ঢাকা ০৫:০৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঢাকায় গ্রেপ্তার খুলনার যুব মহিলা লীগ নেত্রী তন্দ্রা

 

খুলনায় বহুল আলোচিত সমালোচিত নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের যুব মহিলা লীগের নেত্রী নাসরিন ইসলাম তন্দ্রা ওরফে নাসরিন পারভেজ তন্দ্রা অবশেষে পুলিশের হাতে গ্রেফতার  হয়েছে।

সোমবার (২৬ মে) কেএমপি গোয়েন্দা পুলিশের তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা বিমানবন্দর থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার  করে।এদিকে তন্দ্রা গ্রেফতারের খবর খুলনায় ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই বলছেন পাপ বাপকে ছাড়ে না।

পুলিশ জানিয়েছেন, তন্দ্রা মালয়েশিয়া থেকে বিমানযোগে ঢাকায় অবতরণ করেছিলেন। আগামী ২৮ মে চট্টগ্রাম থেকে তন্দ্রার ইটালিয়ান ভিসা সংগ্রহ করার কথা ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কেএমপির গোয়েন্দা পুলিশ বিষয়টি ঢাকার বিমান বন্দর থানাকে অবহিত করলে পুলিশ তাকে আটক করেন। তন্দ্রাকে খুলনায় আনার প্রস্তুতি চলছে।

অভিযোগ রয়েছে, তন্দ্রার রূপ লাবণ্যের কাছে খুলনার শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতারা ধরাশয় ছিলেন।  যে কারণে তন্দ্রা অল্পদিনেই খুলনার যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী হওয়ার চেষ্টা চালায়। যদিও শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি।

তন্দ্রার এই রঙিন জীবন-কাহিনী অনেকের জানা থাকলেও সে সময় ভয়ে মুখ খুলেনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ।

সূত্র জানিয়েছেন, এক সময়ের এনজিও কর্মী ছিলেন তন্দ্রা। পতিত সরকারের আমলে নানা কৌশলে কোটি কোটি টাকা মালিক হয়েছেন। নাসরিন পারভেজ তার নতুন পাপিয়া হিসেবে পরিচিত ছিল খুলনায়। খুলনা, গোপালগঞ্জ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নামে অনেকে কিনেছেন জমি। খুলনা সোনাডাঙ্গা থানাধীন বয়রাতে নির্মাণ করেছেন চোখ ধাঁধানো আলিশান বাড়ি। ডুপ্লেক্স বাড়ির আন্তঃসজ্জাই মনে করিয়ে দিবে তার অর্থের উৎস! এছাড়া রায়ের মহলে কোটি টাকা মূল্যের বেশ কয়েকটি প্লট রয়েছে। রয়েছে তিনটি দামি ব্রান্ডের গাড়ি। তবে, ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে একটি গাড়ি ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। একজন এনজিও কর্মী থেকে কীভাবে কোটি টাকার মালিক বনেছেন তা নিয়ে জন্ম দিচ্ছে নানা প্রশ্ন।

জানা যায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের উচ্চপদস্থ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় জিরো থেকে হিরোইন হয়েছেন খুলনার পাপিয়া খ্যাত তন্দ্রা । বিগত ১৫ বছরে খুলনায় আ’লীগের নেতাসহ প্রায় ৫০ জন প্রভাবশালীকে তুরুপের তাস বানিয়েছিলেন তন্দ্রা। ওই সকল নেতাদের মনোরঞ্জনের জন্য তৈরি করেছিলেন রংমহল। তন্দ্রার রংমহলে রাখা হতো খুলনার বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের। অর্থের লোভে তাদের দিয়ে বাধ্য করানো হতো অনৈতিক কর্মকাণ্ড। খুলনার রাজনীতিবিদ ও বিত্তশালীরা ছিল ওই রংমহলের নিয়মিত খদ্দের। তবে হাইপ্রোফাইলদের জন্য ছিল ভিন্ন আয়োজন। দেশের নামিদামি পর্যটক কেন্দ্রের রিসোর্ট ভাড়া করে নেতাদের মনোরঞ্জন করার ব্যবস্থা করতেন এই মন্ত্রী। সেখানে নামিদামি মডেলদের সরবরাহ করতেন তিনি। বিনিময়ে এ সকল রাজনৈতিক ও বিত্তবান ব্যক্তিবর্গের নিকট থেকে নিতেন নগদ অর্থ, সম্পত্তি, ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব। পদ, পদবি পাওয়ার লোভ দেখিয়ে বেশ কয়েকজন নারীকে দিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ড করাতে বাধ্য করতেন তন্দ্রা, এমন অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেত্রী জানান, তন্দ্রার মূলত বিবাহ তিনটি। প্রথম স্বামীর ঘরে দুই মেয়ে সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে দিন যাপন করতো । এক পর্যায়ে প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে একটি এনজিওতে কাজ করতেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় তেমন কোনো চাকরি পাননি তিনি। সে সময় খুবই মানবেতর জীবনযাপন করতেন। পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিবাহ করেন তিনি। তবে দ্বিতীয় সংসারও বেশিদিন টেকেনি। পরবর্তীতে উচ্চ আকাঙ্ক্ষা ও আরাম আয়েশের জীবনযাপনের লালসায় বশীভূত হয়ে অনৈতিক পথ বেছে নেয় তন্দ্রা।

ডিএমপির বিমানবন্দর থানার ওসি তসলিম আক্তার জানান, কেএমপির তথ্যের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়েছে। নিহত নাসরিন খুলনার থানার মামলার সন্দেহজনক আসামি।

খুলনা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি তৈমুর ইসলাম জানান, খুলনা সদর থানার মামলা নং ২৪ তারিখ ১৮ মার্চ ২০২৫ এর সন্দিগ্ধ আসামি তন্দ্রা। গোপন সংবাদে জানা যায় তিনি মালয়েশিয়া থেকে ঢাকায় আসছেন। সে মোতাবেক এয়ারপোর্ট থানাকে অবহিত করা হলে তারা তন্দ্রাকে আটক করে।

সবুজদেশ/এসইউ

ঢাকায় গ্রেপ্তার খুলনার যুব মহিলা লীগ নেত্রী তন্দ্রা

Update Time : ০৯:৪৭:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫

 

খুলনায় বহুল আলোচিত সমালোচিত নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের যুব মহিলা লীগের নেত্রী নাসরিন ইসলাম তন্দ্রা ওরফে নাসরিন পারভেজ তন্দ্রা অবশেষে পুলিশের হাতে গ্রেফতার  হয়েছে।

সোমবার (২৬ মে) কেএমপি গোয়েন্দা পুলিশের তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা বিমানবন্দর থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার  করে।এদিকে তন্দ্রা গ্রেফতারের খবর খুলনায় ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই বলছেন পাপ বাপকে ছাড়ে না।

পুলিশ জানিয়েছেন, তন্দ্রা মালয়েশিয়া থেকে বিমানযোগে ঢাকায় অবতরণ করেছিলেন। আগামী ২৮ মে চট্টগ্রাম থেকে তন্দ্রার ইটালিয়ান ভিসা সংগ্রহ করার কথা ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কেএমপির গোয়েন্দা পুলিশ বিষয়টি ঢাকার বিমান বন্দর থানাকে অবহিত করলে পুলিশ তাকে আটক করেন। তন্দ্রাকে খুলনায় আনার প্রস্তুতি চলছে।

অভিযোগ রয়েছে, তন্দ্রার রূপ লাবণ্যের কাছে খুলনার শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতারা ধরাশয় ছিলেন।  যে কারণে তন্দ্রা অল্পদিনেই খুলনার যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী হওয়ার চেষ্টা চালায়। যদিও শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি।

তন্দ্রার এই রঙিন জীবন-কাহিনী অনেকের জানা থাকলেও সে সময় ভয়ে মুখ খুলেনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ।

সূত্র জানিয়েছেন, এক সময়ের এনজিও কর্মী ছিলেন তন্দ্রা। পতিত সরকারের আমলে নানা কৌশলে কোটি কোটি টাকা মালিক হয়েছেন। নাসরিন পারভেজ তার নতুন পাপিয়া হিসেবে পরিচিত ছিল খুলনায়। খুলনা, গোপালগঞ্জ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নামে অনেকে কিনেছেন জমি। খুলনা সোনাডাঙ্গা থানাধীন বয়রাতে নির্মাণ করেছেন চোখ ধাঁধানো আলিশান বাড়ি। ডুপ্লেক্স বাড়ির আন্তঃসজ্জাই মনে করিয়ে দিবে তার অর্থের উৎস! এছাড়া রায়ের মহলে কোটি টাকা মূল্যের বেশ কয়েকটি প্লট রয়েছে। রয়েছে তিনটি দামি ব্রান্ডের গাড়ি। তবে, ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে একটি গাড়ি ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। একজন এনজিও কর্মী থেকে কীভাবে কোটি টাকার মালিক বনেছেন তা নিয়ে জন্ম দিচ্ছে নানা প্রশ্ন।

জানা যায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের উচ্চপদস্থ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় জিরো থেকে হিরোইন হয়েছেন খুলনার পাপিয়া খ্যাত তন্দ্রা । বিগত ১৫ বছরে খুলনায় আ’লীগের নেতাসহ প্রায় ৫০ জন প্রভাবশালীকে তুরুপের তাস বানিয়েছিলেন তন্দ্রা। ওই সকল নেতাদের মনোরঞ্জনের জন্য তৈরি করেছিলেন রংমহল। তন্দ্রার রংমহলে রাখা হতো খুলনার বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের। অর্থের লোভে তাদের দিয়ে বাধ্য করানো হতো অনৈতিক কর্মকাণ্ড। খুলনার রাজনীতিবিদ ও বিত্তশালীরা ছিল ওই রংমহলের নিয়মিত খদ্দের। তবে হাইপ্রোফাইলদের জন্য ছিল ভিন্ন আয়োজন। দেশের নামিদামি পর্যটক কেন্দ্রের রিসোর্ট ভাড়া করে নেতাদের মনোরঞ্জন করার ব্যবস্থা করতেন এই মন্ত্রী। সেখানে নামিদামি মডেলদের সরবরাহ করতেন তিনি। বিনিময়ে এ সকল রাজনৈতিক ও বিত্তবান ব্যক্তিবর্গের নিকট থেকে নিতেন নগদ অর্থ, সম্পত্তি, ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব। পদ, পদবি পাওয়ার লোভ দেখিয়ে বেশ কয়েকজন নারীকে দিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ড করাতে বাধ্য করতেন তন্দ্রা, এমন অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেত্রী জানান, তন্দ্রার মূলত বিবাহ তিনটি। প্রথম স্বামীর ঘরে দুই মেয়ে সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে দিন যাপন করতো । এক পর্যায়ে প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে একটি এনজিওতে কাজ করতেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় তেমন কোনো চাকরি পাননি তিনি। সে সময় খুবই মানবেতর জীবনযাপন করতেন। পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিবাহ করেন তিনি। তবে দ্বিতীয় সংসারও বেশিদিন টেকেনি। পরবর্তীতে উচ্চ আকাঙ্ক্ষা ও আরাম আয়েশের জীবনযাপনের লালসায় বশীভূত হয়ে অনৈতিক পথ বেছে নেয় তন্দ্রা।

ডিএমপির বিমানবন্দর থানার ওসি তসলিম আক্তার জানান, কেএমপির তথ্যের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়েছে। নিহত নাসরিন খুলনার থানার মামলার সন্দেহজনক আসামি।

খুলনা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি তৈমুর ইসলাম জানান, খুলনা সদর থানার মামলা নং ২৪ তারিখ ১৮ মার্চ ২০২৫ এর সন্দিগ্ধ আসামি তন্দ্রা। গোপন সংবাদে জানা যায় তিনি মালয়েশিয়া থেকে ঢাকায় আসছেন। সে মোতাবেক এয়ারপোর্ট থানাকে অবহিত করা হলে তারা তন্দ্রাকে আটক করে।

সবুজদেশ/এসইউ