ফুটবল খেলার মাঠে ঝগড়ার জেরে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুমড়াবাড়িয়া গ্রামে আব্দুস সামাদ (১৬) নামে এক কিশোরকে গণপিটুনি দেয়া ঘটনায় তিনদিনেও মামলা নেয়নি থানা পুলিশ। এমনকি ভিকটিমের মা বাদি হয়ে লিখিত অভিযোগ দিলেও তদন্ত কর্মকর্তা ভিকটিমকে দেখতেও যাননি। উল্টো স্থানীয়দের মাধ্যমে সমঝোতা ও শালিস বৈঠকের মাধ্যমে অভিযোগ তুলে নিতে তদন্ত কর্মকর্তা ভিকটিমের পরিবারকে বারবার তাগাদা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে সদর থানার ওসি মামলা রেকর্ড না করার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করেছেন। ওসি বলেছেন, ভিকটিমের মাথা ফাটেনি বা কেটেও যাইনি। থ্যাতলানো মাইর হয়েছে। মামলা রেকর্ড করলে তো ৩২৪ বা ৩২৬ ধারা আসবে না। মাথা না ফাটলে মামলা নেব কিভাবে?
ওসির এমন মন্তব্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ভিকটিমের পরিবারের দাবি, মানুষ বিপদে পড়ে থানায় যায়। পুলিশ যদি বিপদগ্রস্ত মানুষের কথা আমলে না নেয় তাহলে মানুষ যাবে কোথায়?
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জনাব আলী ও কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে ২৫/৩০ জনের একটি গ্রুপ লাঠিশোঠা নিয়ে কিশোর আব্দুস সামাদের ওপর হামলা চালায়। হামলা ও গণপিটুনিতে গুরুতর আহত কিশোর ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ভিকটিমের ডানচোখ ও মাথায় আঘাত পেয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে সদর উপজেলার কুমড়াবাড়িয়া গ্রামের রাকু মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
গণপিটুনির শিকার কিশোর আব্দুস সামাদ (১৬) কুমড়াবাড়িয়া গ্রামের দিনমজুর আব্দুল মালেকের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিকালে ফুটবল মাঠে তরুণ কিশোরদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। পরে বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেলেও সন্ধার ৭টার পরে কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি জনাব আলী ও কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে লাঠিশোঠা নিয়ে ২৫/৩০ জনের একটি গ্রুপ রাকু মোড়ে আব্দুল আলিমের দোকানে আসে। এসময় কিশোর আব্দুস সামাদ দোকানের ভিতরে আশ্রয় নিলে কৃষকদল নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন, কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জনাব আলী ও ৩ নং ওয়ার্ড সেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি লিটন মিয়া দোকানে হামলা চালায়। দোকানের মালামাল ভাংচুর করে কিশোর আব্দুস সামাদ কে দোকান থেকে টেনে হিচড়ে বের করে পেটাতে শুরু করে।
এ সময় জাকির হোসেন, নাহিয়ান হোসেন, ইমরান, রিন্টু সহ ১৫/২০ জন কিশোর আব্দুস সামাদ কে বেধড়ক মারধর করে। এক পর্যায়ে কিশোর আব্দুস সামাদকে গণপিটুনি দেয় হামলাকারীরা। এসময় আব্দুস সামাদ অচেতন হয়ে পড়লে মৃত ভেবে তাকে ফেলে রেখে হামলাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে। পরে স্থানীয় লোকজন সামাদকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
ওই ঘটনায় রাতেই ঝিনাইদহ সদর থানায় ভিকটিম সামাদের মা সাজেদা খাতুন বাদি হয়ে ১০ জনের নামোল্লেখ সহ অজ্ঞাত ২০/২৫ জনের নামে অভিযোগ দেন। অভিযোগ দায়েরে পর সদর থানার এসআই সাহাদাত হোসেন অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব পান। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয় পর্যায়ে সালিস বৈঠকের মাধ্যমে সমঝোতার জন্য উভয়পক্ষকে তাগিদ দেন।
এ বিষয়ে সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুনকে অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। স্থানীয় ভাবে সমঝোতা করলে ভালো হবে। কারণ ভিকটিমের মাথা ফাটেওনি কাটেওনি। থ্যাতলানো মাইর হয়েছে। এমন আঘাতে তো ৩২৪ বা ৩২৬ ধারা আসবে না। যে কারণে মামলা রেকর্ড না করে সমঝোতা করার জন্য বলেছি।
সবুজদেশ/এসএএস