ঢাকা ০৫:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা-

কে এই কোটচাঁদপুরের ‘কটা’?

বিশেষ প্রতিনিধি ও কোটচাঁদপুর প্রতিনিধি:

 

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে জামায়াত নেতা হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ও পুলিশ-র‌্যাবের কথিত সোর্স হিসেবে এলাকায় পরিচিত কওসার লস্কর ওরফে কটাকে (৫৫) গভীর রাতে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নে চাঁদপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত কওসার ওই গ্রামের মৃত লুৎফর লস্কারের ছেলে। নিহত কওসার লস্কর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল বলে নির্ভরযোগ্য একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কওসার কোটচাঁদপুর উপজেলা জামায়াতের অর্থ সম্পাদক এনামুল মাস্টার হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। সে ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক ছিল। তিন দিন আগে বাড়িতে আসে কওসার। বিগত সরকারের সময় কওসার পুলিশ প্রশাসনের সোর্স হিসেবে কাজ করতো। ২০১৪ সালের পরে ঝিনাইদহের তৎকালিন পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেনের সময় বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে সে । তার অত্যাচারে আওয়ামী লীগ বিরোধীরা ঘরে থাকতে পারতেন না। যাকে-তাকে বিএনপি, জামায়াত–শিবির আখ্যা দিয়ে চাঁদা আদায় করা ছিল নিত্যদিনের কাজ।  বিনা কারনে পুূলিশ দিয়ে হয়রানি করতো সাধারন মানুষকে। কোটচাঁদপুরসহ আশপাশের উপজেলার মানুষও আতঙ্কে থাকতো তার কারণে।

চাঁদপাড়া গ্রামের এক বৃদ্ধ নাম প্রকাশ না করার শর্তে সবুজদেশ নিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে কওসার পলাতক ছিল। ৩/৪ দিন আগে বাড়িতে এসেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অনেক মানুষকে পুলিশসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছে। আটকের ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায় করতো। তার অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা বাড়ি থাকতে চাইলে টাকা দিতে হতো। নাহলে পুলিশ দিয়ে তাদের ধরিয়ে দিতো।

গ্রামবাসীদের কাছে এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম ছিল কওসার লস্কর ওরফে কটা। এলাকায় কটা নামেই তার পরিচিতি। তার ব্যাপারে এলাকাবাসীর বক্তব্য জানার চেষ্টা করলে তেমন কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি। সবুজদেশ নিউজের সাথে যে কয়জন কথা বলেছেন সবাই নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে। তারপরও তাদের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ।

নিহতের মা নুরজাহান বেগম বলেন, গভীর রাতে প্রায় ৫০/৬০ জন মুখোশধারী লোক এসে পুলিশ পরিচয়ে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর খবর আসে বাড়ির পাশের রেললাইনে তাকে কুপিয়ে রেখে গেছে। এ ঘটনার সাথে গ্রামের লোকজন জড়িত আছে। কারা মেরেছে সবাই বুঝতে পারছে। নাম বলা যাবে না। বললে আমাগের দুনিয়ায় রাখবে না। তিনি তার ছেলে হত্যার বিচার চান।

তবে নিহতের স্ত্রী ওজুলা বেগম জানান, রাত পৌনে ১টার দিকে চাঁদপাড়া বাংলো রেলক্রসিং নামক স্থানে রাস্তার ওপর কওসার রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে বলে পুলিশ তাদের জানায়। এরপর পরিবারের লোকজন সেখানে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কোটচাঁদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন মাতুব্বর সবুজদেশ নিউজকে জানান, আমাদের টহল পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারি কারা যেন একজনকে এলাঙ্গী রিসোর্টের কাছে কুপিয়ে জখম করে রেখে গেছে। এলাকাবাসীর সহায়তায় তাঁকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যান তার স্বজনরা।

তিনি আরো জানান, ২০১৪ সালে জামায়াত নেতা এনামুল মাস্টার হত্যার ঘটনায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। কওসার আলী সেই হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। মামলাটি সিআইডিতে তদন্তনাধীন। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

সবুজদেশ/কেএবি/এসএএস

About Author Information
আপডেট সময় : ০৬:১৪:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫
২২৪ Time View

বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা-

কে এই কোটচাঁদপুরের ‘কটা’?

আপডেট সময় : ০৬:১৪:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫

 

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে জামায়াত নেতা হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ও পুলিশ-র‌্যাবের কথিত সোর্স হিসেবে এলাকায় পরিচিত কওসার লস্কর ওরফে কটাকে (৫৫) গভীর রাতে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নে চাঁদপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত কওসার ওই গ্রামের মৃত লুৎফর লস্কারের ছেলে। নিহত কওসার লস্কর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল বলে নির্ভরযোগ্য একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কওসার কোটচাঁদপুর উপজেলা জামায়াতের অর্থ সম্পাদক এনামুল মাস্টার হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। সে ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক ছিল। তিন দিন আগে বাড়িতে আসে কওসার। বিগত সরকারের সময় কওসার পুলিশ প্রশাসনের সোর্স হিসেবে কাজ করতো। ২০১৪ সালের পরে ঝিনাইদহের তৎকালিন পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেনের সময় বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে সে । তার অত্যাচারে আওয়ামী লীগ বিরোধীরা ঘরে থাকতে পারতেন না। যাকে-তাকে বিএনপি, জামায়াত–শিবির আখ্যা দিয়ে চাঁদা আদায় করা ছিল নিত্যদিনের কাজ।  বিনা কারনে পুূলিশ দিয়ে হয়রানি করতো সাধারন মানুষকে। কোটচাঁদপুরসহ আশপাশের উপজেলার মানুষও আতঙ্কে থাকতো তার কারণে।

চাঁদপাড়া গ্রামের এক বৃদ্ধ নাম প্রকাশ না করার শর্তে সবুজদেশ নিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে কওসার পলাতক ছিল। ৩/৪ দিন আগে বাড়িতে এসেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অনেক মানুষকে পুলিশসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছে। আটকের ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায় করতো। তার অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা বাড়ি থাকতে চাইলে টাকা দিতে হতো। নাহলে পুলিশ দিয়ে তাদের ধরিয়ে দিতো।

গ্রামবাসীদের কাছে এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম ছিল কওসার লস্কর ওরফে কটা। এলাকায় কটা নামেই তার পরিচিতি। তার ব্যাপারে এলাকাবাসীর বক্তব্য জানার চেষ্টা করলে তেমন কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি। সবুজদেশ নিউজের সাথে যে কয়জন কথা বলেছেন সবাই নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে। তারপরও তাদের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ।

নিহতের মা নুরজাহান বেগম বলেন, গভীর রাতে প্রায় ৫০/৬০ জন মুখোশধারী লোক এসে পুলিশ পরিচয়ে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর খবর আসে বাড়ির পাশের রেললাইনে তাকে কুপিয়ে রেখে গেছে। এ ঘটনার সাথে গ্রামের লোকজন জড়িত আছে। কারা মেরেছে সবাই বুঝতে পারছে। নাম বলা যাবে না। বললে আমাগের দুনিয়ায় রাখবে না। তিনি তার ছেলে হত্যার বিচার চান।

তবে নিহতের স্ত্রী ওজুলা বেগম জানান, রাত পৌনে ১টার দিকে চাঁদপাড়া বাংলো রেলক্রসিং নামক স্থানে রাস্তার ওপর কওসার রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে বলে পুলিশ তাদের জানায়। এরপর পরিবারের লোকজন সেখানে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কোটচাঁদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন মাতুব্বর সবুজদেশ নিউজকে জানান, আমাদের টহল পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারি কারা যেন একজনকে এলাঙ্গী রিসোর্টের কাছে কুপিয়ে জখম করে রেখে গেছে। এলাকাবাসীর সহায়তায় তাঁকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যান তার স্বজনরা।

তিনি আরো জানান, ২০১৪ সালে জামায়াত নেতা এনামুল মাস্টার হত্যার ঘটনায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। কওসার আলী সেই হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। মামলাটি সিআইডিতে তদন্তনাধীন। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

সবুজদেশ/কেএবি/এসএএস