বিশেষ প্রতিনিধিঃ

চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমের চৈত্র শেষ হয়ে বৈশাখ উকি দিচ্ছে। চৈত্রের তাপদাহের সাথে পাল্লা দিয়ে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। এতে অকেজো হয়ে পড়েছে বাসাবাড়িসহ মাঠের অসংখ্য গভীর ও অগভীর নলকুপ। অবস্থাটা এমন চারিদিকে খাওয়ার ও গৃহস্থালীর কাজে ব্যবহৃত পানির সঙ্কটে জনদূর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। দুই একটি নলকূপে কিছুটা পানি মিললেও সেখানে থাকছে সব বয়সী মানুষের পানি সংগ্রহের ভীড়। শুধু শহর নয় গ্রামাঞ্চালের মানুষও পানির জন্য পড়েছেন মহা ভোগান্তিতে।

ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, লকডাউনের সময়ে করোনার মহামারী থেকে বাঁচতে সকলেই চাচ্ছেন নিজ ঘরে অবস্থান করতে। কিন্ত নিজ বাসা বাড়ির নলকূপগুলোতে ঠিকমত পানি না থাকায় তারা পড়েছেন বেশ ঝামেলায়। সরকারী ও স্বাস্থ্যবিভাগের নির্দেশনা এখন বেশি করে হাত ধুয়ে পরিচ্ছন্ন পরিপাটি থাকার। পরিষ্কার রাখতে হবে পরিধান ও বিছানাপত্রের কাপড়চোপড় কিন্ত পানির অভাবে চরম বিপাকে তারা। এখনও যে সকল বাসাবাড়ির নলকূপে পানি উঠছে সেখান থেকে নিয়মিত পানির চাহিদা মেটানোও সকলের জন্যই ঝামেলা। মোট কথা একটি পরিবারের জন্য যে পানি প্রয়োজন হয় তার পরিমানটাও একেবারে কম নয়।

কালীগঞ্জ পৌর শহরের ফয়লা গ্রামের (মাষ্টারপাড়ার) বাসিন্দা রাজু আহম্মেদ জানান, তাদের মহল্লার বাসাবাড়ির বেশিরভাগ নলকুপগুলোতে পানি উঠছে না। মটরের মাধ্যমেও ঠিকমত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে তাদের এলাকাতে পৌরসভার সাপ্লাই পানিরও ব্যবস্থা নেই। বাধ্য হয়ে মহল্লার অধিকাংশ পরিবার বাড়ি থেকে বেশ খানিক দুরের প্রতিবেশি শিক্ষক আবু তাহের টিটোর একটি সাব মার্সেপল মটর থেকে পানি খাবার পানির চাহিদা মেটাচ্ছেন। তিনি মহল্লাবাসীর পানির দুরাবস্থা দেখে স্বপ্রণোদিত হয়ে সকাল ও বিকেল পানির ব্যবস্থা করছেন। নির্দিষ্ট সময়নুযায়ী এলাকার যুবকেরা এতে সাহায্য করছেন।

আড়পাড়া গ্রামের গৃহিণী শাহানারা বেগম জানান, মহল্লার দু-একটি পরিবারের নলকূপে পানি কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও চলমান লকডাউন পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী হলেও তাদের বাসা বাড়িতে যাওয়াটাও উভয়রই কাছে অনিরাপদ মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, পানির অভাবে গোসল ও গৃহস্থালীর কাজের জন্য প্রতিনিয়ত ঝামেলা পোহাচ্ছেন। যতদিন ভারী বর্ষা না হবে ততদিন এমন অবস্থা বিরাজ করবে বলে তারা মনে করছেন।

ফয়লা গোহাটা মসজিদ এলাকার বাসিন্দা সাকাওয়াত আলী জানান,বাসার নলকূপে পানি উঠছে না। বাসা থেকে বেশ দুরের বাড়িতে স্থাপনকৃত একটি সাব মার্সেবল মটর থেকে সকাল বিকেল পানি টেনে বাসায় নিচ্ছেন। ওই গৃহকর্তার উদারতায় তিনিসহ মহল্লাবাসী বেশ উপকৃত হচ্ছেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী জেসমিন আরা জানান, গ্রীষ্মের সময় এ অঞ্চলের পানির স্তর প্রতিবছর ২০ থেকে ২২ ফুট নীচে নেমে যায়। এ অবস্থা হলেও পানি পাওয়া সম্ভব। কিন্ত এ বছর একটু আগে থেকেই পানির স্তর ৩০-৩৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। যে কারনে অনেক অগভীর নলকুপ অকোজো হয়ে পড়েছে। আবার গভীর নলকূপগুলোতেও এখন অপেক্ষাকৃত কম পানি উঠছে।

তিনি আরও জানান, সম্প্রতি উপজেলার একটি গ্রামে পানির স্তর মেপে দেখা গেছে ৩৬ ফুট নিচে নেমেছে পানির স্তর। যে কারনে এ এলাকার অনেক নলকূপ অকেজো হয়ে গেছে। ফলে সঙ্কট দেখা দিয়েছে খাবার পানির।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here