কুষ্টিয়াঃ

পরকীয়ার জেরে কুষ্টিয়ায় দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার পুত্রসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশের এক সহকারী পরিদর্শক (এএসআই)। রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় ম. আ. রহিম সড়কের (পিটিআই রোড) কাস্টমস মোড়ের ডা. আজাদুর রহমানের ৪ তলা ভবনের নিচতলার মার্কেটের মধ্যে গুলিবর্ষণের এ ঘটনা ঘটে।

এএসআই সৌমেন নিজের কাছে থাকা অস্ত্র দিয়ে স্ত্রী আসমা ও সঙ্গে থাকা যুবক শাকিলের মাথায় কয়েক রাউন্ড গুলি করেন। এ সময় শিশু রবিন দৌড়ে পালাতে গেলে তাকেও পেছন থেকে গুলি করেন।

নিহত তিনজন হলেন- আসমা খাতুন (২৬), তার পুত্র রবিন (৮) ও শাকিল হোসেন (২২)। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সৌমেন কুমার নামের ওই পুলিশের এএসআইকে স্থানীয়রা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন।

ঘাতক এএসআইয়ের নাম সৌমেন কুমার। তিনি খুলনার ফুলতলা থানায় কর্মরত। তার বাড়ি মাগুরা জেলায় বলে জানা গেছে। আসমা ও শাকিলের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানায়। এর মধ্যে আসমার বাড়ি বাগুলাট ইউনিয়নের নাতুড়িয়া গ্রামে। তার বাবার নাম আমির আলী।

শাকিল পাশের চাপড়া ইউনিয়নের সাওতা গ্রামের মজবার রহমানের ছেলে। তিনি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন, পাশাপাশি বিকাশে চাকরি করতেন বলে পরিবার জানিয়েছে।
 
পুলিশের ধারণা নিহত আসমা ও শাকিলের মধ্যে কোনো সম্পর্কের কারণে আসমার স্বামী সৌমেন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে। এদিকে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে খুলনা বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার নাহিদ ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
 
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টার দিকে শাকিল নিহত নারী আসমা ও তার পুত্র রবিনকে সঙ্গে নিয়ে কাস্টমস মোড়ের ডা. আজাদুর রহমানের ৪ তলা ভবনের নিচতলার মার্কেটের মধ্যে বিকাশের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। এ সময় সেখানে সৌমেন আসেন। কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে পুলিশের এএসআই সৌমেন নিজের কাছে থাকা অস্ত্র বের করে স্ত্রী আসমা ও সঙ্গে থাকা যুবক শাকিলের মাথায় কয়েক রাউন্ড গুলি করেন।

এ সময় দুজনই মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পর আরও কয়েক রাউন্ড গুলি করে। এ সময় শিশু রবিন দৌড়ে পালাতে গেলে তাকেও পেছন থেকে গুলি করে।

মার্কেটের মধ্যে গুলিবর্ষণের শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে মার্কেটের মেঝেতে নারী ও পুরুষ এবং মার্কেটের সম্মুখে এক শিশুর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় লোকজন জমায়েত হতে দেখে অস্ত্রধারী ওই যুবক হাতের রিভলভার উঁচু করে গুলি করার ভয় দেখায়।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কয়েকশ’ এলাকাবাসী ওই যুবকের ওপর হামলা করতে উদ্যত হন। এ সময় সে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ওই যুবক হাতের অস্ত্র ফেলে ওই মার্কেটের ভিতর ঢুকে পড়ে। এরপর ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে সৌমেনকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন।

এ সময় পুলিশ এসে তাকে ধরে একটি বাড়িতে আটকে রাখে। ক্ষুব্ধ জনতা এ সময় তাকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য এসে এএসআই  সৌমেনকে কড়া প্রহরায় নিয়ে যায় ঘটনাস্থল থেকে।

রাস্তার বিপরীত পাশের চা দোকানি বলেন, হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখি মার্কেটের ভিতর থেকে একটা ছোট্ট শিশু ছুটে বের হয়ে এলো, ওর পেছনে পিস্তল ধরা লোকটি ছুটে এসে শিশুটিকে ধরে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করল। তখনই শিশুটি মাটিতে পড়ে যায়। প্রকাশ্যে শিশুটিকে যেভাবে গুলি করল তাতে মনে হলো কতই না রাগ বাচ্চাটার ওপর।

ঘটনার সময় প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় এক মুদি দোকানি বলেন, ১১টার দিকে হঠাৎ গুলির শব্দ শুনতে পাই। এ সময় এক বাচ্চাকে একজন গুলি করছে দেখতে পাই। গুলি করার পর শিশুটি মাটিতে পড়ে যায়। এরপর আমরা হইচই শুরু করলে আবার গুলি ছুড়তে শুরু করে।

মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, একজনই তার হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে গুলি করছিল। তিনজনকে গুলি করে সে। এরপর আমরা চারিদিক থেকে তাকে ঘিরে ধরি। পরে পুলিশ এসে তাকে নিয়ে যায়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘটনার পরপরই আমরা এখানে আসি। তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। আর এএসআই সৌমেনকে আমরা আটক করেছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে পরে বিস্তারিত জানানো হবে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। তবে প্রাথমিকভাবে হত্যার কারণ তিনি জানাতে পারেননি।

নিহত শাকিলের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার ভাবি লতা ও মা মারিয়াম খাতুনের সঙ্গে। তারা জানান, আসমার সঙ্গে শাকিলের চেনাজানা ছিল। তাদের ভাই-বোনের সম্পর্ক ছিল। এর বাইরে কোনো গোপন সম্পর্ক তাদের মধ্যে ছিল বলে আমরা জানি না। দেড় মাস আগে সৌমেন আমাদের বাড়িতে আসে। আসার পর সে জানায়, তার স্ত্রী আসমার সঙ্গে শাকিলের গোপন সম্পর্ক রয়েছে। সে যেন তার সঙ্গে মেলামেশা না করে। এরপর সে চলে যায়।

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম বলেন, অস্ত্র ও গুলিসহ সৌমেনকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার তাপস কুমার সরকার বলেন, নিহতের কয়েকজনের মাথাসহ শরীরের অন্যান্য স্থানে গুলি করা হয়েছে। খুব কাছ থেকে গুলি চালানো হয়। এদিকে হাসপাতালের মর্গে সবার লাশ রাখা হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here