ঢাকা ০৩:৪১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আগে সাংবাদিকদের যেভাবে হুমকি দেওয়া হতো

Reporter Name

আসিফ কাজলঃ

এতো সুযোগ সুবিধা থাকার পরও এখন আর নিজেকে সাংবাদিকতার স্বর্ণ যুগের একজন হিসেবে মনে করি না। অবাধ তথ্য প্রবাহের সুযোগ নিয়ে এখন সবচে বেশি অপসাংবাদিকতা হচ্ছে। মফস্বল তো বটেই জাতীয় পর্যায়েও একই দশা।

অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌছিয়ে গিয়েছে যে, কাজকাম নেই চলো সাংবাদিকতায় নেমে পড়ি। চরমপন্থিদের সেই বিভিষিকাময় চরম মুহুর্তের কথা মনে উঠতেই স্মরণে আসে আমাদের টিম ওয়ার্কের কথা। সাংবাদিকরা সিরাজ, লাল্টু, শাহিন, মুকুল, দেবু, তিতাস ও দাদা তপনসহ বাঘা বাঘা বাম নেতাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সংবাদ পরিবেশন করেছেন। একদিকে মৃত্যু পরোয়ানা অন্যদিকে পেশাদারিত্বের দন্ড হাতে নিয়েও ফুরফুরে মেজাজে থাকতেন। তখন বেশির ভাগ পত্রিকায় ঝিনাইদহের নিউজ লিড হতো। গাঁ হিম করা অভিযানে অংশ নিতে সাংবাদিকদের মধ্যে ভালবাসা, মায়া মমতা আর আন্তরিকতার কোন ঘাটতি ছিল না। রাত যত গভীর হতো সাংবাদিকদের মধ্যে ভালবাসার সেতু বন্ধন বাড়তো। খবরের বস্তুনিষ্ঠতা ও পেশার উপর দায়িত্বশীলতার কাছে পরাস্ত হতো যতসব হিংসা ও ব্যক্তি আক্রোশ। সেই জামানায় ডটকম মার্কা সাংবাদিকদের জন্ম হলে নির্ঘাত শ্রেনী শত্রু খতমের তালিকায় পড়ে জীবনটাই বরবাদ হয়ে যেতো।

শৈলকুপায় বিমল সাহা, আব্দুর রহমান মিল্টন ও সোহাগ কুমার বিশ্বাসসহ ৫ সাংবাদিকদে হত্যা করার চরমপত্র দেয় জনযুদ্ধ। আমাকেও মৃত্যুদন্ড ঘোষনা করে। তারপরও আমরা পালিয়ে থাকিনি। দমে যায়নি। বরং বিচক্ষনতা আর কৌশলী হয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছি। আমাদের মনোবল অটুট ছিল। মৃত্যুর পেয়লায় চুম্বন করতে সদা প্রস্তুত ছিলাম আমরা। মফস্বল এলাকায় করোনাকাল ও পুলিশের বিশেষ অভিযানে সবচে বেশি বেড়েছে “সাংবাদিক” হওয়ার প্রবনতা। মটরসাইকেলের সামনে পত্রিকা, অনলাইন টিভি ও নিউজ পোর্টালের সাইনবোর্ড লাগিয়ে মাঠঘাট চষে বেড়াচ্ছে ওরা।

এদের মধ্যে শিক্ষিত যুবকরাও আছে। তাদের প্রশিক্ষন দিয়ে আমরা জায়গা করে দিতে পারি। তবে বেশির ভাগের মধ্যে না আছে পড়ালেখা, শিক্ষাগত যোগ্যতা বা পারিবারিক শিক্ষা। তাদের ভালো পত্রিকা নেই। ফেসবুকে দু’কলম লিখে দিচ্ছে। ব্যাস বড় সাংবাদিক! কিছু মেধাবী মুখ এই শ্রোতে মিশে সঙ্গদোষে খারাপ হচ্ছে। তারাও ভাল কিছু শিখতে চায় না। কাট-কপি-পেস্টের আছর তাদের উপর ভর করেছে। সিনিয়রদের উচিৎ দলাদলি, চেয়ার দখল আর ভোটের হিসাব না করে তাদের যোগ্য করে গড়ে তোলা।

তা না হলে আগামীতে যে অন্ধকারাচ্ছন্ন মুহুর্ত আসছে, সেখানে আশার প্রদ্বিপ জ্বালানোর কেউ থাকবে না। দলিত মথিত হবে এই মহান পেশা। আমাদের অপমানজনক বিদায় অত্যাসন্ন। আপনি আজ নেতৃত্বের যে চেয়ারে বসে আছেন সেই চেয়ারের সম্মান রক্ষায় অন্তত কিছু একটা করে গেলে সেটাই হবে আমাদের স্মরনীয় হয়ে থাকার সুযোগ।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, ঝিনাইদহ।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৬:৫১:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২১
৩৬৬ Time View

আগে সাংবাদিকদের যেভাবে হুমকি দেওয়া হতো

আপডেট সময় : ০৬:৫১:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২১

আসিফ কাজলঃ

এতো সুযোগ সুবিধা থাকার পরও এখন আর নিজেকে সাংবাদিকতার স্বর্ণ যুগের একজন হিসেবে মনে করি না। অবাধ তথ্য প্রবাহের সুযোগ নিয়ে এখন সবচে বেশি অপসাংবাদিকতা হচ্ছে। মফস্বল তো বটেই জাতীয় পর্যায়েও একই দশা।

অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌছিয়ে গিয়েছে যে, কাজকাম নেই চলো সাংবাদিকতায় নেমে পড়ি। চরমপন্থিদের সেই বিভিষিকাময় চরম মুহুর্তের কথা মনে উঠতেই স্মরণে আসে আমাদের টিম ওয়ার্কের কথা। সাংবাদিকরা সিরাজ, লাল্টু, শাহিন, মুকুল, দেবু, তিতাস ও দাদা তপনসহ বাঘা বাঘা বাম নেতাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সংবাদ পরিবেশন করেছেন। একদিকে মৃত্যু পরোয়ানা অন্যদিকে পেশাদারিত্বের দন্ড হাতে নিয়েও ফুরফুরে মেজাজে থাকতেন। তখন বেশির ভাগ পত্রিকায় ঝিনাইদহের নিউজ লিড হতো। গাঁ হিম করা অভিযানে অংশ নিতে সাংবাদিকদের মধ্যে ভালবাসা, মায়া মমতা আর আন্তরিকতার কোন ঘাটতি ছিল না। রাত যত গভীর হতো সাংবাদিকদের মধ্যে ভালবাসার সেতু বন্ধন বাড়তো। খবরের বস্তুনিষ্ঠতা ও পেশার উপর দায়িত্বশীলতার কাছে পরাস্ত হতো যতসব হিংসা ও ব্যক্তি আক্রোশ। সেই জামানায় ডটকম মার্কা সাংবাদিকদের জন্ম হলে নির্ঘাত শ্রেনী শত্রু খতমের তালিকায় পড়ে জীবনটাই বরবাদ হয়ে যেতো।

শৈলকুপায় বিমল সাহা, আব্দুর রহমান মিল্টন ও সোহাগ কুমার বিশ্বাসসহ ৫ সাংবাদিকদে হত্যা করার চরমপত্র দেয় জনযুদ্ধ। আমাকেও মৃত্যুদন্ড ঘোষনা করে। তারপরও আমরা পালিয়ে থাকিনি। দমে যায়নি। বরং বিচক্ষনতা আর কৌশলী হয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছি। আমাদের মনোবল অটুট ছিল। মৃত্যুর পেয়লায় চুম্বন করতে সদা প্রস্তুত ছিলাম আমরা। মফস্বল এলাকায় করোনাকাল ও পুলিশের বিশেষ অভিযানে সবচে বেশি বেড়েছে “সাংবাদিক” হওয়ার প্রবনতা। মটরসাইকেলের সামনে পত্রিকা, অনলাইন টিভি ও নিউজ পোর্টালের সাইনবোর্ড লাগিয়ে মাঠঘাট চষে বেড়াচ্ছে ওরা।

এদের মধ্যে শিক্ষিত যুবকরাও আছে। তাদের প্রশিক্ষন দিয়ে আমরা জায়গা করে দিতে পারি। তবে বেশির ভাগের মধ্যে না আছে পড়ালেখা, শিক্ষাগত যোগ্যতা বা পারিবারিক শিক্ষা। তাদের ভালো পত্রিকা নেই। ফেসবুকে দু’কলম লিখে দিচ্ছে। ব্যাস বড় সাংবাদিক! কিছু মেধাবী মুখ এই শ্রোতে মিশে সঙ্গদোষে খারাপ হচ্ছে। তারাও ভাল কিছু শিখতে চায় না। কাট-কপি-পেস্টের আছর তাদের উপর ভর করেছে। সিনিয়রদের উচিৎ দলাদলি, চেয়ার দখল আর ভোটের হিসাব না করে তাদের যোগ্য করে গড়ে তোলা।

তা না হলে আগামীতে যে অন্ধকারাচ্ছন্ন মুহুর্ত আসছে, সেখানে আশার প্রদ্বিপ জ্বালানোর কেউ থাকবে না। দলিত মথিত হবে এই মহান পেশা। আমাদের অপমানজনক বিদায় অত্যাসন্ন। আপনি আজ নেতৃত্বের যে চেয়ারে বসে আছেন সেই চেয়ারের সম্মান রক্ষায় অন্তত কিছু একটা করে গেলে সেটাই হবে আমাদের স্মরনীয় হয়ে থাকার সুযোগ।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, ঝিনাইদহ।