সবুজদেশ ডেস্ক:

ভারতের ১৫তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি মনোনীত দ্রৌপদী মুর্মু। সম্মিলিত বিরোধী দলের প্রার্থী যশবন্ত সিনহাকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করেছেন মুর্মু। ২৫ জুলাই শপথ নেবেন তিনি।

গণনার তৃতীয় রাউন্ডেই মোট ভোটের প্রায় ৬০ শতাংশ পেয়ে যান মুর্মু। ১৬তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয় পেয়ে ভারতের পঞ্চদশ রাষ্ট্রপতি হলেন তিনি । কারণ, ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ পরপর দুইবার (১৯৫২ এবং ১৯৫৭) নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সোমবার সব মিলিয়ে ভোট দিয়েছিলেন ৪,৭৯৭ জন। ১৫ সাংসদের ভোট বাতিল হয়েছে।

১৯৫৮ সালের ২০ জুন ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার বাইদাপোসি গ্রামের এক সাঁওতাল পরিবারে জন্ম দ্রৌপদীর। ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠা ছিল আর পাঁচটা প্রান্তিক পরিবারের সাধারণ কন্যাসন্তানের মতোই। পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরি পেয়েছিলেন তিনি। ওড়িশার রাজ্য সরকারের ক্লাস-৩ কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন, পরে স্কুলের শিক্ষিকা হয়েছিলেন।

১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ওড়িশা সরকারের জলসম্পদ ও শক্তি দপ্তরে জুনিয়র অ্যাসিসট্যান্ট হিসেবে কাজ করেছিলেন। ১৯৯৪ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত শ্রী অরবিন্দ ইন্টিগ্রাল এডুকেশন সেন্টার সাম্মানিক শিক্ষক ছিলেন।

এসবের মাঝেই বিয়ে হয়েছিল দ্রৌপদীর। কোল আলো করে আসে তিন ছেলে-মেয়েও। কিন্তু যৌবনেই বিধবা হন দ্রৌপদী। হৃদরোগে মারা যান স্বামী শ্যামচরণ মুর্মু। একা হাতে তিন সন্তানকে নিয়ে কঠিনতর লড়াই শুরু হয় তাঁর।

শিক্ষিকা হিসেবে কয়েক বছর চাকরি করার পরে কাউন্সিলর হিসেবে শুরু করেন রাজনৈতিক জীবন। পরবর্তীকালে রায়রংপুর উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন হয়েছিলেন তিনি। ২০০০ এবং ২০০৪ সালে বিধানসভা নির্বাচনে জিতে দুবার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন রায়রংপুর বিধানসভা থেকেই। বিজু জনতা দল তথা নবীন পট্টনায়েকের সরকারের মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পান। একাধিক দপ্তর দেখতেন তিনি।

পাশাপাশি বিজেপির তফসিলি উপজাতি মোর্চার ভাইস-প্রেসিডেন্টও ছিলেন তিনি। ২০০৭ সালে ওড়িশার সেরা বিধায়ক হিসেবে ‘নীলকণ্ঠ পুরস্কার’ পান দ্রৌপদী। ২০০৯ সালে বিজেডির সঙ্গে বিজেপির জোট ছিন্ন হয়ে গেলেও মুর্মু বিধানসভা ভোটে জিতে যান।

তবে রাজনৈতিক উত্থানের সঙ্গে সঙ্গেই ব্যক্তিগত জীবনে নেমে আসে তুমুল বিপর্যয়। ২০০৯ সালে রহস্যজনকভাবে মারা যায় দ্রৌপদীর এক ছেলে। সে শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতে ২০১২ সালে পথ দুর্ঘটনায় মারা যান আরেক ছেলেও। মেয়ে ইতিশ্রীকে নিয়ে একা হয়ে পড়েন দ্রৌপদী। একসময় মেয়ের বিয়ে দেন, তিনি ভুবনেশ্বরে থিতু। একটি ব্যাংকে অফিসার হিসেবে কর্মরত।

এত আঘাতেও ভেঙে পড়েননি দ্রৌপদী। ২০১৫ সালে তিনি ঝাড়খণ্ডের প্রথম মহিলা রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব নেন। সেই ২০২১ সাল পর্যন্ত সেই পদে ছিলেন আদিবাসী নেত্রী। তিনিই ঝাড়খণ্ডের প্রথম রাজ্যপাল, যিনি পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করেছিলেন।

এর আগে ২০১৭ সালেও রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে উঠে এসেছিল দ্রৌপদীর নাম। শেষ পর্যন্ত বিহারের তৎকালীন রাজ্যপাল রামনাথ কোবিন্দকেই বেছে নেয় কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন জোট।

অন্যদিকে, যশবন্ত সিনহা স্বচ্ছ ভাবমূর্তির রাজনীতিক। সাবেক এই আমলা দুই দফায় কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। প্রথমবার চন্দ্রশেখরের মন্ত্রিসভায়। দ্বিতীয়বার অটল বিহারি বাজপেয়ি প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ে। তিনি বাজপেয়ির মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সামলেছেন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহসভাপতি এবং দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য যশবন্ত।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here