ঢাকা ০২:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভিপি নূরের উপর হামলা: আমারে চেনো না, আমি খুব খারাপ লোক-উপজেলা চেয়ারম্যান

Reporter Name

পটুয়াখালীঃ

পটুয়াখালীর স্থানীয় এমপির নির্দেশেই উপজেলা চেয়ারম্যান ও যুবলীগ-ছাত্রলীগসহ বহিরাগতরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলা চালিয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকালে ভিপি নুরের সঙ্গে কথা হলে তিনি এ দাবি করেন।

তিনি জানান, বুধবার সকালে তার নিজ গ্রামের বাড়ি গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস থেকে তার বোনের বাড়ি দশমিনা উপজেলায় রওনা হন।

এর আগে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নুর ও তার বন্ধুদের দশমিনায় যেতে নিষেধ করা হয়। এমনকি বলা হয়-স্থানীয় এমপি এসএম শাহাজাদা সাজু তার নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন নুরকে মারতে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে না বলে জানিয়ে নুরকে আসতে নিষেধ করে অনুরোধ করে স্থানীয় প্রশাসন। নুর বাধা না শুনে উলানিয়া বাজার হয়ে দশমিনা যাওয়ার পথে প্রথমে একদল বহিরাগত কৌশল নিয়ে তাদের গতিরোধ করে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে।

কিছুক্ষণ পর গলাচিপা উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন শাহের নেতৃত্বে তার ভাই নুরে আলম, পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাইনুল ইসলাম রনো, লিটু প্যাদা, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক কচিন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ আসিফ, শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রলীগ নেতা রাহাত, তূর্য্যসহ অন্তত শতাধিক বহিরাগতরা রড, চেইন, হকিষ্টিক, রামদা নিয়ে হামলায় অংশ নেয়।

এ সময় আহত হয় নুরের সঙ্গে থাকা রবিউল, জাহিদ, ইব্রাহিম, রিয়াজ, রিয়ন, নজরুলসহ প্রায় ৩০-৪০ জন। আহতদের মধ্যে নুরসহ ৪ জনের অবস্থা গুরুতর হয়। ভাংচুর করা হয় অন্তত ১০টি মোটরসাইকেল। ছিনিয়ে নেয়া হয় ৯টি মোবাইল ফোনসহ নগদ অর্থ।

পরে অচেতন অবস্থায় নুরসহ গুরুতর আহতদের গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিস্থিতি ঘোলাটে দেখে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে নিজ বাড়িতে চলে যান নুর ও বাকি আহতরা।

হামলার কারণ যানতে চাইলে নুর জানান, এলাকায় আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে বন্ধুবান্ধব এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাকে দেখতে বাড়িতে আসেন। এতে ঈর্ষান্বিত হয়ে স্থানীয় এমপি এসএম শাহাজাদা সাজু এবং উপজেলা চেয়ারম্যান আমার ওপর হামলা করে।

ডাকসু ভিপি জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং এমপিসহ অন্যান্য নেতারা এলাকায় এসে মিষ্টি বিতরণ করেও লোক জড়ো করতে পারে না। অথচ আমি আসলে শত শত মানুষ আসে। নুর আর১ও জানান, বুধবার তিনি বাড়ি থেকে মাত্র ১০টি মোটরসাইকেল নিয়ে রওনা হন। পরে তার সঙ্গে যোগ হয় অন্তত ৮০ থেকে ৮৫টি মোটরসাইকেল। এলাকার এই লোকগুলো নুরকে খুব ভালবাসে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ভবিষ্যতে এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের রাজনীতি এবং জনপ্রিয়তায় প্রভাব পড়বে এমন আশংকায় নুরের ওপর হামলা চালানো হয়।

এদিকে হামলায় ঘটনায় অভিযুক্ত উপজেলা আওয়ামীর সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন শাহের বক্তব্য নিয়ে গেলে বুধবার তিনি প্রথমে বলেন, আমি লোকমাধ্যমে শুনেছি, নুর একটি দায়ের দোকানে চা খাওয়ার সময় ১৫ আগস্ট উপলক্ষে এলাকায় লাগানো বঙ্গবন্ধুর পোস্টার নিয়ে উল্টাপাল্টা মন্তব্য করেন। এ সময় স্থানীয়রা তাকে ব্যাপক মারধর করে। পরে নুর ও তার সঙ্গীরা পালিয়ে একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয়।

আপনার নেতৃত্বে হামলা হয়েছে এমন প্রশ্নে উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন শাহ চরম উত্তেজিত হয়ে বলেন, তোমাকে এ তথ্য কে দিয়েছে? আমি (…) এখন এমপির বাড়িতে দাওয়াত খাই। দেশটা কি তোমাগো কথায় চলবে? এর আগে নির্বাচনে আমার বিরুদ্ধে লেখছো আমি কিছু বলিনি। এবার যদি আমারে পেঁচাও তাহলে আমি তোমার বিরুদ্ধে মামলা করুম। আমারে চেনো না, আমি খুব খারাপ লোক। আমি তোমারে দেইখা নিমু।

এ সময় যুগান্তর প্রতিনিধির সঙ্গে আরও এমন সব গালিগালাজ করেন যা প্রকাশ করাও অযোগ্য।

এদিকে গলাচিপা থানার ওসি মো. আক্তার মোর্শেদ ঘটনার পরে বলেছিলেন, নুর তার খালার বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিল, অপরদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের একটি দল ঈদের দাওয়াত খেতে স্থানীয় এমপির বাড়ি যাচ্ছিল পথে মোটরসাইকেলের বিশাল বহর দেখে ভয় পেয়ে স্থানীয় একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয় নূর ও তার সঙ্গীরা। তাড়াহুড়োতে মোটরসাইকেল পড়ে থেকে পড়ে গিয়ে নূরের কয়েকজন সঙ্গী আহত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য এসএম শাহাজাদা সাজু বলেন, যে কেউ অভিযোগ করতেই পারে। নুর আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়। আর তাকে আমি সেটা ভাবিও না। সে যে কাজটা করে থাকে সেটা হলো-প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে মাঝে মাঝে মন্তব্য করে, যেটা ঠিক নয়। তাছাড়া মারধর কালচার নিয়ে আমি রাজনীতি করিনা এবং পছন্দও করি না। নুর হয়তো আজ আমার কথা বলছে আগামীতে হয়তো প্রধানমন্ত্রীর কথা বলবে। তবে এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোন সম্পৃক্ততা নাই।

এদিকে সাংবাদিকের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের বিষয়ে স্থানীয় এসএম শাহাজাদা সাজু এমপি বলেন, উপজেলায় চেয়ারম্যান কর্তৃক সাংবাদিকদের প্রতি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের জন্য আমি খুবই দুঃখিত। এ কাজটা তিনি ঠিক করেননি।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৫:৫৩:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অগাস্ট ২০১৯
৪৫৪ Time View

ভিপি নূরের উপর হামলা: আমারে চেনো না, আমি খুব খারাপ লোক-উপজেলা চেয়ারম্যান

আপডেট সময় : ০৫:৫৩:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অগাস্ট ২০১৯

পটুয়াখালীঃ

পটুয়াখালীর স্থানীয় এমপির নির্দেশেই উপজেলা চেয়ারম্যান ও যুবলীগ-ছাত্রলীগসহ বহিরাগতরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলা চালিয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকালে ভিপি নুরের সঙ্গে কথা হলে তিনি এ দাবি করেন।

তিনি জানান, বুধবার সকালে তার নিজ গ্রামের বাড়ি গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস থেকে তার বোনের বাড়ি দশমিনা উপজেলায় রওনা হন।

এর আগে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নুর ও তার বন্ধুদের দশমিনায় যেতে নিষেধ করা হয়। এমনকি বলা হয়-স্থানীয় এমপি এসএম শাহাজাদা সাজু তার নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন নুরকে মারতে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে না বলে জানিয়ে নুরকে আসতে নিষেধ করে অনুরোধ করে স্থানীয় প্রশাসন। নুর বাধা না শুনে উলানিয়া বাজার হয়ে দশমিনা যাওয়ার পথে প্রথমে একদল বহিরাগত কৌশল নিয়ে তাদের গতিরোধ করে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে।

কিছুক্ষণ পর গলাচিপা উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন শাহের নেতৃত্বে তার ভাই নুরে আলম, পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাইনুল ইসলাম রনো, লিটু প্যাদা, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক কচিন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ আসিফ, শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রলীগ নেতা রাহাত, তূর্য্যসহ অন্তত শতাধিক বহিরাগতরা রড, চেইন, হকিষ্টিক, রামদা নিয়ে হামলায় অংশ নেয়।

এ সময় আহত হয় নুরের সঙ্গে থাকা রবিউল, জাহিদ, ইব্রাহিম, রিয়াজ, রিয়ন, নজরুলসহ প্রায় ৩০-৪০ জন। আহতদের মধ্যে নুরসহ ৪ জনের অবস্থা গুরুতর হয়। ভাংচুর করা হয় অন্তত ১০টি মোটরসাইকেল। ছিনিয়ে নেয়া হয় ৯টি মোবাইল ফোনসহ নগদ অর্থ।

পরে অচেতন অবস্থায় নুরসহ গুরুতর আহতদের গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিস্থিতি ঘোলাটে দেখে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে নিজ বাড়িতে চলে যান নুর ও বাকি আহতরা।

হামলার কারণ যানতে চাইলে নুর জানান, এলাকায় আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে বন্ধুবান্ধব এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাকে দেখতে বাড়িতে আসেন। এতে ঈর্ষান্বিত হয়ে স্থানীয় এমপি এসএম শাহাজাদা সাজু এবং উপজেলা চেয়ারম্যান আমার ওপর হামলা করে।

ডাকসু ভিপি জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং এমপিসহ অন্যান্য নেতারা এলাকায় এসে মিষ্টি বিতরণ করেও লোক জড়ো করতে পারে না। অথচ আমি আসলে শত শত মানুষ আসে। নুর আর১ও জানান, বুধবার তিনি বাড়ি থেকে মাত্র ১০টি মোটরসাইকেল নিয়ে রওনা হন। পরে তার সঙ্গে যোগ হয় অন্তত ৮০ থেকে ৮৫টি মোটরসাইকেল। এলাকার এই লোকগুলো নুরকে খুব ভালবাসে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ভবিষ্যতে এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের রাজনীতি এবং জনপ্রিয়তায় প্রভাব পড়বে এমন আশংকায় নুরের ওপর হামলা চালানো হয়।

এদিকে হামলায় ঘটনায় অভিযুক্ত উপজেলা আওয়ামীর সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন শাহের বক্তব্য নিয়ে গেলে বুধবার তিনি প্রথমে বলেন, আমি লোকমাধ্যমে শুনেছি, নুর একটি দায়ের দোকানে চা খাওয়ার সময় ১৫ আগস্ট উপলক্ষে এলাকায় লাগানো বঙ্গবন্ধুর পোস্টার নিয়ে উল্টাপাল্টা মন্তব্য করেন। এ সময় স্থানীয়রা তাকে ব্যাপক মারধর করে। পরে নুর ও তার সঙ্গীরা পালিয়ে একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয়।

আপনার নেতৃত্বে হামলা হয়েছে এমন প্রশ্নে উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন শাহ চরম উত্তেজিত হয়ে বলেন, তোমাকে এ তথ্য কে দিয়েছে? আমি (…) এখন এমপির বাড়িতে দাওয়াত খাই। দেশটা কি তোমাগো কথায় চলবে? এর আগে নির্বাচনে আমার বিরুদ্ধে লেখছো আমি কিছু বলিনি। এবার যদি আমারে পেঁচাও তাহলে আমি তোমার বিরুদ্ধে মামলা করুম। আমারে চেনো না, আমি খুব খারাপ লোক। আমি তোমারে দেইখা নিমু।

এ সময় যুগান্তর প্রতিনিধির সঙ্গে আরও এমন সব গালিগালাজ করেন যা প্রকাশ করাও অযোগ্য।

এদিকে গলাচিপা থানার ওসি মো. আক্তার মোর্শেদ ঘটনার পরে বলেছিলেন, নুর তার খালার বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিল, অপরদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের একটি দল ঈদের দাওয়াত খেতে স্থানীয় এমপির বাড়ি যাচ্ছিল পথে মোটরসাইকেলের বিশাল বহর দেখে ভয় পেয়ে স্থানীয় একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয় নূর ও তার সঙ্গীরা। তাড়াহুড়োতে মোটরসাইকেল পড়ে থেকে পড়ে গিয়ে নূরের কয়েকজন সঙ্গী আহত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য এসএম শাহাজাদা সাজু বলেন, যে কেউ অভিযোগ করতেই পারে। নুর আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়। আর তাকে আমি সেটা ভাবিও না। সে যে কাজটা করে থাকে সেটা হলো-প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে মাঝে মাঝে মন্তব্য করে, যেটা ঠিক নয়। তাছাড়া মারধর কালচার নিয়ে আমি রাজনীতি করিনা এবং পছন্দও করি না। নুর হয়তো আজ আমার কথা বলছে আগামীতে হয়তো প্রধানমন্ত্রীর কথা বলবে। তবে এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোন সম্পৃক্ততা নাই।

এদিকে সাংবাদিকের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের বিষয়ে স্থানীয় এসএম শাহাজাদা সাজু এমপি বলেন, উপজেলায় চেয়ারম্যান কর্তৃক সাংবাদিকদের প্রতি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের জন্য আমি খুবই দুঃখিত। এ কাজটা তিনি ঠিক করেননি।