ঢাকা ০২:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘ফুলনগরী’ খ্যাত কালীগঞ্জে ফেব্রুয়ারী ঘিরে ফুলচাষীদের ব্যস্ততা

 

সারাবছরই ফুল বিক্রি হয়। কিন্ত ফেব্রুয়ারীতে তা কয়েকগুণে বেড়ে যায়। কেননা এ মাসেই পালিত হয় ফুল নির্ভর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্তবরণ, সোনাতন ধর্মাবলম্বীদের স্বরস্বতি পূজা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। কাজেই মাসটি জুড়েই ফুলের চাহিদা ও দাম বেশি থাকে। ফলে এ সময়ে বাজারজাতকরনে ফুলচাষীদের বিরামহীন ব্যস্ততা থাকে। বিশেষ করে ১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ঘিরে কৃষকেরা সকল প্রস্ততি শেষ করেছেন। তারা মনে করছেন এ বছর দেশের ফুলের বাজারে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের ফুল চোখ রাঙাবে। এছাড়াও দাম ভালো পেয়ে তারা বেশ লাভবান হতে পারবেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ এলাকার মাটি ফুলচাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। প্রথম দিকে এটি সৌখিন চাষ হিসেবে ধরা হতো। যা এখন বানিজ্যিক চাষে পরিণত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলাতে এখন ফুলচাষ হচ্ছে। তারমধ্যে দক্ষিণাঞ্চালের যশোরের গদখালি অন্যতম। আর এর পরেই ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের অবস্থান। ফুল বাজারজাতকরনের সুবিধার্থে এ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা বাজারে সরকারীভাবে একটি সেট নির্মান করে দিয়েছে। এ উপজেলাতে চলতি অর্থ বছরে মোট ৭৫ হেক্টর জমিতে নানা জাতের ফুলের চাষ হয়েছে। অনেক কৃষক ফুলচাষ করে তাদের দিন পাল্টে ফেলেছেন।
কালীগঞ্জের ফুলের নগরী খ্যাত বালিয়াডাঙ্গা এলাকায় সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, বিভিন্ন মাঠে গেলে দেখা যায়, বিভিন্ন রঙের গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধ্যা, সন্ধ্যা মালতি, চন্দ্র মল্লিকা, হাসনা হেনা, বিদেশী নানা রঙ ও জাতের জারবেরা, বোতাম ফুল, টিউলিপের ক্ষেত দেখা যায়। ফুলক্ষেত গুলোতে বাজার ধরতে কৃষকেরা সকলেই কাজের ব্যস্ততায় রয়েছেন। তবে এ বছর দাম ভালো তাই সকলেরই রয়েছে হাসি ভরা মুখ। অপর পাশে গেলে দেখা মেলে-কেউ ফুল তুলছেন, কেউ মালা গাঁথছেন, কেউ ঝোঁপা তৈরী করছেন। সবশেষে কিছু পাঠিয়ে দিচ্ছেন কালীগঞ্জ শহরের ঢাকা-চট্রগ্রাম, রাজশাহীগামী বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টারে। বাকিগুলো পাঠানো হচ্ছে বালিয়াডাঙ্গা ফুলের সেটে। কৃষকদের অনেকে এখানে অবস্থানরত স্থানীয় ফুল ব্যবসায়ীদের কাছে নগদে বিক্রি করে বাড়ি ফিরছেন।
ফুলচাষী মহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি বিগত ২২ বছর ধরে ফুলচাষ করছেন। এ সৌখিন চাষে লাভ আছে ঠিকই। কিন্ত পরিশ্রমও অনেক বেশি। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারী জুড়ে তাদের ফুলবিক্রি বেড়ে যায়। জানুয়ারীর পর থেকেই  পরের মাস ফেব্রুয়ারী মাস নিয়ে বিশেষ টার্গেট থাকে তাদের।
ফুলচাষী শামিম হোসেন জানান, এ বছর তার ৮ বিঘা জমির জারবেরা ও ৩ বিঘা জমিতে রঙ বেরঙের গোলাপের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, আগে তিনি এ এলাকা থেকে ফুল কিনে ঢাকা চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, সিলেটসহ বিভিন্ন বড় বড় জেলায় নিয়ে বিক্রি করতেন। পরে ১০ ধরে তিনি ফুলচাষ করছেন। তিনি বলেন, এখন নিজের ক্ষেতের ফুলই বিক্রি করছেন।
বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের ফুলচাষী শাহাদত হোসেন জানান, তিনি একজন ফুলচাষী ও স্থানীয় ফুল ব্যবসায়ী। এখান থেকে ফুল কিনে ঢাকার শাহাবাগ, আগারগাঁও, চট্রগ্রামের চেরাগী পাহাড় বাজার, ফেনি, দিনাজপুর, রংপুর, কুমিল্লা, নওগাসহ দেশের বড় বড় শহরের পাইকারী ফুলের বাজারের আড়তে ১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে আজ থেকে ফুল পাঠানো শুরু করেছেন।
ফুলচাষী ও ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা জানান, দেশের দক্ষিণাঞ্চালের ফুলেই সারাদেশের বাজার দখল করে আছে। ফুল উৎপাদনের দিক দিয়ে সারাদেশের মধ্যে ঢাকার সাভার ও যশোরের গদখালির পরেই ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের অবস্থান। তবে গাঁদা ফুল উৎপাদনে সারাদেশের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে কালীগঞ্জ। প্রায় ৩ যুগের ব্যবসার অভিজ্ঞতায় ফুলের এ বছরের দাম অতীতের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার মত।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান রনি জানান, এ উপজেলার মাটি ফুল উৎপাদনে সহায়ক। বর্তমানে এ এলাকায় দেশী বিদেশী জাতের ভিন্ন ভিন্ন রঙের লিলিয়াম, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, রজনীগন্ধ্যা, গোলাপ, চন্দ্র মল্লিকা, ভুট্রাফুল, গাঁদাসহ বর্তমানে এ উপজেলায় প্রায় ৭৫ হেক্টর জমিতে ফুলচাষ করা হয়েছে। যা সারাদেশের ফুলের চাহিদা মেটাতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। লাভজনক তাই দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ফুলচাষ।

সবুজদেশ/এসএইচ/এসএএস

About Author Information

‘ফুলনগরী’ খ্যাত কালীগঞ্জে ফেব্রুয়ারী ঘিরে ফুলচাষীদের ব্যস্ততা

Update Time : ০৬:৫৭:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

 

সারাবছরই ফুল বিক্রি হয়। কিন্ত ফেব্রুয়ারীতে তা কয়েকগুণে বেড়ে যায়। কেননা এ মাসেই পালিত হয় ফুল নির্ভর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্তবরণ, সোনাতন ধর্মাবলম্বীদের স্বরস্বতি পূজা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। কাজেই মাসটি জুড়েই ফুলের চাহিদা ও দাম বেশি থাকে। ফলে এ সময়ে বাজারজাতকরনে ফুলচাষীদের বিরামহীন ব্যস্ততা থাকে। বিশেষ করে ১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ঘিরে কৃষকেরা সকল প্রস্ততি শেষ করেছেন। তারা মনে করছেন এ বছর দেশের ফুলের বাজারে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের ফুল চোখ রাঙাবে। এছাড়াও দাম ভালো পেয়ে তারা বেশ লাভবান হতে পারবেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ এলাকার মাটি ফুলচাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। প্রথম দিকে এটি সৌখিন চাষ হিসেবে ধরা হতো। যা এখন বানিজ্যিক চাষে পরিণত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলাতে এখন ফুলচাষ হচ্ছে। তারমধ্যে দক্ষিণাঞ্চালের যশোরের গদখালি অন্যতম। আর এর পরেই ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের অবস্থান। ফুল বাজারজাতকরনের সুবিধার্থে এ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা বাজারে সরকারীভাবে একটি সেট নির্মান করে দিয়েছে। এ উপজেলাতে চলতি অর্থ বছরে মোট ৭৫ হেক্টর জমিতে নানা জাতের ফুলের চাষ হয়েছে। অনেক কৃষক ফুলচাষ করে তাদের দিন পাল্টে ফেলেছেন।
কালীগঞ্জের ফুলের নগরী খ্যাত বালিয়াডাঙ্গা এলাকায় সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, বিভিন্ন মাঠে গেলে দেখা যায়, বিভিন্ন রঙের গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধ্যা, সন্ধ্যা মালতি, চন্দ্র মল্লিকা, হাসনা হেনা, বিদেশী নানা রঙ ও জাতের জারবেরা, বোতাম ফুল, টিউলিপের ক্ষেত দেখা যায়। ফুলক্ষেত গুলোতে বাজার ধরতে কৃষকেরা সকলেই কাজের ব্যস্ততায় রয়েছেন। তবে এ বছর দাম ভালো তাই সকলেরই রয়েছে হাসি ভরা মুখ। অপর পাশে গেলে দেখা মেলে-কেউ ফুল তুলছেন, কেউ মালা গাঁথছেন, কেউ ঝোঁপা তৈরী করছেন। সবশেষে কিছু পাঠিয়ে দিচ্ছেন কালীগঞ্জ শহরের ঢাকা-চট্রগ্রাম, রাজশাহীগামী বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টারে। বাকিগুলো পাঠানো হচ্ছে বালিয়াডাঙ্গা ফুলের সেটে। কৃষকদের অনেকে এখানে অবস্থানরত স্থানীয় ফুল ব্যবসায়ীদের কাছে নগদে বিক্রি করে বাড়ি ফিরছেন।
ফুলচাষী মহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি বিগত ২২ বছর ধরে ফুলচাষ করছেন। এ সৌখিন চাষে লাভ আছে ঠিকই। কিন্ত পরিশ্রমও অনেক বেশি। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারী জুড়ে তাদের ফুলবিক্রি বেড়ে যায়। জানুয়ারীর পর থেকেই  পরের মাস ফেব্রুয়ারী মাস নিয়ে বিশেষ টার্গেট থাকে তাদের।
ফুলচাষী শামিম হোসেন জানান, এ বছর তার ৮ বিঘা জমির জারবেরা ও ৩ বিঘা জমিতে রঙ বেরঙের গোলাপের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, আগে তিনি এ এলাকা থেকে ফুল কিনে ঢাকা চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, সিলেটসহ বিভিন্ন বড় বড় জেলায় নিয়ে বিক্রি করতেন। পরে ১০ ধরে তিনি ফুলচাষ করছেন। তিনি বলেন, এখন নিজের ক্ষেতের ফুলই বিক্রি করছেন।
বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের ফুলচাষী শাহাদত হোসেন জানান, তিনি একজন ফুলচাষী ও স্থানীয় ফুল ব্যবসায়ী। এখান থেকে ফুল কিনে ঢাকার শাহাবাগ, আগারগাঁও, চট্রগ্রামের চেরাগী পাহাড় বাজার, ফেনি, দিনাজপুর, রংপুর, কুমিল্লা, নওগাসহ দেশের বড় বড় শহরের পাইকারী ফুলের বাজারের আড়তে ১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে আজ থেকে ফুল পাঠানো শুরু করেছেন।
ফুলচাষী ও ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা জানান, দেশের দক্ষিণাঞ্চালের ফুলেই সারাদেশের বাজার দখল করে আছে। ফুল উৎপাদনের দিক দিয়ে সারাদেশের মধ্যে ঢাকার সাভার ও যশোরের গদখালির পরেই ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের অবস্থান। তবে গাঁদা ফুল উৎপাদনে সারাদেশের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে কালীগঞ্জ। প্রায় ৩ যুগের ব্যবসার অভিজ্ঞতায় ফুলের এ বছরের দাম অতীতের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার মত।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান রনি জানান, এ উপজেলার মাটি ফুল উৎপাদনে সহায়ক। বর্তমানে এ এলাকায় দেশী বিদেশী জাতের ভিন্ন ভিন্ন রঙের লিলিয়াম, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, রজনীগন্ধ্যা, গোলাপ, চন্দ্র মল্লিকা, ভুট্রাফুল, গাঁদাসহ বর্তমানে এ উপজেলায় প্রায় ৭৫ হেক্টর জমিতে ফুলচাষ করা হয়েছে। যা সারাদেশের ফুলের চাহিদা মেটাতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। লাভজনক তাই দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ফুলচাষ।

সবুজদেশ/এসএইচ/এসএএস