দুই বছরের ভালোবাসার সম্পর্ক। স্বপ্ন ছিলো একসঙ্গে ঘর বাঁধার, জীবন গড়ার। কিন্তু পরিবার আর সমাজের বাঁধায় সেই স্বপ্ন হলো চুরমার। শেষ পর্যন্ত সম্পর্কের সামাজিক স্বীকৃতি না পেয়ে মৃত্যুকেই বেছে নিলো প্রেমিক-প্রেমিকা। মেয়েটি বিষ খেলো বিশ্বাস ভরে। আর ছেলেটি? ভালোবাসার ঠিক সেই মুহূর্তেই পালিয়ে গেলো। মেয়েটি চিরতরে থেমে গেলো।ভালোবাসা হেরে গেল। পালিয়ে গেলো প্রেমিক।
জানা যায়, গত শনিবার (৩১ মে) রাত ১০টার দিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়নের গাড়ামারা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। বিষ পানের ৮ দিনপর মারা যায় আনজিতা। নিহত আনজিতা (১৯) গাড়ামারা গ্রামের শাজাহানের মেয়ে, সে রামচন্দ্রপুর স্কুল এন্ড কলেজের একাদ্বশ শ্রেণির ছাত্রী। অভিযুক্ত প্রেমিক রাহাত (২২) একই গ্রামের মশিয়ারের ছেলে। আনজিতা বিষপানের পরপরই রাহাত এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।
আনজিতার পরিবার থেকে জানা যায়, আনজিতা ও রাহাতের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলছিলো। কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও ছেলের পরিবার সেই সম্পর্ক মেনে নেয়নি। এতে হতাশ হয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেয় একসঙ্গে আত্মহত্যা করার। পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাহাত হলিধানী বাজার থেকে সংগ্রহ করে কীটনাশক। বাঁশবাগানের নির্জন স্থানে দুজনেই বিষপান করার কথা ছিলো।
তবে মেয়েটি কীটনাশক পান করার পরপরই পালিয়ে যায় প্রেমিক। পরে প্রতিবেশীরা মেয়েটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে বাঁচানো সম্ভব নয় বলে পাঠিয়ে দেয়। এরপর ৮ দিন পর মারা যায় আনজিতা।
প্রেমিক রাহাতের চাচী ফজিলি খাতুন বলেন, আমার জানতে পারি, আনজিতা রাহাতের মা বাবার সাথে কথা বলতে ওদের বাড়িতে যায়। ওদের দুজনের সম্পর্কের কথা বলে। তখন রাহাতের বাড়ি থেকে মেনে না নিলে বাড়ি থেকে চলে যায়।
তিনি বলেন, আমরা জানতে পারি, ওদের দুজনের সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় দুজন সিদ্ধান্ত নেয় তারা আত্মহত্যা করবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আনজিতা বিষপান করে , এ সময় রাহাত পালিয়ে যান। পরে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া। তার শারিরীক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। আজ মেয়েটি মারা গেছে। এই ঘটনার পর থেকে রাহাতের পরিবারের সবাই পলাতক রয়েছে।
রাহাতের পিতা মশিয়ার জানান, ওই মেয়ের সাথে আমার ছেলের সম্পর্ক ছিল, যে দিন আনজিতা বিষ খেয়েছে আমাদের বাড়িতে এসেছিল, আমরা তাকে বুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছিলাম, পরে রাতে সে বিষ খেয়েছে।
ভুক্তভোগীর মা রহিমা খাতুন , তার মেয়ের সঙ্গে দীর্ঘ দুই বছর ধরে রাহাতের সাথে প্রেমের সম্পর্ক। কয়েক দিন আগে আমাদের পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়। বিয়ে মেনে নিতে রাজি হয়নি রাহাতের পরিবার।
তিনি জানান, রাহাতের পরিবার সম্পর্ক মেনে না নেয়ায় শনিবার বাড়ির পাশে বাঁশবাগানে ডেকে নিয়ে জায়। সিদ্ধান্ত নেয় তারা দুজন একসঙ্গে বিষ পান করে আত্মহত্যা করবে। রাহাত নিজে কীটনাশক কিনে আনে। কিন্তু আনজিতা বিষ পান করলে পালিয়ে যায় রাহাত। এখন আমার মেয়ে মারা গেছে। আমরা রাহাতের ফাঁসি চাই।
আনজিতার চাচা মোঃ আবুবক্ক বলেন, প্রতিবেশী রাতাহ বিবাহের আশ্বাস দিয়ে আনজিতার সাথে দুই বছর ধরে প্রেম করে আসছে। গত কয়েকদিন ধরে বিষয়টি জানাজানি হলে, আনজিতা রাহাতের বাড়িতে গিয়ে তাদের সম্পর্কের কথা বলে। এসময় রাহাতের মা আনজিতার সাথে খারাপ আচরণ করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তখন দু’জন মিলে সিদ্ধান্ত নেয় তাদের সম্পর্ক মেনে না নিলে, একসাথে বিষপান করে আত্মহত্যা করবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাহাত বাজার থেকে বিষ কিনে আনে। এরপর শনিবার রাত ১০ দিকে রাহাতের বাড়ির পিছনে বাঁশবাগানের নিচে আনজিতা বিষপান করলে, রাহাত সেখান থেকে পালিয়ে যায়। তখন থেকেই রাহাত পলাতক রয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে আনজিতাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে ফেরত দেয়। গত ৮ দিন ভুগে ভুগে রোববার রাতে মারা যায়। আমরা এর বিচার চাই।
গাড়ামারা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. খলিলুর রহমান বলেন, শুনেছি ওদের ভিতরে সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি তেমন কেউ জানতো না। বিষ খাওয়ার পরে বিষয়টি জানাজানি হয়। মেয়েটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল বাড়িতে নিয়ে আসার পর মেয়েটি বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। ৮ দিন পর রোববার রাতে মারা গেছে। আমরা চাই ঘটনার সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হোক।
কাতলামারী ক্যাম্পের ইনচার্জ এস আই শুব্রত বিশ্বাস বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। নিহতের পরিবার থেকে এখনো পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে, তদন্তের সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সবুজদেশ/এসইউ