ঢাকা ০৩:১১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভূমিহীনদের প্রায় ১৩২ বিঘা জমি দখল করেছেন মিয়াজী!

 

প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক অপশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ভূমিহীনদের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর-কোটচাঁদপুর) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সালাহ উদ্দিন মিয়াজীর বিরুদ্ধে। জোরপূর্বক দখল করা প্রায় ১০০ বিঘার সরকারি জমিতে মাছ, মাল্টা ও কমলা লেবুর বিশাল প্রজেক্ট করেছেন তিনি। সোমবার জমি ফেরত চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তৈলটুপি গ্রামের ভুক্তভোগী ভূমিহীনরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মহেশপুর উপজেলার স্বরুপপুর ইউনিয়নের তৈলটুপি মৌজার উখরির বিলের আর এস ৫০২ ও ৫০৩ নং দাগের সরকারি জমি ১৯৯৬ সালে ২৮ ভূমিহীন পরিবারের মাঝে বন্দোবস্তো দলিলে রেজিস্ট্রি করে দেন সরকার। দলিল প্রতি ৫০ শতক করে জমি রেজিস্ট্রি করা হয়। দলিলে ৫০ শতক উল্লেখ থাকলেও ভূমিহীনরা ৩/৪ বিঘা করে অতিরিক্ত দখলে নিয়ে সরকারি জমি চাষ করতেন। ২০১০ সালে ওই জমিতে নজর দেন শেখ হাসিনার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল (অব:) সালাহ উদ্দিন মিয়াজী। দখল নিতে শুরু করেন নানান অপকৌশল। কিছু ভূমিহীন পরিবারকে ভালো চাকরি ও মোটা অংকের টাকার লোভ দেখিয়ে লিজ দিতে রাজি করান। কিন্তু যারা লিজ দিতে অস্বকৃতি জানান তাদের জমি জোরপূর্বক দখল করেন তিনি।

এদিকে, অধিকাংশ লিজের মেয়াদ শেষ হলেও ভূমিহীনরা এখন পর্যন্ত তাদের জমি দখল ফিরে পাননি। এমনকি ওই জমি থেকে লিজের কোন টাকা ভূমিহীনদের দেননি সালাহ উদ্দিন মিয়াজী। জমির দখল ফিরে পেতে ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেন ভূমিহীনরা। কিন্তু তাতেও কোন প্রতিকার পাননি তারা।

এছাড়াও উপজেলার বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়নে জমি দখলে সেই একই অভিনয়ের নায়ক সালাহ উদ্দিন মিয়াজী। ৩২ বিঘা জমি দখল নিতে এক পরিবারের নামে দিয়েছেন ১শ’র বেশি মামলা। মামলা থেকে বাদ পড়েনি পরিবারের নারীরাও। ওই পরিবারে সদস্যদের নামে চাঁদাবাজি, লুটপাট, চুরিসহ দুর্নীতি দমন কমিশনেও মামলা দিয়েছেন তিনি।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৬০ নং ডুমুরতলা মৌজার এস এ ৫৪৫ খতিয়ানের ৫৩২৫৬৯ নং দাগে ৯৯২ শতক জমির মালিক সুফিয়া খাতুন। ১৯৬৮ সালের ১৩ জুলাই ৮৯৭৬নং দলিলে সুফিয়া খাতুনের কাছ থেকে ওই জমি কেনেন কৈখালী গ্রামের আ. হামিদ। দখলে থাকাকালীন ১৩২ ও ১৭৮৫ নং কেসের মাধ্যমে ৫৪৫/১ নং খতিয়ানে নামজারী করেন তিনি। ২০১০ সালে ওই জমিতে নজর পড়ে মেজর জেনারেল সালাহ উদ্দিন মিয়াজীর। জমির দখল নিতে আওয়ামী লীগের সরকারি ক্ষমতা ও নিজের পদাধিকার বলে জন্ম দেন একের পর এক মিথ্যা নাটকের। ভূমিহীনদের কাছ থেকে দলিল মূলে জমি কিনেছেন মর্মে মালিকানা দাবি করেন সালাহ উদ্দিন মিয়াজী। শুরু হয় জমি দখলের পাঁয়তারা। ভুয়া দলিল বুনিয়াদে ১৪১৭, ১৪১৯, ১৪১৮, ১৪১৬ নং কেসের মাধ্যমে নিজ নামে জমাখারিজ করেন সালাহ উদ্দিন। কিন্তু আ. হামিদের করা মামলায় সালাহ উদ্দিনের জমাখারিজ বাতিল বলে ঘোষণা করেন সরকার।

এরপর ভুয়া দলিল বানিয়ে আ. হামিদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে মামলা দেন সালাহ উদ্দিন মিয়াজী। পুটি মোহাম্মদ নামে এক ব্যক্তিকে দাতা সাজিয়ে ভুয়া দলিল তৈরিতে বিশেষ অপকৌশল ব্যবহার করেন মিয়াজী। দলিলে ৮৯৭৬ নম্বর দেয়া হলেও টিপ সিরিয়ালে দেয়া হয় মাত্র ২৪২৭ নম্বর। দলিল নম্বর ও সিরিয়াল নম্বরে এমন গড়মিলের কারণে যাচাই-বাছাই করে ওই দলিল ভুয়া প্রমানিত হয় আদালতে। এরপর থেকে শুরু হয় আ. হামিদ ও তার পরিবারের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া। দুর্নীতি দমন কমিশনেও মামলা দেন তিনি। ইতোমধ্য প্রায় ১’শ বেশি মামলা দিয়েছেন। শেষমেষ ৭ জানুয়ারি ২০২৪ সালে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর ওই জমি দখল করে নেন সালাহ উদ্দিন। সেই সাথে পুকুরে থাকা এক কোটি টাকার মাছ নিজ লোকজন দিয়ে লুটপাট করেন।

কৈখালী গ্রামের ইউনুচ আলী সবুজদেশ নিউজকে বলেন, সালাহ উদ্দিন মিয়াজী আমাদের জমি দখল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সেই ২০১০ সাল থেকে। ওই জমি দখল নিতে আমাদের উপর চালিয়েছে অমানবিক জুলুম-নির্যাতন। ১’শর বেশি মামলা দিয়েছেন আমার পরিবারের সদস্যদের নামে। মিথ্যা মামলায় রাতের পর রাত বাড়িতে ঘুমাতে পারিনি।

তিনি আরো বলেন, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যবহার তিনি এমন ন্যাক্কারজনক কাজ করেছেন। জমি দখলের বাজে নেশা রয়েছে তার। তবে সালাহ উদ্দীন মিয়াজীর করা সকল মামলাতে আমরা জিতে গেছি। এখন মাত্র একটি মামলা চলমান রয়েছে। ওই মামলাতেও আমরা জয়লাভ করবো।

তৈলটুপি গ্রামের ভূমিহীন লান্টু সবুজদেশ নিউজকে বলেন, সরকারের দেয়া ৫০ শতক জমিতে আমি আফা কাটি। কিছুদিন পর দেখি সালাহ উদ্দিন মিয়াজী ওই জমি দখল করে নিচ্ছেন। আমি দখল ঠেকাতে গেলে মেরে মাটি চাপা দিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। সেই থেকে আমার জমি বেদখল রয়েছে।

ভূমিহীন ইকরামুল বলেন, ওই জমি লিজ দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। কিন্তু আমার লিজের মেয়াদ পাঁচ বছর আগে শেষ হলেও এখন পর্যন্ত জমি দখল ফেরত পাইনি। সালাহ উদ্দিন মিয়াজী র‌্যাব-পুলিশের ভয় দেখিয়ে জমি দখলে রেখেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন মনিরা বলেন, ভূমিহীনরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সবুজদেশ/এসএএস

ভূমিহীনদের প্রায় ১৩২ বিঘা জমি দখল করেছেন মিয়াজী!

Update Time : ০৯:৩৩:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

 

প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক অপশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ভূমিহীনদের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর-কোটচাঁদপুর) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সালাহ উদ্দিন মিয়াজীর বিরুদ্ধে। জোরপূর্বক দখল করা প্রায় ১০০ বিঘার সরকারি জমিতে মাছ, মাল্টা ও কমলা লেবুর বিশাল প্রজেক্ট করেছেন তিনি। সোমবার জমি ফেরত চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তৈলটুপি গ্রামের ভুক্তভোগী ভূমিহীনরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মহেশপুর উপজেলার স্বরুপপুর ইউনিয়নের তৈলটুপি মৌজার উখরির বিলের আর এস ৫০২ ও ৫০৩ নং দাগের সরকারি জমি ১৯৯৬ সালে ২৮ ভূমিহীন পরিবারের মাঝে বন্দোবস্তো দলিলে রেজিস্ট্রি করে দেন সরকার। দলিল প্রতি ৫০ শতক করে জমি রেজিস্ট্রি করা হয়। দলিলে ৫০ শতক উল্লেখ থাকলেও ভূমিহীনরা ৩/৪ বিঘা করে অতিরিক্ত দখলে নিয়ে সরকারি জমি চাষ করতেন। ২০১০ সালে ওই জমিতে নজর দেন শেখ হাসিনার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল (অব:) সালাহ উদ্দিন মিয়াজী। দখল নিতে শুরু করেন নানান অপকৌশল। কিছু ভূমিহীন পরিবারকে ভালো চাকরি ও মোটা অংকের টাকার লোভ দেখিয়ে লিজ দিতে রাজি করান। কিন্তু যারা লিজ দিতে অস্বকৃতি জানান তাদের জমি জোরপূর্বক দখল করেন তিনি।

এদিকে, অধিকাংশ লিজের মেয়াদ শেষ হলেও ভূমিহীনরা এখন পর্যন্ত তাদের জমি দখল ফিরে পাননি। এমনকি ওই জমি থেকে লিজের কোন টাকা ভূমিহীনদের দেননি সালাহ উদ্দিন মিয়াজী। জমির দখল ফিরে পেতে ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেন ভূমিহীনরা। কিন্তু তাতেও কোন প্রতিকার পাননি তারা।

এছাড়াও উপজেলার বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়নে জমি দখলে সেই একই অভিনয়ের নায়ক সালাহ উদ্দিন মিয়াজী। ৩২ বিঘা জমি দখল নিতে এক পরিবারের নামে দিয়েছেন ১শ’র বেশি মামলা। মামলা থেকে বাদ পড়েনি পরিবারের নারীরাও। ওই পরিবারে সদস্যদের নামে চাঁদাবাজি, লুটপাট, চুরিসহ দুর্নীতি দমন কমিশনেও মামলা দিয়েছেন তিনি।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৬০ নং ডুমুরতলা মৌজার এস এ ৫৪৫ খতিয়ানের ৫৩২৫৬৯ নং দাগে ৯৯২ শতক জমির মালিক সুফিয়া খাতুন। ১৯৬৮ সালের ১৩ জুলাই ৮৯৭৬নং দলিলে সুফিয়া খাতুনের কাছ থেকে ওই জমি কেনেন কৈখালী গ্রামের আ. হামিদ। দখলে থাকাকালীন ১৩২ ও ১৭৮৫ নং কেসের মাধ্যমে ৫৪৫/১ নং খতিয়ানে নামজারী করেন তিনি। ২০১০ সালে ওই জমিতে নজর পড়ে মেজর জেনারেল সালাহ উদ্দিন মিয়াজীর। জমির দখল নিতে আওয়ামী লীগের সরকারি ক্ষমতা ও নিজের পদাধিকার বলে জন্ম দেন একের পর এক মিথ্যা নাটকের। ভূমিহীনদের কাছ থেকে দলিল মূলে জমি কিনেছেন মর্মে মালিকানা দাবি করেন সালাহ উদ্দিন মিয়াজী। শুরু হয় জমি দখলের পাঁয়তারা। ভুয়া দলিল বুনিয়াদে ১৪১৭, ১৪১৯, ১৪১৮, ১৪১৬ নং কেসের মাধ্যমে নিজ নামে জমাখারিজ করেন সালাহ উদ্দিন। কিন্তু আ. হামিদের করা মামলায় সালাহ উদ্দিনের জমাখারিজ বাতিল বলে ঘোষণা করেন সরকার।

এরপর ভুয়া দলিল বানিয়ে আ. হামিদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে মামলা দেন সালাহ উদ্দিন মিয়াজী। পুটি মোহাম্মদ নামে এক ব্যক্তিকে দাতা সাজিয়ে ভুয়া দলিল তৈরিতে বিশেষ অপকৌশল ব্যবহার করেন মিয়াজী। দলিলে ৮৯৭৬ নম্বর দেয়া হলেও টিপ সিরিয়ালে দেয়া হয় মাত্র ২৪২৭ নম্বর। দলিল নম্বর ও সিরিয়াল নম্বরে এমন গড়মিলের কারণে যাচাই-বাছাই করে ওই দলিল ভুয়া প্রমানিত হয় আদালতে। এরপর থেকে শুরু হয় আ. হামিদ ও তার পরিবারের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া। দুর্নীতি দমন কমিশনেও মামলা দেন তিনি। ইতোমধ্য প্রায় ১’শ বেশি মামলা দিয়েছেন। শেষমেষ ৭ জানুয়ারি ২০২৪ সালে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর ওই জমি দখল করে নেন সালাহ উদ্দিন। সেই সাথে পুকুরে থাকা এক কোটি টাকার মাছ নিজ লোকজন দিয়ে লুটপাট করেন।

কৈখালী গ্রামের ইউনুচ আলী সবুজদেশ নিউজকে বলেন, সালাহ উদ্দিন মিয়াজী আমাদের জমি দখল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সেই ২০১০ সাল থেকে। ওই জমি দখল নিতে আমাদের উপর চালিয়েছে অমানবিক জুলুম-নির্যাতন। ১’শর বেশি মামলা দিয়েছেন আমার পরিবারের সদস্যদের নামে। মিথ্যা মামলায় রাতের পর রাত বাড়িতে ঘুমাতে পারিনি।

তিনি আরো বলেন, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যবহার তিনি এমন ন্যাক্কারজনক কাজ করেছেন। জমি দখলের বাজে নেশা রয়েছে তার। তবে সালাহ উদ্দীন মিয়াজীর করা সকল মামলাতে আমরা জিতে গেছি। এখন মাত্র একটি মামলা চলমান রয়েছে। ওই মামলাতেও আমরা জয়লাভ করবো।

তৈলটুপি গ্রামের ভূমিহীন লান্টু সবুজদেশ নিউজকে বলেন, সরকারের দেয়া ৫০ শতক জমিতে আমি আফা কাটি। কিছুদিন পর দেখি সালাহ উদ্দিন মিয়াজী ওই জমি দখল করে নিচ্ছেন। আমি দখল ঠেকাতে গেলে মেরে মাটি চাপা দিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। সেই থেকে আমার জমি বেদখল রয়েছে।

ভূমিহীন ইকরামুল বলেন, ওই জমি লিজ দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। কিন্তু আমার লিজের মেয়াদ পাঁচ বছর আগে শেষ হলেও এখন পর্যন্ত জমি দখল ফেরত পাইনি। সালাহ উদ্দিন মিয়াজী র‌্যাব-পুলিশের ভয় দেখিয়ে জমি দখলে রেখেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন মনিরা বলেন, ভূমিহীনরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সবুজদেশ/এসএএস