ফিলিস্তিনের গাজায় প্রায় দেড় বছর ধরে চলছে ইসরায়েলি বর্বরতা। হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি উপত্যকায় দেখা দিয়েছে প্রচণ্ড খাদ্য সংকট। জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএ-এর একজন মুখপাত্র শুক্রবার জানিয়েছেন, গাজা বিশ্বের ‘একমাত্র দুর্ভিক্ষের সংজ্ঞায়িত অঞ্চল’ যেখানে শতভাগ জনসংখ্যা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।
এএফপির খবরে বলা হয়, সিএইচএ-এর মুখপাত্র জেন্স লারকে বলেছেন, ‘গাজা বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুধার্ত স্থান।
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এটিই একমাত্র সংজ্ঞায়িত অঞ্চল, একটি দেশ বা একটি দেশের মধ্যে সংজ্ঞায়িত অঞ্চল যেখানে সমগ্র জনসংখ্যা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। শতভাগ জনসংখ্যা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।’
সিএইচএ’র মুখপাত্র বলেন, ‘৯০০টি ত্রাণবাহী ট্রাকের মধ্যে মাত্র ৬০০টি গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে পৌঁছানোর অনুমতি পেয়েছে। তার ওপর সেখান থেকে আমলাতান্ত্রিক এবং নিরাপত্তা বাধার মিশ্রণের কারণে এই অঞ্চলে নিরাপদে ত্রাণ পরিবহন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
তিনি একটি নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা যা আনতে পেরেছি তা হল আটা। ওটা খাওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়। এটা রান্না করা দরকার…গাজার ১০০% জনসংখ্যা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।
এদিকে বিবিসির খবরে বলা হয়, জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার বলেছেন, ইসরায়েলের কারণে গাজার মানুষেরা অনাহারে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি মনে করেন, এ কারণেই গাজায় ইসরায়েলি হামলা প্রশ্নে আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়ায় পরিবর্তন এসেছে।
বিবিসির পক্ষ থেকে ফ্লেচারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এ ‘জোরপূর্বক অনাহার’ যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়ে কি না। উত্তরে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা যুদ্ধাপরাধ হিসেবেই বিবেচিত হয়ে থাকে। অবশ্যই, এ বিষয়ে আদালত চূড়ান্ত রায় দেবেন। আর শেষ পর্যন্ত ইতিহাসই এর বিচার করবে।
ফ্লেচার সম্প্রতি গাজা পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর করা সাম্প্রতিক একটি মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি সম্প্রতি বলেছিলেন, সহায়তা না পৌঁছালে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গাজায় ১৪ হাজার শিশু মারা যেতে পারে। পরে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এ তথ্য সংশোধন করা হয়। ফ্লেচার স্বীকার করেছেন, ভাষা ব্যবহারে ‘নির্ভুল’ হওয়া জরুরি।
ত্রাণ সরবরাহের জন্য ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে আরব ও মুসলিম দেশগুলোকে গাজায় ত্রাণবহর পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। বিবৃতিতে বলা বলেছে, ক্রমবর্ধমান ও গভীরতর দুর্ভিক্ষের ফলে গাজা উপত্যকার মানবিক পরিস্থিতি এক সংকটজনক পর্যায়ে প্রবেশ করছে।
হামাস জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে তাদের দায়িত্ব পালনের, ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ করার, অবরোধ ভেঙে ফেলার এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আহ্বানও জানায়।
সবুজদেশ/এসইউ