ঢাকা ১০:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অ্যানথ্রাক্স রোগ কী, লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়

  • সবুজদেশ ডেস্ক:
  • Update Time : ১২:০৩:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
  • ৭০ বার পড়া হয়েছে।

 

রংপুর ও গাইবান্ধা অঞ্চলে সম্প্রতি আবারও দেখা দিয়েছে অ্যানথ্রাক্স রোগের প্রাদুর্ভাব। গবাদিপশুর শরীরে এই ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ ও শঙ্কা। পশুপালক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ—সবার মনেই প্রশ্ন, কতটা ভয়াবহ হতে পারে এই রোগ?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যানথ্রাক্স কোনো নতুন বা দুর্বোধ্য রোগ নয়। এটি বহু পুরনো, বৈজ্ঞানিকভাবে সুপরিচিত এবং প্রতিরোধযোগ্য একটি সংক্রমণ, যা সচেতনতা ও সঠিক ব্যবস্থাপনায় সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আতঙ্কিত না হয়ে প্রয়োজন গঠনমূলক পদক্ষেপ।

অ্যানথ্রাক্স কী: অ্যানথ্রাক্স হলো ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত রোগ। এটি মূলত প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়। এই জীবাণু মাটিতে বছরের পর বছর ধরে সক্রিয় থাকতে পারে স্পোর (অর্থাৎ ঘুমন্ত ব্যাকটেরিয়া) আকারে। যখন গবাদিপশু এই জীবাণুযুক্ত ঘাস বা খাবার গ্রহণ করে, তখন তারা সংক্রমিত হয়। পশু জবাই, চামড়া ছাড়ানো বা সংক্রমিত মাংস খাওয়ার মাধ্যমে এই জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। আক্রান্ত পশুর সংস্পর্শে এলে বা সংক্রমিত মাংস ও চামড়াজাত পণ্য ব্যবহারে মানুষও ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

অন্যদিকে, স্থানীয়দের অভিযোগ, গত দুই মাসে শতাধিক গবাদিপশু এই রোগে মারা গেছে। পীরগাছায় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে অন্তত ৫০ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন, যাদের ৯০ শতাংশই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

কিন্তু আতঙ্কের বশে অনেকেই গরু-ছাগলের যত্ন নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন, গরুর মাংস খাওয়াও এড়িয়ে চলছেন। ফলে স্থানীয় খামার ও মাংস ব্যবসায় ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।

সরকারি উদ্যোগ: সংক্রমণ রোধে সরকারের তরফ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় ২০ লাখ ডোজ টিকা বরাদ্দ। রংপুর জেলায় ১ লাখ ৬৭ হাজার গবাদিপশুকে টিকাদান সম্পন্ন। মাইকিং, লিফলেট বিতরণ ও সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো।

মৃত পশুকে গভীরভাবে পুঁতে ফেলার বা দাহ করার নির্দেশনা। পশুর মাংস বিক্রির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও অনুমতির ব্যবস্থা।

কীভাবে ছড়ায়: অ্যানথ্রাক্স মানুষের শরীরে তিনটি মূল উপায়ে সংক্রমিত হতে পারে:
১. ত্বকীয় অ্যানথ্রাক্স (চামড়ার মাধ্যমে)
আক্রান্ত পশুর সংস্পর্শে এলে বা খোলা ক্ষতের মাধ্যমে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলে হয়। লক্ষণ: ফোস্কা, পোড়া দাগ, কালো ক্ষত।

২. পরিপাকতন্ত্রীয় অ্যানথ্রাক্স (খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে)
অপরিষ্কৃত বা অর্ধসিদ্ধ মাংস খাওয়ার ফলে সংক্রমণ ঘটে। লক্ষণ: পেট ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া, রক্তবমি।

৩. শ্বাসতন্ত্রীয় অ্যানথ্রাক্স (শ্বাসের মাধ্যমে)
চামড়া প্রক্রিয়াকরণের সময় বাতাসে ভেসে থাকা স্পোর শ্বাস-প্রশ্বাসে প্রবেশ করলে হয়। লক্ষণ: জ্বর, গলা ব্যথা, ফুসফুস প্রদাহ, শ্বাসকষ্ট।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: অ্যানথ্রাক্স মানুষ থেকে মানুষে সরাসরি ছড়ায় না, এটি শুধু আক্রান্ত প্রাণী বা তাদের দেহবস্তুর সংস্পর্শে এলেই সংক্রমণ ঘটে।

ভয় নয়, ব্যবস্থা নিন: রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, মৃত বা অসুস্থ পশু জবাই করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কোনো মাংস বিক্রির আগে নিশ্চিত করতে হবে সেটি নিরাপদ কি না।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আহমেদ নওশের আলম বলেন, “ ভীতি নয়, সতর্কতা জরুরি। যথাযথ টিকা, পরীক্ষা ও স্বাস্থ্যবিধি মানলেই এই রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। চিকিৎসাও সহজ, মৃত্যু খুবই কম। তবে স্বাস্থ্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে একসাথে কাজ করতে হবে।”

রোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা: প্রাথমিক অবস্থায় অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক ও জীবাণুনাশক মলম কার্যকর। জটিল হলে হাসপাতালে ভর্তি করে এন্টিটক্সিন থেরাপি ও সাপোর্টিভ চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।

রোগ শনাক্তে ত্বকের নমুনা, রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে বা সিটি স্ক্যান, ব্যাকটেরিয়া কালচার করা হয়ে থাকে।

প্রতিরোধে করণীয়: গবাদিপশুর নিয়মিত টিকা নিশ্চিত করা। অসুস্থ বা মৃত পশুর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। মৃত পশু গভীরভাবে পুঁতে ফেলা বা পুড়িয়ে ফেলা। আক্রান্ত পশুর মাংস খাওয়া বা বিক্রি সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা। সব মাংস ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপে সিদ্ধ করে খাওয়া। পশুশ্রমিক, কসাই, খামারকর্মীদের জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা।স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতামূলক প্রচার অভিযান জোরদার করা।

ভুল ধারণা: অ্যানথ্রাক্স ছোঁয়াচে নয়। মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। আক্রান্ত পশুর সংস্পর্শই মূল ঝুঁকি। ত্বকীয় রূপ দ্রুত চিকিৎসা পেলে সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। ফ্রিজে রাখা মাংস জীবাণুমুক্ত নয়। রান্না করা মাংস নিরাপদ, যদি সঠিকভাবে সেদ্ধ করা হয়

এবিষয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) এক কর্মকর্তা বলেন, “রংপুর বিভাগজুড়ে ১ হাজার ৩০৩টি হাট-বাজার থাকলেও কোথাও নেই আধুনিক কসাইখানা কিংবা সরকারি ভেটেরিনারি সার্জন। অথচ প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার পশু জবাই হলেও হয় না কোনো স্বাস্থ্য পরীক্ষা। এই ঘাটতির সুযোগেই বাজারে ঢুকে পড়ছে সংক্রমিত মাংস।”

তিনি বলেন, “আক্রান্ত পশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, হাড়, নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শ থেকে অ্যানথ্রাক্স মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এজন্য খামার থেকে বাজার পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে নজরদারি বাড়াতে হবে।”

স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মাহবুর রহমান বলেন, “অ্যানথ্রাক্স আতঙ্কিত হওয়ার মতো রোগ নয়, তবে অবহেলা করলে এর পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। সময়মতো টিকা, সচেতনতা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সরকারি নির্দেশনা মেনে চললে রোগটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।”

বর্তমান পরিস্থিতি: রংপুর জেলার পীরগাছা, কাউনিয়া ও মিঠাপুকুর উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে ১১ জনের দেহে। এর মধ্যে পীরগাছায় আটজন, কাউনিয়ায় দুইজন এবং মিঠাপুকুরে একজন আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জেও অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যেখানে মৃত গরুর মাংস কেটে বিক্রির পর ১১ জন আক্রান্ত হন।

সরকারি সূত্রে জানা যায়, রংপুর ও গাইবান্ধা মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১৭ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে।

সবুজদেশ/এসএএস

Tag :
জনপ্রিয়

অ্যানথ্রাক্স রোগ কী, লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়

Update Time : ১২:০৩:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

 

রংপুর ও গাইবান্ধা অঞ্চলে সম্প্রতি আবারও দেখা দিয়েছে অ্যানথ্রাক্স রোগের প্রাদুর্ভাব। গবাদিপশুর শরীরে এই ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ ও শঙ্কা। পশুপালক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ—সবার মনেই প্রশ্ন, কতটা ভয়াবহ হতে পারে এই রোগ?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যানথ্রাক্স কোনো নতুন বা দুর্বোধ্য রোগ নয়। এটি বহু পুরনো, বৈজ্ঞানিকভাবে সুপরিচিত এবং প্রতিরোধযোগ্য একটি সংক্রমণ, যা সচেতনতা ও সঠিক ব্যবস্থাপনায় সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আতঙ্কিত না হয়ে প্রয়োজন গঠনমূলক পদক্ষেপ।

অ্যানথ্রাক্স কী: অ্যানথ্রাক্স হলো ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত রোগ। এটি মূলত প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়। এই জীবাণু মাটিতে বছরের পর বছর ধরে সক্রিয় থাকতে পারে স্পোর (অর্থাৎ ঘুমন্ত ব্যাকটেরিয়া) আকারে। যখন গবাদিপশু এই জীবাণুযুক্ত ঘাস বা খাবার গ্রহণ করে, তখন তারা সংক্রমিত হয়। পশু জবাই, চামড়া ছাড়ানো বা সংক্রমিত মাংস খাওয়ার মাধ্যমে এই জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। আক্রান্ত পশুর সংস্পর্শে এলে বা সংক্রমিত মাংস ও চামড়াজাত পণ্য ব্যবহারে মানুষও ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

অন্যদিকে, স্থানীয়দের অভিযোগ, গত দুই মাসে শতাধিক গবাদিপশু এই রোগে মারা গেছে। পীরগাছায় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে অন্তত ৫০ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন, যাদের ৯০ শতাংশই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

কিন্তু আতঙ্কের বশে অনেকেই গরু-ছাগলের যত্ন নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন, গরুর মাংস খাওয়াও এড়িয়ে চলছেন। ফলে স্থানীয় খামার ও মাংস ব্যবসায় ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।

সরকারি উদ্যোগ: সংক্রমণ রোধে সরকারের তরফ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় ২০ লাখ ডোজ টিকা বরাদ্দ। রংপুর জেলায় ১ লাখ ৬৭ হাজার গবাদিপশুকে টিকাদান সম্পন্ন। মাইকিং, লিফলেট বিতরণ ও সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো।

মৃত পশুকে গভীরভাবে পুঁতে ফেলার বা দাহ করার নির্দেশনা। পশুর মাংস বিক্রির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও অনুমতির ব্যবস্থা।

কীভাবে ছড়ায়: অ্যানথ্রাক্স মানুষের শরীরে তিনটি মূল উপায়ে সংক্রমিত হতে পারে:
১. ত্বকীয় অ্যানথ্রাক্স (চামড়ার মাধ্যমে)
আক্রান্ত পশুর সংস্পর্শে এলে বা খোলা ক্ষতের মাধ্যমে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলে হয়। লক্ষণ: ফোস্কা, পোড়া দাগ, কালো ক্ষত।

২. পরিপাকতন্ত্রীয় অ্যানথ্রাক্স (খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে)
অপরিষ্কৃত বা অর্ধসিদ্ধ মাংস খাওয়ার ফলে সংক্রমণ ঘটে। লক্ষণ: পেট ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া, রক্তবমি।

৩. শ্বাসতন্ত্রীয় অ্যানথ্রাক্স (শ্বাসের মাধ্যমে)
চামড়া প্রক্রিয়াকরণের সময় বাতাসে ভেসে থাকা স্পোর শ্বাস-প্রশ্বাসে প্রবেশ করলে হয়। লক্ষণ: জ্বর, গলা ব্যথা, ফুসফুস প্রদাহ, শ্বাসকষ্ট।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: অ্যানথ্রাক্স মানুষ থেকে মানুষে সরাসরি ছড়ায় না, এটি শুধু আক্রান্ত প্রাণী বা তাদের দেহবস্তুর সংস্পর্শে এলেই সংক্রমণ ঘটে।

ভয় নয়, ব্যবস্থা নিন: রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, মৃত বা অসুস্থ পশু জবাই করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কোনো মাংস বিক্রির আগে নিশ্চিত করতে হবে সেটি নিরাপদ কি না।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আহমেদ নওশের আলম বলেন, “ ভীতি নয়, সতর্কতা জরুরি। যথাযথ টিকা, পরীক্ষা ও স্বাস্থ্যবিধি মানলেই এই রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। চিকিৎসাও সহজ, মৃত্যু খুবই কম। তবে স্বাস্থ্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে একসাথে কাজ করতে হবে।”

রোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা: প্রাথমিক অবস্থায় অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক ও জীবাণুনাশক মলম কার্যকর। জটিল হলে হাসপাতালে ভর্তি করে এন্টিটক্সিন থেরাপি ও সাপোর্টিভ চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।

রোগ শনাক্তে ত্বকের নমুনা, রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে বা সিটি স্ক্যান, ব্যাকটেরিয়া কালচার করা হয়ে থাকে।

প্রতিরোধে করণীয়: গবাদিপশুর নিয়মিত টিকা নিশ্চিত করা। অসুস্থ বা মৃত পশুর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। মৃত পশু গভীরভাবে পুঁতে ফেলা বা পুড়িয়ে ফেলা। আক্রান্ত পশুর মাংস খাওয়া বা বিক্রি সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা। সব মাংস ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপে সিদ্ধ করে খাওয়া। পশুশ্রমিক, কসাই, খামারকর্মীদের জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা।স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতামূলক প্রচার অভিযান জোরদার করা।

ভুল ধারণা: অ্যানথ্রাক্স ছোঁয়াচে নয়। মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। আক্রান্ত পশুর সংস্পর্শই মূল ঝুঁকি। ত্বকীয় রূপ দ্রুত চিকিৎসা পেলে সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। ফ্রিজে রাখা মাংস জীবাণুমুক্ত নয়। রান্না করা মাংস নিরাপদ, যদি সঠিকভাবে সেদ্ধ করা হয়

এবিষয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) এক কর্মকর্তা বলেন, “রংপুর বিভাগজুড়ে ১ হাজার ৩০৩টি হাট-বাজার থাকলেও কোথাও নেই আধুনিক কসাইখানা কিংবা সরকারি ভেটেরিনারি সার্জন। অথচ প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার পশু জবাই হলেও হয় না কোনো স্বাস্থ্য পরীক্ষা। এই ঘাটতির সুযোগেই বাজারে ঢুকে পড়ছে সংক্রমিত মাংস।”

তিনি বলেন, “আক্রান্ত পশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, হাড়, নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শ থেকে অ্যানথ্রাক্স মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এজন্য খামার থেকে বাজার পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে নজরদারি বাড়াতে হবে।”

স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মাহবুর রহমান বলেন, “অ্যানথ্রাক্স আতঙ্কিত হওয়ার মতো রোগ নয়, তবে অবহেলা করলে এর পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। সময়মতো টিকা, সচেতনতা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সরকারি নির্দেশনা মেনে চললে রোগটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।”

বর্তমান পরিস্থিতি: রংপুর জেলার পীরগাছা, কাউনিয়া ও মিঠাপুকুর উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে ১১ জনের দেহে। এর মধ্যে পীরগাছায় আটজন, কাউনিয়ায় দুইজন এবং মিঠাপুকুরে একজন আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জেও অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যেখানে মৃত গরুর মাংস কেটে বিক্রির পর ১১ জন আক্রান্ত হন।

সরকারি সূত্রে জানা যায়, রংপুর ও গাইবান্ধা মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১৭ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে।

সবুজদেশ/এসএএস