মধুমেলার নিলাম নিয়ে বিএনপির দু’গ্রুপের হাতাহাতি
যশোরের সাগরদাঁড়িতে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী ‘মধু মেলার’ নিলাম নিয়ে বিএনপির দু’গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে।
উন্মুক্ত নিলামে অংশ নেওয়াকে কেন্দ্র করে কেশবপুর পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুস সামাদ বিশ্বাস ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ অনুসারীদের মধ্যে এই হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তবে তাৎক্ষণিক পুলিশ ও জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে যাওয়ায় কোনো রকম সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। তবে নিলাম চলাকালীন জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে দু’পক্ষের অবস্থানকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। এমন পরিস্থিতির মধ্যে ৩৮ লাখ ১৩ হাজার ২০০ টাকায় মেলার ছয়টি ইভেন্ট বিক্রি হয়েছে।
জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৫ জানুয়ারি মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০১তম জন্মবার্ষিকী। জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়িতে ২৪ জানুয়ারি থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় মধুমেলা। মেলাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর উপজেলা প্রশাসন উন্মুক্ত নিলামের আয়োজন করে। এটি দীর্ঘ বছর কেশবপুর উপজেলাতে অনুষ্ঠিত হয়।
তবে এবার মেলার নিলামকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দু’গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে সহিংসতার আশঙ্কায় সিদ্ধান্ত হয় জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় এই নিলামের আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন। নিলাম শুরু হওয়ার আগে উপজেলা বিএনপির দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা উপস্থিত হন জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে। দুপুর ১২টার দিকে দু’গ্রুপের নেতাকর্মীরা জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে প্রবেশ করেন। সেখানে নেতাকর্মীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে নিলামে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা বাদে সকলকে বাইরে চলে যাওয়ার নির্দেশনা দেন ইউএনও। এরপরই দু’গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
সভাকক্ষের ভেতর ও বাইরে আব্দুস সামাদ বিশ্বাস ও আবুল হোসেন আজাদ অনুসারীদের মধ্যে কয়েকদফা হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে জেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সভাকক্ষের বাইরের কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ করে নেতাকর্মীদের বের করে দেন। পরে নেতাকর্মীরা জেলা প্রশাসন চত্বরে অবস্থান নিলে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নিলাম শুরু হয়ে শেষ হয় দেড়টার দিকে।
উন্মুক্ত নিলামে ছয়টি ক্যাটাগরিতে ৩৮ লাখ ১৩ হাজার ২০০ টাকায় সার্কাস, যাদু প্রদর্শনী, মৃত্যুকূপ, শিশু বিনোদন, ফার্নিচার ও পার্কিং গ্যারেজ বিক্রি হয়। উন্মুক্ত ডাকে বিএনপির নেতাকর্মী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অর্ধশতাধিক ব্যক্তি অংশ নিলেও সবক’টি ক্যাটাগরি পেয়েছেন সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আকরাম হোসেন। তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদের অনুসারী।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন স্টল বরাদ্দের উন্মুক্ত নিলাম পরিচালনা করেন। এ সময় যশোরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক রফিকুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সুজন সরকারসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ বলেন, হাতাহাতির কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না জানা নেই। আমি ঢাকাতে আছি। কোনো টেন্ডার, ভাগ-বাটোয়ারাতে আমি অংশ নিই এমন কেউ বলতে পারবে না। কেউ যদি বিশৃঙ্খলা করে, ব্যক্তির দায় কখনো সংগঠন নেবে না।
পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুস সামাদ বিশ্বাস আর সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আকরাম হোসেনের মুঠোফোনে কয়েক দফা যোগাযোগ করা হলেও রিসিভ করেননি।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি নিলাম অংশ নেন। এর মধ্যে সবক’টি পেয়েছেন আকরাম হোসেন। প্রতিবছর কেশবপুরে নিলাম হলেও এবার পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হয়েছে। কোনো বিশৃঙ্খলা হয়েছে কি না জানি না।
সবুজদেশ/এসইউ