জুলাই জাতীয় সনদ শুধু জাতির জন্য নয়, সারা দুনিয়ার জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদে স্বাক্ষরের পর দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন তিনি। এর আগে জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
জুলাই সনদ স্বাক্ষরকে বিশেষ ক্ষণ ও মহান দিবস আখ্যা দিয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আজ সমস্ত জাতি, সমস্ত রাজনৈতিক দল একসাথে হয়েছে। ঐকমত্য কমিশন গঠনের সময় মনে হয়েছিল দুয়েকটি বিষয়ে হয়তো একমত হবে। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলো কেউ কারও কথা শোনে না। ভয়ে ভয়ে ঐকমত্য কমিশন শুরু হয়েছিল। প্রফেসর আলী রীয়াজকে দায়িত্ব দেওয়া হলো যেন বুঝেশুনে এগোন। তিনি চমৎকার আলোচনা চালিয়ে নিয়েছেন।”
ঐকমত্য কমিশন সব রাজনৈতিক দলসহ সারা জাতিকে এই আলোচনায় শরিক করেছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল কয়েক বিষয়ে একমত হবে। আজকে দীর্ঘ তালিকা (একমতের) নিয়ে সনদ সম্মন্নয় করতে পারছি।”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবে বলেও মন্তব্য করেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
জুলাই জাতীয় সনদের গুরুত্ব উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই দিনটি যে পেলাম, এক মহান দিন। শুধু জাতির জন্য না, সারা পৃথিবীর জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। এটা নিয়ে বিভিন্ন দেশে রাজনীতিবিদদের মধ্যে আলোচনা হবে। যে উদাহরণ আমাদের রাজনীতিবিদরা কৈরি করেছেন, এটা সারা পৃথিবীর জন্য নজির হয়ে থাকবে।”
ভাষণে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নায়কদের স্মরণ করেন মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “যারা আহত–নিহত হয়েছে তাদের কথা স্মরণ করি। শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। তাদের কাছে সারা জাতি চির কৃতজ্ঞ থাকবে।”
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলাম সবাই মিলে, সেটা দিয়ে বাংলাদেশ পরিবর্তন হবে। এই পরিবর্তন হলো ছাত্র–জনতার অথ্যত্থানের কারণে। আমরা পুরোনো কথা পাল্টে নতুন কথাগুলো নিয়ে আসলাম। এই পরিবর্তন আমাদের সামনের দিকে নিয়ে যাবে।”
এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, “আজ বাংলাদেশের নবজন্ম হলো। জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম।”
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমরা একমত হয়েছি। এই ঐকমত্য সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনা ও এগিয়ে নেওয়ার জন্য। এই পরিবর্তনের জন্য যারা জীবন দিয়েছে, সেই তরুণরা এ দেশকে গড়বে। তারা আমাদের পথ দেখাবে। এই দেশ তরুণদের দেশ।”
দেশে ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে অর্ধেকের বয়স ২৭ বছরের নীচে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এটা (তরুণ জনগোষ্ঠী) আমাদের সম্পদ। কোনো কোনো দেশে তো এখন তরুণ সেভাবে নাই। সারা দুনিয়া তাকিয়ে আছে কখন আমরা এদের পাঠাব। এটা আমাদের সুবর্ণ সুযোগ। তরুণদের এগিয়ে দেওয়া। পৃথিবীকে পরিবর্তন করার সুযোগ। আমাদের কাছে প্রস্তাব আসছে–তাদের পাঠান। ২০০৬–২৭ সালে হাত জোর করে আসবে।”
জুলাই সনদ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এ সনদের মাধ্যমে আমরা বর্বরতা থেকে সভ্যতায় আসলাম। আমরা এক বর্বর যুগে ছিলাম যেখানে আইন–কানুন ছিল না। এমন সভ্যতা আমরা গড়ে তুলব মানুষ ঈর্ষার চোখে আমাদের দেখবে। আমরা এখন নিয়মমাফিক চলার জন্য তৈরি হয়েছি। জুলাই সনদের দেখানো পথে আমরা চলব।”
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমাদের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত চমৎকার। শুধু আমাদের সমাজটাকে গড়ে তুলতে হবে। আমরা যদি একমত হয়, অন্যসব কাজেও যদি একমত হই, একসাথে চলি, এটা অনন্য দেশ হবে।”
জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “জুলাই সনদে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আজ যে ঐক্যের সুর বেজে উঠল, তা দিয়ে আমরা নির্বাচনে যাব। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। সুন্দর ও উৎসবমুখর নির্বাচন করার ব্যাপারে কথা বলুন। নিজেদের নির্বাচন নিজেরা করব। আমরা পারব, ইনশাল্লাহ। বাইরের লোক এসে যেন কথা বলতে না পারে।”
ভাষণের আগে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেন। তার আগে, তাতে স্বাক্ষর করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। এ তালিকায় রয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের প্রমুখ।
সবুজদেশ/এসএএস