নাটোরের বাগাতিপাড়ায় ৫২ বছর বয়সে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন দুলু। লেখাপড়ার ইচ্ছা পূরণ করতে না পারার বেদনা থেকেই দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আবারো কলম ধরেছিলেন তিনি। তবে দুঃখজনকভাবে ইংরেজি বিষয়ে ফেল (অকৃতকার্য) করায় পূর্ণাঙ্গ সাফল্য ধরা দেয়নি তার। দুলু জানিয়েছেন, পরেরবার আবারো পরীক্ষায় অংশ নেবেন তিনি।
দেলোয়ার হোসেন দুলু বর্তমানে বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য। ১৯৮৫ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রাথমিক বৃত্তি এবং ১৯৮৮ সালে অষ্টম শ্রেণিতে জামনগর দ্বি-মুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে জুনিয়র বৃত্তি লাভ করেন।
এরপর ১৯৯০ সালে বাগাতিপাড়া কেন্দ্রে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু অনাকাঙ্খিক্ষতভাবে তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহরাব হোসেনের নির্দেশে বহিষ্কৃত হন তিনি। ঘটনাটি মানসিকভাবে দুলুকে ভেঙে দেয়। ফলে সেখানেই তার শিক্ষাজীবনের ইতি ঘটে।
তবে ২০২১ সালে ইউপি নির্বাচনে জয়লাভ করে আবারো ফিরে আসে তার হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস। সিদ্ধান্ত নেন জীবনের অপূর্ণ অধ্যায়টি শেষ করতে হবে।
এরপর রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার উমরগাড়ী দারুল খায়ের দ্বি-মুখী দাখিল মাদরাসায় নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং নিয়মিত ক্লাসে অংশ নিয়ে ২০২৫ সালের দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেন। সব বিষয়েই ভালোভাবে পরীক্ষা দিলেও ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন তিনি। তবে থেমে যাননি দুলু।
তিনি বলেন, তার পরিবারের সবাই শিক্ষিত। শুধু আমিই পিছিয়ে। যা আমাকে কুরে কুরে খেত। এবার চেষ্টা করলাম, কিন্তু হলো না। পরেরবার আরও ভালো করে প্রস্তুতি নিয়ে ইংরেজিতে পাস করেই ছাড়ব।
জামনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানী বলেন, এই বয়সে বই-খাতা নিয়ে পরীক্ষার হলে বসা সাহসের পরিচয়। দুলু দেখিয়ে দিয়েছেন, ইচ্ছা থাকলে বয়স কোনো বাধা নয়। তার প্রচেষ্টা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে নতুন করে শুরু করা সম্ভব। ইংরেজিতে ফেল করলেও তার প্রয়াস অন্যদের অনুপ্রেরণা যোগাবে।
সবুজদেশ/এসএএস