ঢাকা ০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মতভিন্নতার মাঝেও সম্প্রীতি বজায় থাকুক

Reporter Name

ফারুক নোমানীঃ

মানুষের বৈষয়িক উন্নতি হলেও পতন হচ্ছে তার ভেতরের বিবেকের। পচন ধরছে তার বুকের ভেতরে থাকা হৃদয়ের। তাই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি থাকলেও মানুষ দিনদিন হয়ে পড়ছে বড়ই স্বার্থপর। আত্মকেন্দ্রীক। অথবা নির্দিষ্ট সীমানায় আবদ্ধ। মানুষ হারাচ্ছে তার মনুষ্যত্ববোধ। সৃষ্টির সেরা এই জাতির ভেতর যেমন বাছড়ে পশুত্বের বর্বরতা, তেমনি ক্রমেই তাদের থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শ্রদ্ধা ভক্তি, সৌহার্দ্র সম্প্রীতি। প্রীতির বন্ধনগুলো খুলে যাচ্ছে নির্মমভাবে। যে হিংস্রতা একটা সময় কল্পনাও করা যেত না, তা এখন প্রদর্শিত হচ্ছে খুবই স্বাভাবিকভাবে। সামান্য পরিমাণ ছাড় দেয়ার নূন্যতম মানসিকতাও নেই আমাদের। পান থেকে চুন খসলেই তার পেছনে লাগা এই মানুষের অনন্য বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। যে মানুষ সৃষ্টির সেরা হলো তার জ্ঞান প্রজ্ঞা, বিবেক বিবেচনার জন্য, এখন তাদের আচরণটা দেখে চতুষ্পদ প্রাণীরাও যেন লজ্জিত হয়।

পৃথিবীর সকল মানুষ যেমন দেখতে এক নয়। এক নয় তাদের বর্ণ, বংশ ও মুখের ভাষা। তেমনি বিভিন্ন তাদের রুচিবোধ, চিন্তাধারা, পছন্দ ও অপছন্দও। এটাই তো স্বাভাবিক। তবে এই বিভিন্নতার ভেতরেও মনুষ্যত্বকে ধরে রাখা মানুষের কাজ। শত অমিলের পরও নিজেদের মধ্যে শ্রদ্ধা ভক্তি, স্নেহ মমতা, সম্মান ভালোবাসা বজায় রাখাটাই তো আশরাফুল মাখলুকাতের অনন্য বৈশিষ্ট্য।

পরিবারে পাঁচজন সদস্য থাকলে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে যেমন মতের ভিন্নতা প্রকাশ পায়, একেকজন চিন্তা করে একেকটি মতও দিতে পারে। আবার কারো মত কারো সাথে নাও মিলতে পারে। তবুও তারা পরিবারেরই সদস্য। সামান্য মতের ভিন্নতার দরুণ তাদের ভেতরে কোন দূরত্ব যেমন সৃষ্টি হয় না, আবার স্নেহ, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ঘাটতিও পড়ে না বিন্দুমাত্র। এমনটাই তো হয় আমাদের সকলেরই পরিবারে। তেমনি আমরা মানুষরাও এই সমাজে একটি পরিবারের মত। তাই এখানেও থাকতে পারে মতের পার্থক্য। চিন্তার ভিন্নতা। দর্শনের অমিল। তারপরও আমাদের সমাজে আমাদেরকে মিলেমিশে থাকতে হবে। অবশ্য কারো কোন স্পষ্ট ভুল প্রকাশ পেলে বড় মমতা ও স্নেহ নিয়ে তাকে শুধরে দেয়া অন্যের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

মনে রাখতে হবে, চিন্তা, দর্শন, ধর্ম, মতবাদ ও রাজনীতির পার্থক্যগুলো পার্থক্য পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। বাস্তবজীবনে এই ভিন্নতার প্রভাব পড়লে সমাজ হয়ে উঠবে অশান্ত। বিঘ্নিত হবে আইন শৃঙ্খলা। অবনতি ঘটবে সম্প্রীতির। তাই মানুষ হিসেবে ভিন্ন ধর্ম ও মতবাদের প্রতি যেমন শ্রদ্ধা থাকতে হবে, একইভাবে দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তাধারা ও রাজনৈতিক পার্থক্যের পরও অন্যের প্রতি থাকতে হবে সহনশীল ও সহমর্মী। তবেই সমাজে শান্তি আসবে। কিন্তু হৃদয়বিদারক হলেও সত্য যে, আমরা সামান্য ভিন্নতাকে শত্রুতার চরম পর্যায়ে নিয়ে যাই। শুধু মতের পার্থক্য থাকলেই তাকে দমনের জন্য ন্যায় অন্যায়ের পরোয়া না করেই আমরা উঠে পড়ে লাগি। মিথ্যা, অপবাদ, মানহানী, মামলা ও এমন হয়রানীর কোন কিছুই আমরা বাকী রাখি না। বড় লজ্জার কথা হলেও সত্য যে, ধর্মের নামে ব্যক্তি পূজার বাস্তবায়নে ভিন্ন পক্ষের প্রতি এসব হয়রানীর কোন কিছুই বাদ পড়ে না এখন। আর রাজনৈতিক মতপার্থক্যের বিষয়টি তো বলাই বাহুল্য। অথচ ইসলামের ইতিহাস বলে, সেই সোনালী যুগেও ছিল মতের ভিন্নতা, ছিল দৃষ্টিভঙ্গির অমিল ও রাজনৈতিক মতপার্থক্য, তবুও তাঁরা চিরদিন ভাই ভাই হিসেবেই থেকেছেন। এ ভিন্নতার দরুণ কোন মুসলিমকে শত্রুতে পরিণত করেননি। নবীজী সা. এর সাহাবীদের ভেতরে কেউ জ্ঞানচর্চাকে প্রাধান্য দিতেন। কেউ দিতেন ইবাদত উপাসনাকে। আবার কারো কাছে যুদ্ধের ময়দানের অশ্বধ্বনি আর তরবারির আওয়াজ ছিল সবচে’ প্রিয়। তবে এই আগ্রহ ও পছন্দের ভিন্নতার দরুণ তাঁরা কাউকে কটাক্ষ করেননি কখনো। বলেননি, আমার কাজটিই শ্রেষ্ঠ। অন্যদিকে নবীজী সা. থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে যে আমলের একাধিক পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে, তার প্রতিটিই বৈধ। যেমন নামাযে বারবার হাত উঠানো ও একবার ওঠানো, সুরা ফাতিহা শেষে আমীন জোরে বলা ও আস্তে বলা, হাত কাঁধ সমান ওঠানো ও কানের লতি বরাবর ওঠানো, এসবগুলোই সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে। সবগুলোই বৈধ। সাহাবীদের আমলও ছিল এক্ষেত্রে বিভিন্ন। তারা একই জায়গায় নাময পড়েছেন কেউ কাঁধ বরাবর হাত উঠিয়েছেন আবার কেউ কান বরাবর, কেউ আস্তে আমীন বলেছেন আবার কেউ জোরে, কেউ বারবার হাত তুলেছেন, আবার কেউ একবার, তবে কেউ কাউকে কখনো একথা বলেননি যে, আমারটাই সঠিক, তোমারটা ভুল। আমিই একমাত্র সুন্নাহর উপর আমল করছি, তোমার আমল সুন্নাহ পরিপন্থী! অথচ, আমরা এখন এই পতনের যুগে এসে যে লোকটি নামায পড়ে না, অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে, তাকে কখনো বুখারী শরীফ খুলে বলি না, বাবা, নামায না পড়লে এই শাস্তি! নেশা করলে এই ভয়ংকর আযাবের বিবরণ রয়েছে হাদীসে! মূলত যে লোকটা কোনভাবে নামায শুরু করেছে তাকে বলি, তুমি জোরে আমীন বলছো না তাই তোমার নামায সঠিক হচ্ছে না। তুমি কাঁধ পর্যন্ত হাত তুলছো না, তাই তোমার নামায সুন্নাহপরিপন্থী! বড়ই কষ্টের কথা এগুলো।

সম্প্রতি কিছু ওয়াজ মাহফিলে এক বক্তা অন্য বক্তার প্রতি ছড়াচ্ছেন বিদ্বেষের বিষবাষ্প। কারো ভুলকে কেন্দ্র করে ওয়াজের মঞ্চেই চলছে অশালীন ও অসৌজন্যমূলক কথাবার্তা। এভাবে জাতি বিভক্ত হয়ে পড়ছে নানা মতে। মাঝখান থেকে ফায়দা লুটছে ইসলাম বিদ্বেষী মহল।

পাঠক, আমরা সারাদেশের মানুষকে পরিবর্তন করতে পারব না, তবে যার যার জায়গা থেকে যদি আমরা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, সহনশীলতা ও সহমর্মিতা আর্জন করতে পারি, মত ও চিন্তা দর্শনের ভিন্নতাকে ব্যক্তিগত শত্রুতায় পরিণত না করে শুধু ভিন্নতা পর্যন্তই যদি সীমাবদ্ধ রাখি, তাহলে অবশ্যই সমাজের চেহারা বদলে যাবে। সমাজের অরাজকতা নেমে আসবে অর্ধেকে। আবার আমরা একত্রিত হতে পারব ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে। মনে রাখতে হবে বিশ্বাসী মানুষের শত্রুতা হবে শয়তান ও তার সহচরদের সাথে। ভাই ভাইয়ের সাথে নয়। নবীজী সা. এক মুসলিমের জন্য অন্য মুসলিমের জান, মাল, সম্মানে অন্যায়ভাবে আঘাত করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। তাই আসুন, ব্যক্তিগত মতভিন্নতাকে শত্রুতায় পরিণত না করি। মতের ভিন্নতার পরও সম্প্রীতি বজায় রাখি। তাহলে জাতি উন্নত হবে, দেশ হবে সমৃদ্ধ।

লেখক: ইমাম, বায়তুল আমান জামে মসজিদ (মেইন বাসস্ট্যান্ড) কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ।
মুহাদ্দিস, বলিদাপাড়া মাদরাসা, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৯:৫০:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ মার্চ ২০২০
৬১৭ Time View

মতভিন্নতার মাঝেও সম্প্রীতি বজায় থাকুক

আপডেট সময় : ০৯:৫০:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ মার্চ ২০২০

ফারুক নোমানীঃ

মানুষের বৈষয়িক উন্নতি হলেও পতন হচ্ছে তার ভেতরের বিবেকের। পচন ধরছে তার বুকের ভেতরে থাকা হৃদয়ের। তাই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি থাকলেও মানুষ দিনদিন হয়ে পড়ছে বড়ই স্বার্থপর। আত্মকেন্দ্রীক। অথবা নির্দিষ্ট সীমানায় আবদ্ধ। মানুষ হারাচ্ছে তার মনুষ্যত্ববোধ। সৃষ্টির সেরা এই জাতির ভেতর যেমন বাছড়ে পশুত্বের বর্বরতা, তেমনি ক্রমেই তাদের থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শ্রদ্ধা ভক্তি, সৌহার্দ্র সম্প্রীতি। প্রীতির বন্ধনগুলো খুলে যাচ্ছে নির্মমভাবে। যে হিংস্রতা একটা সময় কল্পনাও করা যেত না, তা এখন প্রদর্শিত হচ্ছে খুবই স্বাভাবিকভাবে। সামান্য পরিমাণ ছাড় দেয়ার নূন্যতম মানসিকতাও নেই আমাদের। পান থেকে চুন খসলেই তার পেছনে লাগা এই মানুষের অনন্য বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। যে মানুষ সৃষ্টির সেরা হলো তার জ্ঞান প্রজ্ঞা, বিবেক বিবেচনার জন্য, এখন তাদের আচরণটা দেখে চতুষ্পদ প্রাণীরাও যেন লজ্জিত হয়।

পৃথিবীর সকল মানুষ যেমন দেখতে এক নয়। এক নয় তাদের বর্ণ, বংশ ও মুখের ভাষা। তেমনি বিভিন্ন তাদের রুচিবোধ, চিন্তাধারা, পছন্দ ও অপছন্দও। এটাই তো স্বাভাবিক। তবে এই বিভিন্নতার ভেতরেও মনুষ্যত্বকে ধরে রাখা মানুষের কাজ। শত অমিলের পরও নিজেদের মধ্যে শ্রদ্ধা ভক্তি, স্নেহ মমতা, সম্মান ভালোবাসা বজায় রাখাটাই তো আশরাফুল মাখলুকাতের অনন্য বৈশিষ্ট্য।

পরিবারে পাঁচজন সদস্য থাকলে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে যেমন মতের ভিন্নতা প্রকাশ পায়, একেকজন চিন্তা করে একেকটি মতও দিতে পারে। আবার কারো মত কারো সাথে নাও মিলতে পারে। তবুও তারা পরিবারেরই সদস্য। সামান্য মতের ভিন্নতার দরুণ তাদের ভেতরে কোন দূরত্ব যেমন সৃষ্টি হয় না, আবার স্নেহ, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ঘাটতিও পড়ে না বিন্দুমাত্র। এমনটাই তো হয় আমাদের সকলেরই পরিবারে। তেমনি আমরা মানুষরাও এই সমাজে একটি পরিবারের মত। তাই এখানেও থাকতে পারে মতের পার্থক্য। চিন্তার ভিন্নতা। দর্শনের অমিল। তারপরও আমাদের সমাজে আমাদেরকে মিলেমিশে থাকতে হবে। অবশ্য কারো কোন স্পষ্ট ভুল প্রকাশ পেলে বড় মমতা ও স্নেহ নিয়ে তাকে শুধরে দেয়া অন্যের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

মনে রাখতে হবে, চিন্তা, দর্শন, ধর্ম, মতবাদ ও রাজনীতির পার্থক্যগুলো পার্থক্য পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। বাস্তবজীবনে এই ভিন্নতার প্রভাব পড়লে সমাজ হয়ে উঠবে অশান্ত। বিঘ্নিত হবে আইন শৃঙ্খলা। অবনতি ঘটবে সম্প্রীতির। তাই মানুষ হিসেবে ভিন্ন ধর্ম ও মতবাদের প্রতি যেমন শ্রদ্ধা থাকতে হবে, একইভাবে দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তাধারা ও রাজনৈতিক পার্থক্যের পরও অন্যের প্রতি থাকতে হবে সহনশীল ও সহমর্মী। তবেই সমাজে শান্তি আসবে। কিন্তু হৃদয়বিদারক হলেও সত্য যে, আমরা সামান্য ভিন্নতাকে শত্রুতার চরম পর্যায়ে নিয়ে যাই। শুধু মতের পার্থক্য থাকলেই তাকে দমনের জন্য ন্যায় অন্যায়ের পরোয়া না করেই আমরা উঠে পড়ে লাগি। মিথ্যা, অপবাদ, মানহানী, মামলা ও এমন হয়রানীর কোন কিছুই আমরা বাকী রাখি না। বড় লজ্জার কথা হলেও সত্য যে, ধর্মের নামে ব্যক্তি পূজার বাস্তবায়নে ভিন্ন পক্ষের প্রতি এসব হয়রানীর কোন কিছুই বাদ পড়ে না এখন। আর রাজনৈতিক মতপার্থক্যের বিষয়টি তো বলাই বাহুল্য। অথচ ইসলামের ইতিহাস বলে, সেই সোনালী যুগেও ছিল মতের ভিন্নতা, ছিল দৃষ্টিভঙ্গির অমিল ও রাজনৈতিক মতপার্থক্য, তবুও তাঁরা চিরদিন ভাই ভাই হিসেবেই থেকেছেন। এ ভিন্নতার দরুণ কোন মুসলিমকে শত্রুতে পরিণত করেননি। নবীজী সা. এর সাহাবীদের ভেতরে কেউ জ্ঞানচর্চাকে প্রাধান্য দিতেন। কেউ দিতেন ইবাদত উপাসনাকে। আবার কারো কাছে যুদ্ধের ময়দানের অশ্বধ্বনি আর তরবারির আওয়াজ ছিল সবচে’ প্রিয়। তবে এই আগ্রহ ও পছন্দের ভিন্নতার দরুণ তাঁরা কাউকে কটাক্ষ করেননি কখনো। বলেননি, আমার কাজটিই শ্রেষ্ঠ। অন্যদিকে নবীজী সা. থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে যে আমলের একাধিক পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে, তার প্রতিটিই বৈধ। যেমন নামাযে বারবার হাত উঠানো ও একবার ওঠানো, সুরা ফাতিহা শেষে আমীন জোরে বলা ও আস্তে বলা, হাত কাঁধ সমান ওঠানো ও কানের লতি বরাবর ওঠানো, এসবগুলোই সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে। সবগুলোই বৈধ। সাহাবীদের আমলও ছিল এক্ষেত্রে বিভিন্ন। তারা একই জায়গায় নাময পড়েছেন কেউ কাঁধ বরাবর হাত উঠিয়েছেন আবার কেউ কান বরাবর, কেউ আস্তে আমীন বলেছেন আবার কেউ জোরে, কেউ বারবার হাত তুলেছেন, আবার কেউ একবার, তবে কেউ কাউকে কখনো একথা বলেননি যে, আমারটাই সঠিক, তোমারটা ভুল। আমিই একমাত্র সুন্নাহর উপর আমল করছি, তোমার আমল সুন্নাহ পরিপন্থী! অথচ, আমরা এখন এই পতনের যুগে এসে যে লোকটি নামায পড়ে না, অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে, তাকে কখনো বুখারী শরীফ খুলে বলি না, বাবা, নামায না পড়লে এই শাস্তি! নেশা করলে এই ভয়ংকর আযাবের বিবরণ রয়েছে হাদীসে! মূলত যে লোকটা কোনভাবে নামায শুরু করেছে তাকে বলি, তুমি জোরে আমীন বলছো না তাই তোমার নামায সঠিক হচ্ছে না। তুমি কাঁধ পর্যন্ত হাত তুলছো না, তাই তোমার নামায সুন্নাহপরিপন্থী! বড়ই কষ্টের কথা এগুলো।

সম্প্রতি কিছু ওয়াজ মাহফিলে এক বক্তা অন্য বক্তার প্রতি ছড়াচ্ছেন বিদ্বেষের বিষবাষ্প। কারো ভুলকে কেন্দ্র করে ওয়াজের মঞ্চেই চলছে অশালীন ও অসৌজন্যমূলক কথাবার্তা। এভাবে জাতি বিভক্ত হয়ে পড়ছে নানা মতে। মাঝখান থেকে ফায়দা লুটছে ইসলাম বিদ্বেষী মহল।

পাঠক, আমরা সারাদেশের মানুষকে পরিবর্তন করতে পারব না, তবে যার যার জায়গা থেকে যদি আমরা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, সহনশীলতা ও সহমর্মিতা আর্জন করতে পারি, মত ও চিন্তা দর্শনের ভিন্নতাকে ব্যক্তিগত শত্রুতায় পরিণত না করে শুধু ভিন্নতা পর্যন্তই যদি সীমাবদ্ধ রাখি, তাহলে অবশ্যই সমাজের চেহারা বদলে যাবে। সমাজের অরাজকতা নেমে আসবে অর্ধেকে। আবার আমরা একত্রিত হতে পারব ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে। মনে রাখতে হবে বিশ্বাসী মানুষের শত্রুতা হবে শয়তান ও তার সহচরদের সাথে। ভাই ভাইয়ের সাথে নয়। নবীজী সা. এক মুসলিমের জন্য অন্য মুসলিমের জান, মাল, সম্মানে অন্যায়ভাবে আঘাত করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। তাই আসুন, ব্যক্তিগত মতভিন্নতাকে শত্রুতায় পরিণত না করি। মতের ভিন্নতার পরও সম্প্রীতি বজায় রাখি। তাহলে জাতি উন্নত হবে, দেশ হবে সমৃদ্ধ।

লেখক: ইমাম, বায়তুল আমান জামে মসজিদ (মেইন বাসস্ট্যান্ড) কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ।
মুহাদ্দিস, বলিদাপাড়া মাদরাসা, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ।