুক্তি, বিনিয়োগ এবং রাজনৈতিক কভারেজের ওপর নির্ভরশীল।

তবে যেহেতু পশ্চিমা দেশগুলোর নিজস্ব সংকট গভীর হচ্ছে এবং তাদের সাম্রাজ্যবাদী কাঠামো প্রতিরোধের সম্মুখীন, সেহেতু ইসরাইলের অর্থনীতি সমর্থনকারী এই কাঠামোটি খসে পড়ছে।

আর এই খসে পড়া রূপটি একটি সহজ সত্য উদঘাটন করছে যে, সামরিক শক্তি- তা যতটা কার্যকরী তাতেই হোক না কেন, একটি দৃঢ় অর্থনৈতিক ভিত্তির ছাড়া দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না।

গাজার জন্য সাম্রাজ্যবাদী সতর্কবার্তা

গাজায় যে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে, তা শুধু একটি ‘নিরাপত্তামূলক’ ঘটনাই নয়—এটি একটি সুস্পষ্ট সাম্রাজ্যবাদী সহিংসতা, যা প্রধানত ইরান এবং অন্য স্বায়ত্তশাসিত শক্তিগুলোকে সতর্ক করতে ব্যবহৃত হয়েছে।

তবে গাজার হত্যাযজ্ঞও একটি বৈশ্বিক সচেতনতা তৈরি করেছে। ‘নিরাপত্তামূলক’ পদক্ষেপ সত্ত্বেও যে নৃশংসতা সেখানে ঘটানো হয়েছে, তা পৃথিবীজুড়ে ক্ষোভ জাগিয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও সংগঠিত প্রতিরোধ সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছে।

অর্থনৈতিক নির্ভরতা এবং দুর্বলতা

ইসরাইলের অর্থনীতি বৈশ্বিক বাজারের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত এবং দেশটির বিদেশি বিনিয়োগ এবং রপ্তানিও চলমান। টেকনোলজি এবং প্রতিরক্ষা শিল্প, যাকে ইসরাইলের স্বাধীনতার প্রতীক হিসাবে দেখা হয়, তা মূলত বৈদেশিক পুঁজি এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের ওপর নির্ভরশীল।

কিন্তু ইসরাইলি পণ্য বয়কট এবং বিভিন্ন দেশের কোম্পানিগুলো যেভাবে ইসরাইলের অর্থনীতি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছে, তার ফলে দেশটির অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ক দুর্বল হয়ে পড়ছে। সম্প্রতি ইসরাইলে বিদেশি বিনিয়োগ এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে এবং স্যামসাং নেক্সটের মতো প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো তাদের ইসরাইলভিত্তিক কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।

ইসরাইলের অবনতির চিত্র

এই যে বয়কট ও মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার আন্দোলন, যার ফলে ইসরাইলের অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে— এটি ইসরাইলের বিরুদ্ধে এক ধরনের বৈশ্বিক প্রতিরোধ। সামরিক সহিংসতা তো সাময়িকভাবে প্রতিরোধ করা যেতে পারে। তবে অর্থনৈতিক প্রতিরোধ একটি নিরবচ্ছিন্ন এবং বৈশ্বিক আন্দোলন, যা মানবাধিকার এবং ন্যায়বিচারের প্রতি বিশ্বজনীন প্রতিশ্রুতি থেকে উদ্ভূত।

ইসরাইল তার সামরিক শক্তি ধরে রাখার জন্য বৃহত্তর আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নিলেও, দেশটি তার অর্থনৈতিক অন্তর্নিহিত দুর্বলতা এবং বৈশ্বিক প্রতিরোধের মুখে পড়ছে। এই বয়কট এবং নিষেধাজ্ঞাগুলো ইসরাইলের অর্থনৈতিক কাঠামোকে ধ্বংস করতে সহায়ক এবং এর মাধ্যমে বিশ্ব সমাজ একটি শক্তিশালী প্রতিরোধের উত্থান দেখাবে। যা কেবল সামরিক শক্তির নয়, বরং ন্যায়বিচার এবং ভাগ করে নেওয়া মানবতার শক্তির ওপর নির্ভরশীল।

সূত্র: আল মায়াদিন

About Author Information
আপডেট সময় : ০৯:০৮:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪
৭ Time View

ইসরাইলের চূড়ান্ত পরাজয় হবে যেভাবে

আপডেট সময় : ০৯:০৮:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪

 

ইসরাইলের অস্তিত্ব দীর্ঘদিন ধরে একটি সামরিক শক্তির ওপর নির্ভরশীল। যা সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমা শক্তিগুলো দ্বারা সমর্থিত, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা। তবে ইসরাইল যেহেতু সামরিক শক্তির অপ্রতিরোধ্যতায় বেড়ে উঠেছে, সেহেতু তার প্রকৃত দুর্বলতা হচ্ছে অর্থনৈতিক নির্ভরতায়।

ইসরাইলের ‘নিরাপত্তামূলক’ ব্যবস্থা মূলত সহিংসতার স্বাভাবিকীকরণ এবং স্বায়ত্তশাসনের দমন দ্বারা সমর্থিত। যা এখন নিজেদের ভেতর থেকেই চরম ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এই ক্ষয়ক্ষতি শুধু হিজবুল্লাহর রকেট হামলা বা হামাসের প্রতিরোধমূলক আক্রমণের মাধ্যমে নয়। বরং বৈশ্বিক বিভাজন, বয়কট এবং নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে হচ্ছে।

যা মূলত ইসরাইলের প্রতি একটি পদ্ধতিগত অস্বীকৃতি যে, অন্যদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো এই শাসনব্যবস্থাকে আর সহায়তা দেওয়া হবে না।

সাম্রাজ্যবাদী কাঠামো এবং সামরিক আধিপত্যের ভ্রান্তি

ইসরাইলের শাসন ব্যবস্থার ভিত্তি কেবল সামরিক শক্তিই নয়; এটি একটি সাম্রাজ্যবাদী প্রকল্পও বটে, যা বৈশ্বিক পুঁজি এবং পশ্চিমা শক্তির আধিপত্যের সঙ্গে জড়িত। ইসরাইলকে একটি ‘নিরাপত্তামূলক’ রাষ্ট্র হিসাবে চিত্রিত করা হলেও, এর অর্থনীতি বৈশ্বিক স্তরে কার্যকর, যা পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে প্রযুক্তি, বিনিয়োগ এবং রাজনৈতিক কভারেজের ওপর নির্ভরশীল।

তবে যেহেতু পশ্চিমা দেশগুলোর নিজস্ব সংকট গভীর হচ্ছে এবং তাদের সাম্রাজ্যবাদী কাঠামো প্রতিরোধের সম্মুখীন, সেহেতু ইসরাইলের অর্থনীতি সমর্থনকারী এই কাঠামোটি খসে পড়ছে।

আর এই খসে পড়া রূপটি একটি সহজ সত্য উদঘাটন করছে যে, সামরিক শক্তি- তা যতটা কার্যকরী তাতেই হোক না কেন, একটি দৃঢ় অর্থনৈতিক ভিত্তির ছাড়া দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না।

গাজার জন্য সাম্রাজ্যবাদী সতর্কবার্তা

গাজায় যে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে, তা শুধু একটি ‘নিরাপত্তামূলক’ ঘটনাই নয়—এটি একটি সুস্পষ্ট সাম্রাজ্যবাদী সহিংসতা, যা প্রধানত ইরান এবং অন্য স্বায়ত্তশাসিত শক্তিগুলোকে সতর্ক করতে ব্যবহৃত হয়েছে।

তবে গাজার হত্যাযজ্ঞও একটি বৈশ্বিক সচেতনতা তৈরি করেছে। ‘নিরাপত্তামূলক’ পদক্ষেপ সত্ত্বেও যে নৃশংসতা সেখানে ঘটানো হয়েছে, তা পৃথিবীজুড়ে ক্ষোভ জাগিয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও সংগঠিত প্রতিরোধ সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছে।

অর্থনৈতিক নির্ভরতা এবং দুর্বলতা

ইসরাইলের অর্থনীতি বৈশ্বিক বাজারের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত এবং দেশটির বিদেশি বিনিয়োগ এবং রপ্তানিও চলমান। টেকনোলজি এবং প্রতিরক্ষা শিল্প, যাকে ইসরাইলের স্বাধীনতার প্রতীক হিসাবে দেখা হয়, তা মূলত বৈদেশিক পুঁজি এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের ওপর নির্ভরশীল।

কিন্তু ইসরাইলি পণ্য বয়কট এবং বিভিন্ন দেশের কোম্পানিগুলো যেভাবে ইসরাইলের অর্থনীতি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছে, তার ফলে দেশটির অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ক দুর্বল হয়ে পড়ছে। সম্প্রতি ইসরাইলে বিদেশি বিনিয়োগ এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে এবং স্যামসাং নেক্সটের মতো প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো তাদের ইসরাইলভিত্তিক কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।

ইসরাইলের অবনতির চিত্র

এই যে বয়কট ও মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার আন্দোলন, যার ফলে ইসরাইলের অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে— এটি ইসরাইলের বিরুদ্ধে এক ধরনের বৈশ্বিক প্রতিরোধ। সামরিক সহিংসতা তো সাময়িকভাবে প্রতিরোধ করা যেতে পারে। তবে অর্থনৈতিক প্রতিরোধ একটি নিরবচ্ছিন্ন এবং বৈশ্বিক আন্দোলন, যা মানবাধিকার এবং ন্যায়বিচারের প্রতি বিশ্বজনীন প্রতিশ্রুতি থেকে উদ্ভূত।

ইসরাইল তার সামরিক শক্তি ধরে রাখার জন্য বৃহত্তর আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নিলেও, দেশটি তার অর্থনৈতিক অন্তর্নিহিত দুর্বলতা এবং বৈশ্বিক প্রতিরোধের মুখে পড়ছে। এই বয়কট এবং নিষেধাজ্ঞাগুলো ইসরাইলের অর্থনৈতিক কাঠামোকে ধ্বংস করতে সহায়ক এবং এর মাধ্যমে বিশ্ব সমাজ একটি শক্তিশালী প্রতিরোধের উত্থান দেখাবে। যা কেবল সামরিক শক্তির নয়, বরং ন্যায়বিচার এবং ভাগ করে নেওয়া মানবতার শক্তির ওপর নির্ভরশীল।

সূত্র: আল মায়াদিন