সদ্যপ্রয়াত সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীনের লাশ কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় পৌর কবরস্থানে দাফন করা হবে। তার মা-বাবার কবরে তাকে দাফন করা হবে। কবর খনন ও প্রস্তুতের কাজ করছে কবরস্থান কর্তৃপক্ষ।
তবে কখন জানাজা ও দাফন হবে, সেই তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি কবরস্থান কর্তৃপক্ষ।
ধারণা করা হচ্ছে, মাগরিবের নামাজের পর জানাজা ও দাফন হতে পারে। লোকসংগীতের বরেণ্য শিল্পী ফরিদা পারভীন শনিবার রাত ১০টা ১৫ মিনিটে ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি স্বামী এবং চার সন্তান রেখে গেছেন।
তার মৃত্যুর খবরে শিল্পী, কলাকুশলীসহ সর্বস্তরের মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শিল্পীর মরদেহ সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়। সেখানে শ্রদ্ধা জানানো শেষে শিল্পীর মরদেহ নেওয়া হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে; সেখানে আরেকটি জানাজা হবে। ঢাকায় আনুষ্ঠানিকতা শেষে মরদেহ কুষ্টিয়াতে নেওয়া হবে। সেখানকার পৌর কবরস্থানে মা-বাবার কবরে ফরিদা পারভীনকে দাফন করা হবে।
কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় পৌর কবরস্থানের খাদেম নুরু বলেন, ‘শিল্পী ফরিদা পারভীনের বাবা কুষ্টিয়া হাসপাতালে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে ছোটবেলায় তিনি কুষ্টিয়ায় বেড়ে ওঠেন। আমরা একই এলাকার মানুষ ছিলাম। ফরিদা পারভীনের সঙ্গে আমরা ছোটবেলায় খেলাধুলা করতাম।
আমরা সমবয়সী হওয়ায় বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। বড় হওয়ার পরে তিনি কুষ্টিয়ার বাইরে থাকেন। এ জন্য যোগাযোগ ছিল না। তবে দেখা হলে আমাদের কথা হতো।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি বহু বছর ধরে কুষ্টিয়া কবরস্থানের খাদেম। কুষ্টিয়া পৌর কবরস্থানে একটি জায়গায় সর্বপ্রথম তার বাবাকে দাফন করা হয়। এরপর ওই কবরে ফরিদা পারভীনের মাকেও দাফন করা হয়। মা-বাবার সেই কবরে ফরিদা পারভীনের লাশ দাফন করা হবে। আমরা দুপুর ১টার দিকে কবর খননের কাজ শুরু করেছি। তার লাশ কুষ্টিয়ায় এলে জানাজা হবে এরপর দাফন করা হবে।’
ফরিদা পারভীন বেশ কিছু দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। চলতি বছরে তিন দফায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয় তাকে। গত ২ সেপ্টেম্বর মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ফরিদা পারভীনকে। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় হাসপাতালে নেওয়ার পরই নিয়ে যাওয়া হয় আইসিইউতে। পরে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
লালনের গানের বাণী ও সুরকে দেশ-বিদেশে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে ফরিদা পারভীনের অবদান সর্বজনস্বীকৃত। শুরুতে নজরুলসংগীত ও আধুনিক গান দিয়ে ফরিদা পারভীনের যাত্রা শুরু হয়। তবে তার সংগীতজীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে লালন সাঁইয়ের গান গেয়ে। বাংলাদেশের লালনসংগীতের সঙ্গে তার নাম অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে।
স্বাধীনতার পর কুষ্টিয়ার দোলপূর্ণিমার মহাসমাবেশে প্রথমবারের মতো লালনের গান পরিবেশন করেন ফরিদা পারভীন। শুরুতে অনীহা থাকলেও বাবার উৎসাহে মকছেদ আলী সাঁইয়ের কাছে লালনের গান শেখা শুরু করেন। এরপর খোদা বক্স সাঁই, করিম সাঁই, ব্রজেন দাসসহ গুরু পরম্পরার সাধকদের কাছে তালিম নিয়ে লালনের গানকে তিনি কণ্ঠে ধারণ করেন।
এরপর লালনের গান ফরিদা পারভীন দেশ-বিদেশে বা বিশ্বমঞ্চে ছড়িয়ে দিয়েছেন। জাপান, সুইডেন, ডেনমার্ক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে তার কণ্ঠে বেজেছে লালনের দর্শন।
বাবার চাকরির সুবাদে দীর্ঘদিন কুষ্টিয়া শহরে ছিলেন ফরিদা। কুষ্টিয়ার মীর মশাররফ হোসেন বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি। ১৯৭৪ সালে কুষ্টিয়া গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি এবং একই কলেজ থেকে স্নাতক। ওই শহরেই দীর্ঘদিন তিনি চর্চা করেছেন লালনগীতির।
কিংবদন্তি শিল্পী ফরিদা পারভীন ১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়া থানায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৮ সালে ১৪ বছর বয়সে তার পেশাদার সংগীতজীবন শুরু হয়। এরপর গানে গানে তিনি কাটিয়েছেন ৫৫ বছর।
সবুজদেশ/এসএএস