ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ২৮ ফিলিস্তিনি।ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গত ১০০ দিন ধরে উত্তর গাজায় চালানো অবরোধ এবং আক্রমণে অন্তত ৫,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত বা নিখোঁজ হয়েছেন। এসময় আরও ৯,৫০০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আল জাজিরার একটি মেডিক্যাল সূত্র।
ইসরায়েল গত অক্টোবর মাসে উত্তর গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। এই অবরোধকে গাজার সরকারী মিডিয়া অফিস “জাতিগত নিধনের সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ” বলে অভিহিত করেছে। সেখানে শত শত মানুষ গৃহহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, স্কুল, হাসপাতাল, এমনকি শরণার্থী শিবিরও ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়েছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খুদারি জানিয়েছেন, উত্তর গাজা এখন এক “ভূতুড়ে এলাকা,” যেখানে ধ্বংসাবশেষের মধ্যেও কিছু মানুষ রয়ে গেছেন। কামাল আদওয়ান হাসপাতাল, যা উত্তর গাজার প্রধান স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, ডিসেম্বর মাসে ইসরায়েলি বাহিনীর দ্বারা পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। এর পরিচালক হুসাম আবু সাফিয়ার ভাগ্য এখনও অজানা।
এছাড়া ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলা এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি।মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নিরলস এই হামলায় আরও অন্তত এক লাখ ৯ হাজার ৬৬০ জন ব্যক্তিও আহত হয়েছেন।অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলায় কমপক্ষে আরও ২৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬ হাজার ৫৬৫ জনে পৌঁছেছে বলে রোববার অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
রবিবার, গাজার উত্তরাঞ্চলের মুকাবারাত এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী দুজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে। পরে শাতি শরণার্থী শিবিরে ড্রোন হামলায় আরও একজন নিহত হন। এর পাশাপাশি, গাজা সিটির উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর তীব্র আক্রমণে শনিবার আটজন প্রাণ হারান।এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
গাজার মানবিক পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। ইসরায়েলি অবরোধ এবং হামলা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য ক্রমাগত বিপর্যয় ডেকে আনছে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে গাজার পুনর্গঠন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
তথ্যসূত্র :আল-জাজিরা,আনাদোলু এজেন্সি