প্রভাবশালীদের ৭৭৮ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল
সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে জমা না দেওয়ায় সারা দেশে ৭৭৮টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) এসব অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করেছেন। অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের সংসদ-সদস্য ও প্রভাবশালীরা রয়েছেন।
অপরদিকে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে যারা আগ্নেয়াস্ত্র জমা দিয়েছেন, তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেসব অস্ত্র ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যেসব অস্ত্র আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে ব্যবহার করার আশঙ্কা রয়েছে, সেসব ফেরত দেওয়া হবে না। যারা ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত বা মামলা চলমান, তারাও অস্ত্র ফেরত পাবেন না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, লাইসেন্স বাতিল হওয়ায় অস্ত্রগুলো এখন অবৈধ। এসব অস্ত্র উদ্ধারে সব জেলা পুলিশ সুপারকে (এসপি) চিঠি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বলা হয়েছে। এসব অস্ত্রের বেশিরভাগ ঢাকা, চট্টগ্রাম ও পাবনা জেলার। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে বিভিন্ন সময় বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ও প্রতিপক্ষকে ভয় দেখাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করেন। কখনো অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে পরে সেটিকে বৈধ অস্ত্র বলে দাবি করার ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় বেশিরভাগ সময় নিশ্চুপ ছিল জেলা প্রশাসন ও পুলিশ। অথচ ‘আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা-২০১৬’ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি নিজের লাইসেন্সের বিপরীতে নেওয়া অস্ত্র শুধু আত্মরক্ষার জন্য বহন ও ব্যবহার করতে পারবেন। অন্যের মধ্যে ভীতি বা বিরক্তি তৈরি হতে পারে, এমন ক্ষেত্রে অস্ত্র প্রদর্শন করা যাবে না। এটি করলে তার অস্ত্রের লাইসেন্স তাৎক্ষণিকভাবে বাতিলযোগ্য হবে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদে (২০০৯-২০২৪) সারা দেশে ১৯ হাজার ৫৯৪টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয় ৮ আগস্ট। পরে ২৫ আগস্ট বিগত সরকারের সময় অনুমোদন দেওয়া সব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত যাদের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, তাদের গত ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলাবারুদসহ অস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে বলা হয়। বেঁধে দেওয়া এই সময়ের মধ্যে অনেকে অস্ত্র জমা দেননি।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল হয়েছে। এ ছাড়া পাবনায় ১৪১, চট্টগ্রামে ৭৩, যশোরে ৬৬, সিলেটে ৬৩ ও কক্সবাজারে ৩৮টি অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। যে ৭৭৮টি অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশের মালিক আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ-সদস্য, ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি।
একাধিক জেলা প্রশাসক জানান, লাইসেন্সধারী ব্যক্তিরা বেশিরভাগ বিদেশে চলে গেছেন। কেউ কেউ দেশে আত্মগোপনে রয়েছেন। লাইসেন্সধারীদের কেউ কেউ বলেছেন, তাদের অস্ত্র লুট হয়ে গেছে।