১৬ মাস বয়সী শিশুকে বিষধর সাপে টাকার ঘটনায় একটি ভিডিও ফেসবুকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, শিশুটি নানির কোলে আছে। রাস্তায় ডাকচিৎকার এবং ছোটফট করছে তার মা। আতঙ্ক আর ভয়ে কাতর পরিবারের সবাই। এমনি এক দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। শুরু হয় তোলপাড়। ভাইরাল হওয়া এই ঘটনা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার শিবনগর কলুপাড়া এলাকার। শিশুটি শিবনগর কলুপাড়া এলাকার ইব্রাহীম খলিলের মেয়ে ওয়াজিহা আয়াত।
শনিবার (৩ আগস্ট) সকালে বিষধর সাপে কাটা বলে কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয় তাকে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিষধর সাপে কাটা রোগীর জন্য এন্টিভেনাম নেই বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ খবর শুনে হাসপতাল প্রাঙ্গনে শিশুটির মা কান্নায় ভেঙে পড়ে এবং চিৎকার করতে থাকে। পরবর্তীতে হাসপতাল থেকে শিশুটিকে রেফার্ড করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এই ভিডিওটি মোবাইলে ধারন করা হয় এবং ফেসবুকে পোস্ট করা। মুহুর্তেই মায়ের আহাজারির ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়।
ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। সেখানে শিশুটির প্রতিবেশি দেবাশীষ মজুমদার মন্তব্য করেন, শিশুটি এখন ভালো আছে। আমার বাসার পাশে বাড়ি। শিশুটির সাপে কাটেনি। তার শরীরে বিষ পাওয়া যায়নি। সে এখন সুস্থ। তবে আমার প্রশ্ন এত বড় সরকারি হাসপাতালে কেন এন্টিভেনাম থাকবে না? এছাড়া অনেকে হাসপাতালে এন্টিভেনাম না থাকাই মন্তব্য করেন।
এলাকাবাসী ও ঝিনাইদহ সদর হাসপতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা যায়, শিশুকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। শিশুটিকে বিষধর কোন সাপে কাটেনি নিশ্চতে হলে কর্মরত ডাক্তাররা কোন এন্টিভেনাম না দিয়ে স্যাল্যাইন দিয়ে পর্যাবেক্ষণে রাখে। পরে শিশুটি সুস্থ হলে তার পরিবার তাকে বাড়ি নিয়ে যায়। বাচ্চাটি এখন সুস্থ আছে।
তবে সচেতন মহলের দাবি, বর্তমানে ফেসবুকে সত্য-মিথ্যা যাচাই না করে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত না এমন ক্যাপশন দিয়ে ভিডিও বা ছবি ছেড়ে দেওয়া হয়। যা কোনভাবেই কাম্য নয়। যদি শিশুটিকে অযথা এন্টিভেনাম দেওয়া হতো তাহলে তার জীবন বিপন্ন হতে পারতো। এজন্য সবাইকে সচেতন হওয়ার দাবি তাদের।
শিশুটির পিতা ইব্রাহীম খলিল জানান, মেয়েকে সাপে কেটেছে নিশ্চিত। কিন্তু কোন সাপে কেটেছে এটা দেখিনি। সাপে কাটার পর কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সাপে কাটার কোগীদের জন্য কোন এন্টিভেনাম না থাকায় ঝিনাইদহ সদর হাসপতালে নেওয়া হয়। সেখানে বিষধর সাপে কাটার কোন আলামত না থাকায় মেয়েকে কোন এন্টিভেনাম দেয়নি। পরে ডাক্তার তাকে চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি করে রাখে। বাচ্চা সুস্থ হলে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। এখন বাচ্চা সুস্থ আছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা: আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কাল হাসপাতালে একটা বাচ্চাকে অসুস্থ অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। বাচ্চার মা ও স্বাজনরা জানায় বাচ্চাকে বিষধর সাপে কেটেছে। কিন্তু আমাদের কাছে তা মনে হয়নি। তারপরও গতকাল আমাদের কাছে কোন এন্টিভেনাম ছিল না, যার কারণে দেরি না করে দ্রুত ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। পরে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে গিয়ে তারা চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি আসে।
তিনি আরো বলেন, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল থেকে এক বক্স এন্টিভেনাম আনা হয়েছে। এখন হাসপাতালে এন্টিভেনাম আছে।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কাল কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে একটি শিশু আমাদের এখানে আসে। পরিবার জানায় তাকে বিষধর সাপে কেটেছে। হাসপাতালে আসার পর শিশুকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে এবং স্যাল্যাইন দিয়ে পর্যাবেক্ষণে রাখা হয়। তবে বিষধর সাপে কাটার কোন আলামত না পাওয়ায় কোন এন্টিভেনাম দেওয়া হয়নি। শিশুটি সুস্থ থাকায় তার পরিবার নিজ ইচ্ছায় তিনঘন্টা পর বাড়ি নিয়ে গেছে।
সবুজদেশ/এসএএস