ঢাকাঃ

অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে দ্রুতই জানানো হবে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে আবেদনের সিদ্ধান্ত আজ নয়, তবে দ্রুতই জানানো হবে।এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে আইনমন্ত্রী তার গুলশানের বাসায় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। 

এর আগে খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। আবেদনপত্রটি পর্যালোচনার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। 

সূত্র জানিয়েছে, সরকারের আনুষ্ঠানিক অনুমতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশে লন্ডন রওনা করবেন এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

বিএনপি চেয়ারপারসন সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বৃহস্পতিবার যেকোনো সময় তাকে চার্টার্ড বিমানে করে সিঙ্গাপুর হয়ে লন্ডন নেওয়া হবে। সঙ্গে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদল এবং পরিবারের সদস্যরাও থাকবেন।

তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান এ বিষয়ে নিশ্চিত করে এখনও কিছু জানাতে পারেননি।   

এর আগে বুধবার রাতে খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে যেতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। 

রাত সাড়ে ৮টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমণ্ডির বাসায় আবেদনটি নিয়ে যান তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রাত সাড়ে ৮টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ভাই একটি আবেদন দিয়েছেন। সেটা আমি গ্রহণ করেছি। আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। তারা বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমাদের যে নির্দেশনা দেবে সে অনুযায়ী আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। 

তিনি আরও বলেন, তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার প্রয়োজন হলে বিষয়টি আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখব। এদিকে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, লিখিত আবেদনটি পাওয়ার পরপরই মতামতের জন্য রাতেই তা আইন সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে।

গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজায়’ তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এফএম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে চিকিৎসা শুরু হয়। করোনা আক্রান্তের ১৪ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর খালেদা জিয়ার করোনা টেস্ট করা হলে ফলাফল আবারও পজিটিভ আসে। এরপর কিছু পরীক্ষার জন্য তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রথম দফায় পরীক্ষা করে বাসায় ফেরার পর দ্বিতীয় দফায় ২৭ এপ্রিল তাকে ফের হাসপাতালে নেওয়া হয়। সোমবার ভোরের দিকে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে (করোনারি কেয়ার ইউনিট) স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন।

এদিকে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের করোনার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তার ফুসফুস থেকে তরল জাতীয় পদার্থ (ফ্লুইড) অপসারণ করা হয়েছে। তার ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। এর মাত্রা ওঠানামা করছে। এছাড়া অক্সিজেনের মাত্রাও কিছুটা কমেছে।

এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার জোর আলোচনা শুরু হয়। খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে টেলিফোনে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার বিষয়ে আলাপ করেন।

এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড সর্বশেষ বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় অবস্থা পর্যালোচনা করে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার সুপারিশ করেন। সন্ধ্যায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হাসপাতালে যান এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে দলের চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হন।

একটি সূত্র জানায়, বিদেশ নেওয়ার অনুমতি পেতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করেন খালেদা জিয়ার পরিবার। সরকারের সবুজ সংকেত পাওয়ার পর বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন জমা দেন।

সরকারের নির্বাহী আদেশে গত বছর ২৫ মার্চ মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এরপর তার মুক্তির মেয়াদ দুই দফা বাড়ানো হয়েছে। যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছিল সরকার তাতে শর্ত ছিল তিনি বিদেশে যেতে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন না। এখন তাকে বিদেশ যেতে হলে সরকারের নির্বাহী আদেশের শর্ত শিথিল করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সরকার সেই শর্তটি শিথিল করলে খালেদা জিয়ার বিদেশে যেতে আইনগত কোনো বাধা থাকে না। এটা নির্ভর করছে একেবারেই সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

এর আগে গত বছর মার্চে বিদেশে চিকিৎসার জন্য মুক্তি চেয়ে স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছিল খালেদা জিয়ার পরিবার।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here