ঢাকা ০৫:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমরা কিন্তু স্বাস্থ্য সচিবের জেলার লোক!

Reporter Name

আসিফ কাজলঃ

স্বজনপ্রীতি যুগে যুগে আছে, থাকবে। এটি যেমন পরিবারের মধ্যে আছে, তেমনি আছে সমাজ, রাষ্ট্র ও ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানে। যে কেও সুযোগ পেলেই নিজের জেলার মানুষের জন্য বা ব্যক্তি-পরিবারের জন্য স্বজনপ্রীতি করেন। কেও এলাকার মানুষকে চাকরী দিয়ে আবার কেও নিজ এলাকার রাস্তা, ঘাট, ব্রীজ, বড় সেতু ও বড় বড় সরকারী প্রতিষ্ঠান বানিয়ে আজো স্মরণীয় হয়ে আছেন। এই স্বজনপ্রীতির নজীর কিন্তু কোন দোষের না।

ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে ক্ষমতার শীর্ষ পদে থেকে দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও এমপিগন নিজ নিজ এলাকার মানুষকে চাকরী দিয়েছেন। করেছেন প্রভুত উন্নয়ন। এ দেখে অন্য জেলার মানুষের চক্ষুশুল হলেও নিজ জেলার মানুষের কাছে বীরত্বের মতোই। আমাদের ঝিনাইদহের অনেক মেধাবী সন্তান আজ দেশ পরিচালানায় যুক্ত।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, বিচার বিভাগ, সচিবালয়, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও শিক্ষাসহ এমন কোন বিভাগ নেই যেখানে ঝিনাইদহের মেধাবীরা কৃতিত্বের সাক্ষর রাখেন নি। এই সব মেধাবীদের দিকে চেয়ে আছেন ঝিনাইদহের প্রায় ১৯ লাখ মানুষ। তারা মানুষের জন্য কিছু একটা করবেন। আমরাও জানি তারা করেন এবং করবেনও। কিন্তু সহনীয়মাত্রা থাকতে থাকতে যদি করেন তবে কিন্তু মানুষ যুগ যুগ ধরে মনে রাখেন। এই ধরুন খাবার স্যালাইন কারখানা এবং একমাত্র সরকারী শিশু হাসপাতালটি চালু করা যায় নি। সব ধরণের সুযোগ সুবিধা ও পরিবেশ থাকার পরও ঝিনাইদহে মেডিকেল কলেজটি মাগুরা চলে গেছে। নানা সমস্যায় রয়েছে ম্যাটস ও আই.এইচ.টি তে।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালটি ১০০ বেডের পরিবর্তে আড়াই’শ বেডে উন্নিত করা হলেও দ্রুত নিয়োগ আর ভবন হস্তান্তর হচ্ছে না। ৪০ জন ডাক্তারের মধ্যে আছে ২২ জন। পর্যপ্ত নার্স নেই, পিয়ন নেই। রোগীর অসহ্য চাপে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে মানবিক বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। এক’শ বেডের হাসপাতালে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকছেন প্রতিদিন ৪২০ জন রোগী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের না পারছে কোন বেড দিতে, না পারছে খাবার দিতে। বর্হিবিভাগে রোগীর অসহ্য চাপ। বর্হিবিভাগে প্রতিদিন গড়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১২’শ রোগী। হাসপাতালের সাধারণ বেড ও কেবিন ছাড়াও মেঝে, বারান্দা ও সিড়িঘরে বিছানা পেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। রোগী আর স্বজনদের আনাগোনায় তিল ধরানোর ঠাঁই নেই হাসপাতালের কোথাও। হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার পর এ ধরণের রোগীর চাপ দেখা যায়নি। এই সমস্যা সমাধানে আর কোন আশ্বাস বানী বা মিষ্টি কথা অন্তত রক্ত মাংশের শরীরে বিধবে না।

মাননীয় স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলাম মহোদয়, আপনি তো আমাদের জেলার মানুষ। আপনার দিকে চেয়ে আছে অসহায় অগনিত মুখ। সর্বোচ্চ পদে থেকেও কি নিজ জেলার জন্য একটু স্বজনপ্রীতিও করতে পারেন না ?

লেখক, সিনিয়র সাংবাদিক, ঝিনাইদহ।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৯:১২:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯
৩৩১ Time View

আমরা কিন্তু স্বাস্থ্য সচিবের জেলার লোক!

আপডেট সময় : ০৯:১২:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

আসিফ কাজলঃ

স্বজনপ্রীতি যুগে যুগে আছে, থাকবে। এটি যেমন পরিবারের মধ্যে আছে, তেমনি আছে সমাজ, রাষ্ট্র ও ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানে। যে কেও সুযোগ পেলেই নিজের জেলার মানুষের জন্য বা ব্যক্তি-পরিবারের জন্য স্বজনপ্রীতি করেন। কেও এলাকার মানুষকে চাকরী দিয়ে আবার কেও নিজ এলাকার রাস্তা, ঘাট, ব্রীজ, বড় সেতু ও বড় বড় সরকারী প্রতিষ্ঠান বানিয়ে আজো স্মরণীয় হয়ে আছেন। এই স্বজনপ্রীতির নজীর কিন্তু কোন দোষের না।

ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে ক্ষমতার শীর্ষ পদে থেকে দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও এমপিগন নিজ নিজ এলাকার মানুষকে চাকরী দিয়েছেন। করেছেন প্রভুত উন্নয়ন। এ দেখে অন্য জেলার মানুষের চক্ষুশুল হলেও নিজ জেলার মানুষের কাছে বীরত্বের মতোই। আমাদের ঝিনাইদহের অনেক মেধাবী সন্তান আজ দেশ পরিচালানায় যুক্ত।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, বিচার বিভাগ, সচিবালয়, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও শিক্ষাসহ এমন কোন বিভাগ নেই যেখানে ঝিনাইদহের মেধাবীরা কৃতিত্বের সাক্ষর রাখেন নি। এই সব মেধাবীদের দিকে চেয়ে আছেন ঝিনাইদহের প্রায় ১৯ লাখ মানুষ। তারা মানুষের জন্য কিছু একটা করবেন। আমরাও জানি তারা করেন এবং করবেনও। কিন্তু সহনীয়মাত্রা থাকতে থাকতে যদি করেন তবে কিন্তু মানুষ যুগ যুগ ধরে মনে রাখেন। এই ধরুন খাবার স্যালাইন কারখানা এবং একমাত্র সরকারী শিশু হাসপাতালটি চালু করা যায় নি। সব ধরণের সুযোগ সুবিধা ও পরিবেশ থাকার পরও ঝিনাইদহে মেডিকেল কলেজটি মাগুরা চলে গেছে। নানা সমস্যায় রয়েছে ম্যাটস ও আই.এইচ.টি তে।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালটি ১০০ বেডের পরিবর্তে আড়াই’শ বেডে উন্নিত করা হলেও দ্রুত নিয়োগ আর ভবন হস্তান্তর হচ্ছে না। ৪০ জন ডাক্তারের মধ্যে আছে ২২ জন। পর্যপ্ত নার্স নেই, পিয়ন নেই। রোগীর অসহ্য চাপে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে মানবিক বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। এক’শ বেডের হাসপাতালে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকছেন প্রতিদিন ৪২০ জন রোগী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের না পারছে কোন বেড দিতে, না পারছে খাবার দিতে। বর্হিবিভাগে রোগীর অসহ্য চাপ। বর্হিবিভাগে প্রতিদিন গড়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১২’শ রোগী। হাসপাতালের সাধারণ বেড ও কেবিন ছাড়াও মেঝে, বারান্দা ও সিড়িঘরে বিছানা পেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। রোগী আর স্বজনদের আনাগোনায় তিল ধরানোর ঠাঁই নেই হাসপাতালের কোথাও। হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার পর এ ধরণের রোগীর চাপ দেখা যায়নি। এই সমস্যা সমাধানে আর কোন আশ্বাস বানী বা মিষ্টি কথা অন্তত রক্ত মাংশের শরীরে বিধবে না।

মাননীয় স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলাম মহোদয়, আপনি তো আমাদের জেলার মানুষ। আপনার দিকে চেয়ে আছে অসহায় অগনিত মুখ। সর্বোচ্চ পদে থেকেও কি নিজ জেলার জন্য একটু স্বজনপ্রীতিও করতে পারেন না ?

লেখক, সিনিয়র সাংবাদিক, ঝিনাইদহ।