সবুজদেশ ডেস্ক:

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বাংলাদেশের ৪০টি জেলা উচ্চ সংক্রমণ ঝুঁকিতে রয়েছে। অন্যদিকে কোভিড–১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি বলেছে, ৫০টির বেশি জেলায় অতি উচ্চ সংক্রমণ লক্ষ করা গেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা হচ্ছে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগ। ঝুঁকি প্রধান জেলার মধ্যে রয়েছে ঢাকাও। গত ক’দিনের মৃত্যু ও শনাক্তের হার সেটিই ইঙ্গিত করছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বৈশ্বিকভাবে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু নিয়মিতভাবে কমলেও বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে সংক্রমণ এবং মৃত্যু দুই–ই বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাসের চারটির মধ্যে তিনটি ধরনই (ভ্যারিয়েন্ট) বাংলাদেশে সক্রিয়। এই তিন ধরনের উৎপত্তি যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনার রূপান্তরিত চারটি ধরনকে উদ্বেগের কারণ বলে বর্ণনা করেছে। এগুলো হচ্ছে- আলফা (উৎপত্তি যুক্তরাজ্যে), বিটা (দক্ষিণ আফ্রিকা), গামা (ব্রাজিল) ও ডেল্টা (ভারত)। এর মধ্যে আলফা, বিটা ও ডেলটা ধরন বাংলাদেশে ছড়াচ্ছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের রোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে উল্লেখ করেছে। তিনটি ধরনেরই সংক্রমণ করার ক্ষমতা বেশি।

করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দ্বিতীয় দফায় রূপ পরিবর্তন করেছে। ইউরোপে প্রথমবার শনাক্ত হওয়া এই ভ্যারিয়েন্টকে ‘ডেল্টা প্লাস’ হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

করোনাভাইরাসের এই ধরনটি একজন থেকে ১৩ জনে ছড়াতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পেয়েছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা।

এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. আহমেদ পারভেজ জাবীন বলেন, করোনাভাইরাসের এই ধরনটি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি পৃথিবীর ৯টি দেশে এ ধরনটির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এটি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়েও অধিক সংক্রমণশীল বলে প্রমাণিত হয়েছে। তাই আমাদের জন্য এটি এক ধরনের সতর্কবার্তা। কারণ ভারত ভ্রমণকারী অথবা পৃথিবীর যে দেশগুলোতে ছড়িয়েছে সেসব দেশে ভ্রমণকারীর মাধ্যমে ভাইরাসটি যে কোনো সময় দেশে পৌঁছাতে পারে। যেহেতু এর সংক্রমণশীলতা অনেক বেশি যা একজন থেকে ১৩ জনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, এমনকি প্রচলিত টিকাগুলো অ্যান্টিবডি প্রক্রিয়া ভেঙে বড় ধরনের ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে তাই এই ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের কঠোর অবস্থান নেওয়া দরকার।

ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, তথাকথিত ‘ডেল্টা প্লাস’ ভ্যারিয়েন্ট আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর চেয়ে সহজে ছড়ায়, ফুসফুসের কোষের সঙ্গে অপেক্ষাকৃত সহজে যুক্ত হয় এবং করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ব্যবহৃত টিকার (যে মূলনীতি অনুসারে তৈরি করা হয়-‘মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি থেরাপি’) বিরুদ্ধে কার্যকর। নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি ‘ডেল্টা’ ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে সম্পর্কিত।

ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ভারতে প্রথমবার ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায় এ বছরের এপ্রিল মাসে। তিনটি অঙ্গরাজ্যের ৬টি জেলায় এই ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ভারত ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীনসহ ৯ দেশে এই ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এরই মধ্যে বিশ্বের ৮০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাস সাধারণত সব সময়ই পরিবর্তিত হতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে এটি পরিবর্তিত হয়ে দুর্বল হয়ে যায়। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিবর্তিত ভাইরাস পুরোনো ভাইরাসের চেয়ে শক্তিশালী ও বেশি সংক্রামক হয়ে দেখা দেয়। পরিবর্তিত রূপটি অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় মারাত্মক অসুস্থতা তৈরি করে।

ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্টটিতে ‘কে৪১৭এন’ নামে একটি অতিরিক্ত মিউটেশন রয়েছে, যেটি দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে শনাক্ত হওয়া বেটা ও গামা ভ্যারিয়েন্টেও পাওয়া গেছে। নতুন এই ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্টকে এখনই ‘উদ্বেগের’ কারণ হিসাবে চিহ্নিত করার ব্যাপারে দ্বিমত রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, দুর্বল ইমিউনিটির মানুষ বা মহামারি শুরুর দিকে আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিদের আবারও আক্রান্ত করার ক্ষেত্রে ডেল্টা প্লাস হয়তো ডেল্টার চেয়ে কিছুটা বেশি কার্যকর হবে। অনেক বিশেষজ্ঞই ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্টকে হালকাভাবে নেওয়ার পক্ষপাতী নন।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here