ঢাকা ০৬:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সরকারি জায়গা দখল করে তৈরী হচ্ছে স্থাপনা, নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা

 

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নয়ন জুলি পানি নিষ্কাশনের (খাল) দখল করে গড়ে তুলছেন দোকান, আম বাজার, হোটেল, সমিল, রাইচ মিল। পরে তা অ্যাডভান্স ও মাসিক ভাড়ার চুক্তিতে বরাদ্দ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে পাশের জমির মালিকদের বিরুদ্ধে। যা দেখার কেই নেই। অবৈধ দখল থাকলে উচ্ছেদ করা হবে বললেন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, কোটচাঁদপুর -কালীগঞ্জ মহাসড়ক এটি। এ সড়কের কোটচাঁদপুর অংশের দুই পাশে ছিল সড়ক ও জনপদথ বিভাগের নয়ন জুলি এবং শহরের পানি নিষ্কাশনের (খাল)। যা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের তদারকি না থাকায় নয়ন জুলিতে ফেলা হত ময়লা আর্বজনা। ভরাট হওয়ার পর এখন তা দখল করে গড়ে তুলেছেন দোকান, মার্কেট ,স’মিল, রাইচ মিল , কাঁঠের মিল। এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় খালের পাশের জমির মালিকরা তা দখল করে গড়ে তুলছেন স্থাপনা। এরপর সেগুলো অ্যাডভ্যন্স নিয়ে মাসিক ভাড়া চুক্তিতে দিচ্ছেন মানুষের কাছে।

ভাড়াটিয়া কাঁঠ ব্যবসায়ি আসাদুল ইসলাম বলেন, আমি খোকন সর্দারের কাছ থেকে মালিকানা ১৫ শতক চুক্তি করে নিয়েছি। আর বাকিটা সিএমবি জায়গা। যা মালিক মাটি ভরাট করে দেয়ার পর আমি ঘর করে নিয়েছি। সব মিলিয়ে আমাকে ওই মালিক কে মাসিক ভাড়া বাবদ ৯ হাজার টাকা করে দিতে হবে।

প্রতিবেশী মইদুল ইসলাম বলেন, খোকন সর্দারের কাছ থেকে আমি মিল ভাড়া নিয়ে ছিলাম। কিছু দিন চলার পর তিনি মিলের পাশে থাকা সিএমবির জায়গা ভরাট করতে থাকেন। এখন দেখি তাঁর উপর স্থাপনা করছে। সে আবার অ্যাডভ্যান্স নিয়ে মাসিক চুক্তিতে মানুষের কাছে ভাড়া দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, ওই মিলের সামনে স্থাপনা তৈরি করায়, মিল আড়াল হয়ে গেছে। এ কারনে আমাকে বাধ্য হয়ে ছেড়ে দিতে হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তিনি একের পর এক খালের জায়গা ভরাট করছেন আর মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা ভাড়া দিচ্ছেন।

এবিষয়ে খোকন সরদার বলেন, আমরা আগে থেকেই জেনে আসছি, সিএমবির পিছনে জায়গা যার। সামনে জায়গা তাঁর অগ্রাধিকার। এ কারনে আমি যারা জায়গাটি ব্যবহার করবেন, তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মাটি দিয়ে জায়গা ভরাট করা হচ্ছে। এভাবে সরকারি জায়গা ভরাট করে এ্যাডভ্যন্স টাকা নেয়া ঠিক ? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না ঠিক না। তবে আশে-পাশের অনেক এভাবে জায়গা দখল করে ভাড়া দিয়েছেন। সেটা দেখেই তো আমি করেছি।

তিনি বলেন, আমি তো আর আগে করি নাই। অনেকে বেশ আগে থেকেই দখলে নিয়ে স্থাপনা করেছেন। সরকার যদি অন্যকে ব্যবস্থা না নেন তাহলে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন কেন।

এ ব্যাপারে কোটচাঁদপুর পৌর ভূমি অফিসের ইউনিয়ন (ভুমি) সহকারি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ওই জমিটি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের। এটা সলেমানপুর মৌজার ২৩৫ দাগের জমি। ওই দাগে ১ একর ৪ শতক জমি রয়েছে। যেটা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নয়ন জুলি নামে রয়েছে।

ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সহকারি প্রকৌশলী ও স্ট্যাফ অফিসার আহসান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নাই। ওইসব গুলো আমাদের অফিসের সার্ভেয়ার দেখে থাকেন।

এ বিষয়টি কেউ কোন দিন নজরে আনেন নাই। এ কারনে আমার জানাও ছিল না। এখন জানতে পারলাম। তবে আমি খোঁজ খবর নিতে অফিসের সার্ভেয়ারকে পাঠানো হবে। আর যদি কেউ অবৈধ দখল করে থাকেন তা উচ্ছেদ করা হবে।

বিষয়টি নিয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলার আইন শৃঙ্খলা সভায় উত্থাপন করেন কয়েক জন গণমাধ্যম কর্মীরা। এরপর তা দেখবেন বলে জানিয়ে ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী আনিসুল ইসলাম। তবে আজও পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় একের পর এক স্থাপনা গড়েই তুলছেন দখলদাররা।

সবুজদেশ/এসইউ

Tag :

সরকারি জায়গা দখল করে তৈরী হচ্ছে স্থাপনা, নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা

Update Time : ১০:২৮:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ মে ২০২৫

 

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নয়ন জুলি পানি নিষ্কাশনের (খাল) দখল করে গড়ে তুলছেন দোকান, আম বাজার, হোটেল, সমিল, রাইচ মিল। পরে তা অ্যাডভান্স ও মাসিক ভাড়ার চুক্তিতে বরাদ্দ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে পাশের জমির মালিকদের বিরুদ্ধে। যা দেখার কেই নেই। অবৈধ দখল থাকলে উচ্ছেদ করা হবে বললেন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, কোটচাঁদপুর -কালীগঞ্জ মহাসড়ক এটি। এ সড়কের কোটচাঁদপুর অংশের দুই পাশে ছিল সড়ক ও জনপদথ বিভাগের নয়ন জুলি এবং শহরের পানি নিষ্কাশনের (খাল)। যা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের তদারকি না থাকায় নয়ন জুলিতে ফেলা হত ময়লা আর্বজনা। ভরাট হওয়ার পর এখন তা দখল করে গড়ে তুলেছেন দোকান, মার্কেট ,স’মিল, রাইচ মিল , কাঁঠের মিল। এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় খালের পাশের জমির মালিকরা তা দখল করে গড়ে তুলছেন স্থাপনা। এরপর সেগুলো অ্যাডভ্যন্স নিয়ে মাসিক ভাড়া চুক্তিতে দিচ্ছেন মানুষের কাছে।

ভাড়াটিয়া কাঁঠ ব্যবসায়ি আসাদুল ইসলাম বলেন, আমি খোকন সর্দারের কাছ থেকে মালিকানা ১৫ শতক চুক্তি করে নিয়েছি। আর বাকিটা সিএমবি জায়গা। যা মালিক মাটি ভরাট করে দেয়ার পর আমি ঘর করে নিয়েছি। সব মিলিয়ে আমাকে ওই মালিক কে মাসিক ভাড়া বাবদ ৯ হাজার টাকা করে দিতে হবে।

প্রতিবেশী মইদুল ইসলাম বলেন, খোকন সর্দারের কাছ থেকে আমি মিল ভাড়া নিয়ে ছিলাম। কিছু দিন চলার পর তিনি মিলের পাশে থাকা সিএমবির জায়গা ভরাট করতে থাকেন। এখন দেখি তাঁর উপর স্থাপনা করছে। সে আবার অ্যাডভ্যান্স নিয়ে মাসিক চুক্তিতে মানুষের কাছে ভাড়া দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, ওই মিলের সামনে স্থাপনা তৈরি করায়, মিল আড়াল হয়ে গেছে। এ কারনে আমাকে বাধ্য হয়ে ছেড়ে দিতে হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তিনি একের পর এক খালের জায়গা ভরাট করছেন আর মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা ভাড়া দিচ্ছেন।

এবিষয়ে খোকন সরদার বলেন, আমরা আগে থেকেই জেনে আসছি, সিএমবির পিছনে জায়গা যার। সামনে জায়গা তাঁর অগ্রাধিকার। এ কারনে আমি যারা জায়গাটি ব্যবহার করবেন, তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মাটি দিয়ে জায়গা ভরাট করা হচ্ছে। এভাবে সরকারি জায়গা ভরাট করে এ্যাডভ্যন্স টাকা নেয়া ঠিক ? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না ঠিক না। তবে আশে-পাশের অনেক এভাবে জায়গা দখল করে ভাড়া দিয়েছেন। সেটা দেখেই তো আমি করেছি।

তিনি বলেন, আমি তো আর আগে করি নাই। অনেকে বেশ আগে থেকেই দখলে নিয়ে স্থাপনা করেছেন। সরকার যদি অন্যকে ব্যবস্থা না নেন তাহলে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন কেন।

এ ব্যাপারে কোটচাঁদপুর পৌর ভূমি অফিসের ইউনিয়ন (ভুমি) সহকারি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ওই জমিটি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের। এটা সলেমানপুর মৌজার ২৩৫ দাগের জমি। ওই দাগে ১ একর ৪ শতক জমি রয়েছে। যেটা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নয়ন জুলি নামে রয়েছে।

ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সহকারি প্রকৌশলী ও স্ট্যাফ অফিসার আহসান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নাই। ওইসব গুলো আমাদের অফিসের সার্ভেয়ার দেখে থাকেন।

এ বিষয়টি কেউ কোন দিন নজরে আনেন নাই। এ কারনে আমার জানাও ছিল না। এখন জানতে পারলাম। তবে আমি খোঁজ খবর নিতে অফিসের সার্ভেয়ারকে পাঠানো হবে। আর যদি কেউ অবৈধ দখল করে থাকেন তা উচ্ছেদ করা হবে।

বিষয়টি নিয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলার আইন শৃঙ্খলা সভায় উত্থাপন করেন কয়েক জন গণমাধ্যম কর্মীরা। এরপর তা দেখবেন বলে জানিয়ে ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী আনিসুল ইসলাম। তবে আজও পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় একের পর এক স্থাপনা গড়েই তুলছেন দখলদাররা।

সবুজদেশ/এসইউ