যশোরঃ

ভারত থেকে কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়ে ফিরে আসা আট বাংলাদেশি নাগরিক, যারা যশোর জেনারেল হাসপাতালের (কোয়ারেন্টিন) থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন তাদের কারও নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়নি। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সিকুয়েন্সিং রিপোর্টে ফলাফল থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পালিয়ে যাওয়া আট জনের নমুনার জিনোম সিকুয়েন্সিং করে দেখা হয়, সেগুলি বেঙ্গল স্ট্রেইনের কি না। তবে, নমুনাতে প্রত্যাশিত স্ট্রেইন দেখা না গেলেও সেগুলো ক্যালিফোর্নিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোর একটি মিশ্র স্ট্রেইনের।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনাভাইরাস পরীক্ষা বিভাগের প্রধান ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘আমরা স্ট্রেইন শনাক্তে ভারত থেকে আসা বাকি ১০ জনের নমুনাও সিকুয়েন্সিং করবো।’

এদিকে, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর পরিচালক প্রফেসর তাহমিনা শিরিন জানিয়েছেন, পরীক্ষার জন্য আমরা যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করেছি।

আইইডিসিআরে নমুনাগুলোর জিনোমিক সিকোয়েন্সিংয়ের কাজ এখনো শেষ হয়নি। কাজটা শেষ করতে কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয় বলেও জানান তিনি।

এছাড়া ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে চিন্তা না করে আপাতত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে পড়লে গত ২৬ এপ্রিল ভারতের সঙ্গে সীমান্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ সরকার। সীমান্ত যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় একদিন আগে ২৫ এপ্রিল থেকে গত বুধবার পর্যন্ত বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১৮ জন করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশি দেশে ফেরেন।

তাদের মধ্যে ১৬ জন গতকাল পর্যন্ত যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তারা এখন ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আরিফ আহমেদ।

তিনি আরও জানান, তাদের কারো কোনো অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে না, এবং কোনো জটিলতাও নেই।

তিনি বলেন, ‘করোনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ হওয়ায় গতকাল হাসপাতাল থেকে দুজন রোগীকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।’

আরিফ আহমেদ জানান, কোভিড-১৯ সার্টিফিকেট নিয়ে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। যে ১৮ জনকে করোনা পজিটিভ বলে চিহ্নিত করা করা হয়েছিল, তাদের সার্টিফিকেটে কোভিড-১৯ পজিটিভ বলে উল্লেখ করা ছিল।

তিনি বলেন, ‘এর আগে আমরা আইইডিসিআরকে পরীক্ষার জন্য আটটি নমুনা পাঠিয়েছিলাম। তবে তাদের কাছ থেকে এখনো পর্যন্ত ফলাফল পাইনি। এছাড়া গত বুধবার আরও ১০ জনের নমুনা পাঠিয়েছি।’

পরীক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইইডিসিআর দুই জায়গায় নমুনা পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

যশোর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডা. মাহামুদুল হাসান বলেন, ‘গত ১ এপ্রিল থেকে আজ পর্যন্ত বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে মোট ২৪৭৪ বাংলাদেশে ফিরেছেন। যেহেতু যশোরে একসঙ্গে এত লোকের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা নেই। তাই পাশের জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ ও নড়াইলের হোটেলে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।’

যশোর জেলা প্রশাসন ভারত থেকে আসা ব্যক্তিদের জন্য থাকার তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে হোটেলে যথাযথ সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না বলেও অনেকে অভিযোগ করেছেন।

অনেকে জানিয়েছেন, ভারতে চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা-পয়সা ব্যয় করার পর দেশে এসে আর্থিক সংকটে পড়েছেন। এই অবস্থায় নিজের জেলায় গিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে চান।

কর্তৃপক্ষের নানা উদ্যেগের পর বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে নিয়মিত ট্রাক চলাচলের কারণে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের প্রবেশের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

৩৫০ জনের মতো ট্রাকচালক ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দরে আসেন। তাদের মধ্যে অনেকেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন।

ডেইলি স্টারের বেনাপোল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বন্দরে থাকার সময় ট্রাকচালকরা যথাযথ স্বাস্থ্যসুরক্ষা ব্যবস্থা মেনে চলেন না।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান বলেন, ‘যদিও তাদের পোর্টে আসার পর যানবাহনের মধ্যেই থাকতে বলা হয়েছে, তবে তারা সেটা না মেনে এদিন-ওদিক ঘুরে বেড়ান।’

ভারতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর সীমান্ত অঞ্চলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা গেছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here