ঢাকা ০২:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে ঠিকাদারের গাফিলতিতে পানির নিচে ২০ গ্রামের ধান

 

সেতু নির্মাণে ধীরগতি ও ভরা মৌসুমে নদীতে বাঁধ দিয়ে ডাইভারসন করায় ঝিনাইদহ সদর ও কালীগঞ্জের অন্তত ২০টি গ্রাম পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ঝিনাইদহ সদর ও কালীগঞ্জ উপজেলার অন্তত ৪টি বিল ও খালের পানি আটকে গেছে বেগবতী নদীতে। ফলে হাজার হাজার হেক্টর জমি পানিতে ডুবে গেছে। ভরা বর্ষাকালে নদীর বুকে দেয়া ডাইভারসন বাঁধ সম্প্রসারণের দাবি জানালেও কৃষকের আহ্বানে কর্ণপাত করছে না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ও মহারাজপুর ইউনিয়নে মাঠের পর মাঠ পানিতে থই থই করছে। পানিতে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর বোরো ধানের ক্ষেত। বিলের পানি বের হয় সিরিসকাঠ খাল হয়ে। সেই খালের সংযোগ ঘটেছে বেগবতী নদীতে। কিন্তু বেগবতী নদীর নলডাঙ্গা বাজার ও কালীগঞ্জ উপজেলার কোলা বাজারে সেতু নির্মাণের ডাইভারসন বাঁধ রয়েছে। নদীর পানি বের হওয়ার জন্য ডাইভারসন বাঁধে রাখা হয়েছে মাত্র ৩৫ ফুট চওড়া জায়গা। দেয়া হয়েছে কাঠের সেতু। পানির তীব্র স্রোত ও চাপ সৃষ্টি হলে কয়েকবার কাঠের সেতুটি ভেসে গেছে।

তবে নদীর বুকে ডাইভারসন বাঁধের কারণে প্রবাহমান বেগবতীর উজানে ফুলে উঠেছে পানির স্তর। যার প্রভাবে নদীর স্বাভাবিক স্রোত বইছে না। ফলে নদী তীরবর্তী ফসলের মাঠ ও খাল-বিলের পানি ফসলের মাঠে আটকে আছে দিনের পর দিন। সদর উপজেলার গান্না, হরিপুর, মহারাজপুর, কুলবাড়িয়া, ভাদালডাঙ্গা, কালীগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর, সুন্দরপুর, দূর্গাপুর, মহাদেবপুর, ভাটপাড়া, বেজপাড়াসহ অন্তত ২০টির অধিক গ্রামের ফসলের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে।

মহারাজপুর গ্রামের কৃষক বিল্লাহ হোসেন বলেন, বিলের পানি নদীতে গেলেও নদীর পানি বইছে ধীরে ধীরে। বেগবতী নদীতে কোলা বাজারে ব্রিজ করার কারণে নদীতে বাঁধ দিয়েছে ঠিকাদাররা। যে কারণে নদী দিয়ে পানি নামছে না। আমরা ধান লাগিয়ে বিপাকে পড়েছি। পানিতে ধান তলিয়ে গেছে। জমিতে গলা সমান পানি।

সুন্দরপুর গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, খাল-বিলের পানি নদী দিয়ে বেরিয়ে যাবে, এটাই হওয়ার কথা। এখন বর্ষাকাল, কিন্তু ব্রীজ বানাতে গিয়ে যদি নদীতে বাঁধ দেয়া হয়, তাহলে দেশে আইন থেকে কি লাভ? আমরা ধান লাগিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছি। হাজার হাজার কৃষক হাহাকার করছে। দ্রুতই প্রশাসন পদক্ষেপ না নিলে অনেক কৃষক বেকায়দায় পড়বে।

সুন্দরপুর-দূর্গাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইলিয়াস রহমান মিঠু বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়নের কোলা বাজারে নির্মাণাধীন সেতুর ডাইভারসন বাঁধের কারণে নদীর স্রোত ও স্বাভাবিক পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে পানি কমছে না। ব্রীজ নির্মাণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে মাঠের পানি বের হচ্ছে না।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মিজানুর রহমান কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) আব্দুল খালেক ওরফে আলেক বলেন, নদীতে ডাইভারসন করা হলেও পানি বের হওয়ার জায়গা আছে। তবে পানি একটু কম বের হচ্ছে। ধান যেমন লাগবে, ব্রিজও তো লাগবে।

প্রবাহমান নদীতে ডাইভারসন বাঁধ নির্মাণের নির্দেশনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানেই এই কর্মকর্তা বলেন, ৪০ ফুট চওড়া কাঠের ব্রিজ বানানো হয়েছে। যার নিচ দিয়ে পানি বের হচ্ছে। কিন্তু নদীর প্রস্থ প্রায় দেড়শ ফুট। পানি বের হওয়ার জায়গা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।

এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম বলেন, কৃষকরা নদীর ডাইভারশন বাঁধ সম্প্রসারণের জন্য দাবি জানিয়েছেন। আমরা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ঠদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। দ্রুতই সমাধান হবে বলে আশা করছি।

সবুজদেশ/এসএএস

Tag :

সেই সমন্বয়কের বাসা থেকে ২ কোটি টাকার চেক উদ্ধার

ঝিনাইদহে ঠিকাদারের গাফিলতিতে পানির নিচে ২০ গ্রামের ধান

Update Time : ০৮:১৫:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

 

সেতু নির্মাণে ধীরগতি ও ভরা মৌসুমে নদীতে বাঁধ দিয়ে ডাইভারসন করায় ঝিনাইদহ সদর ও কালীগঞ্জের অন্তত ২০টি গ্রাম পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ঝিনাইদহ সদর ও কালীগঞ্জ উপজেলার অন্তত ৪টি বিল ও খালের পানি আটকে গেছে বেগবতী নদীতে। ফলে হাজার হাজার হেক্টর জমি পানিতে ডুবে গেছে। ভরা বর্ষাকালে নদীর বুকে দেয়া ডাইভারসন বাঁধ সম্প্রসারণের দাবি জানালেও কৃষকের আহ্বানে কর্ণপাত করছে না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ও মহারাজপুর ইউনিয়নে মাঠের পর মাঠ পানিতে থই থই করছে। পানিতে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর বোরো ধানের ক্ষেত। বিলের পানি বের হয় সিরিসকাঠ খাল হয়ে। সেই খালের সংযোগ ঘটেছে বেগবতী নদীতে। কিন্তু বেগবতী নদীর নলডাঙ্গা বাজার ও কালীগঞ্জ উপজেলার কোলা বাজারে সেতু নির্মাণের ডাইভারসন বাঁধ রয়েছে। নদীর পানি বের হওয়ার জন্য ডাইভারসন বাঁধে রাখা হয়েছে মাত্র ৩৫ ফুট চওড়া জায়গা। দেয়া হয়েছে কাঠের সেতু। পানির তীব্র স্রোত ও চাপ সৃষ্টি হলে কয়েকবার কাঠের সেতুটি ভেসে গেছে।

তবে নদীর বুকে ডাইভারসন বাঁধের কারণে প্রবাহমান বেগবতীর উজানে ফুলে উঠেছে পানির স্তর। যার প্রভাবে নদীর স্বাভাবিক স্রোত বইছে না। ফলে নদী তীরবর্তী ফসলের মাঠ ও খাল-বিলের পানি ফসলের মাঠে আটকে আছে দিনের পর দিন। সদর উপজেলার গান্না, হরিপুর, মহারাজপুর, কুলবাড়িয়া, ভাদালডাঙ্গা, কালীগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর, সুন্দরপুর, দূর্গাপুর, মহাদেবপুর, ভাটপাড়া, বেজপাড়াসহ অন্তত ২০টির অধিক গ্রামের ফসলের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে।

মহারাজপুর গ্রামের কৃষক বিল্লাহ হোসেন বলেন, বিলের পানি নদীতে গেলেও নদীর পানি বইছে ধীরে ধীরে। বেগবতী নদীতে কোলা বাজারে ব্রিজ করার কারণে নদীতে বাঁধ দিয়েছে ঠিকাদাররা। যে কারণে নদী দিয়ে পানি নামছে না। আমরা ধান লাগিয়ে বিপাকে পড়েছি। পানিতে ধান তলিয়ে গেছে। জমিতে গলা সমান পানি।

সুন্দরপুর গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, খাল-বিলের পানি নদী দিয়ে বেরিয়ে যাবে, এটাই হওয়ার কথা। এখন বর্ষাকাল, কিন্তু ব্রীজ বানাতে গিয়ে যদি নদীতে বাঁধ দেয়া হয়, তাহলে দেশে আইন থেকে কি লাভ? আমরা ধান লাগিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছি। হাজার হাজার কৃষক হাহাকার করছে। দ্রুতই প্রশাসন পদক্ষেপ না নিলে অনেক কৃষক বেকায়দায় পড়বে।

সুন্দরপুর-দূর্গাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইলিয়াস রহমান মিঠু বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়নের কোলা বাজারে নির্মাণাধীন সেতুর ডাইভারসন বাঁধের কারণে নদীর স্রোত ও স্বাভাবিক পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে পানি কমছে না। ব্রীজ নির্মাণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে মাঠের পানি বের হচ্ছে না।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মিজানুর রহমান কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) আব্দুল খালেক ওরফে আলেক বলেন, নদীতে ডাইভারসন করা হলেও পানি বের হওয়ার জায়গা আছে। তবে পানি একটু কম বের হচ্ছে। ধান যেমন লাগবে, ব্রিজও তো লাগবে।

প্রবাহমান নদীতে ডাইভারসন বাঁধ নির্মাণের নির্দেশনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানেই এই কর্মকর্তা বলেন, ৪০ ফুট চওড়া কাঠের ব্রিজ বানানো হয়েছে। যার নিচ দিয়ে পানি বের হচ্ছে। কিন্তু নদীর প্রস্থ প্রায় দেড়শ ফুট। পানি বের হওয়ার জায়গা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।

এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম বলেন, কৃষকরা নদীর ডাইভারশন বাঁধ সম্প্রসারণের জন্য দাবি জানিয়েছেন। আমরা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ঠদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। দ্রুতই সমাধান হবে বলে আশা করছি।

সবুজদেশ/এসএএস