ঢাকা ০১:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মানব পাচার: ঝিনাইদহ সীমান্তে দুই মাসে শিশুসহ আটক ৭২০

ফাইল ছবি

 

ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে মানব পাচার ও চোরাচালান উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। মাত্র দুই মাসে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৭২০ জনকে সীমান্ত এলাকায় আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। একই সময়ে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ও চোরাচালান পণ্য জব্দ করা হয়েছে।

৫৮ বিজিবি মহেশপুর ব্যাটালিয়নের পাঠানো তথ্যে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ মে থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সীমান্তে অভিযান চালিয়ে এসব নারী, পুরুষ ও শিশুকে আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন ৩ জন ভারতীয় নাগরিক, ৪ জন দালাল ও ৪ জন মাদক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি।

বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশ করে ফিরে আসার সময় ৩০৪ জনকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে নারী ১০০ জন, পুরুষ ১০৫ জন এবং শিশু রয়েছে ৯৯ জন।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় আটক করা হয় ৪১৬ জনকে। এর মধ্যে নারী ১৮০ জন, পুরুষ ১২৯ জন এবং শিশু রয়েছে ১১৭ জন।

বিজিবির অভিযানকালে ভারতীয় মদ ১ হাজার ১২৮ বোতল, ফেনসিডিল ১ হাজার ৬৯৫ বোতল, ভায়াগ্রা ট্যাবলেট ১০ হাজার ৩৯০ পিস, হেরোইন ২ কেজি ২৭ গ্রাম, কোকেন ১ কেজি ৪৩০ গ্রাম, ইয়াবা ১৪ হাজার ৮৯৭ পিস, গাঁজা ১৯ কেজি ৭১৬ গ্রাম ও ১১টি স্বর্ণের বার জব্দ করা হয়। যার মোট ওজন ১ কেজি ৫২৭ গ্রাম এবং আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ২ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

এছাড়াও জব্দ করা হয়েছে ভারতীয় বিভিন্ন ওষুধ ৪ হাজার ৬৯৮ পিস, ১২৯ বক্স আতশবাজি, ২টি বাইসাইকেল, ৩টি মোটরসাইকেল, ৮৭টি চশমা এবং ভারতীয় মুদ্রা ৫০০ রুপি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, সীমান্তে প্রতিনিয়ত এভাবে নারী, পুরুষ ও শিশু আটক হওয়া এই এলাকায় মানব পাচার পরিস্থিতির ভয়াবহ চিত্র ফুটিয়ে তোলে। তারা মনে করন, পাচারচক্রের সঙ্গে স্থানীয়ভাবে সক্রিয় দালাল চক্র জড়িত, যারা অর্থের বিনিময়ে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলছে।

বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সীমান্তে চোরাচালান ও মানব পাচার রোধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। একইসঙ্গে স্থানীয়দের সন্দেহজনক চলাফেরা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

৫৮ বিজিবি মহেশপুর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল রফিকুল আলম জানিয়েছেন, “সীমান্ত এলাকায় নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে। মানব পাচার ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির সদস্যরা সর্বোচ্চ তৎপর রয়েছে।”

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি নয়, পাচার রোধে প্রয়োজন সচেতনতা, দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং সীমান্ত এলাকার মানুষের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান। অন্যথায় মানব পাচারের এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে বলে মনে করছেন তারা।

সবুজদেশ/এসএএস

Tag :

মানব পাচার: ঝিনাইদহ সীমান্তে দুই মাসে শিশুসহ আটক ৭২০

Update Time : ১২:৪১:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫

 

ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে মানব পাচার ও চোরাচালান উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। মাত্র দুই মাসে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৭২০ জনকে সীমান্ত এলাকায় আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। একই সময়ে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ও চোরাচালান পণ্য জব্দ করা হয়েছে।

৫৮ বিজিবি মহেশপুর ব্যাটালিয়নের পাঠানো তথ্যে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ মে থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সীমান্তে অভিযান চালিয়ে এসব নারী, পুরুষ ও শিশুকে আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন ৩ জন ভারতীয় নাগরিক, ৪ জন দালাল ও ৪ জন মাদক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি।

বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশ করে ফিরে আসার সময় ৩০৪ জনকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে নারী ১০০ জন, পুরুষ ১০৫ জন এবং শিশু রয়েছে ৯৯ জন।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় আটক করা হয় ৪১৬ জনকে। এর মধ্যে নারী ১৮০ জন, পুরুষ ১২৯ জন এবং শিশু রয়েছে ১১৭ জন।

বিজিবির অভিযানকালে ভারতীয় মদ ১ হাজার ১২৮ বোতল, ফেনসিডিল ১ হাজার ৬৯৫ বোতল, ভায়াগ্রা ট্যাবলেট ১০ হাজার ৩৯০ পিস, হেরোইন ২ কেজি ২৭ গ্রাম, কোকেন ১ কেজি ৪৩০ গ্রাম, ইয়াবা ১৪ হাজার ৮৯৭ পিস, গাঁজা ১৯ কেজি ৭১৬ গ্রাম ও ১১টি স্বর্ণের বার জব্দ করা হয়। যার মোট ওজন ১ কেজি ৫২৭ গ্রাম এবং আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ২ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

এছাড়াও জব্দ করা হয়েছে ভারতীয় বিভিন্ন ওষুধ ৪ হাজার ৬৯৮ পিস, ১২৯ বক্স আতশবাজি, ২টি বাইসাইকেল, ৩টি মোটরসাইকেল, ৮৭টি চশমা এবং ভারতীয় মুদ্রা ৫০০ রুপি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, সীমান্তে প্রতিনিয়ত এভাবে নারী, পুরুষ ও শিশু আটক হওয়া এই এলাকায় মানব পাচার পরিস্থিতির ভয়াবহ চিত্র ফুটিয়ে তোলে। তারা মনে করন, পাচারচক্রের সঙ্গে স্থানীয়ভাবে সক্রিয় দালাল চক্র জড়িত, যারা অর্থের বিনিময়ে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলছে।

বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সীমান্তে চোরাচালান ও মানব পাচার রোধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। একইসঙ্গে স্থানীয়দের সন্দেহজনক চলাফেরা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

৫৮ বিজিবি মহেশপুর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল রফিকুল আলম জানিয়েছেন, “সীমান্ত এলাকায় নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে। মানব পাচার ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির সদস্যরা সর্বোচ্চ তৎপর রয়েছে।”

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি নয়, পাচার রোধে প্রয়োজন সচেতনতা, দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং সীমান্ত এলাকার মানুষের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান। অন্যথায় মানব পাচারের এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে বলে মনে করছেন তারা।

সবুজদেশ/এসএএস