মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, করোনাকালে মফস্বল সাংবাদিকদের কিভাবে চলছে? একটু খোঁজ নিন
শহিদুল ইসলামঃ
ঢাকার বাইরের জেলা ও উপজেলা সাংবাদিকরা বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিডিআর, আনছার, ডাক্তার ও নার্সদের পাশে থেকে প্রতিনিয়ত জরুরী তথ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এখন বিষয় হল সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিডিআর, আনছার ও ডাক্তার এরা সকলেই বেতনভূক্ত, প্রতিমাসে তারা বেতন পাচ্ছেন এর পরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনা পরিস্থিতির কারনে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক প্রনোদনা দিচ্ছেন। কিন্তু ঢাকার বাইরের উপজেলা সাংবাদিকরা বিনা পারিশ্রমিকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে তা জনগনের দোড় গোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে। বিনিময়ে তারা কোন ধরনের আর্থিক সুযোগ পাচ্ছেনা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি এই জেলা ও উপজেলা সাংবাদিকদের সংসার কিভাবে চলছে একটু খোঁজ নিয়ে দেখুন। জেলা ও উপজেলা সাংবাদিকতা কারা করেন, এ বিষয়ে আমাদের মানণীয় প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই জানেন, তবে আজকে আমাকে বলতেই হবে কারা উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকার প্রতিনিধি হয়ে দৃঢ়তার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সকলের সাথে তথ্যসেবার কাজ করে যাচ্ছেন। জেলা পর্যায়ে যে সকল সাংবাদিকরা কাজ করে যাচ্ছেন তারা সকলেই নিম্ন মধ্যবিত্ত্ব পরিবারের, কেহই ধনী পরিবারের সন্তান নয়, এই সকল বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন সাংবাদিক লিখালেখি করেন নাই। বর্তমানে জেলা ও উপজেলা সাংবাদিকের অবস্থা এমনটাই দাড়িয়েছে যে, নূন আনতে পানতা ফুরানোর মত। তাদের অবস্থা নিম্নবিত্ত্ব পরিবারের চেয়েও খারাপ, তবুও তারা থেমে নেই, ধার দেনা করে ওয়াইফাই বা মোবাইলের মাধ্যমে ডাটা কিনে দেশবাসীকে তথ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। যেমনটি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জীবনবাঁজী রেখে সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ করে তা প্রচার করেছিল, ঠিক তেমনি দেশের এই ক্লান্তিলগ্নে উপজেলা সাংবাদিকরা জীবনবাঁজী রেখে তথ্য সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন।
দেশে দুই ধরনের সাংবাদিক আছে একটি ঢাকার সাংবাদিক অন্যটি ঢাকার বাইরের জেলা ও উপজেলা সাংবাদিক, ঢাকার সাংবাকিদরা একেকজন এক একটি বিটের উপর সংবাদ সংগ্রহ করে এবং তারা সূনির্দিষ্ট একটি বেতন পায়। বাকি উপজেলা সাংবাদিকদের সূনিদিষ্ট কোন বিট নেই, বেতন ভাতাও নেই, তারা নিজেরাই ক্যামেরাম্যান আবার নিজেরাই সংবাদ লেখক। বেতনভাতা তো নেই তারপরও তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় বিজ্ঞাপন সংগ্রহের কাজ, অনেক তেল পানি খরচ করে বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করে পাঠিয়ে স্ব-স্ব পত্রিকাকে ছাপানোর পর বিলের কমিশনটাও ঠিকমত পান না তারা। এখন ভেবে দেখুন জেলা ও উপজেলা সাংবাদিকরা কিভাবে এই সংকটময় মুহুর্তে পরিবার পরিবার পরিজন নিয়ে দিন যাপন করছেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই সংকটকালীন মুহুর্তে চিকিৎসক, নার্সসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর জন্য বীমা ও প্রণোদনা প্রদানের কথা জানালেও ঝুঁকির মধ্যে তথ্যসেবা দিয়ে যাওয়া গণমাধ্যমকর্মীদেরকে কেবল ধন্যবাদ দেয়া হয়েছে। শুধু ধন্যবাদ দিয়ে কি তাদের পেট চলবে ? এ বিষয়টি নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি কামনা করে দেশের সকল জেলা ও উপজেলা সাংবাদিকরা সোসাল মিডিয়াতে লিখালেখি করে যাচ্ছেন তাতেও কোন প্রকার ফলপ্রসু পাওয়া যাচ্ছেনা।
বেশিরভাগ গণমাধ্যমে জেলা ও উপজেলা সাংবাদিকরা যখন বেতন-ভাতার বিষয়টি তোলেন তখন ওই প্রতিষ্ঠান থেকে তেমনি একটা সুর ভেসে আসে আমরা বেতন দিতে পরবোনা, বিজ্ঞাপন যোগাড় করেন তা থেকে কমিশন নেন, দুঃখের কথা কি বলবো বিজ্ঞাপনের টাকাটাও ঢাকার কিছু পত্রিকার সম্পাদকরা মেরে খাচ্ছেন। তবুও থেমে নেই জেলা ও উপজেলা সাংবাদিকরা। আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের দায়িত্ব পালনে। বর্তমানে পত্রিকার ছাপা বন্ধ হলেও বন্ধ নেই অনলাইন পত্রিকা। তাই বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনার কাছে অনুরোধ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই দেশের গরীব মানুষদের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন, আপনিও তাই করে যাচ্ছেন।
আপনি হয়তো জানেন না এই সাংবাদিকতা পেশায় কত মানুষ আজ অসহায়। মাসের পর মাস বেতন বকেয়া, কথায় কথায় চাকরি হারিয়ে বহু সাংবাদিক এখন দিশেহারা। তাই আশা করছি আপনি আমাদের দিকে নজর দেবেন, করোনাভাইরাসের এই মাহামারিতে সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়াবেন। মা যেমন সন্তান বিপদে আগলে রাখে তেমনি করে। মুক্তিযুদ্ধে যেমন বহু সাংবাদিকের অবদান রয়েছে তেমনি স্বাধীনতার পরেও রাষ্ট্রের বিভিন্ন সুখে-দুঃখে এই পেশার মানুষগুলোর অনেক অবদান রেখে চলেছে।
লেখকঃ সাংবাদিক, কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহ।