নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ছোট ভাটপাড়া গ্রামে ধর্ষণের ঘটনায় বিচার করতে গিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির ভাবি, বোন ও মেয়েকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান ওদু। এ ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

ওহিদুজ্জামান ওদু উপজেলার ১নং সুন্দরপুর-দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। গত শনিবার তিনি ছোট ভাটপাড়া গ্রামে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় বিচার করতে যান।

সোমবার বিচারে চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান ওদুর বক্তব্যের ১ মিনিট ৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।

বিচারে আরও উপস্থিত ছিলেন- কালীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মন্টু, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নিখিল দত্তসহ অন্যরা। 

ভিডিওতে চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান ওদুকে বলতে শোনা যায়- এ ধর্ষণের ব্যাপারে যদি নায়েব আলীরা এখানে না আসে, নায়েব আলীর মা বাদে- নায়েব আলীর বউ, নায়েব আলীর ভাবি, নায়েব আলীর বোন, নায়েব আলীর মেয়ে এদেরকেও কিন্তু ধরে যাদের ধর্ষণ হয়েছে তাদের কাছে ছেড়ে দিব। তারা যদি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা না রাখে।

তিনি আরও বলেন, যারা এই বিচার করতি সবুর আলী, তার ছেলে ঠান্ডু কে সে? কোথায়? কেন সালিশে হাজির হয়নি? ওদের মা-বোন নেই? আমাদের ছেলেদের কি (প্রকাশের অযোগ্য) নেই? এই নায়েব আলীদের কাছ থেকে কত টাকা খেয়েছে? কত টাকা খেয়েছে? বারবার বলার পরও কেন ওরা হাজির হলো না। সবুর আলী কোন পথ দিয়ে যাবে? 

গত ৮ সেপ্টেম্বর ধর্ষণ করার দায়ে সঠিক বিচার চেয়ে সুন্দরপুর-দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান ওদুর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন এক নারী। অভিযুক্ত নায়েব আলী ছোট ভাটপাড়া গ্রামের ঝড়ু শেখের ছেলে। 

লিখিত অভিযোগে ওই নারী উল্লেখ করেন, তার স্বামী নায়েব আলীর বাড়িতে দীর্ঘদিন যাবত কৃষিকাজ করে আসছিলেন। তারই সুবাদে নায়েব আলী গত ৬-৭ মাস পূর্ব থেকে তাকে পাওয়ার আশায় প্রলোভন দেখিয়ে আসছিলেন। তিনি নায়েব আলীকে অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন যে, তার স্বামী-সংসার আছে। তারপরও নায়েব আলী তাকে বলেন- তোর কোনো চিন্তা নাই, প্রয়োজন হলে বিয়ে করব। তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তার স্বামী গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে গ্রামের ডিউটিতে থাকায় রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঘরে প্রবেশ করে এবং তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে নায়েব আলী।

এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান ওদু বলেন, গত শনিবার বিকাল ৫টায় তিনি ওই গ্রামে ধর্ষণের ঘটনায় সালিশ করেন। ধর্ষণের শিকার নারী অভিযোগ দেওয়ায় তিনি সালিশ করতে গিয়েছিলেন। বর্তমানে নারী ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে আছেন।

ভিডিওর ব্যাপারে তিনি বলেন, তিনি আসলে ওইভাবে কথাগুলো বলেননি। তার বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে। 

ঝিনাইদহ আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ মিন্টু বলেন, একজন চেয়ারম্যানের ধর্ষণের সালিশ বা বিচার কোনো কিছুই করার এখতিয়ার নেই।  

কালীগঞ্জ থানার ওসি আব্দুর রহিম মোল্ল্যা জানান, ধর্ষণের ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ আসেনি।

গত ইউপি নির্বাচনে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ১নং সুন্দরপুর-দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিনাপ্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ওহিদুজ্জামান ওদু।

ভিডিও দেখুন…

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here